somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশিরভেজা ভালোবাসা (পর্ব #২) {বাংলাদেশ ক্রিকেট ফ্যান-ফিকশন}

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব ১

যা ভেবেছিল সাকিব তাই হচ্ছে এখানে। একদম সম্পুর্ণ পাশ্চাত্যধর্মী পার্টি। যে যার মতো হাসছে,কথা বলছে,খাচ্ছে। এর উপর আবার সবাই “ডেট” নিয়ে এসেছে। কারো প্রেমিকা,কারো স্ত্রী। তাদের প্রায় কাউকেই সাকিব চিনে না। তাই খুব তাড়াতাড়িই সে একা হয়ে গেল। ভেবেছিল সে চুপিচুপি বেরিয়ে যাবে। কিন্তু ক্যাপ্টেন তাকে দেখেই বলে ফেলেছে যে ডিনার টেবিলে একসাথে বসতে,তাই এখন বিরক্তিকর সময় কাটাতে হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে নিজের সেলফোনটা বের করে গেইম খেলতে শুরু করল সে।
“হাই...কেমন আছেন?”-হঠাৎ মেয়ে-কন্ঠে বাংলা কথা শুনে সাকিব চমকে উঠল। পাশে ফিরে দেখল সেই মেয়েটি। একটু আগেও তাকে দেখেছে সাকিব। অন্যদের সাথে কথা বলছিল। ইংরেজীতেই। সে যে বাংলা বলতে পারে তা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা হয়নি সাকিবের। সে আমতা আমতা করে বলল, “জ্বি ভালো। আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না…”-বলেই সাকিব মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিল। পার্টিতে এসেছে, সবাই তো আর পরিচিত হবে না। ওভাবে বলা উচিত হয়নি। তাড়াতাড়ি আবার বলল, “না মানে, আপনি কি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন?”
“নাহ। আমি আমেরিকা থেকে এসেছি।”-মেয়েটি বলল।
“বাংলায় কথা বলছেন তো,তাই জিজ্ঞেস করলাম। ”
“আমেরিকানরা কি বাংলা বলতে পারে না?”
“আপনার মতো করে নিশ্চয় পারবে না। ”
“তারা তাহলে কিভাবে কথা বলে?”
“টাড়া টাহলে কিবাবে কঠা বলে?”-বলে সাকিব হাসল।
সাকিবের জবাব শুনে মেয়েটি হেসে ফেলল। সাকিব তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। হাসলে মেয়েটিকে অন্যরকম লাগে। সাকিবের মনে হচ্ছে সে আশেপাশে আর কিছুই দেখছে না। সব যেন হার মেনে গেছে মেয়েটির সৌন্দর্যের কাছে।
“আপনি খুবই মজার মানুষ। আমি আরো ভেবেছিলাম,যারা ক্রিকেট খেলে তারা বুঝি কাঠকোট্টা ধরনের হয়…”-মেয়েটি বলল।
“আমিও তো তাই জানতাম। আপনিই বোধহয় প্রথম বললেন যে আমি মজার মানুষ। ধন্যবাদ। বাই দ্য ওয়ে, আপনার পরিচয়টা কিন্তু এখনও জানা হলো না।”
মেয়েটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “উম্মে আহমেদ শিশির”
হ্যান্ডশেক করে সাকিব বলল, “সাকিব আল হাসান”
“আপনি কি ভেবেছেন যে আপনাকে না চিনেই আমি আপনার সাথে বাংলা বলা শুরু করেছি?”
আবার লজ্জা পেল সাকিব। বলল,“চিনেন তো। তবু বললাম আর কি…তো আমেরিকা,হাহ?”
“জ্বি। আমি ওখানেই থাকি তবে…” কথা শেষ করার আগেই মেয়েটির হাতে ধরে রাখা ফোন বেজে উঠল। স্যরি বলে কলটা রিসিভ করল সে। মনে হলো ব্যক্তিগত ব্যপারে কথা বলছে। তাই সাকিব একটু দুরে সরে দাড়াল। হঠাৎই ক্যাপ্টেনের সাথে দেখা হলো, “আরে সাকিব! তুমি এখানে?আমি আরো ভাবলাম তুমি বুঝি চলে গিয়েছ?আস,ডিনার সার্ভ করা হয়েছে…”-বলতে বলতে প্রায় টেনেই নিয়ে গেল সাকিবকে। একবার পিছে ফিরে তাকাল সাকিব,কিন্তু মেয়েটিকে আর ওখানে দেখতে পেল না।
______________________________________________________

রাতে হোটেলে ফিরে সাকিব ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পার্টিতে ওই মেয়েটিকে আর দেখেনি সে। যদিও খুঁজেছে সে। তবে কেউকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। তখন থেকে ঘুরে ঘুরে মেয়েটির কথা মনে পড়ছে। নিজের অবস্থা দেখে নিজেই অবাক হচ্ছে সে। আগে কখনো এমন হয়নি তার। দেশে তার অনেক ভক্ত আছে। একবার তো রেস্টুরেন্টে এক মেয়ে হাত কেটে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে প্রেম নিবেদন করেছিলো তাকে। তবে তার কখনোই মেয়েদের ব্যপারে তেমন আগ্রহ ছিল না। মেয়েটিকে সে ধন্যবাদ দিয়েছিল,বুঝিয়েছিল। এছাড়া বহু প্রস্তাব আসে তার বাবার কাছে,মায়ের কাছে। সে ব্যপারটা তাদের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু,বাবা তাকে বলেছে,সে যদি নিজে দেখে একটা মেয়ে পছন্দ করত,তবে ভালো হতো। কিন্তু,মেয়েদেরকে সাকিবের সবসময় একইরকম লাগে। তবে,আজ কি হলো তার?শিশিরের সেই হাসিটা তার মাথা থেকে সরছেই না। ওই হাসিতে কি এক রহস্য লুকিয়ে ছিল…নাহ,মেয়েটিকে খুঁজে বের করতেই হবে। তামিমকে জিজ্ঞেস করা যায়। ও হয়তো কিছু উপায় বলতে পারে। ফোনটা হাতে নিতেই মনে পড়ল কাল আবার তামিমের খেলা আছে। ওকে এখন কল করা ঠিক হবে না। একটা মেসেজ পাঠানো যায়। ঘুমিয়েছে কিনা জানতে চেয়ে টেক্সট করল সে। প্রায় সাথে সাথেই তামিমের কল। খুশি হলো সাকিব।
“তোদের পার্টি শেষ হয়েছে?”-ধরতেই তামিম জিজ্ঞেস করল।
“হুম। তা তো সেই কখন শেষ। তোর না কাল খেলা?ঘুমাস নাই?”
“এই ভরদুপুরে ঘুম কোথা থেকে আসবে?”
“দুপুর?”
“হুম। দেশে তো দুপুরই।”
“তা ঠিক। আমারও একই সমস্যা হয়। রাতে ঘুমাতে আসলে মনে…”-সাকিবের কথা শেষ হবার আগেই তামিম বলল, “হয়েছে, আর বলতে হবে না। তুই হলি রোবোট। কোথাও গেলে মানিয়ে নিতে সময় লাগে বড়জোর একদিন। আমার তো এক সপ্তাহেও হয় না।”
“আরে না। এখানে আসলেই সমস্যা হচ্ছে।”
“ঘুম না আসলে নিচে নাম। লবীতে আয়। কথা বলি।”
“আচ্ছা। আসছি…”-বলেই ফোনটা কেটে দিল সাকিব। এরপর একটা জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে নিচে নামার প্রস্তুতি নিল। এসে দেখে, তামিম ইতোমধ্যে চলে এসেছে। ল্যাপটপ নিয়ে এসেছে। কি যেন করছে সেখানে। সাকিবকে দেখে ল্যাপটপের স্ক্রিন নামিয়ে বলল, “কিছু খাবি?”
“নাহ…”
“আচ্ছা। এবার বল তোর কি হয়েছে?”
“কি হয়েছে মানে?”
“কিছু তো একটা হয়েছে। সাকিব আল হাসান তো খেলার মধ্যে কখনো রাত জেগে হোটেল লবীতে বসে থাকার মতো পাবলিক না।”
সাকিব আর ধানাই-পানাই না করে বলেই ফেলল, “আসলে আজ পার্টিতে অনেকের সাথে দেখা হয়েছিল তো। সবার সাথে পরিচয় হয়নি। তোর কি এদিকে বাংলাদেশি যারা আছে তাদের কোনো কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ আছে?”
“কার পরিচয় জানতে চাচ্ছিস? কোচ বা কোনো অর্গানাইজেশন?নাকি,স্পন্সর?”
“না মানে, একটা মেয়ে ছিল তো…”
সাকিবের কথা শেষ হবার আগেই তামিম চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞেস করল, “মেয়ে?তুই একটা মেয়ের খবর জানতে চাস?”
“থাম। সিরিয়াস কিছু হয় নাই। শুধু এমনি জানতে চাইলাম।”
“কোন মেয়ে?কি করে?বল,আমি এক্ষুনি সব খবর বের করে দিচ্ছি। ”
“এগুলো জানলে তোকে আর কি বের করতে বলতেছি?আমি তো জানি ই না। ”
“কিচ্ছু জানিস না?দেশি মেয়ে যে এইটা শিওর তুই?”
“হুম। বাংলা কথা বলছিল তো…”
“তোর সাথে কথা হয়েছে?”
“হ্যাঁ।”
“আর তুই নাম-ঠিকানা কিছুই জানতে চাসনি!”
“না,নাম জানি। শিশির। উম্মে আহমেদ শিশির। ”
“হুম। তোর অবস্থা আসলেই সিরিয়াস। ইউ আর ব্লাশিং, দোস্ত। তা মেয়েটার সাথে কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা করিস নাই কেন?”
“সুযোগই পাই নাই” তখন সাকিব পুরো ঘটনা সংক্ষেপে বলল।
“ঠিক আছে,কাল খোঁজ খবর নিব। আমেরিকার মেয়ে,তাই না?সমস্যা নাই। পাওয়া যাবে। এখন চল। ঘুমাতে হবে। ” বলে দুজন উঠল। যে যার মতো ঘুমোতে গেল।
তামিম শুয়ে শুয়ে ভাবছিল যে করেই হোক মেয়েটাকে খুঁজে বের করতেই হবে। শেষ পর্যন্ত একটা মেয়ে সাকিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। একে কোনোভাবেই মিস করা যাবে না। ওদিকে সাকিব যে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে তা সে কল্পনাও করে নি।


(চলবে)


( লেখকের কথাঃ ফ্যান-ফিকশন হলো বিখ্যাতদের নিয়ে তাদের ভক্তদের দ্বারা রচিত কল্পিত সাহিত্য কর্ম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা বড় ফ্যান-ফিকশন গ্রুপ খোলার ইচ্ছে ছিল বহুদিন থেকেই। তাই টুকটাক কিছু শেয়ার করছি। আমি টাইগারদেরকে অনেক সম্মান করি। তাই এসব কোথাও কোনো টাইগারকে হেয় করার উদ্দেশ্যে কিছু লেখা হবে না। এবং, অবশ্যই গল্পটি আমার কল্পনা থেকে লেখা। বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই। )

১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×