somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"তরী আর চন্দ্রালোকের নীল ডায়েরী"

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
:





'জানালা দিয়ে বিকেলের লালচে আকাশটাকে দেখে, কেমন জানি ভয়ঙ্কর অচেনা মনে হচ্ছে তরীর। তবুও তরীর অস্হির ভেজা দৃষ্টি বার বার সেখানেই আটকে যাচ্ছে। একটু পরেই সন্ধ্যে নামবে। কোলাহল এই শহরটা ধীরে ধীরে নিস্তবদ্ধতার চাদরে ডুবে যাবে। শহরটা নিস্তবদ্ধ হবার অপেক্ষায় থাকলেও তরীর বুকে বয়ে চলেছে কালবৈশাখীর মাতম। কোলাহল যত দুরেই মিলিয়ে যাচ্ছে মাতমের গতি যেন ঠিক তত্ই বেড়ে যাচ্ছে তরীর মনে। সেই ঝড়ের মাতমের সাথে কেমন জানি একটা অদ্ভুত ব্যথা মিশে আছে যা তরীর কাছে এখন শ্বাসরুদ্ধকর মৃত্যু যন্তনার চেয়েও কষ্টকর মনে হচ্ছে।

তরী কি যেন একটা খুঁজে বেরাচ্ছে সেই লালচে অদ্ভুত আকাশটায়। ঠিক কি খুঁজে বেরাচ্ছে সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছেনা । আচ্ছা কষ্টটা আসলে কার জন্য হচ্ছে তরীর? নিজের জন্য নাকি মায়ের জন্য?

মায়ের মুখটা বার বার ভেসে আসছে তরীর সামনে। মাকে ভীষন জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে, মা তোমার সব নীলকষ্ট গুলি আমাকে দাওতো। আচ্ছা তরী কি তাহলে এতক্ষন আকাশের সেই লালচে আভা্য় মায়ের সেই নীলকষ্ট গুলোকে্ই খুঁজে বেরাচ্ছিল?

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে সন্ধ্যে নেমে এল তরী সেটা খেয়ালি করেনি। হঠাৎ ফোনের শব্দে ঘোর কেটে যায়। তরীর বাবা ফোন করেছিল। বাবা আর ভাইয়া আজ সকালে ছোট ফুপির বাসায় গিয়েছে। ছোট ফুপির শরীরটা হঠাৎ করে নাকি খারাপ করছিলো। তরীর পরীক্ষার কারনে আজ সে যেতে পারেনি বাবাদের সাথে ফুপিকে দেখতে। বাবাদের আসতে দেরি হবে জানিয়ে, তরী কে খেয়ে ঘুমিয়ে পরতে বলে বাবা ফোনটা রেখে দেয়।

তরী,তরীর বড় ভা্ই রিসাত আর বাবা কে নিয়ে তরীদের এই ছোট্ট সংসার। তরী একটা বেসরকারি ই্উনিভারসিটিতে ফার্মেসীতে অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। রিসাত মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাএ। বাবা রাশিদ ইসলাম একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মা চন্দ্রা ইসলাম পুরো নাম চন্দ্রালোক ইসলাম। দুবছর হল মারা গিয়েছেন। মাকে তরী সবসময় হাসি খুশী দেখেছে। সারাক্ষন এঘর ও ঘর একাজ সেকাজ নিয়ে তার ব্যস্ততার যেন শেষ ছিল না। মাকে তরী বাবার সাথে কখনোই রাগ করে কথা বলতে দেখেনি। মা বাবার চেয়ে বয়েসে অনেক ছোট দেখে বাবা আদর করে মাকে রাঙা বউ বলে ডাকতো। তবে মাঝে মাঝেই মা কেমন জানি চুপ হয়ে যেত। তখন মাকে কেমন জানি অনেক অচেনা মনে হত তরীর। মা তখন কারও সাথে কথা বলতো না , অদ্ভুত একটা বিষন্নতা নিয়ে তরীদের দিকে তাকিয়ে থাকতো যেন তরীদের কা্উকেই সে চিনে না। আবার দুদিন পড়ে এমনিতেই ঠিক হয়ে যেত। বাবার কাছ থেকে তরী জানতে পেরেছিল মায়ের এই অসুখটা তরীর জন্ম হবার পর থেকেই শুরু হয়েছে। অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিন্তু কেউ ঠিক বলতে পারেনি কেন মা এমন হয়ে যেত। তরী এ নিয়ে মাঝে মাঝে মন খারাপ করত অনেক। ওর মনে হত ও না জন্মালে হয়তো মায়ের এ অসুখটা হত না।

তরীর মা মারা যাবার আগে এই অসুখটা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বেশ অদ্ভুত রকমের কাজ করতেন উনি। একদিন হঠাৎ মধ্যরাতে মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তরীরা তো ভয়ে অস্থির। কি হল কোথায় গেল। সারাবাড়ি তন্ন তন্ন করে খূঁজে শেষে মাকে পাওয়া গেল বাড়ির ছাদে। তরীর এখন ও পরিস্কার মনে আছে সেই রাতের কথা। আকাশে সেদিন যেন পূর্নীমার মেলা বসেছিল। মা ছাঁদের এক কোনা্য় বসে আকাশের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আর বাচ্চাদের মত করে কাঁদছে। বাবা কাছে যেতেই মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে 'ও আজও আসেনি। আমাকে কথা দিয়েছিল ও আমার সাথেই জোছনা্য ভিজবে। ও কথা রাখেনি। ও আসেনি। বাবা কিছু
বলেনি মাকে, শুধু মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল অনেকক্ষন। তরী সেদিন কিছু্ই বুঝতে পারছিলনা। শুধু দাড়িঁয়ে থেকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে মায়ের নীলকষ্ট মাখা মুখখানির দিকে অনেকক্ষন ধরে তাকিয়ে ছিল।

তরীর আজ কষ্টের প্রধান কারন হচ্ছে ওর মায়ের রেখে যাওয়া নীল ডায়রীটা। কাজের ফাঁকে ওর মা সময় পেলেই ডায়রীটা নিয়ে বসে যেতেন আর আপন মনে কি জানি লিখেই যেতেন। একদিন তাই দেখে তরী হেসে বলেছিল 'কি লিখো মা এত মনযোগ দিয়ে। মা হেসে উওর দিয়েছিল 'আমার আমিকে লিখে রাখছি মা। আমি না থাকলে ডায়রীটার নীলপাতা গুলো ছুঁয়ে দেখিস, তাহলে সেখানে আমার ছা্যাই খুঁজে পাবি। আর তরী নামটা...।..। বলেই কেমন জানি মা উদাস হয়ে গিয়েছিল।


মা মারা যাবার পর তরী ডায়রীটা অনেক যত্ম করেই নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু পড়ে দেখার কখনও সাহস পেতনা। ডায়রীটা হাতে নিলেই কেমন জানি দম আটকে আসতো ওর। শুধু যখন ওর মাকে ভীষন মনে পড়তো তখন ডায়রীটা বুকে ধরে শক্ত করে জড়িয়ে থাকত। নীল ডায়রীর নীলপাতায় মায়ের ঘ্রাণ নেবার জন্য নাক বাড়িয়ে দিত। কিন্তু আজ দুপুরে যখন হঠাৎ ঘুম ভেঁঙে মায়ের নীল ডাইরিটা চোখে পড়ল, নিজের অজান্তেই হাত বাড়ি্যে নীলডা্য়রীর নীল পাতায় মায়ের লেখা গুলি পড়ে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল তরী। পুরোটা পড়তে পারেনি তরী। তার আগেই ওর যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।

আকাশে আজ ভরা জোৎস্না। জোৎস্নার আলো জানালার গ্রীল বেয়ে গলে গলে তরীর ঘরে এসে ঠিকরে পড়ছে। সেই আলোয় ভিজে যাচ্ছে তরীর হাতে রাখা মায়ের নীলডায়রীটা। তরীর চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আবার। তরী সেই ঝাপসা চোখে আবার আকাশের দিকে তাকায়।জোস্নানীলে মায়ের জমে রাখা নীলকষ্ট গুলো আবার খুঁজতে চেষ্টা করে। আচ্ছা মা ও কি আজ জোছনা দেখছে? মা কি আজও সেই আগের মত জোস্নানীলে মুখ লুকিয়ে কাঁদে আর অপেক্ষা করে সেই প্রিয়মানুষটির জন্য, যার সাথে চন্দ্রজলে গা ভাসিয়েে একদিন স্বপ্ন দেখেছিলো ভালবাসার নীলকাব্য লেখার, স্বপ্ন দেখেছিলো একটা ছোট্ট সুখের সংসার আর তরী নামের একটা ফুটফুটে রাজকন্যার!
:
:

(শেষ পর্ব এখানে)

বিঃদ্রঃ

গল্পটা পুরোটা্ই কাল্পনিক। তবুও লিখতে লিখতে কেন জানি মনে হচ্ছিল চন্দ্রালোকের নীল ডায়েরীটা অনেক জীবন্ত....... অনেক পরিচিত.....।
:
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৩৭
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×