somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেমিনিন সাইকোলজিঃ রহস্যময় জগতে একটি সাইকোঅ্যানালাইসিসের প্রচেষ্টা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগে ইদানীং প্রায়ই দেখি বিভিন্ন ধরনের রোমান্টিক পোস্ট... কিভাবে মেয়েদের পটাতে হবে, কিভাবে মেয়েদের সামনে স্মার্ট হতে হবে, কিভাবে বউয়ের মন রক্ষা করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সন্দেহ নেই আমরা এধরনের পোস্ট পড়ে বেশ মজা পাই, তাই এগুলো হিটও কম হয়না। আজকে আমরা ব্যাপারটাকে একটু অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি। সাইকোলজির দিক থেকে।



প্রথম কথা হচ্ছে, মেয়েদের সাইকোলজি নিয়ে এভাবে আলাদা বিস্তৃত গবেষণার কারণ কি? কারণটা খুব সহজ, মেয়েদের মধ্যে জেনারেল সাইকোলজির বাইরে কিছু ব্যতিক্রমধর্মী সাইকোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, যেগুলো অন্য কোন শাখার মধ্যে পড়েনা, আবার অ্যাবনরমাল সাইকোলজিও নয়। তাই নারীসুলভ কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে গড়ে উঠেছে ফেমিনিন সাইকোলজি। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, যে মেয়েদের জন্যে বিশেষভাবে গাইনী ডাক্তার আছে, ছেলেদের জন্যে নেই। এর কারণ ছেলেদের বেশিরভাগ রোগই সাধারণ ডাক্তারির মধ্যে পড়ে।

মেয়েদের মধ্যে একটা সহজাত ব্যক্তিত্ত্ব থাকে, যা তাদের সৌন্দর্য্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ফেমিনিন সাইকোলজির একটা বড় অংশই এই ব্যক্তিত্ব সত্তাটা নিয়ে, যা মূলত তাদের সম্পূর্ণ নারী জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। পৌরুষের ব্যক্তিত্ব বলতে যা বোঝায়, এর ধরন তা থেকে একদমই আলাদা। একজন পুরুষ যেমন মাতৃত্বের অনুভূতি সম্বন্ধে কখনো ধারণা করতে পারবেনা, তেমনি এই নারীসত্তা সম্বন্ধেও কখনো স্পষ্ট ধারণা করতে পারবে না।

নারীদের এই নিজস্ব ব্যক্তিত্বের কথা সর্বপ্রথম বলেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তাঁর মতে, এর জন্ম নারী শিশুর জন্মের ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে, ইডিপাস কমপ্লেক্স থেকে। সাধারণত মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে এই কমপ্লেক্সের তীব্রতা ছেলেদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

এটা স্বাভাবিক যে তুলনামূলক সুন্দর, গোলগাল, নাদুস-নুদুস বাচ্চাদের সবাই একটু বেশি আদর করে, প্রশংসা করে। সাধারণত একটা সুন্দরী মেয়ে ৯ থেকে ১০ বছরের দিকে সচেতনভাবে বুঝতে পারে যে সমাজের কাছে তার কদর অন্য দশটা মেয়ের চেয়ে বেশি। যে মেয়ে যতো সুন্দরী, তার মধ্যে এই বোধ ততো দ্রুত এবং ততো তীব্রভাবে আসে। এই বোধটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটারই পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে আমরা যার কথা বলছিলাম, সেই নারীসত্তা।

এখানে একটা কথা বলা দরকার, যে সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা বিভিন্নজনের কাছে বিভিন্নরকম। কিন্তু সাইকোলঅ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই সাইকোলজিতে সৌন্দর্য্যের একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞা রয়েছে। সেটা হচ্ছে, কোন মানুষ যদি নিজেকে ভাবে “আমি সুন্দর”, তবেই সে সুন্দর। কার কাছে ভালো লাগলো কার কাছে লাগলো না সেটা কোন কথা না, যদি তার নিজেকে ভালো লাগে। নিজেকে সুন্দর ভাবার কারণে তার মধ্যে সৌন্দর্য্যজনিত আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য তৈরী হয়, যা তার ব্যক্তিত্বে প্রচুর প্রভাব ফেলে। তবে বলা বাহুল্য, সমাজের বড় একটা অংশ কাউকে সুন্দর বলে মতামত দিলে তবেই তার মধ্যে “আমি সুন্দর” এই বোধটা তৈরী হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে পিগমিদের কথা। আফ্রিকার বিশেষ একদল পিগমিদের মধ্যে প্রতি বছর একজন সেরা সুন্দরী বিবেচনা করে গ্রামের সর্দারের সেবায় পাঠানো হয়। তাদের সেই সুন্দরীর চেহারা দেখলে আমাদের পক্ষে ভিরমি খাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অর্থাৎ, কোন একটি মানুষ সুন্দর কিনা নির্ধারণ করবে তার সমাজ, কিন্তু ঐ সৌন্দর্য্য তখনি ঐ মানুষটির সাইকোলজিতে প্রভাব ফেলবে যখন সে তার সৌন্দর্য্য সম্বন্ধে সম্পূর্ণভাবে সচেতন হবে। ফ্রয়েডের ভাষায়, তার চেতন ও অবচেতন মন তাকে সুন্দর হিসেবে ঘোষণা করবে।

একটি সুন্দরী মেয়ে যখন ধীরে ধীরে তার এই সৌন্দর্য্য সম্বন্ধে সচেতন হয়, তখন তার মধ্যে বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। সে যখন সাবালিকা হয়, তখন সাধারণত তার ব্রেন থেকে মূল ফিমেল হরমোন ইস্ট্রোজেনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। এবং এই বৃদ্ধির পরিমাণ তার সৌন্দর্য্যের উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে যেসব মেয়ে নিজেদের অত্যধিক সুন্দরী বলে মনে করে, তাদের ক্ষেত্রে এই হরমোনের নিঃসরণ স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এবং এক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের প্রভাব দেখা যায় খুব সরাসরি। তার শরীর-স্বাস্থ্য আরও সুগঠিত হয়ে ওঠে, নারীসুলভ আচরণ বহুমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। যে কারণে সমাজের চোখে, তথাপি তার চোখে সে আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। তখন প্রায়ই বিভিন্নজনকে বলতে শোনা যায়, “যতোই দিন যাচ্ছে মেয়েটা আরও সুন্দর হয়ে উঠছে!”

পুরো ব্যাপারটাকে ছক আকারে এভাবে দেখানো যায়-

ইডিপাস কমপ্লেক্স--> নারীত্বের বোধ--> সৌন্দর্য্যের বোধ-->
১. আমি সুন্দরী
২. আমি সুন্দরী নই

আমি সুন্দরী--> পরিবারের স্তুতি--> আমি বেশ সুন্দরী (ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ বৃদ্ধি)--> নারীসুলভ শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি--> সমাজের স্তুতি--> আমি খুব সুন্দরী (ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ বৃদ্ধি)--> নারীসুলভ শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি--> ছেলেদের স্তুতি--> আমি দারুণ সুন্দরী (ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ বৃদ্ধি)--> নারীসুলভ শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি

দ্বিতীয় পয়েন্টটি নিয়ে পরে আলোচনা করছি।

এই চক্র থেকে দেখা যায়, সাধারণত ‘আমি সুন্দরী’ বোধটাই মেয়েদের আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার মূল কারণ, যা অনবরত প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এই বোধের কারণেই তাদের সৌন্দর্য্য পরিপূর্ণতা পায়, ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে নারীসুলভ আচরণ প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায় যা ছেলেদের আরও বেশি আকৃষ্ট করে।



কোন তথাকথিত অসুন্দরী মেয়ের মধ্যেও যদি এই বোধ ঢুকিয়ে দেয়া যায় যে সে বেশ সুন্দরী, তাহলে দেখা যাবে তার ক্ষেত্রেও এই চক্রটি কাজ করছে, এবং তার ধারণা ভাঙার আগ পর্যন্ত তার সাইকোলজি একজন সুন্দরী মেয়ের মতোই কাজ করছে। ফলে তার নারীসুলভ আচরণও উপরের চক্রের মতো করে বৃদ্ধি পাবে। তার শারীরিক গঠনও ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে বেশ সুগঠিত হবে। তবে সাধারণত এই ধারণা এক সময় না একসময় ভেঙে যায়, তখন মেয়েটির সাইকোসেক্সুয়াল ভিত্তিটি নড়বড় করে ওঠে। দুঃখের কথা হচ্ছে, এই ধরনের মেয়েরাই সমাজে সবচেয়ে বেশি অপমানিত কিংবা লাঞ্চিত হয়, এবং এরাই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের নারীসুলভ আচরণ ও বৈশিষ্ট্য সঠিকভাবে গৃহীত হয়, নারীসত্তার বিকাশ ঘটার সুযোগ হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা প্রতারিত হয়ে থাকে, শরীরের প্রতি ছেলেদের লোভে অনেক ধরনের লাঞ্চনার শিকার হয়। অসুন্দর হয়েও তাদের নারীসুলভ আচরণ পরিবারে ও বন্ধুদের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করে। বিখ্যাত ফিমেল সাইকোলজিস্ট অ্যানা মোটজ এ সম্পর্কিত একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন- একবার এক রোগীকে তার কাছে আনা হয়েছিল, যে খুবই ধনী পরিবারের একমাত্র সন্তান। তার চেহারা ছিল মোটামুটি সুন্দর, তবে চুলগুলো ছিল রীতিমতো কুৎসিত। অ্যালোপেশিয়া রোগের কারণে তার মাথার চুল এমনিতেই কিম্ভূত আকৃতির ছিল, এর সাথে ফাঙ্গাসের সংক্রমণে মাথার বিভিন্ন জায়গায় চুল খাবলা খাবলা উঠে গিয়েছিল, যার কারণে তাকে বেশ ভয়াবহ দেখাত। পরিবারের আদর ও প্রশংসায় সে এ সম্বন্ধে তেমন সচেতন ছিল না। বরঞ্চ সুন্দরী হিসেবে তার বেশ গর্ব ছিল, স্বাভাবিকভাবেই চুল নিয়ে অন্যান্য মেয়েদের মতোই খেলা করত, নিজেকে বিভিন্নভাবে সাজাতো। কিন্তু তার বিয়ের রাতে স্বামী তার চুলের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে। মনে মনে তাকে মেনে নিতে পারেনা। কিন্তু দিনে দিনে মেয়েটির নারীসুলভ আচরণ ও প্রগলভতায় বিরক্ত হয়ে ওঠে, একদিন বলে ওঠে, “তোমার চুলের এমনি অবস্থা, সাজগোজ করলে আরও বিশ্রী দেখায়। তোমাকে আমি আর কোন পার্টিতে নেব না, আমার বন্ধুরা হাসাহাসি করে”। সেই ছিল শুরু। মেয়েটি বুঝতে পারে তাকে আক্ষরিক অর্থে সুন্দরীর বদলে কুৎসিতই বলা যায়। সে তার চুলে উত্তপ্ত গরম পানি ঢেলে দেয়। এরপর থেকে তাদের সংসারে প্রচুর অশান্তির শুরু হয়, এক পর্যায়ে মেয়েটি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়। অ্যানা মোটজের মতে, মেয়েটির মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার এক মাত্র কারণ তার শৈশব থেকে সযতনে লালিত সবচেয়ে বড় সম্পদ, তার সৌন্দর্য্যে আঘাত।

এবার আসা যাক সুন্দরী মেয়েদের সাংসারিক/ভালোবাসার জীবনে। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সুন্দরী নারীদের শতকরা ৯০ ভাগই ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হয়। এর কারণও তাদের নারীসত্তা।

এতোক্ষণ আমরা যাকে নারীর সৌন্দর্য্য বলেছি, এবার তা ছেলেদের চোখে দেখা যাক। সুন্দর কোন জায়গা দেখলে আমাদের ভাল লাগে, তাই বলে সারাজীবন সেটা আমাদের সুন্দর লাগতে পারেনা। কিছুদিন পরেই একঘেয়ে হয়ে যায়। কোন ফুল খুব সুন্দর হলেও প্রতিদিন সেটা দেখতে দেখতে আর সেটার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে সেটা পুরনো হয়ে যেতে বাধ্য। বাস্তব কথা হচ্ছে, নারীর সৌন্দর্য্য এরকম একটি বিশেষ ধরনের সৌন্দর্য্যবোধ ছাড়া কিছু নয়। এটি কিছুটা বিশেষ ধরনের হওয়ার কারণ এর উৎপত্তি হয় টেস্টোস্টেরন হরমোন থেকে, যা একই সাথে যৌনতারও উৎপত্তিস্থল। তবে সাধারণভাবে এটি একটি ইনফ্যাচুয়েশন বা মোহ। ইনফ্যাচুয়েশনের সংজ্ঞাই হচ্ছে তা সাময়িক, অর্থাৎ এটি ভেঙে যেতে বাধ্য। নারীর সৌন্দর্য্যের প্রতি পুরুষের আকর্ষণও এই ইনফ্যাচুয়েশন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রূপসী মেয়েদের সাথে বিয়ে হলে ছেলেদের কাছে স্ত্রীর রূপটাই সবচেয়ে প্রধান থাকে। তবে এই রূপমুগ্ধতা সাময়িক। সেটা কেটে যেতে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হয় না... সুন্দর ফুল কিংবা সুন্দর কোন জায়গার মতোই! এরপর ছেলেটা ঝুঁকে পড়ে মেয়েটার তিনটি গুণের দিকে- ব্যক্তিত্ব, বিশ্বস্ততা এবং স্বামীর প্রতি বাধ্যতা। কিন্তু একজন সাধারণ সুন্দরী মেয়ের সাইকোলজি অনুসারে, তার মধ্যে এই তিনটি গুণের দুটিই হারাতে বসেছে। তার ব্যক্তিত্ব হচ্ছে তার সৌন্দর্য্য, এই সৌন্দর্য্যের খোলসেই সে গড়ে উঠেছে। সৌন্দর্য্যের কারণে তার মধ্যে ততোদিনে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র নার্সিসিজম বা আত্ম-অহমিকা। যেই ইগো কে ফ্রয়েড বলেছেন জীবনের চালনাকারী, তার সেই ইগো সম্পূর্ণভাবে দখল করে নিয়েছে সৌন্দর্য্য নিয়ে তার নার্সিসিজম । রূপজনিত অহমের কারণে স্বামীর প্রতি পরিপূর্ণ বাধ্যতাও তার থাকে না, বরং “স্বামী আমাকে পেয়েছে এই তার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য!” ধরনের মনস্তত্ত্ব তার মধ্যে কাজ করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাসটা তখন পর্যন্ত অটুট থাকে।

বাকিটা নির্ভর করে স্বামীর উপর। সে যদি বুঝতে পারে যে তার প্রেয়সীর মধ্যে তার আকাঙ্ক্ষিত মানবীয় গুণাবলীগুলো খুব বেশি অবশিষ্ট নেই, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সে একটু দমে যায়। “শুধুই চেহারাসর্বস্ব এক মেয়েকে বিয়ে করলাম?” ধরনের চিন্তা করতে থাকে। “আমাকে কি তাহলে সে সহ্য করতে পারে না?” ধারণা থেকে জন্ম হয় অমূলক সন্দেহের। তখন সে স্ত্রীকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করতে চায়। এখানে শুরু হয় বিশ্বাসের ফাটল।

সাধারনত সুন্দরী স্ত্রী তার সহজাত প্রবৃত্তি থেকে বুঝতে পারে স্বামী তাকে পরীক্ষা করতে চাইছে, তাকে পরিপূর্ন বিশ্বাস করছে না। এটা তার সৌন্দর্য্যের উপর গড়ে ওঠা ব্যক্তিত্বের ওপর একটা বড় আঘাত! স্বামীকে সত্যিকার অর্থে ভালোবেসে থাকলে সাধারণত এই সময় সে চেষ্টা করে স্বামীকে নিজের সবচেয়ে বড় সম্পদ, রূপ দিয়ে আরও গভীরভাবে পেতে। স্বামীও স্ত্রীকে পরিপূর্ণরূপে ভালবেসে থাকলে ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু স্ত্রী যদি স্বামীকে বা স্বামী যদি স্ত্রীকে তেমনভাবে ভালো না বাসে, তাহলে এটা মাত্র শুরু। স্ত্রী আবিষ্কার করে বসে তার সৌন্দর্য্য নামক সম্পদটির উপর থেকে স্বামী আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আবার স্বামীও আস্তে আস্তে বিরক্ত হয় স্ত্রীর প্রতি, স্ত্রী তাকে আকৃষ্ট করতে চাইলেও “এতো ভালোবাসা হঠাৎ?”, “তোমার এই অভ্যাস, ওই অভ্যাস আমার ভালো লাগেনা”, “অমুকের সাথে মিশবে না” ইত্যাদি বিষয় চলে আসে। স্ত্রীর সন্দেহ আরও গাঢ় হয়, স্বামীর সন্দেহও ঘনীভূত হয়। এরপরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংসার টিকে থাকে, সুখ না থাকলেও। বলা যায় এই টিকে থাকা অনেকটা মেয়েদের উপর নির্ভর করে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বামী নতুন কোন ইনফ্যাচুয়েশনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, অর্থাৎ অন্য কোন মেয়ে। স্বামীর কাছ থেকে নিজের পরিপূর্ণ মূল্য না পেয়ে স্ত্রীও পরকীয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। শুরু হয় চিরন্তন দ্বন্দ্বের। তবে আশার কথা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর আগমন স্বামী ও স্ত্রীকে এমন উলটো পথ থেকে ফিরিয়ে পথে আনে। স্ত্রীর মনে সৌন্দর্য্যসুলভ সব ব্যক্তিত্বের স্থান করে নেয় মাতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। স্বামীও আগের সব ভুল ভুলে সংসারে মনযোগী হতে আগ্রহী হয়।

আর ছকে যে দ্বিতীয় পয়েন্টের কথা বলেছিলাম অসুন্দরী মেয়েদের সম্বন্ধে, সে সম্বন্ধে আসলে খুব বেশি কিছু বলার নেই। তাদের সৌন্দর্য্যের মাপকাঠিও কিন্তু তাদের মন। যদি তাদের মন বলে “আমি অসুন্দর” তবেই সে অসুন্দর। বেশিরভাগ মেয়ে এই ব্যাপারটাকে মেনে নেয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেকে নিয়োজিত করে তার এ ‘ঘাটতি’ পূরণ করার চেষ্টা করে। যদিও কিশোরী বয়সে বেশিরভাগ মেয়েই এ নিয়ে ম্যানিক-ডিপ্রেসিভ ডিজর্ডারে ভুগে, বড় হতে হতে তা ঠিক হয়ে যায়। এরাই সাধারণত বাস্তববাদী হয়; রূপই যে সব নয় বুঝতে শেখে। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের তুলনামূলক বেশি উন্নতি করতে দেখা যায়।

এই হচ্ছে ফিমেল সাইকোলজির বেসিক পর্যায়ের কিছু ধারণা। এগুলো সব যে সবার জন্যে খাটে তা কখনোই না, কারণ আধুনিক সাইকোলজির ভাষাও ফিজিক্সের মতোইঃ সবকিছু আপেক্ষিক। অত্যন্ত সুন্দরী কোন মেয়ে প্রচন্ড রক্ষণশীলতার মধ্যে বড় হলে তার মধ্যে সৌন্দর্য্য সম্পর্কিত ইগো তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা কম, আবার তেমন অসুন্দরী মেয়ে কোন অভিজাত পরিবারে জন্ম নিলে তার মধ্যে সৌন্দর্য্য সম্পর্কিত এই ইগো তৈরী হতে পারে। আবার কোন পরিবারে দেখা গেল তিন বোন, তিনজনই অত্যন্ত সুন্দরী। এর মধ্যে ছোটজন একটু কম হওয়ায় তার মধ্যে ‘আমি অসুন্দর’ ধারণার বিকাশ লাভ করতে পারে, সৌন্দর্য্যসুলভ আচরণগুলো তার মধ্যে অনুপস্থিত থাকতে পারে। তাই কোন নারীকে এ ধরনের মাপকাঠিতে বিবচেনা করার জন্যে তার ব্যাকগ্রাউন্ড ও বিকশিত হওয়ার মাধ্যম জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে যে, মানুষের মন কোন সমীকরণ মানে না। যেকোন পরিস্থিতিতে যেকোন রূপ মন নিতে পারে।



তবে আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে, আধুনিক বিশ্ব বর্তমানে এই সৌন্দর্য্যনির্ভর সমাজব্যবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে, কিন্তু আমাদের দেশে এধরনের পরিবর্তন হচ্ছে না বললেই চলে। এখনো আমরা মানুষকে সবার আগে বিচার করি তার রূপ দিয়ে, বংশ দিয়ে, টাকা দিয়ে। একটু সুন্দর বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই তাদের সৌন্দর্য্যটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়। এটা কোনভাবেই ঠিক নয়। আজকের বিশ্বে সংসার ভাঙা-গড়ার এই নির্মম প্রক্রিয়ায় জন্যে এই সাইকোলজিক্যাল জটিলতাই মূলত দায়ী।

লেখাটা একটু এলোমেলো হয়ে গেলো, কিন্তু আসলে এই ব্যাপারটা এতোই বিস্তৃত যে কোনখান থেকে কতোটুকু লিখব তার সীমারেখা টানা বেশ কষ্ট। ফেমিনিন সাইকোলজির উপর আরো দুটো পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে, তখন য়াশা করি একটা পরিপূর্ণ ধারণা সবাইকে দিতে পারব। এই লেখায় শুধু সৌন্দর্য্যের সংজ্ঞা ও মেয়েদের সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে সেটার ভূমিকাটা আলোচনা করলাম।

আর আমার লেখার মূল ভিত্তি ফ্রয়েডিয়ান সাইকোলজি। সাইকোলজির প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনেকগুলো করে মতবাদ আছে, অনেকক্ষেত্রে সেগুলো বিপরীতও হতে পারে। যেমন মনের গঠন সম্বন্ধে ফ্রয়েড-ইউঙের তত্ত্ব থেকে অ্যাডলারের তত্ত্ব এতোই ভিন্ন যে দুই মতবাদকে নিয়ে সম্পূর্ণ দুই ধারার গবেষণা হয়। তবে একটা সাধারণ মানদণ্ড বজায় রাখার জন্যে আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন আছে। তাদের নিয়েও কিন্তু মতবিরোধ কম নয়! তাই আপনি কোন পথে আপনার চিন্তাকে প্রবাহিত করবেন, তা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার।

আগের সাইকোলজি সম্পর্কিত পোস্টঃ

মাইক্রোএক্সপ্রেশনসঃ মনের কথা পড়ার যে বিদ্যা!! প্রথম পর্ব- মিথ্যা শনাক্ত করবেন যেভাবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৪৩
৬৮টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×