একজন দক্ষ সেলসম্যানকে ক্রেতার বডি লেঙ্গুয়েজ দেখেই সব বুঝে ফেলতে হয়, তার চোখ মুখের ভাব ভঙ্গি দেখে বুঝতে হয় তিনি কি চান- ক্রেতারও মনে আসার আগে তার দরকারী জিনিসটি তার হাতে তুলে দিতে হয়।দেখেই যেন তিনি বলেন - আরে একি ! এটাই তো আমি খুঁজছিলাম! এসবই একজন দক্ষ সেলসম্যানের গুন।
দরকারে তো বটেই, দারুন মোহনীয় হাসি দিয়ে , কথার বাণে মুগ্ধ করে , তেলপানি দরকারমত ঢেলে, ছলে বলে কৌশলে যেভাবে পারেন পাবলিক কে জিনিস গছান- যা তার দরকার তা তার হাতের কাছে এনে দিন, যা তার দরকার নেই গছিয়ে দেন তা-ও।বোঝান যে ওটাও আসলে তার কতটা দরকার ছিল এতকাল- ভাবটা এমন- এই অতি জরুরী জিনিসটাও তো দেখি আপনার বাড়িতে নেই। হায়! আপনি এতদিন চলেছেন কিভাবে এই দারুন প্রয়োজনীয় বস্তুটি ছাড়া?এ-ই-ই তো আমাদের কাজ বলেন আর বলেন ধান্ধা।
এইত যে জিনিসটি ছাড়া আপনি দিব্যি বেঁচে বর্তে আছেন এমনকি বিশ ত্রিশ চল্লিশ বছর তা যে কত অভাবী, কতটা কষ্টদায়ক বেঁচে থাকা -তা আমি এক লমহায় আপনাকে বেশ বুঝিয়ে দেব -আমাদের শোরুমে আসা জীবনকে আরো সহজ করে দেবার উদ্দেশ্য নিয়ে আসা কোন একটি .........এই যেমন ধরুন গোসলখানার ঝুলানোর মত একটা মাল্টিপারপাস র্যাক কিংবা ধরুন এমন একটা বাক্স যাতে সাবান রাখলেও তা ধার চুইয়ে কখনো পানি পড়বে না, সুগন্ধি থাকবে অটুট। অথবা একটি শাওয়ার ক্যাপ যা নাকি আপনার চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে । এইসব হাবি জাবি যার অভাব আপনি কালে ভদ্রে কখনো করেছেন কিনা সন্দেহ।চটকদার কথায় কিনে নিয়ে তো যাবেন ঠিকই কিন্তু ফেলে রাখবেন ঘরের এক কোনে।
কিন্তু দোকানে আপনার মনে হতে বাধ্য এইসব ছাড়া এতদিন আপনার পরিচ্ছন্নতার এই অপরিহার্য ধাপটি সম্পাদিত হচ্ছিল কিভাবে?এত ধরুন যতসামান্য এক গোসলখানারই কথা । তারপর আরও কত কিছুই তো আছে।মানুষের জীবনে যেমন কাজের শেষ নেই তেমনই কারনে অকারনে উদ্ভাবন আবিষ্কারেরও শেষ নেই। আর তাই আমাদের মত সেলসম্যানের চমকদারিত্বেরও শেষ নেই।এটা আসলে একধরনের আর্ট বিশেষ। বিক্রি কর, কেবল করেই যাও, কাস্টমারের ইহজীবনেও তা কাজে লাগুক আর নাই লাগুক, কিছু যায় আসে না। কোম্পানির মুনাফাতেই আমাদের তরক্কি।
তা যাক, সেলসম্যান হওয়ায় আমি আবার এখটু বেশীই কথা বলি, কি কথায় কি কথা চলে আসে তার নেই ঠিক, কি করবো বলুন ,অভ্যাসের দোষ। লোক পটাতে কথা বলতেই হয় যে! যে গম্ভীর বয়স্ক টাকার কুমীর লোককে ছেলে ছোকরাদের চকরাবকরা একটা শার্ট গায়ে ক্লাউন ক্লাউন লাগে , দেখলেই হাসি পায় তাকেও বলি আরে স্যার আপনাকে শার্টটা যে কি মানিয়েছে না, বয়স বিশ বছরেরও কম লাগছে, ইয়ংম্যান একদম!
যা হোক এতক্ষণ যা বললাম তা ছিল ভূমিকামাত্র, কি করবো বলুন- সেলসম্যান হবারও আগে আমি আবার সেলসরিপ্রেজেনটেটিভও ছিলাম কিছুদিন, তাই সেরের উপর সোয়া সের, ভূমিকাটা বোধহয় একটু বেশীই লম্বা হয়ে গেল তাই না?
আসলে এত কথা বলার কারনটা হল আমার সামনে দাঁড়ানো মক্কেলটা- আমার কাস্টমার। ভারি বিভ্রান্ত , কি কিনবে কি পছন্দ করবে কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছে না, দিশেহারা দিশেহারা ভাব তার চোখে মুখে। হবারই কথা - নিজে সেলসম্যান বলে বলছি না , আমাদের স্টোরটা সত্যিই অনেক দারুন। কোনটা রেখে কোনটা নেব এরকম অবস্থা অনেকেরই হয়।রীতিমত পশ একটা শপ,সবাই এমনকি ঢোকারও সাহস করে না এখানে যদি না মানিব্যাগটা থুরি ব্যাংক কার্ডটা সেরকম ওজনদার না হয়।
নিজের ট্যাকের তো তিন অবস্থা কিন্তু এই খানে যতক্ষন কাজ করতে হয় ততক্ষন এখানের দামি দামি আসবাবপত্র, পোশাক ,হীরের গহনা ইত্যাদির গরবে নিজেই গরবিত বোধ করি-যেন ওগুলো আমারই জিনিস, আমি যেন আর ২ নং কলমিবাজার থেকে উঠে আসা আবদুর রহিম নই, নই এখানের বিকৃত ফিরিঙ্গি উচ্চারনে মিঃ র্যায়িম-নগন্য সাধারন এক মাটি কামড়ে পড়ে থাকা অভিবাসী ।
যেন ঔ যে রূপসী ধবধবে সাদা মেয়েটি তার ব্যালেন্সে পরিপূর্ন ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটা বহুমূল্য রত্নখচিত নেকলেসটা কিনতে পে করছে ও আমিও পারি , ঝকঝকে ইউনিফর্মে এখানের সব পন্যের সাথে আমাকেও বেশ মানানসই মনে হয়। যদিও বাড়িতে পরনে থাকে বছর দু আগে দেশ থেকে পাড়াতো ভাইয়ের সংগে আনা বারোয়ারী লুঙ্গি। তখনকার আমি আবার এখানের র্যায়িম থেকে একেবারে ভিন্ন এক গ্রহের প্রাণী।কিন্তু এখানে আমার ওসব কিছু মনেই থাকে না।
যা বলছিলাম-সামনে দাঁড়ানো মক্কেলকে দেখতেই আমার মনে হল আজ আমার কিসমত খুলেছে। দেখতে বেশ শাঁশালো মনে হয়-মালকড়ি আছে পকেটে আই মিন ব্যাংকে আরকি। বেশ দ্বিধাগ্রস্ত ভাব চোখেমুখে। এধরনের কাস্টমারগুলো মাঝে মাঝে বেশ ভালো হয়, দ্বিধাগ্রস্ত থাকে বলেই কোনটা ঠিক হবে না হবে বাছাবাছি করতে পারে না, সহজেই পাম মেরে বেশী দামিটা গছিয়ে দেয়া যায়, এমনকি অনেক সময় একাধিক পছন্দ করা জিনিসও ,কপাল তেমন ভালো থাকলে। অবশ্য সেই সাথে পকেটের জোরটাও থাকলে- বলাই বাহুল্য।
এই যেমন ধরুন একটা পাশাপাশি পার্লের সেট আর একটা ডায়মন্ডের,কোনটা নেবে কিছুতেই বুঝে না উঠতে পারলে সেরকম জোর বরাত থাকলে চাপা মেরে আপনি হয়ত দুটোই পুরে দিতে পারবেন ক্রেতার ঝুলিব্যাগে, ম্যাম দুটোতেই আপনাকে যা দারুন মানিয়েছে! যেন আপনার জন্যেই ওগুলো তৈরী হয়েছে, আসলে মনে মনে ভাবছেন তৈরী হয়েছে না ছাই, এ জিনিস আমার রানু ছাড়া আর কার গলাতেই বা এত মানাবে?নেহায়েত সাধ আছে সাধ্য নেই তাই............দীর্র্ঘনিঃশ্বাসটা গোপন করে যান নিজের কাছেও।
মে আই হেল্প ইউ ম্যাম ? বলে বাঙালি মিশকালো মুখটাকে হাসিতে যতখানি পারি উজ্ঝ্বল করে মহিলার দিকে তাকাই ।
আমার কর্নারটা নানা রকমারী বেডশীটে পরিপূর্ণ। এই বিলাসবহুল শপের সবজায়গাতেই যেমন প্রাচূর্য তেমনি এখানটাতেও । রংবেরং এর দারুন দারুন সব বেডশীটে সাজানো। সবগুলোই মাথা ঘুরিয়ে দেবার মত সুন্দর। মহিলাকে বেশ সিদ্ধান্তহীন দেখলাম।চোখে মুখে দিশেহারা ভাব। তাই আমিই সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায়্য করবো।
কোনটা চাই ম্যাম?
উমম,আচ্ছা..বে...।
ওহ ! বেগুনী রংয়ের চাইছেন? আচ্ছা........, বেগুনী রংয়ের নানা ধরনের শীট আমাদের আছে। শেডই ম্যাডাম এতগুলো যে গুনে শেষ করতে পারবেন না। কোনটা নেবেন, এই যে দেখাচ্ছি , দেখেন এই যে আমাদের লেটেস্ট ডিজাইনগুলো। বলে ডানে বায়ে উপর নিচে জেট প্লেনের গতিতে দশ বারোটা হরেক ডিজাইনের বেগুনী রংয়ের বেডশীট নামিয়ে ফেললাম। বাহ! দেখতে নিজেরই ভালো লাগছে। একেকটা কি দারুন দেখতে , কি মোলায়েম ধরতে! জানি নিজের করে নিজের হাতে এই ব্রান্ডেড জিনিস আমার নসীবে কখখনো নেই , এই খানে ছুঁয়ে দেখতে পেরেই যতটুকু সুখ।
আমি সগর্বে সামনে দাঁড়ানো ক্রেতার দিকে তাকালাম।কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া দেখে কিঞ্চিত বিভ্রান্ত হলাম। কেমন যেন ভাবসাব। বুঝলাম একে সন্তুষ্ট করা একটু মুশকিল হবে। কিছু কিছু ক্রেতারা আছে এমন- বেশ জ্বালায়। এও মনে হচ্ছে সেরকম। যাই হোক আমাদের দোকানে আসবে আর কিছু পছন্দমতো পাবে না এ তো হতেই পারেনা। এ যে আমার কাছে চ্যালেঞ্জের মত। আমি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৈরী হলাম।
আমার সপ্রশ্ন দৃষ্টি দেখে মহিলা ক্রেতা একটু বুঝি উৎসাহিত হলেন। আমি বল..
ও আচ্ছা ব্লু কালার বুঝি? মুখের কথা শেষ হবার আগেই ফের আমি বুঝে নিলাম।
মত বদলেছেন মহিলা। হয় এরকম। আমি একগাদা ব্লু কালার এর বেডশিট নামিয়ে ফেললাম। একেকটা একেকটার চেয়ে সুন্দর । নিজের শোরুম বলে বলছিনা, কিন্তু আমার কাছে টাকা থাকলে নির্ঘাত আমি কয়েকটা কিনে ফেলতাম। নীলের প্রতি আমার এমনিতেই একটু বিশেষ দূর্বলতা আছে। বিশেষ করে জ্যামিতিক স্ট্রাইপ দেওয়াটা আর ছোট ছোট ফুলের ডিজাইনের শীটদুটা মারাত্নক সুন্দর, এক্কেবারে জটিল।
কিন্তু আমার নিজের মনোভাব যা-ই হোক না কেন, সামনের কাস্টমারটিকে বেশ বিপদগ্রস্ত মনে হলো আমার। হবে-ই তো। এত্ত সুন্দর সুন্দর ডিজাইন থেকে বেছে নেয়া সোজা কথা!
প্রতিটাই যে নেবার মত।
মহিলা আবার মুখ খুললেন, ল..।
এবারেও আমি বুঝে নিলাম, মত ফের পাল্টেছেন তিনি। লাল রংয়ের চাই তার। আহ! এমন সেকেন্ডে সেকেন্ডে মত পাল্টানো কাস্টমারদের নিয়ে ভারি যন্ত্রণা।
যা হোক এবার একটু বিরস মুখে আমি বেশ কটা লালের শীট নামিয়ে ফেললাম।তারপর সামনে ওঠা জমে বেডশীটের স্তুপের দিকে তাকিয়ে একবার দেখলাম। মহিলা একটাই নেবেন হয়তো, বরাতজোরে দুটো। এর জন্য এই তুজ হয়ে ওঠা একরাশ জিনিস আমাকেই তো গুছিয়ে তুলতে হবে। উফফ! বিরক্তিকর। তবে সবকিছুর পরেও কিছু বিক্রি করতে পারলে আমার বেশ লাগে। কষ্ট সার্থক বলে মনে হয়।আমাদের এমপ্লয়ি স্কোরিংএও কিছু স্কোর যোগ হয় -ওতো আছেই- বাড়তি পাওনা।
এবারেও বেডশীটগুলো নামিয়ে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে আমি সামনে দাঁড়ানো মহিলার দিকে তাকালাম।কোনটা নেবেন মহিলা?
মহিলা এবার একটু যেন মরিয়া অধৈর্য ।একধাক্কায় গড়গড় করে বলে ফেললেন, আরে ভাই, আমি কতক্ষণ থেকে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করছি। আমি কি চাই - পুরোপুরি ভাবে না শুনেই আপনি গুচ্ছের জিনিসপত্তর বের করে ফেলেছেন কেন?আগে তো শুনবেন কাস্টমার কি চায়।
আমি স্রেফ বোকা বনে গেলাম।
কেন আপনি যে যে রংয়ের চেয়েছেন ও ই তো বের করে দেখালাম, ম্যাম।বিনীতভাবে বললাম আমি।
তাই বুঝি? বিস্মিত রাগান্বিত দৃষ্টি মহিলার।আমি বোকা বোকা মুখে মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকি।তার ফর্সা মুখে রাগীভাবের লালচে ছোপ পড়েছে।কারনটা আমি বুঝতে পারি না।
আপনাদের এই স্টোর বিশাল বড় বুঝলেন। কয়েকতলা.........।আর পুরোটাই নানান জিনিসে এমনভাবে বোঝাই ..।আমি লিফট দিয়ে উঠে তো ভেতরে ঢুকলাম। একের পরে এক সেকশান দেখে দেখে এবার বের হবার সময় বেরুবার রাস্তা আর খুঁজে পাচ্ছি না। কোনদিক দিয়ে যে ঢুকলাম .......পুরো গুলিয়ে ফেলেছি। যেদিকটাই বেরুবার রাস্তা বলে মনে হল বার কয়েক কাছে গিয়ে ধোঁকা খেয়েছি- ওগুলোতো আসলে কাচ দিয়ে ঘেরা বিশাল আকারের উইন্ডো ।
আপনাকে বেরুনোর রাস্তা জিজ্ঞেস করতে গেলাম, আপনি ব শুনতেই বেগুনি আর ব্লু নামিয়ে ফেললেন। লিফটের দিক জিজ্ঞেস করতে যেতেই লাল! এমন তো কখনো দেখিনি। কিসব লোককে যে এরা এনে জড়ো করেছে।লোকের পুরো কথা মনোযোগ দিয়ে পুরোটা শোনার পর্যন্ত ধৈর্য নেই। আপনার ম্যানেজার কোথায় ডাকুন, কমপ্লেন করবো।
ব্যাপার বেগতিগ। বেচাবিক্রি , পারফর্মেন্স স্কোর বাড়ানো মাথায় থাক, যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি বেঁধে যাবার জোগাড়। এ অবস্থার কল্পনাও বা কে কবে করেছিল! আমি যে আমি, কাস্টমার হা করলেই তার পেটের খবর পর্যন্ত বুঝে যাই বলে আমার তো বটেই আমার উপরের ম্যানেজারেরও ধারণা, শুধু ধারনা কি বদ্ধমুল বিশ্বাসেই দাঁড়িয়ে গিয়েছে-তা আবার এমন উল্টোরথে বইবে কে জানত?আজ পর্যন্ত আমার চালে এমন বেচাল ফল তো কখনোই হয়নি। সবসময়েই কাস্টমার আমার মুখ ফুটে বলার আগেই বুঝে ফেলার কারনে খুশিই হয়ে এসেছে ,আর আজ এ-কি বিভ্রাট?
কিন্তু এ মহিলাকে তো ঠেকাতেই হবে। কমপ্লেন করলে আর রক্ষা নেই। এর চেয়েও তুচ্ছ কারনে চিয়াং-এর চাকরি গিয়েছিল। কাস্টমারের মতামতকে এরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে নেয়।এখানে চাকরি জোটানো যেমন কঠিন, যাওয়া তেমনই সোজা।আর এই নিয়মিত তুলনায় ভালো পে করা চাকরিটা গেলে যে কি হবে..............নাহ আমি ওটা ভাবতেও পারিনা।
সরি ম্যাম, সরি সরি আই অ্যাম রিয়েলী সরি, বলে বিস্তর মাপ টাপ চাইতে হলো।প্রায় পায়ে ধরতে যা বাকি। প্লিজ ম্যাডাম কমপ্লেন করবেন না, ঘরে ছোট বাচ্চা আছে, ফ্যামিলিম্যান , না খেয়ে মরতে হবে বাল বাচ্চা নিয়ে বলে কতকগুলো বাধা বুলি ঝাড়লাম, যদিও পরিবার বলতে তিরিশ পেরুনো আমার আছে শুধু বাড়িতে বুড়ো বাপ। তাও এসব........ই বলতে হয়। কাস্টমারের বিশেষ করে মহিলাদের ইমোশোনাল ব্লাকমেইলিং -এ এসব আশ্চর্য কাজে লাগে- তা সে দেশেই হোক আর এ সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পেরুনো বিলেতেই হোক। আর আমিও তো নাচার। দেশে বিশাল কোন দায়দ্বায়িত্ব না থাকলেও এখানে পড়াশোনা, থাকাখাওয়া ও খরচ বহনের সাধ্য আমার বুড়ো বাপের নেই। আর......... চাকরি গেলে এজীবনে মারুফাকে পাবার স্বপ্ন স্রেফ স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে..........।
নানা অনুনয় বিনয়ে শেষে কাজ হলো । সঠিক বেরুনোর রাস্তা দেখিয়ে দিলাম আমি। একেবারে নিজে গিয়ে লিফটের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়ে আপদ বিদেই করে এসেছি।ঘুরতেই দেখি...... শ্যোনচক্ষু আর কাকে বলে, ম্যানেজারটাও কিছু একটা গোলমাল নিশ্চয়ই আঁচ করেছিল।ব্যাটার চোখ বাস্তবিক শকুনের মত আর মনে যেন জোড়ার বদলে কয়েকডজন-কিছুই নজরে এড়ায় না। আমার নিজের জায়গা থেকে একেবারে ইউটার্ণ এ স্থানে আমার কিছুতেই এমন সময় থাকার কথা নয়।কতটুকু সময়ই বা লেগেছে ঠিক খেয়াল করেছে যে আমি নিজের জায়গা নেই। অথচ এইত যখন এত কাহিনী হচ্ছিল, সে ছিল ঠিক বিপরীতে যেখান থেকে আমার নিয়মিত বসার জায়গাটা সোজা চোখেও পড়ে না।তাও আমি যেই না নিজের জায়গা থেকে একটু কি নড়লাম ঠিক টের পেয়ে গেছে।
কি হয়েছে, এনি প্রবলেম র্যায়ান?ম্যানেজারের প্রশ্নে শঙ্কিত আমি বাইরে সেই ভাবটা চেপে যাই।
নিচে প্রস্থানরত লিফটের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে স্বস্তি্র একটা নিঃশ্বাস ফেলি গোপনে।আজ বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছি ।জোরে জোরে মাথা নেড়ে ম্যানেজারকে জবাব দিই , না না স্যার কোন প্রবলেম নেই।একেবারে নো প্রবলেম স্যার।
রেজওয়ানা আলী তনিমা
২৯/১২/১৩ ইং।