সবাই তো তাহলে দা, বটি, ছুরি, চাকু ধার দিয়া রেডি, নাকি??
সকাল হইব, ঈদ এর নামায পইড়া আইসাই বিসমিল্লাহ্ বইলা কুরবান কইরা দিবো গরু কিংবা খাসী (অথবা অন্য কোন প্রাণী)। সকালেই দেখা যাবে ছুরি-চাপাতি হাতে কোরবানিবাজ সুপুরুষের মত ছবিতে ভইরা গেছে ফেবু। অনেকেই আবার দেখা যাইব খুব মনোযোগ দিয়া মাংস কাট্টাছে, ভাবখানা হইব "কত কষ্টই না করলাম!" অনেকেই ইতিমধ্যে হবু কোরবানির প্রাণীটার ছবি দিয়া দিছেন অথবা কেউ কালকে কাঁটার আগে বা পরে দিবেন বইলা ভাবতেছেন।
আমার সকল ভার্চুয়াল ভাইবোনরে কই, কোরবানির মানে জানেন তো? মাফ করবেন আপনাদের লাইগা বুদ্ধিমান প্রাণী আমি না। তারপরেও ছোটো মুখে কিছু বড়কথা কইবার লাগছি। ঈদ মানে আনন্দ, আর কোরবানি মানে ত্যাগ। ঈদ-উল-আযহা হচ্ছে ত্যাগ এর আনন্দ। যারা মনে করেন ঈদ এর দুই রাক'আত নামায পইড়া আর আস্ত একটা প্রাণী জবাই কইরা মজা নেওয়াই কুরবানি ঈদ, আমি কড়া কথায় তাদের সাথে দ্বিমত করলাম। কোরবানি ঈদ এর উদ্দেশ্য জবাই করা বা মাংস খাওয়া না। **কোরবানি ঈদ-এর শিক্ষা হচ্ছে ধর্ম বা আদর্শ বা নীতির জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করার মানসিকতা।** অনেকেই 'ধর্ম' কথাটার সাথে সাম্প্রদায়িক চেতনাকে গুলায় ফেলবেন। কিন্তু মূলত ধর্ম মানবতার প্রতিরূপ। কিছু বিচ্ছিন্ন বিকৃত চিন্তার মানুষের জন্য ধর্মের বদনাম হয়। সব ধর্মই মানবতা শেখায় বা বলা যায় বিপন্ন মানবতাকে রক্ষা করার জন্যই ধর্মের আবির্ভাব হয়। (ধর্ম বিষয়ক কথা আবার অন্য দিন হবে।)
কোরবানি সবাই করবেন, কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে যে ইবাদাত করার কথা সেটা কতটা পালন করবেন। একটা অবলা প্রাণীকে জবাই করে যারা আনন্দ করবেন তাদের আর যাই হোক অন্তত ইবাদাত হবে না। বরঞ্চ যারা এই প্রাণীগুলোর জন্য কষ্ট পাবে তাদেরই ইবাদাত হবে। একবার ভাবেন যে প্রাণীটা আপনি কোরবানি দিচ্ছেন সেটাকে যদি ছোটো থেকে যত্ন করে বড় করে তুলতেন?? ঠিক আপনি যেমন করে বাবা-মা'র কাছে বড় হয়ে উঠেছেন সেভাবেই যদি এই প্রাণীটিকে আপনি বড় করে তুলতেন??... পারতেন এত সহজে তার গলায় ছুরি চালাতে? পারতেন মজা করে তার মাংস খেতে??... ঠিক এই অনুভূতিটাই কোরবানি।
বলেন তো, ঈদের দিন চাপাতি হাতে নিজের সন্ত্রাসী মার্কা ছবি দিয়া কেউ কি বুঝাইতে চায়?? সে সুপুরুষ হইয়া গেছে এইডা??... নাকি যে কোনো সময় কল্লা কাটতে প্রস্তুত এইডা? আপনি হয়তো নিজের কোরবানি করা প্রাণীর ছবি, মাংস কাঁটার ছবি ইত্যাদি দিয়ে অনেক আনন্দ পাবেন কিন্তু সারা অনলাইন জুড়ে অগণিত এমন ছবি বলবে কত গুলো প্রাণ আজ চলে গেলো!! হয়তো পশু বলে অনেকেরই এতে কিছু মনে হয় না, কিন্তু তারাও তো প্রাণী... তাদেরও জীবন আছে। এই জীবন গুলো আর আসবে না এই কথাটা ঘুরে ফিরে বার বার মনে পড়বে। এই রক্ত-মাংস, বাকহীন দৃষ্টি অনেককেই কষ্ট দেয়। তাই নিজের জন্য না হলেও অন্যদের কথা ভেবে এমন ভায়োলেন্ট ছবি দয়া করে দিবেন না।
কোরবানির প্রাণীর মাংস ৩ ভাগে ভাগ হয়। এক ভাগ নিজেদের জন্য, একভাগ আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, আপনজনদের জন্য, আর একভাগ দরিদ্রদের জন্য। এতে বোঝায় আপনি কষ্ট করে যা অর্জন করছেন তার উপর শুধু মাত্র আপনার না, এর এক ভাগে আপনার আপনজনদের অধিকার আছে আরেক ভাগে আছে দরিদ্রদের অধিকার এবং বাকিতুকুতে আছে আপনার অধিকার। **জবাই করে রক্তপাত করা কোরবানির উদ্দেশ্য না। কোরবানির মাধ্যমে মানুষকে ত্যাগের শিক্ষা দেওয়া হয়, তার অর্জনের উপর বাকিদের যে অধিকার আছে এটা মনে করানো হয়। অবশ্যই শ্রেণী বৈষম্য ভেদ করে সবাইকে আপন করে নেওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়, সর্বোপরি কর্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাবান, নীতি-আদর্শে দৃঢ় অবস্থানের শিক্ষা দেওয়া হয়।**
আমরা অবশ্যই আনন্দ করবো, কিন্তু সেই আনন্দ হবে নিজে ত্যাগ করে অন্যের মুখে হাসি ফুটানোর আনন্দ।
সবাই কে ঈদ-উল-আযহার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।