somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ গল্প

২১ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্বেতহস্তি চুরি বৃত্তান্ত
মার্ক টোয়েন
ভাষান্তর: রেজাউদ্দিন চৌধুরী
[বিদেশে এক ভবঘুরে বই থেকে এ লেখা বাদ দে’য়া হয়েছিল এই আশংকায় যে কিছু বর্ণণা সম্ভবত: অতিরঞ্জিত এবং অন্য অংশ সত্যি নয়। এই সন্দেহ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হওয়ার পূর্বেই বইটি প্রেসে চলে গিয়েছিল। - এমটি]

এই কৌতুহলোদ্দীপক ইতিহাসটি আমার কাছে বয়ান করেছিলেন হঠাৎ পরিচিত হওয়া এক রেলওয়ে যাত্রী। তিনি ছিলেন সত্তরোর্ধ, আগাপাশতলা ভাল এবং ভদ্রমুখাবয়বধারী, আন্তরিক এবং অকৃত্রিম আচরণের এক ভদ্রজন যার মুখ থেকে নি:সৃত প্রতিটি বক্তব্য সত্যের অভ্রান্ত ছাপ ফেলে মনের মধ্যে। তিনি বলেছিলেন:
আপনি জানেন, কি শ্রদ্ধার চোখে শ্যামেদেশের মানুষ রাজকীয় শাদা হাতিকে দেখে। আপনি জানেন এটা রাজাদের কাছে পবিত্র, শুধু রাজাদের মালিকানায় এটি থাকতে পারে, এবং সত্যি বলতে কোন কোন মাপকাঠিতে এটি রাজার চাইতেও শ্রেষ্ঠ, কারণ এটা শুধু মাত্র সম্মানই নয় পূজাও পেয়ে থাকে। খুব ভাল কথা, এখন ব্যাপারটা হল বছর পাঁচেক আগে শ্যামদেশের সাথে গ্রেট ব্রিটেনের সীমানা নিয়ে যখন ঝামেলার উদ্ভব হয় তখন এটা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় যে ভুলটা হয়েছিল শ্যামদেশের পক্ষ থেকে। সুতরাং যত শীঘ্র সম্ভব ভ্রম সংশোধন করে নেয়া হল, বৃটিশ প্রতিনিধি বললেন তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর অতীতের ঘটনা ভুলে যাওয়া উচিৎ। শ্যামদেশের রাজা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেন এবং অংশত: কৃতজ্ঞতা নমুনা হিসাবে এবং অংশত: ইংরেজদের মধ্যে তারপ্রতি কোন অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ থেকে থাকলে তার শেষ চিহ্ন মুছে ফেলার জন্যে প্রাচ্য-দেশীয় ধারণায় শত্রু সন্তুষ্ট করার একমাত্র উপায় হিসাবে গৃহীত প্রথা অনুসরণ করে তিনি রাণীকে একটি উপহার দে’য়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। উপহারটা শুধু রাজকীয় হলেই হবে না, সর্বোত্তম রাজকীয় হতে হবে। অতএব, শাদা হাতী ছাড়া আর কোন উপহার এ প্রয়োজন মেটাতে পারে? ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে আমার অবস্থান এমন ছিল যে একান্তভাবে আমাকেই এটা মহারাণীর কাছে নিয়ে যাওয়ার সম্মানের অধিকারী বলে বিবেচনা করা হল। তাই আমার, আমার ভৃত্যকুল, এবং শাদা হাতীর দেখভালকারী অফিসারবৃন্দের জন্যে একটা জাহাজ সাজানো হল। যথা নির্দিষ্ট সময়ে আমি নিউইয়র্ক বন্দরে পৌঁছে আমার রাজকীয় আমানত জার্সি শহরের একটা প্রশংসনীয় আবাসে রাখলাম। পশুটার স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধারের জন্যে পুণরায় যাত্রার পূর্বে সেখানে কয়েকদিন থাকা প্রয়োজন ছিল। এক পক্ষকাল সবকিছু ভাল চলল, তারপর শুরু হল আমার দুর্যোগ। শাদা হাতীটা চুরি গেল! আমাকে গভীরে রাত্রিতে তারা ঘুম থেকে তুলল এবং এই ভয়ানক দু:সংবাদটা দিল। কিছুক্ষণের জন্য ভয় এবং দুশ্চিন্তায় দিশাহারা হয়ে গেলাম অসহায় আমি। তারপর আস্তে আস্তে আমি শান্ত হলাম, আমার বুদ্ধিবৃত্তি ফিরে পেলাম। শিগ্গির আমি আমার পথ খুঁজে পেলাম, আসলে একজন বুদ্ধিমান লোকের জন্যে তখন একটা পথই খোলা ছিল। যদিও অনেক রাত তব্ওু আমি নিউইয়র্ক শহরে ছুটে গেলাম এবং একজন পুলিশকে ধরে তার সাহায্যে গোয়েন্দা বাহিনীর সদর দপ্তরে পৌঁছে গেলাম। সৌভাগ্য বশত: আমি সময়মত পৌঁছুলাম, যদিও এ সময় বাহিনী প্রধান সুবিখ্যাত ইন্সপেক্টর ব্লান্ট সবেমাত্র বাড়ির দিকে রওয়ানা হওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। তিনি একজন মাঝারী আকারের সুসংবদ্ধ কাঠামোর লোক। যখন তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন তাঁর অভ্যাস ছিল ভ্রু আঁচড়ানো এবং আঙুল দিয়ে কপালে চিন্তাগ্রস্ত ভাবে টোকা দে’য়া, যেটা আপনাকে চমৎকৃত করবে এই বিশ্বাসে যে আপনি কোন সাধারণ লোকের সামনে দাঁড়িয়ে নেই। তাকে দেখা মাত্র আমার বিশ্বাস বেড়ে গেল, আশা বৃদ্ধি পেল। আমি আমার আসার উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করলাম। ঘটনা তাকে বিন্দুমাত্র উদ্বেলিত করল না; কেউ আমার কুকুর চুরি করেছে বললে তার লৌহদৃঢ় আত্ম-নিয়ন্ত্রণেরর উপর যে ছাপ পড়ত এটা তার চাইতে বেশী ছাপ ফেলল না। তিনি আমাকে একটা আসনের দিকে ইঙ্গিত করলেন, তারপর শান্ত কন্ঠে বললেন: “আমাকে এক মূহুর্ত চিন্তা করতে দিন, প্লিজ।” এই বলেই তিনি তাঁর অফিস টেবিলে হাতের উপর মাথার ভর রেখে বসলেন। কক্ষের অন্যপ্রান্তে অনেক কেরাণী কাজ করছিল; পরবর্তী ছয় সাত মিনিট আমি শুধু তাদের কলম ঘষার শব্দ পেলাম। ইতিমধ্যে চিন্তায় মগ্ন হয়ে ইন্সপেক্টর সেখানে বসেই থাকলেন। অবশেষে তিনি মাথা তুললেন, তাঁর মুখের দৃঢ় রেখায় সেই ভাব প্রচ্ছন্ন যা দেখে আমি বুঝলাম তাঁর মস্তিষ্কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি পরিকল্পনা তৈরী করে ফেলেছেন। তিনি বললেন, নীচু এবং আকর্ষণীয় কন্ঠে: “ এটা কোন সাধারণ মামলা না। প্রতিটি পদক্ষেপ সাবধানতার সাথে নিতে হবে, প্রতিটি পা নিশ্চিত হয়ে ফেলতে হবে পরবর্তী পা ফেলার আগে। গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে - প্রগাঢ় এবং সম্পূর্ণ গোপনীয়তা। কারও সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবেন না, এমন কি সাংবাদিকদের সাথেও না। তাদের বাপারটা আমি দেখব; আমি দেখব যাতে আমার উদ্দেশ্য অর্জনের জন্যে যতটুকু জানা প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই তারা জানতে পারে।” তিনি ঘন্টা টিপলেন, এক তরুনের আবির্ভাব হল।
“এলারিক, সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে বল।” ছেলেটি ফিরে গেল।
“এখন কাজ শুরু করা যাক, সুবিন্যস্ত ভাবে। আমার এই কাজে কঠোর এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পদ্ধতি অনুসরণ ছাড়া কিছু অর্জন করা যাবে না। ”
তিনি একটা কলম হাতে নিলেন। “এখন বলুন - হাতীটার নাম?”
“হাসান বিন আলি বিন সেলিম আবদুল্লাহ্ ময়েস্ট আলহাম্মাল জামশেদজেজিভাই ধুলিপ সুলতান ইবু ভুদপুর।”
“খুব ভাল। ডাক নাম?”
“জাম্বো।”
“খুব ভাল। জন্মস্থান?”
“শ্যামদেশের রাজধানী।”
“বাবা-মা বেঁচে আছেন?”
“না, মারা গেছেন।”
“এ ছাড়া তাদের আর কোন সন্তান আছে?”
“কেউ না। সেই একমাত্র সন্তান।”
“খুব ভাল। এই শিরোনামের নীচে এইটুকুই তথ্যই যথেষ্ট। এখন দয়া করে হাতিটার বর্ণণা দিন, কোন খুঁটিনাটি বাদ দেবেন না, যত তুচ্ছই সেটা হোক না কেন - মানে আপনার দৃষ্টিতে তুচ্ছ। আমার কাছে, আমার পেশায় তুচ্ছ খুঁটিনাটি বলে কিছু নেই, এমন কিছুর অস্তিত্বই নেই।
আমি বর্ণণা করে গেলাম, তিনি লিখে গেলেন। যখন আমি শেষ করলাম, তিনি বললেন, “এখন শুনুন। আমার কোন ভুল হলে শুধরে দেবেন।” নিচে যেমন লেখা আছে তেমনি তিনি পড়ে গেলেন:
“উচ্চতা ১৯ ফিট; দৈর্ঘ্য কপালের চূড়া থেকে লেজের খাঁজ পর্যন্ত ২৬ ফিট; শুড়ের দৈর্ঘ্য ১৬ ফিট; লেজের দৈর্ঘ্য ৬ ফিট; শুঁড়, লেজ সহ সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য ৪৮ ফিট; গজদন্ত গুলির দৈর্ঘ্য ৯ফিট; কান পরিধির সাথে খাপ খাওয়ানো; পায়ের ছাপ দেখতে বরফের উপর কেউ একটা পিপা উলটে ফেললে যে ছাপ পড়ে তার মত। হাতির গায়ের রং বিবর্ণ শাদা; প্রত্যেক কানে অলংকার ঢোকানোর জন্যে থালার আকারের এক একটা গর্ত আছে এবং তার একটা অভ্যাস আছে দর্শকদের দিকে লক্ষণীয় পরিমাণ পানি ছিটানো এবং শুড় দিয়ে শুধু তার জানাশোনা লোককেই নয় সম্পূর্ণ অচেনা লোকদের সাথেও দূর্ব্যবহার করা; ডানদিকের পিছনের পায়ে সে একটু খোঁড়ায়, এবং বাম বগলে ফোঁড়া থেকে সৃষ্ট একটা ক্ষতচিহ্ন আছে; যখন চুরি যায় তখন তার পিঠে ছিল পনেরো জন বসার আসন সম্বলিত একটি হাওদা এবং একটি সাধারণ কার্পেট সাইজের সোনার কাপড়ে বোনা গদি-কম্বল।”
লেখায় কোন ভুল ছিল না। ইন্সপেক্টার ঘন্টা টিপলেন, বর্ণণাটা এলারিকের হাতে তুলে দিলেন এবং বললেন:
“এটার পঞ্চাশ হাজার কপি এখনি ছাপিয়ে এই মহাদেশের সকল গোয়েন্দা অফিস এবং সকল বন্ধকী দোকানে ডাকে পাঠাও।” এলারিক ফিরে গেলেন।
“এ পর্যন্ত যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। এরপর আমাকে সম্পত্তিটার একটা ফটো পেতে হবে।”
আমি তাকে একটা কপি দিলাম। তিনি তীক্ষè নজরে সেটি পরীক্ষা করলেন এবং বললেন: “এটা দিয়েই চালাতে হবে যেহেতু এরচেয়ে ভাল কিছু হাতে নেই; কিন্তু এখানে সে আবার শুড় বাঁকিয়ে মুখে পুরে রেখেছে। মন্দ কপাল। হিসাব করে ভুল পথে চালাবার জন্যেই এটা করা হয়েছে, নিশ্চয়ই সে সচরাচর এই অবস্থানে এটাকে রাখে না।”
তিনি ঘন্টা টিপলেন। “এলারিক, কাল সকালে প্রথমেই এই ফটোগ্রাফের পঞ্চাশ হাজার কপি ছাপাবে এবং বর্ণণার প্রজ্ঞাপনের সাথে ডাকে পাঠিয়ে দেবে।” আদেশ পালনের জন্যে এলারিক ফিরে গেল।
ইন্সপেক্টার বললেন: “একটা পুরস্কার ঘোষণার প্রয়োজন অবশ্য আছে। এখন পরিমাণ কত হতে পারে বলুন?”
“আপনি কি পরিমাণ পরামর্শ দেন?”
“শুরুতে, আমি বলব, পঁচিশ হাজার ডলার হতে পারে। এটা একটা জটিল এবং দূরুহ কাজ; এতে হাজারটা পালানোর এবং লুকানোর পথ রয়েছে। এই চোরদের বন্ধু এবং সুহ্দৃ রয়েছে সবখানে।”
“হায় খোদা, তারা কারা আপনি চিনেন?”
চিন্তা এবং অনুভুতি গোপনে অভ্যস্ত তার সতর্ক মুখ কিংবা প্রত্যুত্তরে বলা তার কথা ইঙ্গিত বহন করে না এমন শান্ত কন্ঠে তিনি বললেন:
“এ সব নিয়ে আপনি ভাববেন না। আমি চিনতে পারি, আবার না ও পারি। আমরা সাধারণত: কাজের প্রকৃতি এবং যে কাজ সে করছে তার আকার দেখে আমাদের প্রার্থীত লোক সম্বন্ধে মোটামুটী একটা বুদ্ধি গ্রাহ্য ভাল ধারণা করে ফেলতে পারি। আমরা কোন পকেটমার বা মামুলী চোর নিয়ে এখন নাড়াচাড়া করছি না, এটা বুঝে নেবেন। কোন নবীশ চোর এই সম্পত্তি ‘তুলে’ নেয়নি। কিন্তু, আমি যেমন বলেছিলাম, এই কাজে যে পরিমাণ ভ্রমণ করতে হবে এবং চলার সাথে সাথে চোরেরা যে ধৈর্য্য এবং একাগ্রতার সাথে তাদের চলার পথের চিহ্ন ঢাকার চেষ্টা করবে তার জন্যে পঁচিশ হাজার ডলার পুরস্কার খুব কমই হয়, তবু আমার মনে হয় শুরুর জন্যে এটা যথাযথ।”
অতএব, শুরুর জন্যে আমরা এই সংখ্যাই স্থির করলাম। তখন এই লোকটা, যার দৃষ্টি থেকে সামান্যতম সূত্র হিসাবে কাজ করতে পারে এমন কোন কিছুই এড়িয়ে যায় না, বললেন:
“গোয়েন্দা ইতিহাসে অনেক মামলায় দেখা যায় যে অপরাধীদের তাদের খাদ্যাভাসের বৈচিত্র থেকে শনাক্ত করা হয়েছে। এখন বলুন দেখি, এই হাতিটা কি খায় এবং কতখানি খায়?”
“ভাল কথা, কি খায় বললে বলা যায় - সে যেকোন কিছুই খাবে। সে একজন মানুষ খাবে, সে একটা বাইবেল খাবে এবং মানুষ ও বাইবেলের মাঝখানে যা পাবে তাই খাবে।”
“ভাল, খুব ভাল, তবে কি না এটা খুব সাধারণ বর্ণণা হয়ে গেল। খুঁটিনাটি দরকার - শুধু খুঁটিনাটিই আমাদের ধরণের কাজে একমাত্র মূল্যবান জিনিষ। ভাল কথা, মানুষ প্রসংগে আসুন। একবেলার খাবারে, অথবা আপনি যদি অন্যভাবে বলতে চান, একদিনে সে কয়জন মানুষ খাবে, যদি তাজা পাওয়া যায়?”
“তাজা কি তাজা না তা নিয়ে সে থোড়াই পরোয়া করেছে বরাবর; একবেলার খাবারে সে পাঁচ জন সাধারণ মানুষ খেত।”
“খুব ভাল, পাঁচ জন লোক, এটা আমরা লিখে রাখব। কোন জাতীয়তার লোক সে পছন্দ করত?”
“জাতীয়তা বিষয়ে সে ছিল উদাসীন। চেনা লোক পছন্দ করত তবে অচেনাদের প্রতি তার কোন বিমুখতা ছিল না।”
“খুব ভাল। এখন বাইবেলের ব্যাপারে। একবেলার খাবারে সে কয়টা বাইবেল খেত?”
“সে একটা আস্ত সংস্করণ খেত।”
“এটা যথেষ্ট আঁটসাঁট বক্তব্য নয়। আপনি কি বলতে চান আটপাতার ভাঁজ করা সাধারণ প্রিন্ট, না পারিবারিক সচিত্র সংস্করণ?”
“আমার মনে হয় চিত্র বিষয়েও সে উদাসীন ছিল, তার মানে, আমার মনে হয় না সাধারণ লেটার প্রেসের চাইতে সে চিত্রিত করণকে অধিক মূল্য দিত।”
“না, আমার কথাটা আপনি বুঝতে পারছেন না। আমি পরিমাণের কথাটা বলতে চাচ্ছি। যেখানে আটপাতার ভাঁজ করা সাধারণ প্রিন্ট ওজনে প্রায় আড়াই পাউন্ড সেখানে চারপাতার সচিত্র সংস্করণের ওজন দশ থেকে বারো পাউন্ড। একবেলায় কয়টা সচিত্র বাইবেল সে খাবে?”
“আপনি যদি এই হাতিটাকে চিনতেন তাহলে এ কথা বলতেন না। তাদের কাছে যা থাকত তাই সে খেতে পারত।”
“ঠিক আছে, তাহলে ডলার, সেন্টে বলুন। আমাদের এটা যে কোনভাবে বের করতে হবে। একটা সচিত্রের দাম এক কপি একশ ডলার, রাশিয়ান চামড়া, ঢালু বহির্ভাগ।”
“তার দরকার হবে পঞ্চাশ হাজার ডলার মূল্য পরিমাণ, ধরুন পাঁচশো কপির এক সংস্করণ।”
“হ্যাঁ, এখন আরো যথাযথ হয়েছে। এটা আমি লিখে রাখব। খুব ভাল; সে মানুষ আর বাইবেল পছন্দ করে; এ পর্যন্ত সব ঠিক আছে। আর কি সে খাবে? আমি বিস্তারিত চাই।”
“ সে ইট খেতে পেলে বাইবেল ছেড়ে দেবে, বোতল খেতে পেলে ইট ছেড়ে দেবে, কাপড় খেতে পেলে বোতল ছেড়ে দেবে, বিড়াল খেতে পেলে বোতল ছেড়ে দেবে, শামুক খেতে পেলে বিড়াল ছেড়ে দেবে, হ্যাম খেতে পেলে শামুক ছেড়ে দেবে, চিনি খেতে পেলে হ্যাম ছেড়ে দেবে, পিঠা খেতে পেলে চিনি ছেড়ে দেবে, আলু খেতে পেলে পিঠা ছেড়ে দেবে, ভুসি খেতে পেলে আলু ছেড়ে দেবে, খড় খেতে পেলে ভুসি ছেড়ে দেবে, জই খেতে পেলে খড় ছেড়ে দেবে, ভাত খেতে পেলে জই ছেড়ে দেবে, কারণ প্রধানত: ভাত খেয়েই সে বড় হয়েছে। ইউরোপীয়ান মাখন ছাড়া এমন কিছু নেই যা সে খাবে না, এবং এটা ও সে খেত যদি কোনদিন তার স্বাদ নিতে পারত।
“খুব ভাল কথা। একবেলার খাবারে সাধারণ পরিমাণ - ধরুণ প্রায়?”
“হ্যাঁ, সিকি থেকে আধা টন, এর মাঝখানে যে কোন পরিমাণ।”
“আর সে পান করে - -”
“তরল যে কোন কিছু। দুধ, পানি, হুইস্কি, ঝোলা গুড়, ক্যাস্টর ওয়েল, ক্যাম্ফিন, কার্বলিক এসিড - - বিস্তারিত বলে লাভ নেই, আপনার মনে যা আসে এমন যে কোন কিছু তার সামনে ফেলে দিন। ইউরোপীয়ান কফি ছাড়া তরল যা কিছু আছে সে পান করবে।”
“খুব ভাল। পরিমাণের বিষয়টা?”
“লিখে নিন পাঁচ থেকে পনেরো পিপা - তার পিপাসার পরিবর্তন হয়, অন্যান্য ক্ষিদের হয় না।”
“এ গুলি অস্বাভাবিক। এ তথ্য গুলি তাকে খুঁজে পাওয়ার পিছনের খুব ভাল সূত্র হিসাবে কাজ করার কথা।”
তিনি ঘন্টা টিপলেন। “এলারিক, ক্যাপ্টেন বার্ণসকে ডেকে পাঠাও।”
বার্ণস্ হাজির হলেন। ইন্সপেক্টার ব্লান্ট তার কাছে পুরো ব্যাপারটার উম্মোচিত করলেন, খুঁটিনাটির পর খুঁটিনাটি।
তারপর তিনি মাথায় পরিকল্পনা পরিষ্কারভাবে ছক কেটে নে’য়া এবং আদেশদানে অভ্যস্ত ব্যাক্তির উপযোগী সুস্পষ্ট এবং স্থিরসিদ্ধ কন্ঠে বললেন: “ক্যাপ্টেন বার্ণস্, গোয়েন্দা জোনস্, গোয়েন্দা হ্যালসি, গোয়েন্দা বেটস্ এবং গোয়েন্দা
হ্যাকেটকে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে হাতিটাকে অনুসরণ করতে বলুন।”
“জি¦ স্যার।”
“গোয়েন্দা মোসেস, গোয়েন্দা ডাইকিন, গোয়েন্দা মার্ফি, গোয়েন্দা রোজার্স, গোয়েন্দা টাপার, গোয়েন্দা হিগিনস্, এবং গোয়েন্দা বার্থেলেমিউকে চোরদের অনুসরণ করতে বলুন।
“জি¦ স্যার।”
“যেখান থেকে হাতিটা চুরি গেছে সেখানে দিন রাত কঠোর নজর রাখার জন্যে ত্রিশজন বাছাইকরা প্রহরীর সাথে ত্রিশজনের জনের রিলিফ টিম নিয়ে একটা শক্ত প্রহরা বসান এবং সাংবাদিক ছাড়া আর কাউকে আমার লিখিত অনুমতি ছাড়া ধার ঘেঁষতে দেবেন না।”
“জি¦ স্যার।”
“সন্দেহভাজন সকল ব্যাক্তিকে তল্লাসী করার নির্দেশ দিয়ে শাদা পোশাকের গোয়েন্দাদের রেলওয়ে, জাহাজ এবং ফেরী ঘাট এবং জার্সি সিটির বহির্গামী সকল সড়কে নিযুক্ত করুন।”
“জি¦ স্যার।”
“এই সব লোককে ফটোগ্রাফ এবং সাথে হাতি’র বর্ণণা সরবরাহ করুন এবং নির্দেশ দিয়ে রাখুন ট্রেন এবং বহির্গামী ফেরীনৌকা এবং অন্যান্য জাহাজ অনুসন্ধান করতে।”
“জি¦ স্যার।”
“যদি হাতিটা পাওয়া যায়, তাকে আটক করা হোক এবং সংবাদ টেলিগ্রাফ মাধ্যমে আমার কাছে পাঠানো হোক।”
“জি¦ স্যার।”
“যদি কোন সূত্র পাওয়া যায়, পশুটার পায়ের ছাপ বা এমন ধরণের কিছু তা অবিলম্বে আমাকে জানানো হোক।”
“জি¦ স্যার।”
“বন্দর পুলিশকে আদেশ পাঠান বন্দর মুখে সতর্ক দৃষ্টিতে টহল দিতে।”
“জি¦ স্যার।”
“শাদা পোষাকের গোয়েন্দাদের সকল রেলওয়েতে পাঠিয়ে দিন, উত্তরে কানাডা পর্য্যন্ত দূরে, দক্ষিণে ওহাইও পর্য্যন্ত দূরে, পশ্চিমে ওয়াশিংটন পর্য্যন্ত দূরে।”
“জি¦ স্যার।”
“বিশেজ্ঞদের সকল টেলিগ্রাফ অফিসে বসিয়ে দিন সমস্ত বার্তা শোনার জন্যে; এবং তারা যেন অফিসের কাছে চায় তাদের সকল সাংকেতিক বার্তা বুঝিয়ে দে’য়া হোক।
“জি¦ স্যার।”
“এ সমস্ত কিছু করা হোক অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে, মনে রাখবেন, অত্যন্ত দূর্ভেদ্য গোপনীয়তার সাথে।
“জি¦ স্যার।”
“যথানির্দিষ্ট সময়ে আমার কাছে রিপোর্ট পাঠাবেন।
“জি¦ স্যার।”
“ যান।”
“জি¦ স্যার।”
তিনি চলে গেলেন। ইন্সপেক্টার ব্লান্ট এক মূহুর্তের জন্যে চিন্তান্বিত এবং নীরব হয়ে রইলেন, এরমধ্যে তার চোখের আগুণ ঠান্ডা হয়ে মিলিয়ে গেল। তারপর তিনি আমার দিকে ফিরে শান্ত কন্ঠে বললেন:
“গর্ব আমাকে গ্রাস করতে পারে না, এটা আমার স্বভাবের মধ্যে নেই; কিন্তু হাতিটাকে আমরা খুঁজে পাবই।”
আমি তার সাথে উষ্ণ করমর্দন করলাম - অনুভবও করলাম আমার কৃতজ্ঞতা।
এই লোকটাকে আমি যত দেখেছি তত বেশী তাকে পছন্দ করেছি এবং তত বেশী মুগ্ধ এবং চমৎকৃত হয়েছি তার পেশার রহস্যময় বিস্ময়করতায়। তারপর রাতের জন্যে আমরা পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিলাম, এবং যে হৃদয় নিয়ে আমি তার কাছে এসেছিলাম তার চাইতে অনেক বেশী আনন্দিত চিত্তে বাড়ি ফিরে গেলাম।

২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×