২৭ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ (রাত ১১:৩০)
আমাকে যে রুমটা দেয়া হয়েছে সেটি ১৭তালায়। এর জানালা দিয়ে নিচে তাকালে নিজেকে খুব বড়-বড় মনে হয়। এত রাত, তবু নিয়নের আলোয় আলোকিত রাস্তাগুলোয় হঠাৎ করে একটা/দুইটা গাড়ি যাচ্ছে। গতকাল-ও আমি জানালা দিয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। কোচের যদিও কড়া নির্দেশ ছিল ঠিক ১০টায় ঘুমিয়ে পড়তে হবে, কিন্তু ঘুম আসছিল না। প্রায় দেড়ঘন্টা শুয়ে থেকে উঠে জানালার পাশে বসে ছিলাম। এত্ত নার্ভাস ছিলাম... খুব ভয় করেছিল।
আজ সকালে প্রস্তুতির সময় মাশরাফি-ভাই বলেছিল, “টস পেলে ব্যাটিং হবে। বিজয়, তামিম রেডী থাকিস।” কথাটা শোনার পর উত্তেজনার পাশাপাশি ভয়টাও কাজ করছিল খুব। আগের ম্যাচেও ভাল খেলতে পারিনি, আজ কিছুতেই খারাপ করা যাবে না। কিন্তু ভাগ্যের জোরে টস-টা ওরা জিতার পর আরো চিন্তায় পড়ে গেলাম। রান তাড়া করার চেয়ে রান তৈরী করা অনেক সহজ লাগে আমার। যাই হোক, আপাতত আমার কিছুই করার নেই, শুধু বল-টাকে বাউন্ডারীর ভিতরে রাখতে হবে ৫০ওভার!
মাশরাফি-ভাই বল শুরু করল। চার নাম্বার বলে ক্যাচ উঠল। বলটা বলা যায় একদম আমার হাতেই এসে পড়েছিল, কিন্তু কিভাবে যেন ফসকে গেল। আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, এতো সহজ ক্যাচ মানুষ ছাড়ে কিভাবে! আমার যে ঐ মুহুর্তে কেমন লেগেছিল। মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি মাশরাফি-ভাইয়ের চোখের দিকেও তাকাতে পারিনি। এরপর থেকে প্রত্যেকটা বলে আমি নিজেকে প্রমাণ করার জন্য দৌড়িয়েছি, প্রতিটা বলে আমি চাইছিলাম যেন আরেকটা ক্যাচ ওঠে... কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, আর একটাও ক্যাচ আমি পেলাম না। পুরো খেলাতে একটা মাত্র উইকেট গেল! বিশাল এক রানের পাহাড়ের নিচে পড়লাম আমরা...
ব্রেকের সময় সবাই বলছিল যে বাজে ফিল্ডিং হয়েছে। কাউকে নির্দিষ্ট করে কখনোই দোষারোপ করা হয় না দলের ভিতর। কিন্তু আমি তো নিজের কাছেই নিজে ছোট হয়ে গেলাম। খুব খারাপ লাগছিল... প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এই ম্যাচ জিতিয়েই ছাড়ব! যেভাবেই হোক...
ব্যাটিং শুরু করার সময় কোচ বলেছিল, একটা বল-ও যেন নষ্ট না করি। কিন্তু কোনোভাবেই মনোযোগ আনতে পারছিলাম না। তাছাড়া শুরুতেই তামিম-ভাই চলে যাওয়ায় আরো বেশি স্ট্রেসে পরে গিয়েছিলাম। প্রতিটা বলে আমি মারতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে থেমে যাচ্ছিলাম। এতো রাগ হচ্ছিল নিজের উপর! তখন বুঝতে পারছিলাম না যে উইকেট কি ছেড়ে দিব, নাকি স্লো হলেও খেলে যাব। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারায় বেশ কয়েকটা বল নষ্ট হয়ে গেল। এরপর তাড়াহুড়ো করা রান নিতে নিয়ে মনোযোগ হারিয়ে আউট হয়ে গেলাম!
এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে নিজ হাতে নিজের দেশটাকে হারিয়ে দিলাম! আমি কেন এই স্কোয়াডে আছি? আমার কোনো যোগ্যতাই নেই খেলার... খুব কষ্ট হচ্ছে। সাকিব-ভাই,তামিম-ভাই আর মাশরাফি-ভাই ডিনারের পর এসেছিল। বুঝিয়েছে, শান্তনা দিয়েছে। কিন্তু আমি তো জানি দোষ আমারই! আমার দেশের মানুষ আমাকে ১৭ তালার উপরে স্থান করা দিয়েছে কিন্তু আমি আমাদের পতাকা-টাকে মাটিতে মিশিয়ে দিলাম......
( লেখকের কথাঃ এটা শুধুই একটি ফ্যান-ফিকশন। ব্যক্তিগতভাবে কোনো খেলোয়াড়কে ছোটো করার জন্যে এটি লেখা হয়নি। আমি মন থেকে বিশ্বাস করি আমাদের টাইগাররা মনে-প্রাণে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার চেষ্টা করে। একটা ম্যাচে একজন খারাপ খেলতেই পারে। সেই অবস্থায় তাকে কিয়ে সরাসরি সমালোচনা বা, গালাগালি করার আগে একবার ভাবা উচিত তার মনের অবস্থা এখন কেমন? একটা ২২ বছরের ছেলের কাছে ১৫কোটি মানুষের বোঝা অনেক ভারী। তাই ভাল সময়ে তাকে একটানে আকাশে উঠিয়ে খারাপ সময়ে তাকে ধাপ করে নিচে ফেলে দেয়ার চেয়ে সবসময় সমর্থন দেয়ার চেষ্টাই আমি করি। আমার কাছে তাদের স্থান অনেক উপরে... সবসময়-ই উপরে... )
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:২২