আজ হরতাল!
ঘরে বসে থাকতে আর একদম
ভালো লাগে নাহ।
হরতাল অবরোধ কি লেগেই
থাকবে এভাবে?
এভাবে আর কতোদিন চলতে পারে দেশ??
যাক, আজকে তাও হাল্কা একটু রোদ
উঠেছে।
রোদ ও যেন হরতাল ডেকেছিল এই
কয়েকদিন।
যা হোক, সাজ সকালে বাইরে বের হলাম
চা খাওয়ার
উদ্দেশ্যে। সাজ সকাল বলতে তাও প্রায় ১০
টা ই
বেজে গেছে। যারা জমিদার তাদের
কাছে ১০টা মানেই সাজ সকাল। কারণ,
দেরী করে ঘুম থেকে উঠায় মা প্রায়ই
আমাকে জমিদার বলে আখ্যায়িত করেন।
আমাদের এখানে হাড্ডি পট্টি তে অনেক
ভালো চা বানায়, বগুড়ার শেষ্ঠ
চা বলা চলে। তাই চোখ
ডলতে ডলতে চলে আসলাম
হাড্ডিপট্টি তে।
আহারে, কপাল! বেশি দেরী হয়ে
গেছে,
হরতালের কারণে দোকান আবার বন্ধ
করে রেখেছে। সাজ
সকালে জকিংম্যান
বলে নিজেকে সান্তনা দিলাম।
তাছাড়া আর কোন উপায় ও ছিল না।
ঘুরতে ঘুরতে একটা চা স্টলে গিয়ে বসলাম
আর
দুইটা চা এর অর্ডার দিয়ে দিলাম।
পাশে দেখলাম একটা বৃদ্ধ লোক চাদর
মুড়িয়ে বসে আছেন বেঞ্চের উপর
কোণঠাসা হয়ে। দেখে মনে হলো,
অনেক
দিন কিছু খায় নি আর এই কয়েকদিন রোদ
না ওঠায় ঠান্ডায় অনেক কষ্ট পেয়েছেন।
"এই যে কাকু, শুনছেন?-
লোকটিকে ডাকলাম। কিন্তু কোন উত্তর
নেই।
এই যে কাকু? আবার ডাকলাম কিন্তু
এবারো কোন উত্তর পেলাম না।
কিন্তু ৩য় বার গায়ে হাত দেওয়া মাত্রই
ঝাত্ করে চমকিয়ে উঠলো। চোখ
দুটো ইয়া বড় বড় লাল, মনে হচ্ছে আগুন
জ্বলছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছেন
তো আছেন।
"না মানে কাকু, আপনাকে দেখে অসুস্থ
মনে হলো তো, তাই চা খেতে ডাকছিলাম"-
এইটুকু কথা বলতেই গা ঘেমে গেছে আমার,
আর কাপতেছি।
কিন্তু লোকটি কে যে ভয় পাইছিলাম তার
কিছুই করলো না। ভালোভাবেই বললো, "তুই
খা বাবা, তাইলেই হবে"- বলে আমার
মাথায় আর চোখে হাত বুলিয়ে দিল।
তারপর উঠে চলে গেল। কিন্তু কিছুদূর
গিয়ে আবার আমার
দিকে তাকালো এবং বললো, "আবার
দেখা হবে"। তখনো তার চোখ আগের
মতোই
জ্বলছিল।
আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। একটু
আড়াল হতেই আমি লোকটির পিছু নেওয়ার
জন্য বিল পে করে উঠে আসলাম। কিন্তু
পরে লোকটিকে আশেপাশে কোথাও
খুজে পেলাম না।
যা হোক, সিম্পল ব্যাপার।
এটা নিয়ে অতো ভেবে লাভ নাই।
ঘুরে ফিরে বাসায় আসলাম। বাসায় ফেরার
পর যা হবার তাই হলো। আম্মুর বকবকানি শুরু
আর আব্বু চুপ করে আছেন। দুজন
একসাথে কখনোই বকাবকি করেন না। একজন
থামলে আরেকজন শুরু করেন।
কিছুক্ষণ পর আম্মু চুপ হয়ে গেল, এবার আব্বুর
পালা। আম্মু চুপ হতেই আব্বু আমাকে তার
কাছে ডাকলো। বুকের মধ্যে হার্ট-বিট
ক্রমশ বাড়তে বাড়তে উচ্চ
পর্যায়ে পৌছে গেছে এতোক্ষণে।
আব্বু সুন্দর করে তার পাশে বসালো। তার
ঠোটের কোণায় হাসি দেখতে পাচ্ছি। ভয়
টা আরো বেড়ে গেল। এটা আবার কোন
স্টাইল! আব্বু হয়তো আমাকে ধোলাই করার
নতুন স্টাইল আবিষ্কার করে ফেলেছে।
আব্বু আমার কাধে হাত দিল।
গা টা কাপতে শুরু করেছে এখন। যেকোন
সময় কিছু একটা হওয়ার আশঙ্খা প্রবল। কিন্তু
তেমন কিছু ঘটলো না, যা ঘটলো তার
উল্টো।
"এমন ভাবে চললে হবে বাবা? সকাল ১০
টার পরে ঘুম থেকে ওঠো, তারপর কোথায়
যাও ঠিক নাই।
এভাবে চললে হবে না তো রেহান। " -
এমন
দারুন ভাবে বুঝাইলো।
আমিও শুধু হুম হুম করলাম।
তারপর খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুম দিলাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি রাত ১০ টা বাজে।
তারপর কিছুক্ষণ ফেসবুকে মেসেজ চেক
করে আবার ঘুম।
প্রতিদিন ঠিক ১০ টায় ঘুম থেকে উঠি,
তবে আজ অনেক আগেই জাগা পাইছি।
৯টা ৫৫ তে উঠছি আজ।
প্রতিদিনের মতো আজও চা খেতে বের
হলাম। আজও ওই চায়ের দোকানে গেলাম।
দেখি লোকটি আজকেও
ওখানে বসে আছে।
"মামা,একটা দুধ চা"- জোড় গলায় চা এর
অর্ডার দিলাম।
"আসছিস??"- লোকটি বলে উঠলো।
লোকটির চোখ আজও লাল।
আমি কিছু বলার আগেই লোকটি উঠে এসে
আমার মাথায় আর চোখে হাত বুলিয়ে দিল।
তারপর হঠাৎ চোখটা ঝাপসা হয়ে আসলো।
আমি দেখতে পাচ্ছি, আমি তুষ্টিকে দেখতে
পাচ্ছি। অনেক দূর থেকে চিনতে পেরেছি
ওটাই তুষ্টি। ধীরে ধীরে দূরত্ব কমতে
লাগলো। তুষ্টি এখন আমার অনেক কাছে।
আমি দাড়িয়ে পড়লাম। এখন তুষ্টি আর আমার মাঝের
দূরত্ব ১২ সে. মি. । তারপর আমাকে সব কিছু
খুলে বললো, যা কিছু জানার বাকি ছিল ওর কাছে
থেকে। আমাদের ব্রেক-আপের কারণ।
তারপর চলে গেল।
জানতে পারলাম তুষ্টির ক্যান্সার হয়েছে। তাই নাকি
আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার এতো প্লান
করেছে। মেয়েটা স্বার্থপর, স্বার্থপরের
মতোই কাজ করেছে। যাক এতোদিনে তাও
জানতে পারলাম। এই একটা জিনিস জানার আমার খুব ইচ্ছা
ছিল। অনেক ভূল বুঝেছি, নইলে আরো
বুঝতাম।
হঠাৎ করেই আবার চোখটা ঝাপসা হয়ে
আসলো।
আফসা আফসা চোখের সামনে
বিশাল গ্রিল ওয়ালা একটা বাসা দেখতে পেলাম।
এটা তো আমাদের বাসার গেট। চোখটা পরিষ্কার
হতেই আমাকে আমাদের বাসার সামনে আবিষ্কার
করলাম। একটু পরেই আম্মু গেট খুললো।
"কিরে, একটু ধৈর্য ধরতে পারিস না? এতো
কেউ কলিং বেল বাজায়??"-
আমিতো কলিং বেল ই বাজাই নি। কিন্তু কিছু বলার
শক্তি পেলাম না, চুপচাপ রুমে গেলাম।
"কি ব্যাপার! বাসা থেকে বের হলি দুই মিনিট ও হয়নি,
আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় আসলি যে??" -আম্মু
আরো কি কি যেন প্রশ্ন করতেছে।
আম্মু কি পাগল হইলো নাকি? আমি নাকি দুই মিনিট
আগেই বের হইছি। সেই কতক্ষণ বাইরে
ঘুরে আসলাম আমি।
কিন্তু আমার ছোট বোন ও দেখি একই কথা
বলছে। আমি দুই মিনিট আগেই নাকি বের হইলাম!
তাইলে তুষ্টি, ওই লোকটা! ওদের সাথে যে
কথা বলে আসলাম!
মাথায় কিছু খেলছে না। সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
আম্মুকে বললাম, আমি ঘুমালাম আমাকে ডাকবে না।
পরের দিন সকালে আবার ওই দোকানে
গেলাম, কিন্তু ওই লোকটি কে পেলাম না।
তারপরে থেকে প্রতিদিন ওই দোকানে চা
খেতে যাই, কিন্তু ওই লোকটির আর দেখা পাই নি।
তাইলে লোকটি কে ছিল? হবে হয়তো
কোন ভীনগ্রহের বাসিন্দা।
তবে লোকটা
যেই হোক, ইচ্ছা টা তো পূরণ হইছে।