আধুনিক যুগের ঈদ বন্দী হয়ে গেছে ক্যামেরার চোখে এবং আপলোড দেয়া ফেসবুকের মাঝে ।। আমি কি বলছি আসলে আমি নিজেই জানি না ।। এটা কোন রুটিং লিখা নয় , যদি প্রশ্ন করা হয় লাইক পাওয়ার আশায় লিখছি কিনা,এর উত্তর আমি দিতে পারব না । আমার ক্ষমতা নেই । হয়তো লাইক পাওয়ার আশায় লিখে ফেলা কতগুলি শব্দ । ঈদের ব্যতিক্রম বলতে আমার রুটিং জীবনে সকালে নামাজ পড়া ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না ঈদ কে ! ঈদ আসবে,সকালে নামাজ পড়ে বাড়িতে এসে খাব,কয়েকটা ছবি তুলব কিংবা তুলে দিব ।।
দেয়ালে ঝুলানো স্মৃতি হয়ে ঝুলে থাকবে কিংবা ফেসবুকের ঈদ ডে নামের এ্যালবামে । খুব ভাল কিছু (আসলেই কি ভাল ? ঢাকা শহরে এইগুলা খেয়ে খেয়ে আসলে অভস্থ্য আমরা সবাই ই) খেয়ে বের হব বন্ধুদের সাথে । বন্ধুর বাড়িতে হাসি মুখে আন্টি আন্টি বলে খাবার খাওয়ার অভিনয়টা বধয় ভালই করি আমি ।। হয়তো আমার বাড়িতে কয়েকজন মেহমান আসবে,আদর আপ্যায়ন করব । বুকের মধ্যে তৃব্র বিরক্ত নিয়ে মুখের মধ্যে হাসি ফুটিয়ে বলব “আসুন আংকেল আসুন,বসুন । কি খাবেন বলেন ?? না না আংকেল ঈদের দিনে এই রকম বললে হবে ??
একটু বসে অল্প কিছু খান । এই তো সামান্য কিছু । ” আমিও পারি ,হাসি মুখে নিখুঁত অভিনয় গুলি করে যেতে । একটুও বুজতে দেয় না,সামান্য পরিমাণও না । সমাজের লোকলজ্জার ভয় বলে কথা । আজাদ সাহেবের ছেলে টা অমায়িক না,একটু কেমন জানি ,এই টা যেন না শুনতে হয় তার জন্যে একটু ছলচাতুরী । আমি আসলে একটু খারাপ ,ভালো মানুষ হওয়ার যোজ্ঞতা আমার নেই,আমি তাই ঈদ কে আর কয়টা দিনের মতয় ভাবি । সকালে সালামি কিংবা ঈদী যেই নামেই ডাকুক না কেন ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকা নিয়ে একটা সালাম দিয়ে দিব আমি মুখে হাসি নিয়ে ।। কিন্তু তবুও আমার মনে শান্তি আসে না ,চাওয়ার সাথে সাথেই তো টাকা পাই আমি,প্রতি মাসে কত টাকায় না খরচ করি কারনে কিংবা অকারনে ,দিন শেষে এই সালামি কিংবা ঈদী আসলেই তুচ্ছ । হিশাবের খাতায় বেহিসাবি খরচ । আমি আসলে মানুষ টা সামাজিক না,তাই নামাজ শেষ করে কোলাকুলি না করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকি এবং দেখি কোকাকুলির মাঝেও একটা অদৃশ্য বেড়াজাল ।। সমাজের শ্রেণিভেদে মানুষগুলি কোলাকুলি করছে ।। একটা সুইপারের কিংবা ময়লা নিয়ে যাওয়া মানুষের সাথে তাই হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি পরে কোলাকুলি করতে আমার ইজ্জতে বাঁধে কিংবা তারাও আসে না । তারাও বোঝে । ওরা ভদ্র ঘরের সন্তান ,আমাদের মত অভদ্র না । শুধু আমি বুঝি না ,আমি তাকিয়ে থাকি ,সকালের সেমায় আর আমার মুখে আস্বাদ দেয় না ।। আমি আসলেই একজন ব্যর্থ মুসলমান । শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হয়েও নবীর কথা মানিনা । গরিবদের দুঃখ অনুভব করতে যেই রোমজান ,সেই মানুষগুলিকেই কটাক্ষ করে বলি “জানস দোস্ত, আমার কাজের বেটি না তার মাইয়ারে ২০০০ টাকা দিয়ে পাখি ড্রেস কিনে দিয়েছে ।” আসলে আমার গায়ে আল্গে অদের পোশাক । আমার গায়ে ২৫০০ টাকার পাঞ্জাবি আর অর গাঁয়ে ১৫০০ ,নাহ আমি ওর থেকে অনেক ধনী ,আমার সম্মান ওদের থেকে অনেক বেশি , আমি ভদ্র ঘরের সন্তান । আমি শইতে পারি না মাত্র ৫০০ টাকার ডিফারেন্স ,তাই রাগ করে আম্মুকে বলি তুমি আমাকে পঁচা পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছো । আমি এইটা পরবো না । আমাকে টাকা দাও ,আমি আরেকটা কাপোড় কিনে আনবো । নিজের গায়ে হাজারো টাকার দামের কাপড় মাঝে মাঝে আমার কাছে মূল্যহীন ঠেকে । একসাথে থাকা বন্ধুদের কাপড়ের দাম আমাকে নিরবে কাঁদায় , তবুও আমি হাসি মুখে তাদে সাথে কতাহ বলি । কারন আমি বুর্জোয়া সমাজের অভিনেতা,নিখুত অভিনেতা ।। দশ টাকা দান করে ফটোশপ করে করে একশত টাকার ছবি বসিয়ে ফেসবুকে আপলোড দেয়াই আমার স্বার্থকতা কিংবা ছেড়া একটা কাপড় এক গরিব কে দিয়ে আসা বন্ধু কে কটাক্ষ করে বলা “এতোয় যদি গরিব প্রেম তাইলে নতুন জামায় দিতি,এইটা দিলি ক্যান ? ঢং “। নাহ,আমি গরিব কে পিছনে কিছুই দেয় না । আমার দেয়ার হাত হতে হবে অবশ্যয় হতে হবে ফেসবুকের সামনে । আমার লাইক কমেন্ট কমে গেলে চলবে নাহ । লোকে জানতে হবে আমি হুমায়ুন তোরাব কত বড় দানবির ,তাই আমাকে এইগুলি লিখলে চলবে না । আমাকে লিখতে হবে তাঁহাদের কথা ,সেই সব কথা যা তারা শুনতে ভালোবাসে । আমাকে লিখতে হবে ঈদ আমার জীবন পালটিয়ে দিয়েছে । সবাইকে মেসেজ দিয়ে ঈদ মুবারাক জানাতে হবে ।
আমাকে অভিনয় করা ছাড়লে চলবেনা । আমাকে অভিনয় করে যেতে হবে ,আমার বাবার মত,আমার দাদার মত কিংবা তার দাদার মত । একটু আগে আব্বু ফোন দিল ,কি অবলিলায় বলে দিলাম আমি ভালো আছি,তুমি কেমন আছো ? কি খেলে ? কাল কি করবে ,অনেক কিছুই বলার পরেও সময় দুই মিনিটের বেশি গেল না । আমিও হেঁসে হেঁসে কেটে দিলাম,কাল কথা বলব বলে । পিতা-পুত্রের ভালো থাকার একটু অভিনয় হয়ে গেল । আমি আসলেই কি ভালো আছি ,আমি জানিনা । আমার জানার কোন আগ্রহও জন্মায় না । আমি কোনরকমে ফোন কেটে ফেলে ফেসবুকে বসতে পারলেই আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি ।। আমার আর ভালো লাগে না ,ইচ্ছে হয় না । তবে মাঝে মাঝে ভাবতে ভালো লাগে পাখিওয়ালা (পক্ষি ওয়ালা) দুই টাকার নোট কেউ হাতে ধরিয়ে দিক । আমি সারা বাড়ি দৌড়িয়ে বেড়ায় । দুই টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে বরফ(আইস্ক্রিম ) কিনি, সাথে কিছু সম্পাপড়ি । আমার শখ জাগে এক বওল(গামলা) সেমায় আমি নিজেই খেয়ে ফেলি ।। মাঝে মাঝে শখ গুলি ভাবতে ভালই লাগে । অদ্ভুত ভালো লাগা তৈরি হওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ।।
মিথ্যের দেয়ালে তীর্থের কাক হয়ে তাকিয়ে থাকার মাঝে । আবার ভাবি কেউ যদি এখন দুই টাকা হাতে ধরিয়ে দেয় তাহলে তাকে আমি কি বলব ? মুখের হাঁসিটি কি তখনো ফুটবে,দশ কিংবা বার বছর আগের মত ?? বাজারে কি দুই টাকা দিয়ে বরফ আর সম্মপাপড়ি খেতে পারব পেট পুরে ? কি জানি । আর ভালো লাগে না । এই ল্যাপ্টপের স্ক্রিন অসহ্য হয়ে উঠে । ঈদ আসে , ধর্ম যখন ইসলাম তখন বছরে দুই ঈদ করতেই হবে,নাহলে লোকে মন্দ বলবে ।। তাই সমগ্র জীবনই যেখানে অভিনয় করে বেড়ায়,আর নাহয় একটা দিন “রোমজানের ওই রোজার শেষে গাইতে গাইতে শেষ করে দেয় ।” মাত্র তো ২৪ ঘন্টা ।।