somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষার ভাবসম্প্রসারণ - ১

১৯ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কসরত করেই বাস থেকে নামতে হলো । ইদানিং বাসে করে যাওয়া আসাটা খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে . বিশেষত মেয়েদের জন্যে তো ভীষণ বিড়ম্বনা ! দীর্ঘ সময় বাসের জন্যে লাইনে দাড়িয়ে থাকা , তারপর বাস এলে সিট না পেয়ে স্ট্যান্ডবাই মুডে ভ্রমণ ! সপ্তাহে ৪ দিন এই বিড়ম্বনা সহ্য করে বনানীতে যাওয়া-আসা করতে হয় । কখনও কখনও কপাল ভালো থাকলে কোনো বান্ধবীর সাথে দুইবোন শেয়ারে CNG নিয়ে চলে যাওয়া যায় ! আজও যদি যাওয়ার সময় তেমন ব্যবস্থা হতো ... ! এইসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাস থেকে নেমে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা দিলো সুগন্ধা , পাশে জমজ বোন সুবর্ণা ।


ক্যাম্পাসে ঢোকার মুখেই দেখা হয়ে গেলো তান্নির সাথে ! এই মেয়েটা প্রতিদিন দেখা হলে প্রথমে কিছুক্ষণ জড়াজড়ি হুরোহুরি করবে , ভাব যেনো অনেকদিন পর দেশে ফিরে বান্ধবীদের সাথে দেখা ! তারপর আগের রাতে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কি কথা হলো, সকালে উঠে বাসায় কি কি কান্ড করে এলো , ব্লা ব্লা .. ! সুবর্ণা এসবে একটু বিরক্ত হলেও সুগন্ধার কখনই তান্নির হৈচৈ খারাপ লাগেনা ! আজো দেখা হওয়া মাত্র ছুটে এসে সুগন্ধার হাত ধরে টান দিলো মেয়েটা । হঠাৎ টান সামলাতে না পেরে কাধে ঝোলানো টি-স্কেল সেটটা পড়ে গেলো সুগন্ধার । সেটা উঠাতে যাবে, এমন সময় ওর একটা হাত খামচে ধরলো সুবর্ণা !

- ওই যে ... দ্যাখ , বসে আছে ...
- কই ?
- আরে ! ওই যে , লিফটের সামনের সিটগুলার একটায় !

সুবর্ণার কথা মতো মুখ ঘুরিয়ে সেদিক তাকিয়ে ছেলেটাকে দেখতে পেলো সুগন্ধা । অমনি শীতল একটা অভিব্যক্তি ফুটে উঠলো তার মুখে । ছেলেটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে বোনের দিকে তাকালো সুগন্ধা । বুঝতে পারলো, সুবর্ণা প্রানপনে চেষ্টা করছে নিজেকে শান্ত রাখার । প্রায় ৪-৫ মাস হলো ছেলেটা ওদের পিছনে ঘুর ঘুর করে ! আরো স্পেসিফিকেলি, সুবর্নার পিছে ! সম্ভবত ওকে ছেলেটা পছন্দ করে । বাস স্ট্যান্ডে প্রায়ই দেখা হয়, একই সাথে দিবানিশী বাসে করে একই স্টপেজে নামে , তারপর দাড়িয়ে থাকে চুপ চাপ । রেলগেটে নামার পর ওরা যখন রিক্সা নেয়, ছেলেটা তখনো চুপ করে দাড়িয়ে থাকে । চেয়ে থাকে সুবর্নার দিকে ! ছেলেটার চাহনিটা অদ্ভুত ! চোখে চোখ পড়লে মনে হয়, যেনো একেবারে মনের ভেতরটা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছে ভেজা ভেজা চোখ দুটো দিয়ে ! সুবর্ণাই প্রথম ব্যাপারটা খেয়াল করছিলো , ওকে বলার পর ওরও তাই মনে হয়েছে !

ওরা ঠিক করছে এই ছেলেটাকে কিছুতেই বুঝতে দেবেনা যে ওরা তাকে খেয়াল করে , ওদের আসে পাশে তার উপস্হিতি টের পায় । kind of ignorance. এইসব টুটকা-পুটকা ছেলেদের পাত্তা দেয়ার কোনো কারণ নাই ।

----------------------------------

বোনের পরামর্শ মতো ছেলেটার দিকে না তাকালেও চোখের কোন দিয়ে এখন ঠিকই তাকে খেয়াল করছে সুবর্ণা । বরাবরের মতোই একটা ফুল হাতা শার্ট , জিন্স , স্নিকার তার পরনে । শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত ভাজ করা । ছেলেটাকে কখনও শার্ট ছাড়া অন্যকিছু পড়তে দেখছে বলে মনে পড়ে না ! চুলগুলা এলোমেলো , মনে হয় যেনো বাসার চিরুনীগুলা সব বেচে কটকটি খেয়েছে ! ডান কোমরে সম্ভবত বেল্টের হুকে ঝোলানো আইডিটা মাঝেই মাঝেই শার্টের কোনা দিয়ে উকি ঝুকি দিচ্ছে । ইয়েলো রঙের আইডি রিবনটা ইতস্তত ভাবে ডান পকেটে গুজে রাখা । এমন অদ্ভুতভাবে আইডি খুব কম স্টুডেন্টই ঝোলায় ! প্রথম দিকে ছেলেটা কিসে পড়ে , সেটা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছিল সে আর সুগন্ধা ! আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের না , এটা নিশ্চিত ছি লো । যেহেতু ইয়েলো রিবন কিন্তু আর্কিটেকচারে পড়েনা , সেহেতু ছেলেটা অবশ্যই ত্রিপল ই-র ! কারণ ভার্সিটিতে শুধু এই দুই ডিপার্টমেন্টের আইডিই ইয়েলো !

এই মুহুর্তে ছেলেটা যে সরাসরি ওর দিকেই চেয়ে আছে, না দেখলেও সেটা বুঝতে পারছে সুবর্ণা ! আচ্ছা , ছেলেটা এমন কেনো ! এভাবে ড্যাব ড্যাব করে কেউ তাকায় নাকি মেয়েদের দিকে ! আজব !! লজ্জা শরম কম নাকি ব্যাটার ? সুবর্ণা যখনই বুঝতে পারে, ছেলেটা আসেপাশে আছে এবং ওকে দেখছে , কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভুতি হয় ওর ভিতর ! সুগন্ধাকে একদিন সেটা বলায় বেশ ঝাড়ি খেতে হয়েছিলো অবশ্য ! সুগন্ধা ওকে বুঝিয়েছে, এইসব আজাইরা ছেলেদের নিয়ে কিছুতেই কিছু ভাবা যাবেনা । তার মতে, ভার্সিটির বেশির ভাগ ছেলে ফ্রড । এদের থেকে দূরে থাকাই ভালো ।

সুবর্ণার অবশ্য মাঝে মাঝে ভীষণ বিরক্ত লাগে । এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে যে কোনো মেয়ে বিরক্ত হবে । এটাকি গাধাটা জানে না ? নাকি ইচ্ছা করেই এমন করে ? সব চেয়ে বেশি বিরক্তিকর হচ্ছে , একবার যদি সে কোনো ভাবে তাদের দুইবোনকে দেখতে পায়, তাহলেই হয়েছে ! ওরা একদম ক্লাসে না ঢোকা পর্যন্ত আঠার মতো লেগে থাকবে সাথে ! কি ওয়েটিং এরিয়া, কি স্টাডি । এমনকি ১৭ তলায় স্টুডিওতে ঢুকে গেলেও কাচে ঘেরা দেয়ালে ওপাশে এসে দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ । how disgusting !! একদিন ভালোমতো অপমান করতে পারলে দারুণ হতো ।

আচ্ছা , ছেলেটা ওদের দুইবোনের মাঝে পার্থক্য করে কিভাবে ? নিশ্চয়ই ওর ডান ভ্রুর উপরের তিলটা দেখে ! সুগন্ধার ভ্রুর উপরে এমন কোনো তিল নেই ।

-- চল, ক্লাসের সময় হইসে !
-- হম , চল !

বলে সুগন্ধার পিছু পিছু ইভেন নাম্বার লিফটের লাইনে গিয়ে দাড়ালো সে । চোখের কোনা দিয়ে খেয়াল করলো, ছেলেটাও উঠে দাড়িয়ে শান্ত দৃঢ় পায়ে হেটে আসছে । কিছুতেই তাকাবেনা ভেবেও শেষমেষ মুখ তুলে ছেলেটার দিকে তাকাতে বাধ্য হলো সুবর্ণা । সাধারণ চেহারা , সাদা-মাঠা আওউটলুক । ভাসাভাসা দৃষ্টিতে এক নজরে তাকিয়ে আছে ছেলেটা ওর দিকেই । সুবর্ণা ভ্রু কুচকে প্রবল বিরক্তি জ্ঞাপক একটা অভিব্যক্তি নিয়ে অন্যদিকে মুখ ফেরালো । লিফট চলে আসা মাত্র দুইবোন চট করে তাতে উঠে পড়ল । দরজা বন্ধ হয়ে যাবার আগ মুহুর্তে করিডোরে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটার চোখে চোখ পড়ে গেলো সুবর্ণার । হঠাৎ ওর মনে হলো, কপালে ভাজ ফেলে নির্বাক চোখে চেয়ে থাকা ছেলেটা কিছু বলতে চায় ওকে ...


-------------------------------------

লিফটের দরজাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কেমন যেনো একটা শুন্যতা খচ খচ করতে লাগলো বুকের ভেতর । প্রতিবারই এমন হয় । মেয়েটাকে দেখতেও ভীষণ ইচ্ছে করে, আবার চোখের আড়াল হয়ে গেলেও অস্থির লাগে ! ভার্সিটির ঘড়িতে দুইটা বাজতে দশ মিনিট বাকি । ওদের ছুটি হবে চারটায় । এই সময়টুকু কোথাও বসে ঝিমিয়ে কাটানো গেলে ভালো হতো । অথচ করিডোরে , স্টাডি এরিয়া, ওয়েটিং- সব ফিলাপ । কোথাও বসার জায়গা নেই ! আজ কোনো ক্লাসও নেই স্মরণের । শুধু মেয়েটাকে একটা বার দেখার আশায় এতদূর থেকে বাসে ঝুলে ঝুলে ভার্সিটিতে আসা ওর । নিজের ক্যাম্পাসের দিকে যাবে কিনা - ভাবলো একবার স্মরণ । পরমুহুর্তেই সে চিন্তা বাতিল করে দিলো । একে তো ত্রিপলইর ক্যাম্পাস থেকে আর্কিটেকচারের ক্যাম্পাসে যেতে আসতে অহেতুক দশ মিনিট হাটতে হবে, তার উপর আবার এর মাঝে যদি সুবর্ণা নিচে নামে কোনো কারণে ! তাহলে তো ও দেখতে পাবেনা ... ! ওকে একটু দেখার জন্যেই তো এতো কিছু । সুতরাং কোথাও না গিয়ে এখানে থাকাই শ্রেয় ।


স্মরণের একেকটা সকাল তাকে দেখার কি তীব্র আকাঙ্খা বুকে নিয়ে আসে , এটা হয়তো কোনদিনই মেয়েটা জানতে পারবেনা !

ক্যাম্পাসের বাইরে এসে গেটের ডান দিকে শান বাধানো টাইলসের উপর পা ঝুলিয়ে বসে রইলো স্মরণ । অসম্ভব রকম ভালোবাসা বুকে নিয়ে তাকে এখন দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে, সুবর্ণা নামের ঐ মেয়েটাকে আরো একটাবার দেখার আশায় ...।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:৫৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×