somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার পড়ুন- রিলিফ ওয়ার্ক (শেষ পর্ব)

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হামিদ একদিন একটি কেন্দ্র পরিদর্শন করিতে গিয়াছে। দেখিল রিলিফ কমিটির তাম্বুর সামনে কাতার করিয়া শ'দুই অর্ধনগ্ন পুরুষ-স্ত্রী, ছেলে-বুড়ো, বালক-বালিকা টিকিট হাতে করিয়া বসিয়া আছে। অর্ধনগ্ন যুবতীর ছেড়া নেকড়ায় মুখ ও বুক ঢাকিয়া জড়সড় হইয়া মাটির সঙ্গে মিশিয়া আছে, তবু একহাতে ইষৎ উচু করিয়া টিকিট ধরিয়া আছে। কারণ রিলিফ অফিসারের নিয়ম কড়া। সাহায্য প্রার্থীর সকলকেই উপস্থিত হইতে হইবে এবং টিকিট দেখাইয়া সাহায্য গ্রহণ করিতে হইবে । মেয়েদের কোলে অশান্ত শিশুগুলি ক্ষুধার তাড়নায় হাত-পা ছুড়াছুড়ি করিয়া মা দের ছেড়া নেকড়ায় বুক ঢাকিবার চেষ্টা বার বার ব্যর্থ করিয়া দিতেছে।
হামিদের গা কাঁটা দিয়া উঠিল। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মীকে সে বলিল : ইহাদের বসাইয়া রাখিয়াছেন কেন বিদায় করিয়া দিন না।
হামিদের স্বরে একটু বিরক্তির ভাব ফুটিয়া উঠিল।
কেন্দ্রকতা হামিদের বিরক্তিতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হইয়া বলিলেন : ইহাদের গণনা শেষ হয় নাই। কই হে নগেন, ইহাদের রেজিস্টারিটা বাহির কর ত ।
নগেন্দ্র নামক কর্মীটি একটি রুল-করা বাঁধাই বড় খাতা বাছিয়া বাহির করিয়া কাঁতারের সামনে গিয়া দাড়াইয়া উচ্চস্বরে নাম ডাকিতে লাগিল। আর কাঁতারের মধ্যে হাজির হাজির জবাব আসিতে লাগিল। কিছু কিছু মুশকিল হইতে লাগিল যুবতী স্ত্রীলোকদের লইয়া। তাহারা একেবারে কিছুতেই উচ্চস্বরে "হাজির ঘোষণা করিতেছিল না। কয়েক বারের চেষ্টায় এবং উচ্চস্বরে চিৎকার না করিয়ে কিছুতেই সাহায্য দেওয়া হইবে না এই প্রকারের শসানিতে হাজির ঘোষণা করিতে রাজি হইতেছিল।
নাম ডাক শেষে উহাদের টিকিট চেক শুরু হইল। একজন কর্মী কাতারের এক মাথা হইতে লাল-নীল পেন্সিল দিয়া টিকিটে দাগ দিয়া যাইতে লাগিল । আরেকজন তার পিছে পিছে পেট বুৰিয়া এক ছটাক করিয়া চাউল বিতরণ করিয়া যাইতে লাগিল। অধিকাংশ সাহায্যার্থী আগ্রহভরে কাপড়ের আচল পাতিয়া নীরবে ভিক্ষা গ্রহণ করিতে লাগিল। মাত্র দুই একটা বেয়াড়া লোক এতে কি হবে বাবু বলিয়া গোলমাল করিতে উদ্যত হইল। কিন্তু কর্মীদের ধমক ও চোখ রাঙানিতে তাহারা চুপ করিয়া বিড়বিড় করিয়া কি বকিতে থাকিল।

প্রায় অর্ধেক লোককে সাহায্য দেওয়া হইয়াছে, এমন সময় তাম্বুর সামনে একখানা নৌকা ভিড়িল ।
দুইজন ভদ্রলোক নৌকা হইতে নামিলেন। কেন্দ্রকতা আসুন চক্রবর্তী' মশাই, আসুন চৌধুরী সাহেব" বলিয়া তাহাদিগকে অভ্যর্থনা করিয়া হামিদের নিকট আনিলেন এবং লোহার চেয়ারি বসিতে বলিলেন।
তারপর তিনি হামিদের দিকে চাহিয়া বলিলেন, ইনস্পেক্টর সাৰ, এরা দুইজন রঘুনাথপুরের শ্রীযুক্ত যতীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও শমশের আলী চৌধুরী।

আহা! বন্যায় ভদ্রলোকদের যা অবস্থা হইয়াছে, তা আর বলিবার নয়। গোলার ধান চাল সব বন্যায় ভাসাইয়া নিয়াছে। কই হে শরৎ, বাবুদের চাল-ডালটা নৌকায় পৌছাইয়া দাও ত ।
যতীন বাবু ও চৌধুরী সাহেব ব্যস্ত হইয়া বলিলেন : না, না, এরা দিয়া আলিবে কেন, আমাদের সংগেই লোক আছে। কইরে রামটহল, ইনাতুল্লাহকে সংগে নিয়ে এখানে আয় ত।
চৌকিদারী ইউনিফর্ম পরা লোক নৌকা হইতে ছালা ও ডালি লইয়া নামিয়া আসিল ।
এতক্ষণ সমবেত কৃষকগণের মধ্যে যাহারা চাউল বিতরণ করিতে ছিল, তাহারা সকলেই বিতরণ-কার্য অর্ধ সমাপ্ত রাখিয়া ক্রস্তব্যস্ত চাউল-ডাউল মাপিয়া দুই বস্তা চাউল, এক ডালি ডাউল, এক ডালি লবণ মরিচাদি দিয়া দুইজনকে বিদায় করিল।
ভদ্ৰলোকদ্বয় উঠিয়া সকলকে ধন্যবাদ দিয়া হামিদকে নমস্কার ও আদাৰ দিয়া নৌকায় উঠিলেন।
কেন্দ্রকতা বন্যায় উহাদের ক্ষতির পরিমাণ সবিস্তার হামিদের নিকট বর্ণনা করিতেছিলেন ।
সেদিকে হামিদের কান ছিল না। সে স্তম্ভিতের মতো বসিয়া সম্মুখস্থ অর্ধনগ্ন নরকঙ্কালগুলির দিকে চাহিয়া ছিল। তার অজ্ঞাতেই বোধ হয় তার চক্ষে অশ্রু ঠেলিয়া উঠিতেছিল।
অতিকষ্টে প্রকৃতিস্থ হইয়া হামিদ কঠোর ভাষায় কেন্দ্রকতাকে জিজ্ঞাসা করিল : এঁদের দুইজনকে কতজনের খোৱাক দিলেন?
কেন্দ্রকতা উৎসাহভরে বলিলেন : এঁদের বিরাট ফ্যামিলি। এতক্ষণ তবে আর বলিলাম কি আপনার কাছে? জোত-জমি বাড়িতে দালান-কোঠা...
বাধা দিয়া হামিদ বলিল - কই ইহাদের ত টিকিট চেক করিলেন না?
কেন্দ্রকতা বিস্মিত হইয়া বলিলেন : বলেন কি? ইহাদের মতো লোক কি আর ফাঁকি দিয়া অতিরিক্ত চাউল লইতে পারে?
হামিদ রাগ সামলাইতে পারিল না। ঈষৎ ব্যঙ্গস্বরে বলিল - এই সমস্ত অভুক্ত কৃষক কি তবে ফাঁকি দিয়া অতিরিক্ত চাউল নেয়?
কেন্দ্রকতা অভিক্ষের মাতব্বরির স্বরে হাসিয়া বলিলেন : "আপনি রাখেন না এদের বদমায়েশির খবর। ইহারা-"
হঠাৎ গোলমালে তাহদের কথোপকথনে বাধা পড়িল ।
একটা বুড়ো লোক ও মধ্যবয়সী স্ত্রীলোককে কর্মীরা ধরিয়া টানাটানি করিয়া তাহাদেৱ দিকে আনিবার চেষ্টা করিতেছিল। স্ত্রীলোকটার কাপড় ধরিয়া তিন চারটা ন্যাংটা ছেলে-মেয়ে পিছন হইতে তাহাকে টানিতে ছিল এবং চিৎকার করিয়া কাঁদিতেছিল।
ব্যাপার কি দেখিবার জন্য হামিদ আসন হইতে উঠিতেই কেন্দ্রকতা তার জামার কোণ ধরিয়া বলিলেন : আপনি বসুন না, এখানেই ওদের লইয়া আসিবে।
হামিদ সৰলে জামা ছাড়াইয়া লইয়া অগ্রসর হইল। হামিদ গিয়া দেখিল বুড়াটাকে কর্মীরা দু-এক ঘা চর-চাপড় মারিতেছে এবং মেয়েলোকটার গলায় কাপড় লাগাইয়া টানাটানি করিতেছে।
হামিদ কাছে যাইতেই উহারা হাউমাউ করিয়া কি বলিতে চাহিল । কর্মীরা ধমক দিয়া বলিল : বেশি গোলমাল করৰি তো পুলিশে দিব।
পুলিশের নাম শুনিয়া অপরাধীদ্বয় চুপ করিল। হামিদ সকলকে শান্ত হইতে বলিয়া গোলমালের কারণ জিজ্ঞাসা করিল।
নগেন্দ্র নামক কর্মীটি তাহার দিকে অগ্রসর হইয়া বলিল : মি. ইনস্পেক্টর, ইহাৱা অতিশয় বদমাযেশ লোক। ইহারা টিকিটের পেন্সিলের দাগ মুছিয়া ফেলিয়া দুইবার চাউল লইয়াছে।
হামিদ কঠোর দৃষ্টিতে অপরাধীদ্বয়কে বলিল , একথা সত্যি?
উহাৱা মাথা হেট করিয়া রহিল। কোনো উত্তর দিল না। হামিদের বিষম রাগ হইল কঠোরতর স্বরে চিৎকার করিয়া বলিল : কেন এমন অন্যায় কাজ করিলে উত্তর দাও।
জওয়াবে হতভাগ্য ও হতভাগিনী ভয়ে কাঁপিতে-কাঁপিতে যা বলিল, তার সারমর্ম এই যে, তাহাদের এত পোষ্য এবং তাদের এত ক্ষুধা যে, যে চাউল তাদের দেওয়া হয়, তাদের পেটের এক কোণাও ভরে না। তাই নিতান্ত নিরুপায় হইয়া তাহারা এই ফন্দি বাহির করিয়াছে।

কেন্দ্রকতা বিজয় গৌরবে হামিদের দিকে চাহিয়া হাসিলেন এবং অপরাধীদের দিকে চাহিয়া মেঘ গৰ্জনে আদেশ করিলেন : এই অপরাধের শাস্তিস্বরূপ আগামী দুইদিন তোমাদিগকে কোনো সাহায্য দেওয়া হইবে না।
নগেন্দ্র অপরাধীদ্বয়ের টিকিটে কালো দুইটি করিয়া দাগ দিয়া তাহাদের টিকিট ফিরাইয়া দিল ।
দণ্ডিত হতভাগ্যদ্বয় মাথা নিচু করিয়া কম্পিত পদে চলিয়া গেল। অন্যান্য সাহায্যপ্রার্থীরাও তাহাদিগকে উদ্দেশ্য করিয়া সমস্বরে অনেক টিটকারী দিল । কেহ-কেহ আশাব্য গালি-গালাজও দিল ।

কৃষকদের এই নীচতায় হামিদ ব্যথিত হইল বটে, কিন্তু সেবা কার্যে চাষাভদ্রলোক পার্থক্য করা হইতেছে, ইহাতেও সে খানিকটা মনঃপীড়া বোধ করিল।
কেন্দ্রীয় সমিতিতে ইহার কোন প্রতিকার করা যায় কিনা দেখিবার জন্য হামিদ একদিনের জন্য সদরে ফিরিয়া আসিল ।
সমিতির অফিসে গিয়া সে দেখিল, নেতারা সভা করিতেছেন । হামিদকে দেখিয়া সকলে আহলাদ প্রকাশ করিলেন বেং সভাশেষে সেবা-কার্যের বিবরণ শুনিবেন বলিলেন। হামিদ নীরবে সভাগৃহে বসিয়া সভার কার্য দেখিতে লাগিল এবং সভাশেষে নিজের বক্তব্য নিবেদন করিল।
সভায় অন্যান্য প্রস্তাবের সংগে এই একটি প্রস্তাবও সর্বসম্মতিক্রমে পাস হইল যে মিডল ক্লাস ভদ্রলোকদের সাহায্য করিবার জন্য সতন্ত্র ফান্ড খোলা হউক এবং মিডল ক্লাস ভদ্রলোকদের নিকট প্রাপ্ত সমস্ত টাকা দুঃস্থ মিডল ক্লাস ভদ্ৰলোকদের সেবা-কার্যের জন্য ইয়ারমার্ক করিয়া রাখা হউক ।
ইহার পর নিজের বক্তব্য সভার কাছে উপস্থিত করিবার প্রবৃত্তি আর হামিদের রইল না। হামিদ সেই দিনই রিলিফ কেন্দ্রে চলিয়া গেল ।
পরদিন সকালে সমস্ত সাহায্যপ্রার্থী যথারীতি কাতার করিয়া জমা হইল। কাতারের মধ্যে গতকল্যকার দণ্ডিত অপরাধীদ্বয়কেও দেখা গেল।
কেন্দ্রকতার আদেশে উহাদিগকে গলাধাক্কা দিয়া বাহির করিয়া দেওয়া হইল হামিদের সুপারিশের উত্তরে কেন্দ্রকতা বলিলেন যে, তিনি কোনক্রমেই ডিসিপ্লিন ভাংগিতে প্রস্তুত নহেন।
দণ্ডিত অপরাধীদ্বয় ক্ষুধার্ত পুত্র-কন্যাসহ চোখের পানি মুছিতে মুছিতে চলিয়া গেল।
অন্যান্য সাহায্য-প্রার্থী আগের দিনের মতো আর টিটকারি দিলো না, বরঞ্চ সকলেই গোপনে গোপনে এক-আধটু সহানুভূতি দেখাইল এবং ভারাক্রান্ত মনে বিদায় হইল ।

তৃতীয় দিনও অপরাধীদ্বয় আসিয়া কাতারের মধ্যে লুকাইয়া রহিল। কিন্তু তাদের নির্বোঁধ ছেলে-মেয়ের জন্য অধিক্ষণ লুকাইয়া থাকিতে পারিল না, ধরা পড়িল। কর্মীরা তাহাদিগকে কিল-ঘুষি দিয়া বাহির করিয়া দিল। অপর সাহায্য প্রার্থীদের অনেকে তাহাদের হইয়া অনুনয় বিনয় করিল, কেহ সুপারিশ করিল। কথাবার্তায় জানা গেল যে, আগেকারদিন উহাদিগকে সাহায্য না দেওয়ায় অন্যান্য সকলের অসুবিধা হইয়াছে; কেননা অন্যান্য সকলে তাহাদের ভাগ হইতে কিছু কিছু দিয়া উহাদিগকে খাওয়াইয়াছে। অভুক্ত নাবালক শিশু কন্যাগুলিকে অনাহারে রাখিয়া তাহারাই বা পেটে ভাত দেয় কি করিয়া।

ভিখারীদের এই দাতাগিরির জন্য কেন্দ্রকতা রাগে অগ্নিশৰ্মা হইলেন। উপস্থিত সমস্ত সাহায্য-প্রার্থীকে মুখ ভেংচায়া গালি দিয়া তিনি বলিলেন : বেটারা ভিক্ষার চাউল দিয়া আবার দানছত্র খুলিয়াছিল? চোরকে যারা সাহায্য করিয়াছে, সে সব বেটা চোর। কোনো বোটাকেই আজ আর সাহায্য দিব না।

সেদিনকার বিতরণ বন্ধ হইয়া গেল। সমবেত সাহায্য-প্রার্থীরা অনেক অনুনয় বিনয় করিল। কিন্তু কোন ফল হইল না। কেন্দ্রকর্তা হামিদের অনুরোধেও তাহার সিদ্ধান্ত বদলাইতে রাজি হইলেন না। অবশেষে জনতার গলায় প্রতিবাদের ভাষা ফুটিয়া উঠিল। ভদ্রলোকদের খাতির করা হয়, গরীবের সামান্য অপরাধও মাফ করা হয় না, ইত্যাদির কথা জনতার মধ্য হইতে শোনা যাইতে লাগিল। কেন্দ্রকর্তার ধৈর্যের বাঁধ ভাংগিয়া গেল। জোরে চিৎকার করিয়া তিনি চাউলের বস্তা তাম্বুতে তুলিবার আদেশ দিলেন। হামিদকে কিছু বলিবার সুযোগ না দিয়া তিনি তাকে একরূপ জোর করিয়া তাম্বুর মধ্যে লইয়া গেলেন। কি কর্তব্য কিছু স্থির করিতে না পারিয়া হামিদও অগত্যা কেন্দ্রকর্তার সংগে তাম্বুতে প্রবেশ করিয়া খাটিয়ায় শুইয়া পড়িল এবং ভাবিতে লাগিল ।
হামিদ ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। কেন্দ্রকর্তার হাকাহাকিতে ঘুম ভাংগিয়া গেল। আবার কিসের গণ্ডগোল জিজ্ঞাস করিয়া জানিতে পারিল, সাহায্য না পাওয়ায় মাঝিরা আজ আর মাছ দিয়া যায় নাই। কাজেই কর্মীদের জন্য আজ আলু ভর্তা আর ডাল ছাড়া কিছু রান্না করা হয় নাই। ইহাতেই কেন্দ্রকর্তার এই রাগারগি ও হাঁকাহাঁকি ।

খাওয়ার আয়োজনও ভাল ছিল না। হামিদেরও ক্ষুধা ছিল না। কাজেই বিশেষ কিছু না খাইয়াই হামিদ তাম্বুর বাহির হইয়া পল্লীতে প্রবেশ করিল। দেখিল অভুক্ত কৃষকেরা এক-এক জায়গায় জটলা করিয়া কি পরামর্শ করিতেছে। হামিদকে দেখিয়াই সকলে ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িল। হামিদের অনেক ডাকাডাকিতেও কেহ সাড়া দিল না।
মনটা তার অত্যন্ত খারাপ ছিল। এদিকে ওদিকে ঘুরিয়া সন্ধ্যায় তাম্বুতে ফিরিয়া দেখিল, কর্মীরা আন্ডা রুটি ও চা লইয়া মাতিয়া গিয়াছে। হামিদ নিঃশব্দে নিজের বিছানায় গিয়া শুইয়া পড়িল। অল্পক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমাইয়া পড়িল ।

হঠাৎ কোলাহলে হামিদের ঘুম ভাংগিয়া গেল। চোর" ডাকাত" ইত্যাদি চেচাচেচি ও কান্নাকাট তার কানে গেল। সে ধড়মড় করিয়া উঠিল। প্রায় সকলেরই কাছে রিলিফ কমিটির টাকায় কেনা এক একটা এভার-রেডি ব্যাটারিসহ গ্রীনউইচ টর্চলাইট ছিল। হামিদকেও একটা দেওয়া হইয়াছিল। টচলাইটের আলো ফেলিয়া তাম্বুও তাহার চতুর্দিক আলোকিত করা হইল। দেখা গেল ১০/১৫ জন অর্ধনগ্ন লোক এক-এক বস্তা চাউল মাথায় লইয়া যথাশক্তি দ্রুতগতিতে এদিক ওদিক পালাইতেছে।
কর্মীরা ছিল কংগ্রেসের ড্রিল-করা ভলান্টিয়ার। তাদের অনেকে আবার ডনগির কুস্তিগির ও যুযুৎসুবিদ। পক্ষান্তরে পাড়াগায়ের এই চোরেরা ছিল অনেক দিনের ক্ষুধিত সুতরাং দুর্বল। তারপর চাউলের বস্তা তাদের মাথায় ছিল। কাজেই অল্পক্ষণেই তাদের অনেকেই ধরা পড়িল ।
রাত্রেই থানায় খবর দেওয়া হইল। দারোগা সাহেব একপাল পুলিশসহ অকুস্থলে হাজির হইলেন। ধৃত আসামীদিগকে আচ্ছা করিয়া সাপমারা মার দিলেন। মারের চোটে পলায়িত চোরদেরও নাম বাহির হইল।
সূর্যোদয়ের পূর্বেই মধুপুর গ্রামের শতাধিক ছেলেবুড়াকে হাত কড়া পরা অবস্থায় রিলিপ কমিটির তাম্বুর সম্মুখে জমা করা হইল। দারোগা সাহেব সাড়ম্বরে হামিদদের সকলের জবানবন্দি গ্রহণ করিলেন। জবানবন্দি শেষ করিয়া এক পাল অভুক্ত অর্ধনগ্ন নরকংকালকে ভেড়ার পালের মতো খেদাইয়া থানার দিকে লইয়া গেলেন।
বিচারে শতাধিক লোকের কারাদণ্ডের আদেশ হইল। রিলিফ কার্যের ন্যায় পবিত্র ধর্মকার্যে বাধাদানকারী এই সমস্ত নরপিশাচের বিচার দেখিবার জন্য অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি, রিলিফ কমিটির সমস্ত মাতব্বর সদস্য ও শতাধিক ভলান্টিয়ার আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। হাকিমের রায় হওয়া মাত্র তাহারা সমস্বরে জয়ধ্বনি করিয়া উঠিলেন : জয় রিলিফ কমিটি কি জয় ।
সমবেত দর্শকমণ্ডলীর প্রায় সকলেই ভদ্রলোক। কাজেই এই নরপিশাচের নীচতায় সকলেই ছি ছি করিতে লাগিল। দণ্ডিত নরপিশাচেরা পুলিশের ব্যাটনের মুখে অধোবদনে জেলে চলিয়া গেল।

সেদিনই হামিদ রিলিফ কমিটির সদস্য পদে ইস্তাফা দিয়া অফিসের কাজে যোগদান করিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×