সামুতে রেজিস্ট্রেশন করার আগে বেশ কয়েক মাস আমি শুধু সবার লেখা পড়েছি। চমত্কার সব লেখা। অসাধারণ সব লেখা পড়ে একেবারে অভিভূত হয়ে যেতাম (এখনো হই)। মনে মনে ভাবলাম, ‘কে বাজায় (লিখলো আর কি) এমন মোহন বাশি’? তখন লেখক সাহেবের পরিচয় জানার বড় কৌতূহল হতো। যদিও সামুতে ব্লগারগণ তাদের সুন্দর চেহারা একেবারে দেখান না বলা চলে। তাই তাদের নামই ভরসা। ওরে বাবা! শ্রদ্ধেয় লেখক সাহেবের নাম দেখে তো পুরো টাস্কি খেয়ে গেলাম। কি আজব নাম রে বাবা!!
পরে আরো কিছু আজব আজব নাম চোখে পড়লো। এরপর থেকে বলা যায় আমায় নামের নেশা পেয়ে বসল। পাতার পর পাতা ঘুরি আর বিচিত্র সব নাম দেখি! বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা, আস্তে আস্তে মূল লেখার চেয়ে লেখকের নামটাই আমার কাছে বেশী আকর্ষণীয় মনে হতে লাগলো! হাহাহা। অবশ্য অল্পদিনেই ব্যাপারটা একদম গা সওয়া হয়ে গেল। তখন ভাবলাম, এটাই হয়ত এখানকার স্টাইল। অবশ্য অনেকেই নিজের প্রকৃত নামই ব্যবহার করেন। তবে বেশীরভাগ ব্লগারই ছদ্দনামের আশ্রয় নেন। আর এই আজব, বিদঘুটে, কোন কোন সময়ে বিচ্ছিরি নামের ব্লগারগণই হয়ত আপনার বেস্ট ভার্চুয়াল বন্ধু হয়ে গেল। লিখতে লিখতে বন্ধুত্ব- সত্যি পরিচয়ের এ এক অদ্ভুত প্লাটফরম।
আচ্ছা বলুন তো, ব্লগারদের আসল নামে না লেখার প্রকৃত কারণ কি? আমার ধারণা, নিজের privacy বজায় রাখা, নিজের মধ্যে ভিন্ন এক ধরণের personality গড়ে তোলা, একটু গ্ল্যামারাস, একটু মিস্টেরিয়াস, এবং কিছুটা ফান করার জন্যই হয়ত সবাই ছদ্দনাম গ্রহণ করেন। তবে এতে কিছুটা অসুবিধাও আছে। যেমন, ছদ্দনামকে একটু বেশী অচেনা লাগে, অনেকটা detached মনে হয়। আমার ত তাই মনে হয়।
অবশ্য নামে বিশেষ কিছু এসে যায় না। ব্লগে এসে হরেকরকম নাম দেখে হাসি পেলেও তাদের লেখা পড়ে কিন্তু মন ভাল হয়ে যায়। যদিও ব্লগে কাউকে সম্বোধন করা আমার কাছে অন্ধকারে ঝাঁপ দেয়ার মত মনে হয়। কারণ আমি ঠিক জানিনা যার সাথে কথা বলছি তিনি মানুষটা কেমন, কি তার আসল পরিচয়, তিনি ছেলে না মেয়ে, বয়স কত, রুচি কেমন ইত্যাদি আরো কতকিছু। একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ধরুন, একজন ব্লগারের নাম ‘আমি কিছু জানি না’ (এই নামে আবার কোন ব্লগার থেকে থাকলে নির্ঘাত ফেঁসে যাব)। নাম দেখে মনে হতেই পারে ইনি বোধহয় আসলেই কিছু জানেন না। অথচ উনার লেখা পড়তে গিয়ে দেখা গেল, উনি জানেন তো বটেই, সাংঘাতিক ভাল জানেন। তাহলে কেন এমন ছদ্দনাম নিলেন? এর উত্তর শুধু তিনিই দিতে পারবেন। আর জানেন অন্তর্যামী।
যাইহোক, এরপর ভাবলাম ঐ সব অসাধারণ লেখার পাশে নিজের জঘন্য, বস্তাপচা লেখা মিশিয়ে দিলে কেমন হয়? সোনায় খাদ মেশানো আর কি। যেই ভাবা সেই কাজ। কিন্তু আমার নামটা কি হবে? শুরু হলো, “খোঁজ-The Search”. অনেকগুলো নাম জোগাড়ও হলো। কিন্তু একটাও যুতসই মনে হলো না। কি করি, কি করি করতে করতেই একটা নাম দীলে জব্বর চোট দিল। সেটা হলো, “ইছামতির তীরে”। যথাযোগ্য সম্মানের সাথে আল্লাহর নামে এটাকেই লটকে দিলাম।
নামের শানে নুযুল বা পটভূমি হলো, আমি ইছামতি নদী এলাকার বাসিন্দা। এই নদীটিকে আমরা বড্ড ভালবাসি। যদিও ভূমিদস্যুদের কল্যাণে(?)বর্তমানে নদী থেকে এটি জীর্ণ শীর্ণ এক খাল বা নালায় পরিণত হয়েছে। নদীটি স্থানীয় হলেও দেশব্যাপী পরিচিত। ভাবলাম নিজের নামটা যেমন বেশ কাব্যিক হলো পাশাপাশি নদীর পরিচিতিও হবে।
আর একটা দিকও ভেবেছি। তাহলো, নদী জীবনদায়ী। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ, পশু-পাখি, গাছপালা তথা সামগ্রিক পরিবেশের উপর একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছে নদী। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে ওঠে শহর, বন্দর, গঞ্জ, বাজার প্রভৃতি। আবার নদীতে যানবাহন হিসেবে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, স্পীডবোট, ট্রলার এমনকি ভেলাও দেখা যায়। তেমনি আমার নদীতেও মানে লেখাতেও নানান পদের লেখা পাওয়া যাবে।(লেখার মান কোনটা লঞ্চ বা স্টিমার জাতীয় হবে আবার কোনটা হয়ত হবে ভেলার মত)। একটা কথা, আমার প্রোপিকে কিন্তু যে ছবিটা দেখা যাচ্ছে তা এই নদীরই।
সম্মানিত ব্লগারগণ, আমারটা তো দিলাম ফাঁস করে। আপনাদের নামের শানে নুযুল জানতে পারি কি?
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।