কথায় বলে , সঙ্গদোষে লোহা ভাসে। আমারও সেই অবস্থা। ব্লগে লিখতে লিখতে দেখতে দেখতে তিনবছর কাটলো কিছদিন আগে। নিজের কত হাবিজাবি লেখা ও অন্যের কত দারুণ সব লেখা পড়া।সামান্য প্রশংসা শুনে সপ্তম আকাশে ওড়া ও পরমন্তব্যেই ভয়ংকর সমালোচনা শুনে ধপাস করে স্বর্গপতন!প্রতিবার দেখি নতুন নতুন সহব্লগারের বই বের হচ্ছে। আমারও কেন যেন গরীবের ঘোড়ারোগ হলো। গেল বছরের শেষের দিকে মনে হলো,'' বিলেত- পাখির চোখে দেখা সিরিজটা'' বই করে ফেললে কেমন হয়? মানুষজন বেশ উৎসাহ দিয়েছেন তো। বইকে মানুষের সন্তানসম বলা হয়। কেন , তা বের করতে গিয়েই বুঝেছি। শারীরিক সন্তান না হলেও মানসিক সন্তান তো বটেই।ধারণ ও প্রসব যন্ত্রণা মাঝে মাঝে সহনীয়তার পরীক্ষায় ফেলে দেয়, বিশেষ করে নবীন -প্রথমবারের মত লেখককে।আমার পরিচিতির গন্ডি সীমিত। বড় কোন লেখককে ধরে বইয়ের খুব প্রশংসা করিয়ে নেব - তা দেখে পাঠক কিনবে -এটা করার সাধ্য নেই। আবার এরকম ভূমিকা যাদের বইতে থাকে তাদেরটা কি সবাই কেনে, পড়ে? মনে হয় না।বই সম্পর্কে প্রথম ও শেষ রায় পাঠকের হওয়া উচিত ও হয়ে থাকে। এখানে মধ্যসত্ত্বভোগীর স্থান সচরাচর পাকা হয় না।
আমি বাচাল কিন্তু অন্তর্মুখী । চেনা জানা মহলে নিজের বইয়ের কথা বলতে বড় সংকোচ। প্লিজ তুমি আমার ' বন্ধু/ কলিগ/ পড়শী/ আত্নীয়' - আমার বইটা কিনো । এভাবে বলতে মুখে বেঁধে যায়। আর ভদ্রতার খাতিরে চেনা মুখেরা কিনবেন , দেখাবেন কিনেছি , তারপরে উইপোকার খাবার হবে কিংবা কেজি দরে বিক্রি হবে এ বড় বেদনার কথা , নিজের বইসন্তান সম্পর্কে। যাহোক ,নিজের যোগ্যতায় না হলেও আমি পাঠকের উপরে অগাধ বিশ্বাসী। বইটা যদি সংগ্রহ করার মতো মনে না-ও হয় তবু অন্তত এটুকু কল্পনা করতে ভালো লাগে- কেউ যখন মেলায় কাকলী প্রকাশনের স্টলে যাবেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একবারটি হলেও পৃষ্ঠা উল্টাবেন।সঙ্গীরা হয়তো বিরক্ত হয়ে বলবে, কি ফালতু সময় নষ্ট করছিস! আমি নিজে পাঠিকা হিসেবে যে কাজ অনেকবার করেছি- যে বই ঠিক কিনে নেবার যোগ্য মনে হয় না , শুধু উল্টেপাল্টে নিতে আগ্রহ হয় , দাঁড়িয়ে তেমন কেউ দুটা একটা পাতা অন্তত নেড়েচেড়ে পড়বেন-যদিও ভিড়ে পিন গলাবারও জায়গা নেই! আমি মনের চোখে ঠিক দেখে নেব!
আগেই বলেছি ,খুব দক্ষ ঢাকী কাউকে জানাশোনা নেই। অথচ মানুষের মত বইসন্তানকেও জন্ম দেবার পরে লালন করার দ্বায়িত্ব আছে। তাই খুব লজ্জা লজ্জা গলায় নিজের ঢাক নিজেই পিটাতে হচ্ছে,-কি আছে বইটিতে? জানাতে। কেননা, নাম শুনে পরিচিত কেউ জিজ্ঞেস করেছেন, এটা কি ভ্রমণ কাহিনী? -না। এটা কি প্রেমকাহিনী? -না। অ্যাডভেঞ্চার /প্রবন্ধ?- না।অতএব বইয়ের ভূমিকা থেকে অংশ তুলে দিলাম:
''আমি ভিড়ের ভিতর মিশে যাওয়া সাধারণ মানুষ। একজন মুসলিম , বাঙালি , নারী অনেকগুলো সত্বা নিয়ে বাইরে থেকে ভিতরকে দেখার চেষ্টা করেছি।আর্থিক হিসেবে দেশে মধ্যবিত্ত ছিলাম, বিলেতে আসার সময়ে সত্যিকারের জীবন বা সে জীবনের আনন্দ বেদনা বুঝতে পেরেছি- গড়পড়তায় সেটা নিন্মবিত্তের জীবন । বিশাল মাপের কারোর সাথে ওঠাবসা ছিলো না। উপন্যাসে যারা জীবনের একেবারেই লোক বা বাসিন্দা-পার্শ্বচরিত্র বলতে যাদের বোঝায় তাদের সাথে, তাদের মত আমি।লেখার শখ ছিল, ব্লগে লেখা শুরু করি ।গতানুগতিক বৈচিত্র্যহীন জীবনে লেখার বিষয় কি হবে?একটু ভিন্নতার কারণেই বিলেতকে ঘিরে ডায়েরি লেখা শুরু। এই দেশকে নিয়ে আদিখ্যেতা করার জন্য নয়।অতএব নামে যাই মনে হোক বিলেত আমার বইয়ে লক্ষ্য নয় , উপলক্ষ্য ।ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া অনুল্লেখ্য মানুষের জীবন নিয়ে লেখার কি আছে? এই লেখাটার চরিত্র এখানের আমি না হয়ে যেকোন প্রবাসীই হতে পারতেন। আটপৌড়ে জীবন। ক্লাসে যাওয়া, রান্না করা , খাওয়া ঘুম বাদে , ওয়েট্রেস, ক্লিনার, টিলের কর্মী, অফিস লেডী, দোকানের ম্যানেজার বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা হয়েছে ।দেশে থাকলে এমনটা কখনোই হতো না, এই নানা রঙের জীবনের সামান্য স্বাদগ্রহন, এটা - দূর্যোগ মোটেই বলবো না,বরং একধরণের সুযোগ।তবু এমন একজনের কাহিনীতে হয়তো বাড়তি আকর্ষণের কিছু নেই, এমন তো এখানের অভিবাসী মাত্রেরই হয়।হয়তো হয়, কিন্তু তাতে কি? আমার কাছেতো অভিনব।
এবং এক সাগর কৃতজ্ঞতা------
'লেখার ইচ্ছা থাকলেও বাংলাদেশে ভালো প্লাটফর্ম এখনও কম। সামহোয়্যারইনব্লগের কর্তৃপক্ষের কাছে সেজন্য আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ভাইয়াকে বিশেষ ধন্যবাদ , প্রকাশনার ব্যাপারে বেশ সাহায্য পেয়েছি উনার কাছ থেকে।
এছাড়া,
আরজুপনি, কাল্পনিক_ ভালোবাসা, হাসান মাহবুব , ইচ্ছের ঘুড়ি, তুষার কাব্য, গিয়াস লিটন, এহসান সাবির, দীপংকর চন্দ, সুমন কর, লাইলী আরজুমান , বোকামানুষ, বোকা মানুষ বলতে চায়, জাফরুল মবীন, আবু শাকিল, মহান অতন্দ্র, আরজু মুন, ,দিশেহারা রাজপুত্র, সচেতনহ্যাপী, প্রামানিক, নূর এমডি, মাহমুদ০০৭, ডি মুন, নাসরিন চৌধুরী,খেলাঘর, মুদ্রা সংগ্রাহক, আমি তুমি আমরা, অন্তরন্তর, শায়মা, রোদেলা, টুম্পা মনি, মো: ইসহাক, প্রোফেসর শঙ্কু, ইমরাজ, এম করিম, মাঈনউদ্দিন মইনুল, অপূর্ণ রায়হান, মামুন রশিদ, ঢাকাবাসী, স্বপ্নবাজ অভি, অরুদ্ধ সকাল, সকাল রয়, কলমের কালি শেষ, বিদ্রোহী বাঙালি, নেক্সাস, পার্থ তালুকদার, সেলিম আনোয়ার, স্বপ্নচারী গ্রানমা, প্রবাসী পাঠক, ডাইরেক্ট টু দ্যা হার্ট, লেখোয়াড়, এম ই জাভেদ, নাজমুল হাসান, খাটাস, খেয়া ঘাট, মৃদুল শ্রাবন,মুনতাসির নাসিফ, রাজিব, উপপাদ্য, কান্ডারি অথর্ব, স্নিগ্ধ শোভন, বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়, পরিবেশ বন্ধু, অস্পিসাস প্রেইস, একলা ফড়িং , ইখতামিন, আমি ইহতিব, ইরফান আহমেদ, অন্ধকারের আমি এবং আরো অনেক আপু ও ভাইয়া ব্লগবন্ধু যারা যারা সিরিজে লাইক কমেন্ট শেয়ার করে উৎসাহ দিয়েছেন বা ফলো লিস্টে রেখেছেন ,দুঃখ রইলো- স্থানাভাবে সবার নামোল্লেখ করতে পারছি না,তাদের প্রতি এই ভূমিকাটা আসলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক যুৎসই বাহানামাত্র! '
বিলেত: পাখির চোখে দেখা
রেজওয়ানা আলী তনিমা
প্রাপ্তিস্থান: কাকলী প্রকাশনী
মেলার গুচ্ছ নং: ১২ (কাকলীর প্যাভিলিয়ন)
প্রচ্ছদ: ইমরান
ধরণ: উপন্যাস
দাম: ২০০ টাকা( মেলায় ২৫% মূল্যছাড় হবে)
রকমারি.কম অনলাইন অর্ডার লিঙ্ক: rokomari online bookshop link
দুঃখপ্রকাশ : বইটি বারো তারিখে বের হবে বলায় সেদিন এই পোস্ট দেই। পরে প্রকাশক সাহেব জানিয়েছেন অনিবার্য কারণে ১৬ তারিখে বইটা মেলায় আসবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০০