আরব আমাদের,চীন আমাদের,
হিন্দুস্থান আমাদের, আমরা মুসলিম,
বিশ্বজগত্ আমাদের বাসস্থান ।
(আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল)
ইকবাল একদা স্বপ্নে দেখে ছিলেন পাকিস্তান নামের একটি মুসলিম রাষ্টের। তার এই স্বপ্নের সাথে একত্ততা উনুভব করেছিল বাংলার মধ্যবিত্ত মুসলমান সমাজ। বাংলায় ইকবালের স্বপ্ন অনেকটা বিক্রিত হয়ে হলেও বাস্তবিত হয়েছিল। অথচ ইকবালের কবি সত্তা ছিল অখণ্ড ভারতের চেতনায় দীপ্তিমান্। পাকিস্তান নামক উদ্ভট রাষ্টের ফলে ইকবাল চর্চা ছিল সরকারী সমর্থন পুষ্ট। এ জন্যে একসময় ইকবাল চর্চা ছিল অবিরল ব্যাপার,তবে কবি ইকবাল থেকে পাকিস্তানের স্বপ্ন দ্রষ্টা ইকবাল ছিল মূল আলোচনার বিষয় কিন্তু দার্শনিকতা এবং কবিত্বের এই দুই কারনেই ইকবাল রবীন্দ্রনাথের মত প্রাসঙ্গিক,তাই পাকিস্তানের চেতনা মুক্ত এই বাংলাদেশে ইকবালের দার্শনিকতা এবং কবিত্ব নিয়ে জ্ঞান থেকে শিক্ষিত বাঙালি মাত্রই কাম্য। শুধু পাকিস্তান বিরোধীতার জন্যে কেন আমরা এই জ্ঞানী মানুষ থেকে দূরে থাকব। রবীন্দ্রনাথ যেমন কোন দেশের না, কাজি নজরুল যেমন কোনো দেশের না,তেমনি ইকবাল ও কোনো দেশের সম্পত্তি না।
আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের জন্ম নভেম্বর ৯, ১৮৭৭; শিয়ালকোট, পাঞ্জাব ।তিনি ছিলেন বিভাগপূর্ব ভারতবর্ষের মুসলিম কবি, দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদ। তাঁর ফার্সি ও উর্দু কবিতা আধুনিক যুগের ফার্সি ও উর্দু সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইকবাল তাঁর ধর্মীয় ও ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনের জন্যও বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। তাঁর একটি বিখ্যাত চিন্তা দর্শন হচ্ছে ভারতের মুসলমানদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। এই চিন্তাই বর্তমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। তাঁর নাম মুহাম্মদ ইকবাল হলেও তিনি আল্লামা ইকবাল হিসেবেই অধিক পরিচিত। আল্লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে শিক্ষাবিদ । তাঁর ফার্সি সৃজনশীলতার জন্য ইরানেও তিনি ছিলেন সমধিক প্রসিদ্ধ; তিনি ইরানে ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত।
ইকবাল ১৯০৫ সাল হতে লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন । তিন বৎসরের আইনের ডিগ্রী লাভ করেন কেম্বব্রিজ বিশ্ববিদ্যালের লিঙ্কনস্ ইন হতে। আর ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন জার্মানীর মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় হতে।১৯০৮ সালে ইকবাল ইউরোপ হতে দেশে ফিরে আসেন এবং লাহোরের সরকারী কলেজে যোগদান করেন। এই সময় একই সাথে তিনি আইন ব্যবসা, শিক্ষাদান ও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। কিন্তু মূলত অর্থনৈতিক কারণেই তিনি ১৯০৯ সালে তিনি সার্বক্ষণিক আইন পেশায় নিয়োজিত হন। কিন্তু আয় রোজগারের ক্ষেত্রে এখানেও তিনি তেমন ভালো করতে পারেননি। এর কারণ তাঁর সাহিত্য প্রীতি এবং সেজন্যে সময় ব্যয় করা। তিনি তাঁর পিতাকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কবিতার বিনিময়ে কোনো অর্থ তিনি গ্রহণ করবেন না। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে তিনি সে প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেননি। ইতোমধ্যেই বিখ্যাত কবি ইকবালকে বৃটিশ সরকার তাঁকে “আসরার-ই-খোদায়ী” পুস্তকের জন্য নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।
আল্লামা ইকবাল অমর হয়ে আছেন তার কয়েকটি কবিতা ও রচনার জন্য। এরমধ্যে আসরার ই খুদি, শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া, দ্যা রিকনস্ট্রাকশন ওফ রিলিজিয়াস থট ইন ইসলাম, বাআল ই জিবরাইল, জাভেদ নামা, ইত্যাদি অত্যন্ত গভীর দার্শনিক ভাব সমৃদ্ধ রচনা। আল্লামা ইকবালের লেখনিতে যে ইসলামী পূনর্জাগরন এর আওয়াজ উঠেছিল তা সমসাময়িক অনেক ব্যাক্তি ও আন্দোলন কে সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত করেছে। তার দর্শনে প্রভাবিত হয়েছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ যিনি পাকিস্তানের কায়েদে আজম। তার ইসলামী পূনর্জাগরন এর চেতনাকে সারা জীবনের তরে জীবনোদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহন করে একটি পূনর্জাগরনী দলের জন্ম দেন তার স্নেহধন্য সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী। যার প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলামী পূনর্জাগরনের স্বপ্ন দেখেছিল। আল্লামা ইকবাল শিয়া চিন্তানায়কদেরকেও প্রভাবিত করেছিলেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের চিন্তানায়ক ড আলী শরিয়তীও আল্লামা ইকবাল দ্বারা সাংঘাতিক প্রভাবিত ছিলেন ।
ইকবালের যে কয়টা বই বাংলাতে উনুবাদ হয়েছে তার মধ্যে শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া সর্বোচ্চ। মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ,গোলাম মোস্তফা,ফররুখ আহমেদ,সায়েদ আলী আহসান, মনিরুদ্দিন উইসুফ সহ আরও অসংখ্য লেখক এই বই অনুবাদ করেছেন । ২১ এপ্রিল ১৯৩৮ সালে পানজাবে তিনি মারা যান। বিখ্যাত কবিতার কিছু অংশ ।
শিকওয়া বা অভিযোগ
ক্ষতিই কেন সইব বল ? লাভের আশা রাখব না ?
অতীত নিয়েই থাকব বসে- ভবিষ্যত কি ভাবব না ?
চুপটি করে বোবার মতন শুনব কি গান বুলবুলির
ফুল কি আমি ? ফুলের মতোই রইব নীরব নম্রশির ?
কন্ঠে আমার অগ্নিবাণী-সেই সাহসেই আজকে ভাই
খোদার নামে করব নালিশ ! মুখে আমার পড়ুক ছাই !
তথ্য সূত্র উইকিপেডিয়া,
এবং শিকওয়া ও জবাবে শিকওয়া