স্কুল থেকে ফেরার সময়-ই মনটা খারাপ হয়ে গেল সিহাবের। আজ বাসা একদম খালি। সবসময়-ই বাসা খালি থাকে। তবে অন্তত তার আপু বাসায় থাকে। আজ আলীশার পরীক্ষা। বসুন্ধরা কনভেনশনে পরীক্ষা শুরু হবে সন্ধ্যা ৭:০০টায়। জ্যাম-এর কারণে একটু আগেই চলে গিয়েছে আলীশা। তাই একাই বাসায় থাকতে হবে সিহাবকে। অবশ্য এটা কোনো ব্যপার না। জন্ম থেকেই ওরা একাই বড় হচ্ছে। তবে আজ মনটা একটু খারাপ তার। আজ ইয়ারলি পরীক্ষা শুরু হয়েছে তার। কিছুই প্রস্তুতি না থাকাতে যাচ্ছেতাই পরীক্ষা হয়েছে। সেটা নিয়ে তার সমস্যা নেই। জীবন থেকে সে বেশী কিছু পাবার আশা কখনো করেনি। তবে আজ মনে হয় মাথা ঠিকভাবে কাজ করছিল না। এক্সাম কপি-তে বেশ কিছু উল্টাপাল্টা কথা লিখেছে সে। এই স্কুলটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। গত দুইমাস প্রত্যেকটা দিন সে এই স্কুলটাকে ঘৃণা করেছে। সে স্কুলেই পড়তে চায়নি। তার ইচ্ছে ছিল উত্তরায় আসার পর সে প্রাইভেটেই ও-লেভেলস শেষ করবে। মোটামোটি ভালো ছাত্র সে। তাছাড়া আপু সবসময়েই স্ট্রেইট এ স্টুডেন্ট। আপু তাকে সাহায্য করতে পারত। কিন্তু তার আম্মু তাকে অনেকটা জোর করেই ভর্তি করিয়েছে। বাসায় ফিরে ফ্রিজ থেকে খাবার গরম করে খেয়ে নিল সে। এরপর তার রুমে গিয়ে তাদের সাউন্ড সিস্টেমে ভলিউম ফুল করে গান ছাড়ল। তারা দুই ভাইবোন-ই হেভী মেটাল শুনতে পছন্দ করে। লিনকিন পার্কের একটা গান চালিয়ে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করতে লাগল সিহাব।
তার জীবনটা এমন কেন হলো? তার এবং তার আপুর... এখন-ও মনে হয় ও স্পষ্ট চোখের সামনে দেখতে পায় সেদিনগুলো। তাও বয়স তখন কতই বা হবে, আট বছর। সবেমাত্র গ্রেড ওয়ানে উঠেছিল সিহাব।আলীশা তখন গ্রেড থ্রী-তে। স্কুল থেকে ফিরলে তখন-ও বাসা খালিই থাকতো। আম্মু ফিরত ১০টার দিকে। আর আব্বুকে তারা প্রায়দিন দেখতই না। সেদিন আম্মু সন্ধ্যায়-ই বাসায় ফিরল। কিন্তু তাদের সাথে কোনো কথাই বলল না। আব্বু ফিরল নয়টার দিকে। কিছুক্ষন পর-ই তাদের রুম থেকে চ্যাঁচামেচি শোনা গেল। এটা নতুন কোনো বিষয় না। আব্বু-আম্মু প্রায়ই ঝগড়া করেন। বেশ উচ্চস্বরেই করেন। তবে এত বেশি হইচই সবসময় হয় না। ঝনঝন করে কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দ হতেই আলীশা সিহাবের রুমে এসে ঢুকল। সিহাব বলল, “আপু আমার ভয় লাগছে।” আলীশা কিছু বলল না। দুজনই চুপচাপ বসে ছিল। কিছুক্ষণ পর মেইন দরজায় আওয়াজ শুনে তারা উঁকি মেরে দেখল আম্মু বের হয়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে আব্বু আর আম্মুকে কখনো একসঙ্গে দেখেনি ওরা। পরের তিনটা দিন ওরা আম্মুকে ছাড়াই ছিল। কাকে কি জিজ্ঞেস করবে তারা বুঝতে পারেনি। দিন-রাত কান্না করেছিল তারা অসহায় ভাবে। তিনদিন পর তারা আবিষ্কার করল ফ্রিজে খাবার কিছু বাকি নেই। রাত পর্যন্ত না খেয়ে আব্বুর জন্য অপেক্ষা করেছিল ওরা। যদিও আব্বু এই কয়েকদিন বাসায় খায়নি। সেদিন বোধহয় আব্বু ড্রিঙ্ক করে এসেছিল। রাতে তদেরকে জেগে থাকতে দেখে অনেক বকাবকি করেছিল। তাদের সামনেই আম্মুকের ফোন করেছিল। ফোন ধরেছিল আম্মুর বান্ধবী যার বাসায় আম্মু গিয়ে উঠেছে। ফোনে তাদের সামনেই আব্বু বলেছিল, “জ্যোতিকে বলো ঝামেলা দুটো আমার ঘাড়ে গছিয়ে দিয়ে ও পার পাবে না। ওকে বলবে ওদেরকে নিয়ে যেতে...”
এমন সময় হঠাৎ সেল ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ধ্যান ফিরল সিহাবের। আপু ফোন করেছে। “আমি হলে ঢুকে যাচ্ছি। সেল সাদমানের গাড়িতে রেখে যাচ্ছি।”
“ঠিক আছে। অল দ্য বেস্ট।”
“তোর এক্সাম কেমন হয়েছে?”
“টোটালি স্ক্রুড আপ। তুমি তো জানোই... আমি অবশ্য একটা কাজ করেছি। যা যা ইচ্ছে হয়েছে সব লিখে দিয়েছি। একদম ফিজিক্স মিসের ঘটনাটাসহ। ”
“সিরিয়াসলি? ইউ আর কিডিং, রাইট?”
“নাহ... আসলে খুব মেজাজ খারাপ ছিল আজকে। তুমি আস তোমাকে বলব। আর আরেকটা কথা, আই নিড মেডিসিনস।”
“আজকে পাবো কি না জানি না। আগে দেখি পরীক্ষা দিয়ে আসি।”
“ওকে। বাই।”
আবার গান ছেড়ে দিল সিহাব। কিন্তু আর মন বসল না। বেনসনের প্যাকেট-টা নিয়ে ছাদে গেল। জীবন নিয়ে তার আসলেই কোনো বাসনা নেই আর। বিষণ্ণ সন্ধ্যায় সিগারেট হাতে নিয়ে সে তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করল। তার অতীতের মতোই অন্ধকার, অসহায়, অনুভূতিহীন ভবিষ্যত। সে তার ভবিষ্যত ঠিক করে রেখেছে। এরকমই বিষণ্ণ কোনো রাতে সে এই ছাদ থেকে লাফ দিবে। এটা অবশ্য মুনমুনের ফ্যান্টাসি। তবে এটা ওর-ও ভাবতে ভালো লাগে। এই ভিত্তিহীন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়াই ভালো। সে অপেক্ষা করে আছে আলীশার জন্য। যেদিন আলীশা চলে যাবে সেদিন সিহাব-ও যাবে। পৃথিবীতে আলীশা ছাড়া ওর আর কেউ নেই। আলীশার কিন্তু অনেক বন্ধু। তবে ওরা দুজন-ই জানে যে এরা সব সুসময়ের বন্ধু। ঠিক কাছের বন্ধু বলতে যে বোঝায় তা সিহাবের মতো আলীশারও কখনো ছিল না। শুধু বন্ধু নয়। কাছের কোনো মানুষই তাদের নেই। তাদের আব্বুর কাছ থেকে যেদিন মামা ওদেরকে নিয়ে এসেছিল, সেদিন আব্বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিল সিহাব। কিন্তু বাবা একটা কথাও বলেনি তার সাথে। আলীশা অবশ্য বেশ সামলে নিয়েছিল। ও নিজেও আব্বুর সাথে কোনো কথা বলেনি। এক মাসের মাঝেই আব্বু-আম্মুর ডিভোর্স হয়ে গেলো। কিন্তু তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আগে আব্বু-আম্মু দুজনই বাইরে থাকতো, আর এখন শুধু আম্মু বাইরে থাকে। একটা দিন তাদেরকে নিয়ে বসে দুটো কথা কখনো কেউ বলে না। আম্মুকে সবাই বলেছিল আবার বিয়ে করতে। কিন্তু কেন যেন তিনি আর রাজি হননি। তবে চাকরীটা ছাড়েননি। তাই এই দুই ভাইবোনের কখনো বোঝার সুযোগ হয়নি মমতা কি জিনিষ। সিহাব সবসময় একটা ব্যপারই শুধু ভাবে, কেন তাদের জীবনটাই এমন হলো! কেন! আব্বুকে নিয়ে তার অনেক কৌতুহল ছিল। তিনি কি একটুও তাদেরকে পছন্দ করেন না? একবারও কি তাদের কথা মনে পরে না? ডিভোর্সের পর থেকে কখনো আব্বু নিজ থেকে ওদের সাথে দেখা করতে আসেননি। তবু দেখা হতো। শেষ দেখা হয় দুবছর আগে, এয়ারপোর্টে। যেদিন আব্বু তার দ্বিতীয় স্ত্রী-কে নিয়ে চীন চলে যাবে সেদিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে ওরা দুজন এয়ারপোর্ট গিয়েছিল। প্রায় দুঘন্টা অপেক্ষার পর আব্বু এসেছিল। গাড়ি থেকে আব্বুর সাথে নামল আব্বুর স্ত্রী, ছিমছাম সুন্দরী একজন মহিলা। আলীশা আস্তে করে সিহাবকে বলল, “আমি এই লোকটার সামনেও যেতে পারব না। তুই গেলে যা, আমি এখানে অপেক্ষা করি...” সিহাব জানত যে আপু যাবে না। তাই ও আর কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে লাগল। আব্বু প্রথমে তাকে দেখেনি। ও গিয়ে বলল, “আব্বু, শেষ পর্যন্ত দেশ থেকেই চলে যাচ্ছ?” আব্বু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, “না... আসলে আমরা তো ঘুরতে যাচ্ছি। তোকে বলেনি?” “হ্যাঁ বলেছে। সবই বলেছে। কিন্তু তুমি বললে না কেন? জীবনে তো কোনো দাবি নিয়ে তোমার কাছে আসিনি। চলে যাচ্ছ, এই কথাটা অন্তত জানাতে তো পারতে। গত প্রায় দেড় বছর দেখা করোনি। ফোন করলেও ব্যস্ত থাক। কিন্তু চলে যাবার আগে শেষ একবার দেখা না হোক, কথা তো বলতে পারতে।” আব্বুর চেহারাটা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। প্রায় এক মিনিটের মতো চুপ থেকে তিনি বললেন, “কেন ফেইসবুকে তো নিয়মিত যোগাযোগ হবেই। আমি গিয়ে তোকে ফোন নাম্বার পাঠিয়ে দিব। তোরা সবসময় মনে করিস তোদেরকে আমি পছন্দ করি না। আমি কি আমার ফেইসবুকে তোর আর আলীশার ছবি রাখিনি? আমার সারাক্ষণ তোদের কথা মনে পরে। তখন আমি তোদের ছবিগুলো দেখি। তোদেরকে তো প্রথমে আমিই রেখেছিলাম। তোর মা তো জোর করেই নিল।”
সিহাব তখন হঠাৎ কেঁদেই ফেলল। এত লোকের সামনে ওকে কাঁদতে দেখে আব্বু একটু ভড়কে গেল। তবে আব্বু কিছু করার আগেই আলীশা এসে ওকে ধরে ফেলেছিল। তবে ঐ কথাগুলো সিহাব বিশ্বাস করেছিল। ফেইসবুকের ঐ ছবিগুলোই তার কাছে তার বাবার ভালোবাসার প্রমাণ। সেদিন ট্যাক্সিতে কেঁদেছিল সিহাব, অনেক দিন পর অনেক কেঁদেছিল। আলীশা কিছু বলেনি। সেদিন সরাসরি বাসায় না গিয়ে ফ্রেন্ডস ক্লাবের মাঠে গিয়েছিল আলীশা। সেই সন্ধ্যায় আলীশার বন্ধু রিয়াস আর আফিমের হাত থেকে প্রথমবার ওরা ইয়াবা নিয়েছিল। সিহাব অবশ্য একটু ভয় পাচ্ছিল। ও আলীশাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “আপু...ড্রাগস!” রিয়াস বলেছিল, “নাহ... মেডিসিনস। এগুলো আমাদের মতো আন-ওয়ান্টেড মানুষদের মেডিসিন। যাদের জন্মটাই ভুল, তাদের জন্যই এগুলো ইনভেন্ট করা হয়েছে।” আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি সিহাব। সে রাতে ওরা ঘুমোতে পারেনি। এন.টি.কাটার দিয়ে হাত কেটেছিল দুজনেই। প্রথমে ভেবছিল ইয়াবাগুলো ফেলে দিবে। হতাশায় তীব্রতায় হাতের ধমনীর ঠিক নিচে গভীরভাবে কেটেছিল ওরা। একবার নয়, অনেকবার। রক্ত গড়িয়ে বারান্দার মেঝে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিলো। সেই রক্ত হাতেই জমাট বেঁধে গাড়ো খয়েরী হয়ে যাবার পরেও তারা উঠেনি। রাত প্রায় আড়াইটা পর্যন্ত কেঁদেছে দুজনই। হঠাৎ করেই আলীশা উঠে বাথরুমে গিয়েছিল। বাথরুমে গিয়ে সেদিন সে কি করেছিল তা সিহাব জানে না এবং কখনো জানেনি। তবে কিছু একটা করেছিল। প্রায় একঘন্টা পর বের হওয়ার পর তার মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করে সিহাব। প্রথমেই আলীশা কম্পিউটারে একটা গান ছাড়ে। সুইডিশ ব্র্যান্ড হিপোক্রেসির এই গানটি ওদের দুজনেরই খুব প্রিয়।
“I came back to life
Naked, tied to the floor
In the corner of my eyes
I saw them coming through the door
All is black, all is white
Gotta open my eyes;
And faced the airport lights
I stared into the eyes of eternity
I've seen what no man's ever seen
I stared into the eyes of eternity
I've been where no man's ever been
I cannot move, behind myself is a spark
I pray on myself of who I left behind
And as I look around
Then I realize I'm all alone
The dark so wide so wasted
Chills me to the bone
Oh, suddenly arising up in the air
My mind was burning
The [Incomprehensible] spare
I said farewell to the bodies, they're stealing
All is black, all is white
I open my eyes
And face the airport lights
I stared into the eyes of eternity
I've seen what no ma;২n's ever seen
I stared into the eyes of eternity
I've been where no man's ever been
Always setting us free
I'll fit right back into the dream
But something here just keeps me awake
And I'm cut wide open
Maybe they search for my soul
This is more than a human can take
And don't tell me I'm dreaming
I know what I saw
I'll feel alive like never before
I stared into the eyes of eternity
And I've seen what no man's ever seen
I stared into the eyes of eternity
I've been where no man's ever been
I stared into the eyes of eternity
I've seen what no man's ever seen
I stared into the eyes of eternity
I've been where no man's ever been”
সেদিন আলীশা এন.টি.কাটার-টা নিয়েই টয়লেটে গিয়েছিল। বুকের বামপাশে কেটেছে। গভীরভাবে কেটেছিল। তার ইচ্ছে হচ্ছিল তার শরীরে প্রবাহিত তারই জন্মদাতার রক্তটুকু বের করে ফেলতে। কিন্তু চিরতরে চলে যাবার সাহস হয়নি। তাই একবার কেটেই থেমে গিয়েছিল সে। তাদের জীবনে কিছুতেই কিছু আসে যায় না। বিবেক তাদের কাছে হার মানেনি। বিবেকই তাদেরকে সেদিন ইয়াবা নিতে বাধ্য করেছিল। তাদের কাছে দশটি ট্যাবলেট ছিল। টয়লেট থেকে এসেই আলীশা পাঁচটি একসঙ্গে খুলে নিয়ে গিলে ফেলল। সিহাব কিছু বলল না। তবে তারও কনফিউশন দূর হয়ে গেল। নিজের সাথে যুদ্ধ করে সে কখনোই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না। আলীশা যা করবে তা-ই হবে তার ডেসটিনি। সে বাকি পাঁচটাই একসঙ্গে গিলে ফেলল। এরপর তারা মেঝেতে শুয়ে পড়ল... হিপোক্রেসির ড্রামের বিটের সঙ্গে মেঝে কেঁপে কেঁপে উঠছিল...সেই কম্পনের সাথে ধীরে ধীরে তাদের হৃদকম্পন-ও বাড়তে লাগল...বাড়তে বাড়তে একসময় একেবারে দ্রুততম অবস্থায় পৌঁছে হঠাৎ করেই একদম ধীর হয়ে গেল। এরপরের সময়টা দুজনই কাটাল ঘোরের মধ্যে। আধো জাগরণে তারা দেখতে লাগল বিকৃত মরদেহ, তাদের দুজনের মরদেহ... শকুনে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে তাদের শরীর... দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে তাদের বাবা... তাদের মা খাবার তৈরী করে ফ্রিজে রাখছে... লাগামহীন সব দুঃস্বপ্ন! পরে অবশ্য ওরা ভেবে দেখেছে। হয়তো ওগুলো স্বপ্ন ছিল না, হয়তো অবচেতন মনে ওরা সিক্সথ সেন্সে দেখেছিল ওদেরই ভবিষ্যৎ! তবে সেদিন থেকে ওরা আর পিছে তাকায়নি। যখন দরকার হয়েছে পড়েছে, যখন দরকার হয়েছে ড্রাগস নিয়েছে। বিবেকের কাঠগড়ায় কখনো দাঁড়াতে হয়নি তাদেরকে।
__________________________________________________
নয়টা বেজে গেছে। সিহাব তখন-ও ছাদে। বেনসনের প্যাকেট শেষ। এখন আর অতটা ছন্নছাড়া লাগছে না। মেডিসিনস আর লাগবে না মনে হয়। আবারও ফোন করল আলীশাকে।
“পরীক্ষা শেষ? কেমন হলো?”
“এইতো... তোর কি খবর? স্টিল নিড মেডিসিনস?”
“ফিফটি-ফিফটি। না পেলেও সমস্যা নেই। চলে আসো।”
“ঠিক আছে তাহলে চলেই আসি। লাগলে কাল অন্তুর কাছ থেকে নিতে পারব।”
“ঠিক আছে। বাই।”
আলীশা ফিরল সাড়ে দশটার দিকে। আম্মু তখন-ও ফিরেনি। আজ কি একটা কনফারেন্স আছে। আলীশা খাবার কিনে নিয়ে এসেছে। পরীক্ষা খুব ভালো হলে ও এই কাজটা করে। ওরা দুজন খেয়ে ছাদে গেল। আলীশার বেনসনের প্যাকেট প্রায় নতুন। রাত প্রায় তিনটা পর্যন্ত ওরা ছেদে বসে বসে আজকের ঘটনা আলোচনা করল। সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে উড়িয়ে দিতে চাইল তাদের অপ্রাপ্তি। কিন্তু, অতৃপ্ত আত্নার মতো দুঃস্বপ্ন ওদের পিছনে লেগে আছে। এই অভিশপ্ত জীবন কখনোই ওদেরকে সুখের ছোঁয়া পেতে দিবে না। নিচে গেটের শব্দ শুনতে পেল তারা, আম্মু এসেছে। কোনো শব্দ না করে তারা যে যার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। শুয়ে শুয়ে তারা শুনতে পেল আম্মু চাবি দিয়ে দরজা খুলল, টেবিলে খাওয়াগুলো হয়তো একটু নেড়েচেড়ে দেখল, এরপর চলে গেল তার রুমে। কাল ওরা দুজন ঘুম থেকে ওঠার আগেই আম্মু আবার বের হয়ে যাবে। তবু হঠাৎ একদিন হয়তো আম্মুর সামনে পরে যাবে ওরা, অপ্রস্তুতভাবে একে অপরের দিকে তাকাবে, সহজভাবে কথা বলার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবে......
__________________________________________________
সিহাবের এক্সামের রেজাল্ট বের হয়েছে। ওকে স্কুল থেকে এক্সপেল করে দিয়েছে। আম্মুকে ফোন করেছিল স্কুল থেকে, কিন্তু আম্মু ব্যস্ত ছিল আসতে পারেনি। আপু গিয়েছিল। যা-তা বলে ইনসাল্ট করেছে প্রিন্সিপাল ওদেরকে। সিহাবের-ও মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ও হঠাৎ বলেই দিল “আপনি ইচ্ছেমতো ওপেনলি প্রমি মিস্-এর সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে পারবেন, আর আমরা কিছু বললেই দোষ?” তখনই প্রিন্সিপাল স্যার বলল, “মিস্টার সিহাব জামান, ইউ আর এক্সপেলড ফ্রম আওয়ার স্কুল। ইউ টু মে লিভ নাও।”
ওনার অফিস থেকে বের হয়ে সিহাবের রাগে শরীর কাঁপছিল, বলল “আপু...আজ মেডিসিনস লাগবেই।” আলীশা ব্যপারটা আন্দাজ করেছিল, সিহাবের কথা শুনে নিশ্চিত হলো।
“ঠিক আছে। যাওয়ার পথে নিয়ে নিবো।”
সিহাব রাজি হলো না, বলল “না। আগে চলো বাসায় যাই। আমার ভালো লাগছে না।”
“তাহলে এক কাজ কর, তুই বাসায় চলে যা। আমি নিয়ে আসি।”
“ঠিক আছে।”
এরপর আলীশা গেলো তার কোচিং-এ। এখানে ওর বন্ধুরা পড়ে। অন্তুর সাথে কথা ফোনে কথা হয়েছে। ওর কাছে সাপ্লাই আছে। কোচিং-এ দেখা করতে বলল। একটা ছয়তলা বিল্ডিং-এর ২য়তলায় ওদের কোচিং। এ সময়টাতে ওখানে কেউই থাকে না। তাই এটা ওদের এক ধরনের “সিক্রেট-হ্যাংআউট”-এর মতো। আলীশা পৌঁছে দেখল ওখানে অন্তু ছাড়া আর ওদের বন্ধু কেউ নেই। ফিজিক্সের রুমে মনে হয় কেউ ডেটিং করছে। আলীশা তিনটা একহাজার টাকার নোট অন্তুর হাতে দিয়ে ট্যাবলেটগুলো নিয়ে উঠে পরল। অন্তু বলল, “এত রাশ কেন আজ? বস্ না।”
“না। সিহাব বাসায় অপেক্ষা করছে।”
“ঠিক আছে। চল্ তোকে রিকশা ধরে দিই।”-বলে অন্তুও উঠে আসল। করিডোর পার হবার পথে হঠাৎ অন্তু আলীশার বাহু ধরে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। আলীশা ঝটকা দিয়ে সরে পড়ার চেষ্টা করতেই অন্তু থেমে গেল।
“আলীশা, আই লাভ ইউ। আই নিড ইউ বেইব।”
আলীশা বরফের মতো ঠান্ডা গলায় বলল, “ইউ ডোন্ট লাভ মি।ইউ জাস্ট নিড মি। স্যরি, তোর জিএফ আছে। তাছাড়া ইউ আর নট মাই টাইপ।”
“টাইপ কিনা জানি না। আই নিড ইউ বাই হুক অর কুক...” বলে অন্তু প্রায় জোর করে ওকে আবার চেপে ধরল।
এই পরিস্থিতি আলীশার জন্য নতুন নয়। তবে এটা একটু ভিন্ন। অন্তুর জন্য তার কিছুটা দুর্বলতা ছিল। তাই অন্যদের ওপর সে যেভাবে তার মার্শাল আর্ট প্রয়োগ করে সেটা প্রথমে পারেনি। তবে দ্বিতীয়বারে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ঘাড়ের কাছে বাম হাত দিয়ে আঘাত করতেই যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠল অন্তু। আলীশা তখন দ্রুত পায়ে বের হয়ে গেল। জীবনে একটা ছেলে ভালো লেগেছিল তার বছর তিনেক আগে। সেই সময়টাতে তার জীবনে একটি বারের জন্য সে সুন্দর একটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিল। তবে তার সাথে ব্রেকআপের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকে ও “হ্যাঁ” বলেনি। ওর নিজস্ব হতাশ জীবন নিয়েই ও থাকে। কেউকে ও সুযোগ পর্যন্ত দিতে চায় না। আজকে অন্তুকে না বলতে খুব কষ্ট হয়েছে তার। কিন্তু যদি আজ না বলত, তবে ঠিকই আরো এক/দুই মাস পরে আরো বেশি কষ্ট পেতে হতো। তবে ওগুলো চিন্তা করে খুব মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ওর। হঠাৎই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল সে। বাসায় না গিয়ে সাইদ-গ্র্যান্ডের সামনের রাস্তায় বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, তারপর যেইমাত্র একটি ট্রাক আসতে লাগল তখন সে প্রস্তুত হলো। ঠিক যখন ঝাঁপ দিলে ট্রাকের পক্ষে ব্রেক করা অসম্ভব হবে ঠিক সেই মূহুর্তটার জন্য অপেক্ষা করল ও, তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কোনো এক আশ্চর্য কারণে ট্রাকটা ঠিকই ব্রেক করতে পেরেছিল, তবে ভালোই আহত হয়েছিল আলীশা। ওকে হাসপাতালে নেয়ার পর ও কেউকে বলেনি সে ব্যাপারটা ইচ্ছেকৃত ছিল। আম্মু আসতে আসতে প্রত্যক্ষদর্শীরা চলেও গিয়েছিল। তাই আম্মু জানতেও পারেনি। কিন্তু সিহাব ঠিকই বুঝেছে।ও শুধু একটা কথাই বলল, “আপু, যাবার আগে আমাকেও বলিও। একসাথেই যাব।”
আলীশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আচ্ছা, বলব।”
“প্রমিজ?”
“প্রমিজ”
__________________________________________________
সিহাবের জন্মদিন আজ। আব্বুর সাথে তার কথা হয়না বহুদিন। চীন যাওয়ার বহুদিন পর নাম্বার পেয়েছে ওরা। আর সেই নাম্বারেও বেশি পাওয়া যায় না বাবাকে। সিহাব অবশ্য মনে মনে খুব চাইছিল আব্বু যেন ফোন করে। আগে তো অন্তত ফেইসবুক একটা মাধ্যম ছিল। কিন্তু, আব্বু বলেছে চীনে ফেইসবুক নেই। এখন তাই আর কথাই বলতে গেলে হয় না। তবু সিহাব ফোনটা হাতের কাছে রাখে, একটু পর পর ফেইসবুক চেক করতে থাকে। সন্ধ্যায় আলীশা ও তার কিছু বন্ধু মিলে সিহাব-কে কেএফসি-তে খাওয়াতে নিয়ে গেলো। দশটার দিকে বাসায় ফিরে সিহাব আবার ফেইসবুক চেক করল। ফেইসবুকে তার হোমপেজটা বুকমার্ক কয়া নেই। আব্বু ওদের যে ছবিটা তার প্রোফাইলে রেখেছেন ওটাই ওর বুকমার্ক। প্রতিবার ফেইসবুকে ঢুকতে হলে এই ছবিটা দিয়েই সে ঢুকে। কিন্তু এখন পাচ্ছে না। ফেইসবুক থেকে “ডিলেটেড কন্টেন্ট” নোটিশ দিচ্ছে। সিহাব একটু বিরক্ত হলো ফেইসবুকের উপর। এরপর সরাসরি তার হোমপেজে ঢুকার চেষ্টা করল। এবার কিন্তু একবারেই কাজ করে গেল। অবাক হয়ে সিহাব লক্ষ্য করল, তার আব্বু আজ ফেইসবুকে এসেছিলেন। প্রায় তিন ঘন্টা আগে তিনি একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানের, “দেখতে দেখতে দুই বছর পূর্ণ হলো রাকিবের...ওর জন্য সবাই দোয়া করবেন।” তাড়াতাড়ি নিজের ইনবক্স চেক করল সিহাব। কি আশ্চর্য! ফেইসবুকে একদম হেডলাইনের মতো কতে লেখা আছে “টুডে ইজ সিহাব জামান’স বার্থডে”, তারপরও আব্বু তাকে একটা উইশ করার কথা ভাবল না?
তারপর কি মনে আব্বুর প্রোফাইলের ছবিগুলো চেক করল সিহাব। আরো একরাশ বিস্ময় নিয়ে সে আবিষ্কার করল যে, আব্বু তাদের ছবিটা প্রোফাইল থেকে রিমুভ করে দিয়েছেন। হঠাৎ মাথায় রক্ত উঠে গেলো সিহাবের। রান্নাঘর থেকে ফল কাটার ছুড়িটা এনে এলোপাতাড়ি কাটল হাতে। ঠিক ধমনীর উপর কিছুক্ষণ ধরে রাখল ছুড়িটা, কিন্তু আজও সাহস হলো না। ঠিক তখনই আলীশা বের হলো রুম থেকে। একটু চমকে উঠল সিহাবকে দেখে। সিহাবের চোখগুলো যেন জ্বলছিল, বলল “হি ডিলেটেড আস। আপু ঐ বা*ড-টা আমাদেরকে তার জীবন থেকে পুরোপুরি সড়িয়ে দিয়েছে।” একটু অবাক হলেও আলীশার বুঝতে সমস্যা হয়নি কিসের কথা বলছে সিহাব। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ও বলল, “আমার কাছে মেডিসিন্স আছে।আয়।”
__________________________________________________
এভাবেই ওদের ছন্নছাড়া জীবন চলে যাচ্ছিল। যে জীবনে শুরু-শেষ কিছুই নেই। উদ্দেশ্যহীন ট্রেনের বগির মতো তারা চলতে থাকে। তাদের সামনে ইঞ্জিন-ও নেই...নেই কোনো গন্তব্যও। এর মাঝে ওরা জানে আব্বুর আরেকটা বাচ্চা হয়েছে, শুনে আম্মু আবারও বিয়ে করবে... সিহাবের কোনো মেয়েকে ভালো লাগে, সেই মেয়ে “ড্রাগ এডিক্ট” ছেলেকে পছন্দ করতে পারে না... আলীশাকে কেউ আবারও কোচিং-এর দেয়ালে, গাড়ির ভিতর চেপে ধরে... আবারও তারা মেডিসিন্স আনে... হিপোক্রেসির গান চলতে থাকে, হাই থেকে আরো হাই ভলিউমে... একটা একটা দিন এভাবেই যেতে থাকে... ইদানিং মেডিসিন্স আরো দামী হয়ে যাচ্ছে, আবার আম্মু টাকা দেয়াও কমিয়ে দিয়েছে। এর মাঝে এক বৃষ্টিভেজা বিষণ্ণ সন্ধ্যায় আলীশা হাটুতে মাথা রেখে জানালার পাশে বসেছে। সিহাব এসে বসল ওর পাশে।
“আপু, এনিথিং রং?”
“সিহাব, তোর কি মনে হয়? আমরা চেষ্টা করলে জীবন থেকে আরো ভালো কিছু পেতে পারতাম?” জানার দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করে আলীশা।
“নাহ আপু। আমাদের ভাগ্যে ওতটুকই লেখা ছিল।”
ওর দিকে ফিরে তাকায় আলীশা। ওর গালের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে তোর?”
“জারিনের বয়ফ্রেন্ডের সাথে মারামারি করেছি।”
“মারামারি করছস? নাকি মার খেয়েছস?”
চুপ করে রইল সিহাব।
“তোকে বলেছিলাম আমার সাথে মার্শাল আর্টের ক্লাসটা নিতে। সেল্ফ প্রোটেকশানে ভালোই কাজে দেয়।”
তবুও কিছু বলল না সিহাব। আরো বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল দুজন। আবার আলীশা বলল, “সাদমান আমাকে প্রপোজ করেছে।”
“প্রপোজ?” অবাক হলো সিহাব। আলীশার ব্যক্তিগত ব্যপারগুলো ও জানে ঠিকই, কিন্তু সে কখনোই এগুলো জিনে সিহাবকে বলে না।
“হুম। সাধারণ প্রপোজাল না। ম্যারেজ প্রপোজাল।” বলে হাতে মুঠো করে ধরে রাখা আংটি-টা দেখাল।
“তুমি কি বললে?” আস্তে করে জিজ্ঞেস করল সিহাব। প্রচন্ড শক পেয়েছে ও।
“কিছু বলিনি। তবে একটা বারের জন্য নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছোট একটু স্বপ্ন মাথায় উঁকি মেরেছিল। ফেমিলির স্বপ্ন। একটা “ওয়ান্টেড” বাচ্চার স্বপ্ন।” বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠল আলীশার।
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সিহাব। আলীশাকে খুব কমই কাঁদতে দেখেছে সে। মাথাটা আবার হাঁটুতে রেখে কাঁদতে লাগল আলীশা, পরাজিত মানুষের কান্না... বেশ কিছুক্ষণ পর একটু সামলে নিয়ে বলল “সিহাব। ওটা একটা প্র্যাঙ্ক ছিল। আমার রিঅ্যাকশন দেখার জন্য সাদমান, রাকিব, সোহেল মিলে এই কাজটা করেছে...” বলে ওপাশ থেকে সেলফোনটা নিয়ে সিহাবের হাতে দিল আলীশা। দ্বিগুন বিস্ময় নিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে সিহাব দেখল ফেইসবুকে আপলোড করা একটি ভিডিও ওপেন করা। আলীশাকে সাদমানের প্রপোজ করার ভিডিও, ক্যাপশন দেয়া “আলীশা গট প্র্যাঙ্ক্ড!!!” ভিডিওটা আর প্লে করল না সিহাব। চুপচাপ বসে রইল। প্রায় আধাঘন্টা পর আলীশা উঠে দাঁড়াল, বলল “ইটস টাইম সিহাব। আই এম গোয়িং। আমার গেইম ওভার। বাই।” থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে থেমে গেলো সিহাব। কি লাভ! গত চার-পাঁচ বছর ধরে এই পরিণতির জন্যই তো অপেক্ষা করেছে তারা। কিন্তু আজ সিহাবের সাহস হচ্ছে না। সে অপেক্ষা করতে লাগল আলীশা কি বলে দেখার জন্য। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেল আলীশা এলোই না। সিহাব হঠাৎ ভাবল, নাকি আলীশা একাই কিছু করে ফেলেছে! তাহলে ওর কি হবে! ও কনফিউজড হয়ে গেল। ধীরে ধীরে উঠে আলীশা ঘরে গিয়ে দরজাইয় টোকা দিল। কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলতেই ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানো আলীশার নিথর দেহটা দেখতে পেল সিহাব। সাথে সাথে বের হয়ে আসল। এখন সে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে তাকে কি করতে হবে। তার নোটকপি থেকে তিনটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে নিল ও। তাতে হিপোক্রেসির “দ্য ডিপারচার”-এর পুরো লিরিক্স-টা লিখল। তারপর রান্নাঘর থেকে এক টুকরো কাপড় এনে ফ্যানের সাথে বাঁধল। তার আপুর সাথে তাকেও যেতে হবে......
“সবকিছু কালো, সবকিছু সাদা, আমরা আবার চোখা মেললাম, এবং দেখলাম বিমানবন্দরের বাতিগুলো জ্বলছে... আমি তাকালাম অনন্ত দৃষ্টিতে, আমি দেখেছি যা কোনোদিন কেউ দেখেনি, আমি সেখানে গিয়েছি যেখানে কেউ কখনো যায়নি... সবসময় আমাদেরকে মুক্তি খুঁজে বেড়াই, আমি আবার-ও আমাদের স্বপ্নে ফিরিয়ে নিবো, কিন্তু কিছু একটা আমাকে জেগে থাকতে বাধ্য করছে... এবং আমাকে কেটে ফেলল ওরা, হয়তো আমার আত্নার খোঁজ করবে, এটি একটি মানুষের সহ্য ক্ষমতার বাইরে... আমাকে বলতে এসো না এটা স্বপ্ন, আমি জানি আমি কি দেখেছি, আমি ততটা জীবিত আছি যতটা আগেও ছিলাম না...”
লেখকের কথাঃ কিছুদিন ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার ছায়া অবলম্ননে সম্পুর্ণ আমার ব্যক্তিগত কল্পনার ভিত্তিতে গল্পটি লিখা হয়েছে। এর সাথে বাস্তব কোনো চরিত্রের কোনো সংযোগ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৮