আমি যখন খুব ছোট তখন দেখেছি আমাদের গ্রামে বর্ষাকালে ধান চাষ হত। আমাদেরও মাঠে চাষযোগ্য জমি থাকায় বাবা মাঠে যেত। আমিও মাঝে মাঝে বাবার সাথে মাঠে গিয়েছি। অনেক ছোট ছিলাম তাই বাবা আমাকে কাঁদায় নামতে দিত না কোনভাবেই। ধানের ক্ষেতের চারপাশে যে ছোট সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হত, গ্রাম্য ভাষায় সেই সীমানা নির্ধারণীকে "আইল" বলতো। আমি সেই আইলের উপর বসে বাবা এবং আমাদের ক্ষেতে অন্য কৃষকদের কাজ দেখতাম আর তদারকি করতাম। হয়তো সে সময় আমি জমিদারের ভুমিকায় অধিষ্ঠিত থাকতাম।
একদিনের কাহিনী বলি। তখন আমি স্কুলে ভর্তি হইনি। অন্য দিনের মত আমি ক্ষেতের আইলে বসে বসে কৃষকদের কাজ দেখছি। এমন সময় আমার পাশে একটা ছোট গর্তে ২/১ টা কৈ মাছ নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে। আমি বেশ কয়েক মুহূর্ত অবলোকন করে শেষে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। ঝপাং করে লাফিয়ে পড়লাম গর্তে। সেই ছোট্ট আমি গর্তে মাছ ধরার নেশায় হাতড়ে মরছি কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারছি না। কৈ মাছের যা বুদ্ধি! বাবা এবং অন্য কৃষকেরা পাশ থেকে দেখছিল আমার কাণ্ড আর সবাই মিলে হাসছিল। কিন্তু সেদিকে আমার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। মাছ আমার ধরা চাই।
কিছুক্ষণ পর বাবা এগিয়ে এসে আমাকে উঁচু করে আইলের উপর উঠিয়ে দিয়েছে। ততক্ষণে ২/৩ টা ছোট "জোঁক" আমার পায়ের সাথে আটকে গেছে। দেখি একটা জোঁক আমার পা বেয়ে উঠতে উঠতে আমার হাফ প্যান্ট ছুঁই ছুঁই অবস্থা। হয়তো ছোট মানুষ পেয়ে আমার প্যান্টের মধ্যে ঢুকে মজা মারতে চাইছিল। আমার বাবা তাড়াতাড়ি করে মুখের থুথু লাগিয়ে দিলেন। সাথে সাথে জোঁকগুলো আমাকে ছেড়ে দিয়ে ধপাস ধপাস করে আইলের উপর পড়লো। সত্যি বলছি আমি জোঁক দেখে কোন ভয় পাইনি।
ইতিমধ্যে বেশ রক্ত খেয়ে নিয়েছে সব জোঁক মিলে। কর্দমাক্ত শরীরে আমাকে হয়তো অদ্ভুত লাগছিল তাই তখনো বাবা সহ অন্য যারা ছিল সবাই হেঁসেই যাচ্ছিল।