somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ আল্লামা ইকবালের মৃত্যু বার্ষিকী।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরব আমাদের,চীন আমাদের,
হিন্দুস্থান আমাদের, আমরা মুসলিম,
বিশ্বজগত্‌ আমাদের বাসস্থান ।
(আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল)



ইকবাল একদা স্বপ্নে দেখে ছিলেন পাকিস্তান নামের একটি মুসলিম রাষ্টের। তার এই স্বপ্নের সাথে একত্ততা উনুভব করেছিল বাংলার মধ্যবিত্ত মুসলমান সমাজ। বাংলায় ইকবালের স্বপ্ন অনেকটা বিক্রিত হয়ে হলেও বাস্তবিত হয়েছিল। অথচ ইকবালের কবি সত্তা ছিল অখণ্ড ভারতের চেতনায় দীপ্তিমান্‌। পাকিস্তান নামক উদ্ভট রাষ্টের ফলে ইকবাল চর্চা ছিল সরকারী সমর্থন পুষ্ট। এ জন্যে একসময় ইকবাল চর্চা ছিল অবিরল ব্যাপার,তবে কবি ইকবাল থেকে পাকিস্তানের স্বপ্ন দ্রষ্টা ইকবাল ছিল মূল আলোচনার বিষয় কিন্তু দার্শনিকতা এবং কবিত্বের এই দুই কারনেই ইকবাল রবীন্দ্রনাথের মত প্রাসঙ্গিক,তাই পাকিস্তানের চেতনা মুক্ত এই বাংলাদেশে ইকবালের দার্শনিকতা এবং কবিত্ব নিয়ে জ্ঞান থেকে শিক্ষিত বাঙালি মাত্রই কাম্য। শুধু পাকিস্তান বিরোধীতার জন্যে কেন আমরা এই জ্ঞানী মানুষ থেকে দূরে থাকব। রবীন্দ্রনাথ যেমন কোন দেশের না, কাজি নজরুল যেমন কোনো দেশের না,তেমনি ইকবাল ও কোনো দেশের সম্পত্তি না।



আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের জন্ম নভেম্বর ৯, ১৮৭৭; শিয়ালকোট, পাঞ্জাব ।তিনি ছিলেন বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের মুসলিম কবি, দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদ। তাঁর ফার্সি ও উর্দু কবিতা আধুনিক যুগের ফার্সি ও উর্দু সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইকবাল তাঁর ধর্মীয় ও ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনের জন্যও বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। তাঁর একটি বিখ্যাত চিন্তা দর্শন হচ্ছে ভারতের মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। এই চিন্তাই বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। তাঁর নাম মুহাম্মদ ইকবাল হলেও তিনি আল্লামা ইকবাল হিসেবেই অধিক পরিচিত। আল্লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে শিক্ষাবিদ । তাঁর ফার্সি সৃজনশীলতার জন্য ইরানেও তিনি ছিলেন সমধিক প্রসিদ্ধ; তিনি ইরানে ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত।


ইকবাল ১৯০৫ সাল হতে লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন । তিন বৎসরের আইনের ডিগ্রী লাভ করেন কেম্বব্রিজ বিশ্ববিদ্যালের লিঙ্কনস্ ইন হতে। আর ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন জার্মানীর মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় হতে।১৯০৮ সালে ইকবাল ইউরোপ হতে দেশে ফিরে আসেন এবং লাহোরের সরকারী কলেজে যোগদান করেন। এই সময় একই সাথে তিনি আইন ব্যবসা, শিক্ষাদান ও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। কিন্তু মূলত অর্থনৈতিক কারণেই তিনি ১৯০৯ সালে তিনি সার্বক্ষণিক আইন পেশায় নিয়োজিত হন। কিন্তু আয় রোজগারের ক্ষেত্রে এখানেও তিনি তেমন ভালো করতে পারেননি। এর কারণ তাঁর সাহিত্য প্রীতি এবং সেজন্যে সময় ব্যয় করা। তিনি তাঁর পিতাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কবিতার বিনিময়ে কোনো অর্থ তিনি গ্রহণ করবেন না। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে তিনি সে প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেননি। ইতোমধ্যেই বিখ্যাত কবি ইকবালকে বৃটিশ সরকার তাঁকে “আসরার-ই-খোদায়ী” পুস্তকের জন্য নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।



আল্লামা ইকবাল অমর হয়ে আছেন তার কয়েকটি কবিতা ও রচনার জন্য। এরমধ্যে আসরার ই খুদি, শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া, দ্যা রিকনস্ট্রাকশন ওফ রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম, বাআল ই জিবরাইল, জাভেদ নামা, ইত্যাদি অত্যন্ত গভীর দার্শনিক ভাব সমৃদ্ধ রচনা। আল্লামা ইকবালের লেখনিতে যে ইসলামী পূনর্জাগরন এর আওয়াজ উঠেছিল তা সমসাময়িক অনেক ব্যাক্তি ও আন্দোলন কে সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত করেছে। তার দর্শনে প্রভাবিত হয়েছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ যিনি পাকিস্তানের কায়েদে আজম। তার ইসলামী পূনর্জাগরন এর চেতনাকে সারা জীবনের তরে জীবনোদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহন করে একটি পূনর্জাগরনী দলের জন্ম দেন তার স্নেহধন্য সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী। যার প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলামী পূনর্জাগরনের স্বপ্ন দেখেছিল। আল্লামা ইকবাল শিয়া চিন্তানায়কদেরকেও প্রভাবিত করেছিলেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের চিন্তানায়ক ড আলী শরিয়তীও আল্লামা ইকবাল দ্বারা সাংঘাতিক প্রভাবিত ছিলেন ।

ইকবালের যে কয়টা বই বাংলাতে উনুবাদ হয়েছে তার মধ্যে শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া সর্বোচ্চ। মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ,গোলাম মোস্তফা,ফররুখ আহমেদ,সায়েদ আলী আহসান, মনিরুদ্দিন উইসুফ সহ আরও অসংখ্য লেখক এই বই অনুবাদ করেছেন । ২১ এপ্রিল ১৯৩৮ সালে পানজাবে তিনি মারা যান। বিখ্যাত কবিতার কিছু অংশ ।

শিকওয়া বা অভিযোগ

ক্ষতিই কেন সইব বল ? লাভের আশা রাখব না ?
অতীত নিয়েই থাকব বসে- ভবিষ্যত কি ভাবব না ?
চুপটি করে বোবার মতন শুনব কি গান বুলবুলির
ফুল কি আমি ? ফুলের মতোই রইব নীরব নম্রশির ?
কন্ঠে আমার অগ্নিবাণী-সেই সাহসেই আজকে ভাই
খোদার নামে করব নালিশ ! মুখে আমার পড়ুক ছাই !

তথ্য সূত্র উইকিপেডিয়া,
এবং শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×