somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও বন্ধু আমার.....

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার, পরানসখা বন্ধু হে আমার। রবিঠাকুর এর এই গানটি অত্যধিক প্রিয় আমার। বন্ধু, চিরকালই একজন বন্ধুর পেছনে ছুটেছি। পেয়েছি, আবার পাইনি। কেমন বন্ধু চাই আমি, আমরা? সে বন্ধুর কাছেই তো ছুটে যাই সুদিনে- দুর্দিনে। আমার যে গ্রামে জন্ম, সে গ্রামে ঢুকতেই একটা মহীরুহ বটগাছ ছিল, এখনো আছে। আমার আজন্ম সখা সে বটগাছ। ছোটবেলায় দেখেছি যখন খুব রোদ পড়ত অনেক মানুষ সে গাছের নিচে এসে বসতো। কত কথা! সুখের, দুখের, হাসি-আনন্দের। পাড়ার সকল কথারা এসে সে গাছের নিচে জড়ো হ'ত। পাশেই আলমগিরের মুদির দোকান, সাধুর চায়ের দোকান। বটতলায় বসা ছেলে-বুড়ো আড্ডার ফাঁকে চা খেয়ে নিতো আর নিত্যপ্রয়োজনীয় সদাই করে ফিরতো। আমরা যারা ছোট ছিলাম বিজন দুপুরে মাকে ঘুম পাড়িয়ে চুপিচুপি ঘরপালানো দস্যিপনায় মত্ত সবাই এসে আশ্রয় করেছি এই মহীরুহ'র ছায়াতলে। পাতার ফুরফুরি বানিয়ে পাশের ডোবার পাশে ময়না কাঁটার ঝোপ থেকে কাঁটা ছিঁড়ে নিয়ে ফুরফুরেতে গেঁথে বাতাসের। বিপরীতে ধরে রাখতাম। কাচা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো একপ্রকার খেলনা ছিল আমরা বলতাম ফড্ডাসি, আছারগুলা নামন বুনোফল ঢুকিয়ে বাজির মতো ফুটাতাম। বটফল পড়ে বিছিয়ে থাকতো পথে, সে ফল খেতে আসতো হরেকরকম পাখি। কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত হয়ে থাকতো বটতলা। সাধুর চায়ের দোকানের পাশে ক্যারাম বোর্ড পাতা, দুই টাকায় একদান খেলা যে'ত। পাড়ার কিশোরেরা ক্যারাম খেলতে খেলতে গেয়ে উঠতো গানের কয়েকটা কলি। মনে মনে কত কথা বলেছি সে গাছের সাথে,কে শুনেছে কবে সেইসব কথা !
আমি খুব ডানপিটে স্বভাবী ছিলাম। গ্রামের মাঝে ছিল সুউচ্চ লোহার টাওয়ার। সে টাওয়ার ভেঙে উপরে উঠে চুপচাপ বসে মানুষের যাওয়া আসা দেখতাম। নানারকম মানুষ, হাঁটাচলা, নানাভঙ্গি। তিন তিনবার টাওয়ার থেকে পড়ে হাত ভেঙেছি আর ভাঙা হাত গলায় ঝুলিয়ে সারাগ্রাম চষে বেড়িয়েছি। গ্রামের একপাশে ধানী জমি আর বাগান। সে বাগানের লিচুগাছের মগডালে উঠে মনের সুখে গান গাইতাম আর সারাগ্রাম খুঁজে না পেয়ে মা এসে লম্বা বাঁশ দিয়ে গুঁতো মেরে গাছ থেকে নামাতেন। সে গাছ, সে টাওয়ারের সাথে আমার মুখচোরা ছেলেবেলার কী দারুণ সখ্য ছিল!
আমাদের মাটির ঘর, মা ঘরের দেয়াল নিপাট করে রাখতেন এঁটেল মাটিতে লেপে। মা মারা যাওয়ার পর, খুব কষ্ট পেলে সে ঘরের দেয়ালের সাথে বুক আগলে কেঁদেছি বড় হওয়া অব্ধিও। দেয়ালটিকে মা মা মনে হ'ত। সেও তো ছিল আমার সখা।
একদিন ছোট এক কুকুরছানা সারা গায়ে ঘা নিয়ে বাবার পিছু নিয়ে বাড়িতে হাজির। বাবার মায়া হলো, মা সে কুকুর ছানাকে যত্নে গোসল করিয়ে ওষুধ দিয়ে তাজা করে তুললেন। আমার ভাইয়ের মতোই কুকুরটি বড় হচ্ছিল। মা যখন নেই, বাথরুম যেতে রাতেরবেলা ভয় করতো আমার। মিন্টু আমার সাথে যেত, পাশে বসে থাকতো, আমি কথা বলতাম আর সে কুঁই কুঁই করে আমার কথার যেন জবাব দিতো। সে মিন্টু নামের কুকুরটি আমার বিপদের বন্ধু ছিল, যাকে কোনদিন ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় নানাকারণে।
আমার স্কুলের বন্ধুরা। লাইজু, বেণু, সুইটি, লিপি, তাহেরা, মিল্টন, প্রভাত, জাহেদ, তাহের, হারুণ.... কত কত সুন্দর সময় কেটেছে আমাদের। আমার পাশে ছিল প্রকৃত বন্ধুর মতোই নানা জটিলতায়। সে বিপদের বন্ধুদের ভুলি কী করে! সময়ের কারণে একেকজন দূরে দূরে ছিটকে গেছি কিন্তু স্মৃতিতে ডুব দিলে সে মুখগুলো এখনো কত স্বচ্ছ হয়ে ধরা দেয়! পূর্ণিমা, যে আমার কাছে ভালবাসার এক পরম নিদর্শন। তার কথা মনে হলে ভালবাসা কে আরো বেশি ভালবাসতে ইচ্ছে করে।

আমার কাজিন, চম্পাপু। আমার বিষণ্ণবেলার একক আশ্রয়। কষ্টে বুক ভারি হলেই ওর কোলে মাথা রেখে চিৎকার করে কেঁদেছি। ভার কমে যেত নিমিষেই। সেই তো আমার পরানসখা, রয়েছে পরানে পরানে।
মিনা, আমার পত্রবন্ধু। একটা ম্যাগাজিনের সে কক্সবাজার প্রতিনিধি, আমি রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি। পরস্পর চিঠিতে কত কাছের, সমস্তটা ওকে জানাতাম। কখনো বন্ধু, আবার কখনো আচমকা আমার বড় বোনের ভূমিকায় ওকে পেয়েছি। আজো, আমার অত্যাচার বুকপেতে নেয়। এমন বন্ধু পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।

শাফিন, ওর কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার ভেঙে যাওয়া মনের জোর ওর কাছে যেন গচ্ছিত আছে। ওর কাছে গেলেই ফুরফুরে। সালমা, আরেকজন আমার আবাগের আশ্রয়। আমার কাছে বন্ধু মানে তো সেই, যাকে মন খুলে সব কথা বলে ফেলা যায় দ্বিতীয়বার না ভেবেই।

বন্ধু কে হতে পারে?

আমার জন্মদিন, আর কারো মনে থাক না থাক তার মনে থাকে। প্রথম উইশসহ মেসেজটা আমি তার কাছ থেকে পাই। আমার মন খারাপ, ভালো করে দিতে তার নানাপ্রকার চেষ্টা। আমার অসুস্থতা, আমাকে নিয়ে তার ভাবনা। দেশে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ, তার ফোন। আমার গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত, আমাকে নিয়ে তার উৎকণ্ঠা, ফোন করে খবর নেয়া। কোথাও আমার সমালোচনা শুনেছে, আমার সাথে শেয়ার করা, প্রতিবাদ করা। আমার লেখা কোথাও প্রকাশিত হলে, তার ফোন, মেসেজ। আমি কোন ভুল করেছি, আমাকে শাসন করা।

হ্যাঁ, আমি উপর্যুক্ত সূত্রের মাধ্যমে আমার প্রকৃত বন্ধু, কাছের মানুষ চিহ্নিত করি। সে বন্ধুকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতে পারি, পাশে থাকতে পারি। মনে রাখতে পারি। যার বা যাদের মধ্যে এসব আমরা পাই না, তাদের মুছে ফেলি ; না পারলেও অন্তত চেষ্টা করি জীবনে তার উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করতে। মানুষ মানুষের মনে দাগ রাখতে না পারলে একদিন সত্যিই মুছে যায়। যেতেই হয়।

ভালোলাগা এই, আমি তেমন বন্ধু পেয়েছি। আমার সকল বন্ধুকে ভালবাসা, ভালবাসা নিরন্তর।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×