বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বা বিনা বিচারে মানুষ হত্যা। বিশ্বের কোন ধর্মগ্রন্থ, বাইবেল, ত্রিপিটক, কোরআন, পুরান কোথাও মানুষ হত্যাকে সমর্থন করা হয়নি। আন্তর্জাতিক আইন এমনকি বাংলাদেশের সংবিধানেও নির্যাতন, হত্যা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। দেশ-বিদেশে এই ক্রসফায়ার নাটক বন্ধ করার দাবিতে জনদাবি সোচ্চার এখনও। কিন্তু আমাদের মানবাধিকার লংঘনকারি সরকার বিনা বিচারে মানুষ মেরেই যাচ্ছে।
অথচ ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে বিনা বিচারে নির্বচারে মানুষ হত্যার অপকর্মটি সরকার অতি উতসাহের সাথে করে চলেছে। এ পর্যন্ত ১৬০০ মানুষ নিহত এই তথাকথিত মিথ্যা কল্পকাহিনী ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, এনকাউন্টার ইত্যাদি নামে। অবশ্য বিএনপি-জামায়াতী আমলে তথাকথিত ক্লিনহার্ট অপারেশনের নামে ৫৮ জন মানুষকে হত্যা করেছিল যৌথ বাহিনী।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো তোতাপাখির ন্যায় এই বদকর্মটিকে সমর্থন করে যাচ্ছে প্রচ্ছন্নভাবে পুলিশ, এলিটফোর্সের দেয়া বয়ান হুবহু ছেপে দিয়ে। সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের হুকুমও অমান্য করে চলেছে। ১৬ নভেম্বর মাদারীপুরে দুই ভাই নিহত হয়েছেন এলিট ফোর্সের তথাকথিত ক্রসফায়ার নাটকের অভিনয়ে। এই হতভাগ্য দুই ভাইয়ের আরেক ভাই নিহত হয়েছিলেন গত বছর একই রকমের আরেক নাটকে।
এ মর্মস্পর্শী বর্বর হত্যাকান্ডের খবর সংবাদপত্রে দেখে আমাদের বিচার বিভাগ যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। হাইকোর্টের একটি সাহসী বেঞ্চ সরকারের ওপর রুল জারি করেছে, আমরা জানি এর আগেই হাইকোর্ট ক্রসফায়ার বিষয়ে রুল জারি করেছিল সরকারের ওপর। কিন্তু তারপরও ক্রসফায়ার থামেনি। গত ৬ জানুয়ারি বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আজ ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১৩০ জনকে হত্যা করা হয়েছে ভন্ড-ডাহা মিথ্যা নাটক সাজানোর মাধ্যমে।
অথচ বেকুবের মত আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়া বলেছেন ক্রসফায়ার হয়নি তাদের সরকারের আমলে। হায়রে গণতন্ত্র!!!!
দেশে আইন-আদালত, বিচার ব্যবস্থা থাকতে সন্ত্রাস দমনের নামে সন্ত্রাসী দমনের সামে কেন বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করতে হবে তা আমরা বুঝতে পারি না। তবে এটুকু বলা যায় যে, দেশে প্রকৃতঅর্থে আইনের শাসনের বালাই নেই। সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবে।
মানুষ হত্যার জন্যতো দেশের জনগণ এই সরকারকে এবসলিউট ম্যাজরিটি দেয়নি। মানুষ ভোট দিয়েছে সুখে-শান্তিতে থাকার জন্য, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় চার নেতার খুনিদের বিচার করার জন্য। বিডিআর সদর দফরের ঘটনায় ৭৫ জন এবং এই ৭৫ খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে বিনা বিচারে প্রায় ৫০ বিডিআর সদস্য নির্যাতনে নিহত হবার খবর জানা গেছে। অথচ এখনও বিডিআর সদর দফতরের খুনের মূল পরিকল্পনাকারির দল ধরাছোয়ার বাইরেই রয়ে গেছে বলে শোনা যাচ্ছে। জঙ্গিদের দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। দুর্নীতি সমানতালে চলছে। আরও চলছে টেন্ডার-চাঁদাবাজি।
মানুষ হত্যা করে সন্ত্রাস বন্ধ করা যাবে না কোনদিনই। বরং আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা, দুর্নীতি-অসাম্য-বৈষম্য-লুটপাট বন্ধ করতে পারলে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রিত হবে-এতে কোন সন্দেহ নেই।
দেখুন ক্রসফায়ার ও মানুষ হত্যা: http://humanrightstoday.info//?p=1424