২০১১। ইতিহাসের পাতা থেকে বিদায় নিতে চলেছে আরও একটি ঘটনাবহুল বছর। অন্য অনেক ক্ষেত্রের মতোই এ সালটি গেইমিং বিশ্বের জন্যেও ছিল অনেক প্রত্যাশার বছর। অনেক প্রত্যাশিত বিগ বাজেটের কিছু গেইম যেমন প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি, তেমনি অপ্রত্যাশিত অনেক গেইমও লাভ করেছে আশাতীত সাফল্য। জয়স্টিক.কম নামক গেইম ওয়েবসাইটের মতে, ২০১১ সালে সর্বমোট ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে গেইম ইন্ডাস্ট্রি। তবে বেশিরভাগ গেইমবোদ্ধার মতে, বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও ভালো গেইমের নির্মাণের দিক দিয়ে ২০১০ সালের তুলনায় কিছুটা পিছিয়েই আছে ২০১১।
আসুন তাহলে, দেখে নিই এ বছরজুড়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলা কিছু গেইমঃ
১. কল অফ ডিউটি- মডার্ণ ওয়ারফেয়ার ৩ঃ প্রতি বছরের মতোই এ বছরেরও শুরু থেকে গেইমিং বিশ্বের নজর ছিল কল অফ ডিউটি সিরিজের দিকে। বিশেষ করে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটি ওয়ার্ড-এর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বাঘা বাঘা প্রোগ্রামারদের চাকরি ছেড়ে দেয়ার খবর গেইমটি সম্বন্ধে কৌতূহল আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, ফার্স্ট পারসন শ্যুটিং জগতে কল অফ ডিউটির দীর্ঘদিনের একক আধিপত্য বজায় রাখতে পারবে তো মডার্ণ ওয়ারফেয়ার ৩?
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নভেম্বর মাসে মুক্তি পায় গেইমটি। মুক্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৭ মিলিয়ন কপি বিক্রি গেইমটিকে করে তুলেছে এযাবৎকালের সর্বাধিক বিক্রিত গেইম।
গেইমটির গেইমপ্লে যথারীতি দুর্দান্ত; নিখুঁত গ্রাফিক্স আর অ্যাকশনও আগের মতোই অনবদ্য। আগের পর্বে শুরু হওয়া তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবার প্রকট রূপ নিয়েছে, এরই মধ্যে আপনাকে লড়তে হবে এ সিরিজের মাধ্যমে রীতিমতো কিংবদন্তিতে পরিণত হওয়া ক্যাপ্টেন জন প্রাইস, ক্যাপ্টেন সোপ ম্যাকট্যাভিশ কে নিয়ে।
সিরিজের আগের গেইমগুলোর মতো এই গেইমটিও গেইমবোদ্ধাদের কাছে সাদরে গৃহীত হয়েছে, কিন্তু অনেকে এটাও জানাতে ভোলেন নি যে, সিরিজটিতে শীঘ্রই নতুনত্বের প্রয়োজন। অনেকে আবার গেইমটিকে নতুন কোন গেইম না বলে বলেছেন শুধু এর আগের পর্বের সিক্যুয়েল। মোট কথা, টানা কয়েক বছর ধরে একই ধরনের গেইমপ্লে তে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া গেইমাররা এবার এ সিরিজটি থেকে আশা করছেন নতুন কিছু, যার অভাবে পরবর্তী বছর থেকেই গেইমটির আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২. অ্যাসাসিন’স ক্রিড রেভেলিশনঃ “এলাম, দেখলাম, জয় করলাম” প্রবাদটা বেশ ভালভাবে খাটে ইউবিসফট-এর দুনিয়া কাঁপানো গেইমিং সিরিজ অ্যাসাসিন’স ক্রিড-এর ক্ষেত্রে। যদিও গত বছর প্রকাশিত তৃতীয় পর্ব ব্রাদারহুডকেই গেইমটির শেষ পর্ব বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন জনপ্রিয়তা নির্মাতাদের বাধ্য করেছে গেইমটির আরও একটি পর্ব তৈরী করতে।
স্বাভাবিকভাবেই এ সর্বশেষ গেইমটির প্রতি গেইমারদের প্রত্যাশা ছিল প্রচুর; শেষ পর্যন্ত কি ঘটবে এজিও অডিটরে ডে ফিরেঞ্জের ভাগ্যে তা নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না। সব প্রশ্নের জবাব নিয়ে ডিসেম্বর মাসে হাজির হয় অ্যাসাসিন’স ক্রিড রেভেলিশন। গেইমটির স্বকীয়তা আর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সিরিজের আগের গেইমগুলোর মতোই এজিও কে রেনেসাঁ যুগের মুখোশধারী শয়তানদের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। তবে গেইমটির সবচেয়ে নতুন বৈশিষ্ট্য হল, এতে আপনাকে এজিও ও ডেজমন্ড-এর পাশাপাশি তাদের পূর্বপুরুষ আলতাইর ইবনে লা আহাদ-এর ভূমিকাতেও খেলতে হবে। কন্সটান্টিন, দামেস্কাস, মাসাফ-এর মতো ঐতিহাসিক শহরে গেইমটি চিত্রায়িত হয়েছে।
পূর্বের তুমুল জনপ্রিয় তিনটি পর্বের সাথে তুলনা গেইমটিকে অনেকে একই ধাঁচের বললেও বেশিরভাগ গেইমারই গেইমটিকে রেখেছেন সেরাদের তালিকায়।
৩. ক্রাইসিস ২ঃ ২০০৭ সালে ‘ক্রাইসিস’ এর পর দীর্ঘ চার বছর প্রতীক্ষার শেষে গেইমিং বিশ্বের জন্যে ইলেকট্রনিক আর্টস মার্চ মাসে নিয়ে এসেছিল তাদের নব্য উপহার ‘ক্রাইসিস ২’। আকাশচুম্বী প্রত্যাশার মুখে অনেক গেইমকেই এর আগে ব্যর্থ হতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু নিজেদের ওজনটা ভালভাবে বুঝিয়ে দিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্রাইটেক। গেইমটির জন্যে বিশেষভাবে নির্মিত ‘ক্রাই ইঞ্জিন ৩’ গেইমটিকে নিয়ে গিয়েছে অন্য এক উচ্চতায়, যা হার্ডকোর গেইমারদের দেবে অন্য এক আনন্দ। ঝোপ-ঝাড়ের পরিবর্তে এবার সম্পূর্ণ শহুরে এলাকায় বিস্তার লাভ করেছে গেইমটি। অ্যালিয়েনদের আক্রমণে বিধ্বস্ত শহরে আলকাট্রাজ নামক সৈনিকের দায়িত্ব নিয়ে আপনাকে লড়াই করতে হবে দুর্গম, প্রতিকূল পরিবেশে। ‘ক্রাইসিস’ গেইমের নায়ক প্রোফেটকেও আবির্ভূত হতে দেখা যাবে নতুন রূপে।
সব গেইম সমালোচকের কাছ থেকে গেইমটি অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে, ‘ক্রাইসিস’-এর মাধ্যমে যে নতুনধারার গেইমিং-এর সূচনা হয়েছিল, ‘ক্রাইসিস ২’ তারই আরেক সার্থক প্রয়োগ বলে গেইমবোদ্ধারা মনে করছেন। সেসঙ্গে তাঁরা এও জানিয়ে দিয়েছেন, অসাধারণ গ্রাফিক্স কোয়ালিটি আর চমৎকার কাহিনীর গেইমটি যে কোন গেইমারের জন্যে খেলা আবশ্যক।
৪. পোর্টাল ২ঃ ভালভ করপোরেশনের তৈরীকৃত এ গেইমটি প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত একে নিয়ে ততো হইচই ছিল না, কিন্তু প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘন্টায় মধ্যেই গেইমটি সাড়া ফেলে দেয় পুরো গেইমিং বিশ্বে। একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী গেইমটিকে বেশিরভাগ গেইমারই ভালবেসে ফেলেছেন এক মূহূর্তে; বিশেষ করে যারা ধাঁধাঁর খেলা পছন্দ করেন তাদের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই! ভবিষ্যত পৃথিবীকে নতুনভাবে দেখার জন্যে, কিংবা সত্যিকারের বিজ্ঞান প্রয়োগ করে কাল্পনিক বিজ্ঞানের গোলকধাঁধাঁ সমাধান করার নির্মল আনন্দের জন্যে গেইমটির বিকল্প নেই। রক্তারক্তি আর ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়াও যে কোন গেইম বিশ্বজয় করতে পারে, ‘পোর্টাল ২’ তারই প্রমাণ।
গেইমটি সব দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গিয়েছে এর আগের পর্ব ‘পোর্টাল’ কে, নতুন করে সাজানো হয়েছে সমস্ত প্রেক্ষাপট। অত্যন্ত উঁচুদরের ডিজাইনিং ও চমৎকার গ্রাফিক্সের গেইমটি সহজেই স্থান করে নিয়েছে সেরা গেইমের তালিকায়, সেই সাথে আরও একবার গেইমিং বিশ্বকে সফলভাবে চমকে দিতে পেরেছে এর নির্মাতা ভালভ করপোরেশন। স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ৭ টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছে গেইমটি।
৫. ব্যাটম্যান- আর্কহ্যাম সিটিঃ ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘ব্যাটম্যানঃ আর্কহ্যাম অ্যাসাইলাম’ যতোটা তোলপাড় বেশি তুলেছিল গেইমিং বিশ্বে, তারচেয়ে বেশি তোলপাড় তুলল সম্প্রতি প্রকাশিত এর সিক্যুয়েল ‘ব্যাটম্যানঃ আর্কহ্যাম সিটি’। দ্য ডার্ক নাইট এবার তার প্রাণপ্রিয় শহর গোথাম সিটিতে ফিরে আবিষ্কার করবে আর্কহ্যামের জেলখানার চেয়েও নিকৃষ্ট অন্যায়, দুর্নীতি আর অন্ধকারে পরিপূর্ণ শহর। আগের পর্বের মতো জোকারের অট্টহাসির তো থাকছেই, তার সাথে এ পর্বে থাকছে রিডলার, ভিক্টর জ্যাজ, বেইন, পয়জন আইভির মতো ব্যাটম্যান সিরিজের কুখ্যাত ভিলেনরা।
গেইমটির গেইমপ্লেতে চমৎকার কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নন-লিনিয়ার গেইমপ্লে। এর ফলে গেইমাররা এবার ব্যাটম্যানকে নিয়ে খেলতে পারবেন নিজের ইচ্ছেমতো, চরে বেড়াতে পারবেন গেইমের বিশাল জগত। নাটকীয় ঘটনাসম্পন্ন কাহিনী গেইমটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। গ্রাফিক্স আর সাউন্ড কোয়ালিটির দিক দিয়েও গেইমটি তুলনাহীন।
মেটাক্রিটিক, গেইমস্পট, আইজিএন-এর মতো বিশ্বখ্যাত সব গেইম ম্যাগাজিন গেইমটিকে ২০১১ সালের শ্রেষ্ঠ গেইম বলে ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া গেইমটি বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে লাভ করেছে ১০ টিরও বেশি পুরস্কার।
৬. ব্যাটলফিল্ড ৩ঃ কল অফ ডিউটি সিরিজের সাথে পাল্লা দিয়ে চলা ব্যাটলফিল্ড সিরিজের নতুন গেইম ‘ব্যাটলফিল্ড ৩’ নিয়েও গেইমারদের মধ্যে উত্তেজনার অভাব ছিল না। চলতি বছরের অক্টোবরে ইলেকট্রনিক আর্টস-এর ব্যানারে মুক্তিপ্রাপ্ত গেইমটি প্রথম সপ্তাহেই বিক্রি হয় ৫ মিলিয়ন কপি।
২০০৫ সালে প্রকাশিত ‘ব্যাটলফিল্ড ৩’ এর সরাসরি সিক্যুয়েল এ গেইমটির কাহিনী গেইমারদের ততোটা আকর্ষণ না করলেও ঢেলে সাজানো গেইমপ্লে আর অ্যাকশন ঠিকই কদর পেয়েছে গেইমারদের কাছে। এ পর্যন্ত বের হওয়া যুদ্ধের গেইমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চমৎকার গ্রাফিক্স দেখা যাবে এই গেইমটিতে, যা দিয়ে কল অফ ডিউটিকে বেশ একহাত নিয়েছে ইলেকট্রনিক আর্টস। ফ্রস্টবাইট ২.০ ইঞ্জিনের বদৌলতে গেইমটিতে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ফুটে উঠেছে অত্যন্ত বাস্তবভাবে। দুর্র্ধষ কিছু বিমানযুদ্ধ গেইমপ্লেকে করেছে প্রচুর উপভোগ্য। গেইমটির সাফল্যে ইতোমধ্যে ‘ব্যাটলফিল্ড ৪’ এর ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন নির্মাতারা, যা কল অফ ডিউটি সিরিজকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেকের ধারনা।
৭. এল.এ. নয়েরঃ মাফিয়া সিরিজের দুটো গেইম ব্যতীত গত শতাব্দীর মধ্যভাগের উত্তাল সময় নিয়ে কোন উল্লেখযোগ্য গেইম তৈরী হয়নি এতোদিন, কিন্তু এ বছর রকস্টার স্টুডিও নির্মিত এল.এ. নয়ের গেইমটি দিয়ে এ খরা এক নিমেষে পুষিয়ে গিয়েছে। অনেক গেইমিং প্রতিষ্ঠান এ সময়টা নিয়ে ক্ল্যাসিক ধাঁচের গেইম তৈরীতে আগ্রহী বটে, কিন্তু তার জন্যে রসদও যে থাকা চাই! আর গ্র্যান্ড থেফট অটো নামক কিংবদন্তি গেইম সিরিজের নির্মাতাদের সে রসদ থাকবেই, বলা বাহুল্য।
গেইমটিতে আর আপনাকে বেশিরভাগ গেইমের মতো অন্যায় করে পালিয়ে বেড়াতে হবে না, বরং আপনি হবেন সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত সৎ পুলিশ অফিসার কোল ফেলপস। গেইমটির সবচেয়ে দারুন বৈশিষ্ট্য এর কাহিনীর গতি, যা আপনিই নিয়ন্ত্রণ করবেন। অর্থাৎ আপনার বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে এগিয়ে যাবে গেইমের কাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কিভাবে লস অ্যাঞ্জেলেস-এর মতো আধুনিক শহরে একজন সৎ পুলিশ অফিসার সব অন্যায়ের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তা গেইমটি খেলার সময় সহজেই উপলদ্ধি করবেন।
গেইমিং জগতের শ্রেষ্ঠ গ্রাফিক্সের মুকুটটি এখন এই গেইমটির দখলে। বেশ কিছু মৌলিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গেইমটিতে এর সময়কালকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তাই খেলার সময় নিঃসন্দেহে আপনার সাদা-কালো ছবির সে যুগের কথা বারবার মনে পড়বে। চলচ্চিত্রপ্রেমীরা গেইমটি থেকে পাবেন একই সাথে গেইমিং ও সিনেমা দেখার দুর্লভ আনন্দ।
৮. দ্য এল্ডার স্ক্রোলস ৫- স্কাইরিমঃ ফ্যান্টাসি, অতিপ্রাকৃত জগত নিয়ে তৈরী গেইমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু সে অনুপাতে এধরনের গেইম তৈরী হচ্ছে বেশ কম। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যান্টাসি রোল প্লেয়িং গেমারদের জন্যে বিশ্বখ্যাত ‘দ্য এল্ডার স্ক্রোলস’ সিরিজটি চালিয়ে যাচ্ছে বেথেলডা সফটওয়ার্কস। এক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভকারী প্রতিষ্ঠানটি এ বছরের শেষদিকে বাজারে আনল তাদের দ্য এল্ডার স্ক্রোলস-এর পঞ্চম পর্ব ‘স্কাইরিম’। গেইমটি এর আগের পর্ব ‘অবলিভিয়ন’ এর সরাসরি সিক্যুয়েল নয়, বরং স্বতন্ত্র একটি গেইম বললেই ভাল হয়।
গেইমটিতে স্কাইরিম নামক জায়গায় আপনাকে বিচরণ করতে হবে, পরাজিত করতে হবে আলডুইন অতিপ্রাকৃত শক্তিকে। শুরু হবে এক অসম যুদ্ধ। ‘ড্রাগন ল্যাংগুয়েজ’ নামক ড্রাগনদের অদ্ভূত এক ভাষা থেকে শুরু করে অনেক আশ্চর্য জিনিসের মুখোমুখি হতে হবে প্রতিপদে।
উন্মুক্ত গেইমপ্লে গেইমটির প্রধান বৈশিষ্ট্য, সম্পূর্ণ গেইমে আপনি পায়ে হেঁটে কিংবা ঘোড়ায় চড়ে ছুটে বেড়াতে পারবেন ইচ্ছামতো। আবার বিভিন্ন মিশন সম্পন্ন করাও আপনার উপরই নির্ভর করবে; ইচ্ছে করলে মূল মিশন বাদ দিয়েও সমস্ত গেইম চরে বেড়াতে পারবেন।
গেইমটির সাউন্ড কোয়ালিটির অভিনবত্বে সেই ফ্যান্টাসী জগতে হারিয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না গেইমারদের।
৯. লিম্বোঃ বছরের সবচেয়ে আলোচিত গেইমগুলোর তালিকায় বড় বড় গেইমগুলোর পাশাপাশি সীমিত পরিসরের, কিন্তু অত্যন্ত উঁচু মানের যে গেইমটি স্থান করে নিয়েছে, তার নাম ‘লিম্বো’। এর নির্মাতা ডেনিশ ডেভেলপার প্লেডেড, প্রকাশক মাইক্রোসফট গেইম স্টুডিও। হারিয়ে যাওয়া ছোটবোনকে খুঁজছে এক নাম-পরিচয়হীন বালক, এই সাধারণ কাহিনীর মধ্যেই অসাধারণের ভাণ্ডার পুরে দিয়েছেন নির্মাতা, যার কারণে অনেকেই ‘লিম্বো’কে শুধু গেইম বলতে নারাজ। বরং এই সাদামাটা গেইমটির মধ্যে লুকিয়ে আছে গভীর জীবনবোধ, আধুনিককালের ইট-কাঠের যান্ত্রিক জীবনের প্রতি এক তীব্র প্রহসন।
সমস্ত গেইমে মাত্র দুটো রঙ ব্যবহার করা হয়েছে- সাদা এবং কালো। এই সাদা-কালো জগতে ছোট্ট বালকটিকে নিয়ে আপনার হারিয়ে যেতে হবে অজানা এক পরিবেশে, যেখানে অপেক্ষা করে নাম না-জানা সব দৈত্য-দানো। গেইমটির শুরু ও সমাপ্তিও ঘটেছে বেশ অদ্ভূতভাবে। নির্মাতাদের ভাষায়, এ দুটোর দায়িত্বই ছেড়ে দেয়া হয়েছে গেইমারের উপর।
প্রচলিত ধারণা থেকে একেবারেই ব্যতিক্রম এ গেইমটি এ পর্যন্ত অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১১ সালের সবচেয়ে ব্যতিক্রম গেইম-এর পুরস্কার।
১০. নিড ফর স্পিড- দ্য রানঃ গেইমারদের কাছে নিড ফর স্পিড সিরিজের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এক যুগেরও বেশি সময় নিয়ে রেসিং গেইমের শীর্ষে রয়েছে সিরিজটি। এ বছর বাজারে এল ইলেকট্রনিক আর্টস নির্মিত সিরিজটির সর্বশেষ এডিশন ‘দ্য রান’। গেইমটির ট্রেইলার প্রকাশের সময়ই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, এবার শুধু গাড়ির ভেতরে নয়; বাইরেও চলাফেরা করতে পারবেন গেইমাররা। এ পরিবর্তন দেখার অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকা গেইমারদের পুরোপুরি না হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে হতাশ করেছে গেইমটি। বেশিরভাগ গেইমারের মতে, ২০০৫ সালের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর পর যে ভিন্নধারার রেসিং শুরু করেছিল নিড ফর স্পিড, ‘দ্য রান’ সেটা থেকে অনেকটা সরে এসেছে। উচ্চমানের গ্রাফিক্স ও সাউন্ড ইফেক্টস থাকা সত্ত্বেও তাই বহুল প্রত্যাশিত এ গেইমটি পুরোপুরি সন্তষ্ট করতে পারেনি গেইমারদের। গেইম সমালোচকরাও এর গেইমপ্লে কে নিড ফর স্পিড সিরিজের সাথে বেমানান বলে মতামত দিয়েছেন।
এছাড়াও বছরজুড়ে আরও প্রকাশিত হয়েছে ডেড আইল্যান্ড, হোমফ্রন্ট, ডিউক নুকেম ফরেভার, ফিয়ার ৩, সুপার স্ট্রীট ফাইটার ৪ ইত্যাদি গেইম, যেগুলো বেশ প্রত্যাশা নিয়ে বাজারে এলেও আলোচনায় তেমন আসতে পারেনি। এবার গেইমারদের অপেক্ষা ২০১২ সালের জন্যে, যেখানে তাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ম্যাক্সপেইন ৩, ডার্ক সাইডার্স ২, ম্যাস ইফেক্ট ৩, মিরর’স এইজ ২ ইত্যাদি বহুল প্রত্যাশিত গেইম।
আজকের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত, এখানে বর্ধিত আকারে প্রকাশ করলাম।
আমার গেইম সম্পর্কিত সব পোস্টেই গেইমারদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে থাকি, এখানেও কারও কোন ধরনের প্রশ্নের উত্তর/সমাধান দরকার হলে বলতে পারেন।