পর্ব ১
পর্ব ২
তামিমের সাথে কথা বলে একটু নিশ্চিত হতে পারল সাকিব। এবার আবার রুমে এসে ঘুমানোর চেষ্টা করল। হঠাৎ তার সেলফোনে মেসেজ এলার্ট বেজে উঠল। অপরিচিত নাম্বার থেকে ছোট্ট একটা মেসেজ,
“এভাবে বিদায় না নিয়ে চলে আসার জন্য দুঃখিত।
-শিশির”
সাকিব এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। তক্ষুণি,মেসেজের উত্তর পাঠাল। “কোনো সমস্যা নেই। আমিও দুঃখিত। আমিও তো বিদায় নিতে পারিনি। ”
আবার মেসেজ আসল, “ইটস ওকে। আমি অবশ্য স্যরি বলার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু আপনি যে স্যরি,তার জন্য আপনাকেও কিছু করতে হবে, হি হি হি”
“কি কষ্ট করেছেন?”
“আপনার সেল নাম্বার যোগাড় করতে হয়েছে অনেক কষ্ট করে।”
“ও তাই?ঠিক আছে তাহলে আমিও কিছু একটা করব। দেখি কি করা যায়। আই উইল লেট ইয়ু নো। ওকে?”
“ওকে দ্যান।”
“গুড নাইট। বাই।”
“বাই। টেইক কেয়ার।”
সাকিব ভাবছিল দেখা করার কথা বলবে। কিন্তু নিজ থেকে বলতে সংকোচ হচ্ছিল। কি না কি মনে করে বসে। কিন্তু ও তো জানে না,শিশির ও ঠিক এই আশায়-ই ছিল। সে ও সংকোচের কারণেই নিজ থেকে বলতে পারেনি। এখন সাকিবের মনে হচ্ছে যে বলা উচিত ছিল। কিছুক্ষন আফসোস করে ভাবল,যা হবার তা হয়েছে। পরেরটা পরে দেখা যাবে। একটা কিছু নিয়ে বেশীক্ষন দুশ্চিন্তা করার মানুষ সে নয়। এরপর গভীর ঘুমে ঢলে পড়ল।
পরের খেলা আরো তিনদিন পর। তাই সকালে কোনো অনুশীলন রাখা হয়নি। সকালে একবার সাকিব ভেবেছিল তামিম-এর খেলাটা দেখতে যাবে। কিন্তু পরে সেই চিন্তা বাদ দিল। রাতে ভাল ঘুম হয় নি। এখন একটু ফ্রেস হতে হবে। বিকেলে আবার রেগুলার জিম-এ উপস্থিত থাকতে হবে। কয়টা বাজে দেখার জন্য সেলফোন-টা হাতে নিতেই দেখে নতুন টেক্সট এসেছে। তামিমের টেক্সটঃ
“Found a link. Don’t change your mind already .Will talk with you after my match.”
হাসল সাকিব। তামিম আসলেই অদ্ভুত। সত্যিই সে রাতের মাঝেই খবর বের করে ফেলল! তাও ভালো। যদি আসলেই দেখা করার ইচ্ছে হয় তবে তামিমের “লিঙ্ক”-থেকেই কোনো না কোনো ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
প্রফুল্ল মনেই নাস্তা করে ঘুরতে বের হলো সাকিব। এদিক-সেদিক সময় পার করে বিকেলে জিমে গেল। কোচ আবারও মনে করিয়ে দিল যে দলে তার যায়গা প্রায় নিশ্চিত এবং অবশ্যই তার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। অনেকক্ষণ কঠিন পরিশ্রম শেষে ক্লান্ত হয়ে হোটেলে ফিরল সে। দেশে ফোন করে একটু কথা-বার্তা বলা হলো। কেমন যেন শরীরটা ভালো লাগছিল না। তাই ঐ সন্ধ্যাতেই ঘুমিয়ে পরল সে। রাত প্রায় ১২টার দিকে ঘুম ভাঙল জ্বর নিয়ে। বিছানা থেকে ওঠার মতো শক্তিও তার গায়ে নেই। ঘোরের মধ্য থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তামিমের মিসকল। ফোন ব্যাক করে কথা বলার চেস্টা করল ও। কিন্তু জ্বরের ঘোরে কি বলল তা সে নিজেও জানে না।
ওদিকে তামিম ফোন ধরে দেখে যে সাকিব কথাই বলতে পারছে না। মনে হলো, কথা বলার চেষ্টা করেছে। ও তাড়াতাড়ি সাকিবের রুমে গেল। তৎক্ষণাৎ সে ডাক্তারের ব্যবস্থা করল। রাতটা সাকিব জ্বরের ঘোরেই কাটাল।
সকালে ঘুম ভাঙতেই সাকিব মনে করার চেষ্টা করল রাতে কি হয়েছে। তামিমকে ফোন করার পর কি হয়েছে কিছুই তার মনে নেই। শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে করতে হঠাৎ রুমের দরজায় টোকার আওয়াজ শুনতে পেল। সে কিছু বলার আগেই দরজা খুলে তার দলের ক্যাপ্টেন আরো কয়েকজন টিমমেট ঢুকল।
“ও তোমার ঘুম ভেঙ্গেছে তাহলে?”-জিজ্ঞেস করল ক্যাপ্টেন।
“হ্যাঁ। মাত্রই উঠলাম। প্র্যাকটিস বিকেলে না?”- সাকিব বলল।
“তোমার ১০৪ ডিগ্রী টেম্পারেচার আর তুমি প্র্যাকটিসের কথা বলছ!”
“আরে নাহ...তেমন কোনো ব্যপার না।”
“তোমার কাছে ব্যপার না হতে পারে,তবে কোচ তোমাকে প্র্যাকটিসে নিচ্ছে না। ডাক্তার বলেছে ভালোভাবে বিশ্রাম নিলে আজ-কালের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে”
“ও। ডাক্তার কখন এসেছিল?”
“রাতে। তোমার বন্ধু তামিম আমাদেরকে ডেকে বলল তোমার জ্বর। পরে আমি,ও আর কোচ গিয়ে ডাক্তারকে কল করলাম। ও কোচ বলেছিল তুমি উঠলে তাকে ডাকতে। দাঁড়াও আমি যাচ্ছি।”
ক্যাপ্টেন চলে যাবার পর বাকিরা সাকিবের সাথে বসল। এর মাঝে তামিম-ও এসে দেখা করে গেছে। ওর আবার আজকে সকালেই অনুশীলন। তাই বসতে পারেনি। বাকিরাও আধা ঘন্টার মতো থেকে ওকে ফ্রেস হতে বলে চলে গেল। ও হাত-মুখ ধুয়ে আসতেই কোচ আসল,সাথে ক্যাপ্টেন।
কোচ বলল, “ডাক্তার বলেছে যে ভ্রমনের কারণে জ্বর হয়েছে। এর মধ্যে পরিশ্রমটাও বেশী হয়ে গিয়েছে। তাই বিশ্রাম খুব দরকার। কিন্তু দেখো, তোমাকে আমাদের দলে আসলেই দরকার। তাই আমি না চাইলেও মনে হয় তোমাকে ১৫তারিখ স্কোয়াডের বাইরে রাখতে হবে।”
“স্যার, আপনি চাইলে আমি খেলতে পারব।”- সাকিব বলল।
“কিন্তু আমরা তো এটা করতে পারি না। বরং তুমি এক কাজ করো, হাসপাতালে চলে যাও।”
“সামান্য জ্বরের জন্য হাসপাতাল! এটা এমনিই ঠিক হয়ে যাবে।”
“সামান্য জ্বর তা তো আমিও জানি। তবে এখানে তো তোমার দেখা-শোনা করার জন্য কেউ নেই। বরং ওখানে তোমাকে ২৪ঘন্টা মনিটরিং করলে আজ কালের মাঝেই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।”
যদিও সাকিবের বেশী ইচ্ছে ছিল না,তবু কোচের পরামর্শে সে হাসপাতালেই গেল। কারণ আসলেই তার সাথে কারো থাকার দরকার। কোচ আর তার টিমমেট-রা ভিজিটিং আওয়ারে তাকে দেখে গেল। ডাক্তার বলেছে কালই সে চলে যেতে পারবে হয়তো। রাতে তামিম ফোন করে বলল সে নাকি এসেছিল হাসপাতালে কিন্তু ভিজিটিং আওয়ারের পরে নাকি দেখা করার নিয়ম নেই। তাই সে কাল দেখা করতে আসবে।
ঔষধগুলোতে মনে হয় কোনোটা ঘুমের জন্য দেয়া হয়েছে। ১০টার মধ্যেই সাকিব ঘুমিয়ে গেল।
পরদিন ঘুম ভাঙতেই নার্স বলল যে তার জ্বর আর আসেনি। যদি দুপুরের মাঝে আর না আসে তবে দুপুরেই তাকে রিলিজ করে দেয়া হবে। সাকিব নিজেও অনেক সুস্থ বোধ করছে। সে এখন-ই চলে যেতে পারে কিন্তু দুপুর পর্যন্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিল। সে কোচকে একবার ফোন করল। বিকেলে অনুশীলনে যোগ দেয়ার অনুমতি চাইল। কোচ বলল, সে সুস্থ থাকলে যোগ দিতে পারবে। তারপর ব্রেকফাস্ট শেষ করে টেলিভিশনে ভালো কিছু খুঁজতে লাগল ও। হঠাৎ দরজায় টোকা শুনে অবাক হলো ও। নার্স বা ডাক্তার-রা তো টোকা দিয়েই ঢুকে যায়, কিন্তু এখন তো টোকা দিয়েও মানুষ-টা ভিতরে আসছে না। ও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে যে ভিজিটিং আওয়ার শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কে হতে পারে? সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে সে ভিতরে আসার জন্য বলল। সে আরো দ্বিগুণ অবাক হলো যখন দরজা খুলে শিশিরকে ভিতরে ঢুকতে দেখল।
(চলবে)
( লেখকের কথাঃ ফ্যান-ফিকশন হলো বিখ্যাতদের নিয়ে তাদের ভক্তদের দ্বারা রচিত কল্পিত সাহিত্য কর্ম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা বড় ফ্যান-ফিকশন গ্রুপ খোলার ইচ্ছে ছিল বহুদিন থেকেই। তাই টুকটাক কিছু শেয়ার করছি। আমি টাইগারদেরকে অনেক সম্মান করি। তাই এসব কোথাও কোনো টাইগারকে হেয় করার উদ্দেশ্যে কিছু লেখা হবে না। এবং, অবশ্যই গল্পটি আমার কল্পনা থেকে লেখা। বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই। )