বিজ্ঞান একাডেমীর প্রধান কিটি চিন্তিত মুখে বসে আছেন। মানব সভ্যতা সম্পর্কে তাদের এতোদিনের পুষে রাখা ধারণা একটি বড় ধরনের ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। দেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ "সামহোয়ারইনব্লগ" নামক একটা সাইটের লিংক খুঁজে পাওয়ার পরই সব সমস্যার শুরু। একের পর এক আঘাত আসছে বিজ্ঞানীদের উপর। বিজ্ঞানীরা নাকি এতোদিন মানুষকে শুধু ভুল জ্ঞানই দিয়ে যাচ্ছিলো! এই ৩৪৫৬ সালে এসে মানুষ যদি বিজ্ঞানের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে! আর ভাবতে পারলেন না মহামান্য কিটি। তাঁর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। তিনি মাথা তুলে তাকালেন। দেখলেন তাঁর সামনে বসে আছেন পৃথিবীর বড় বড় সব বিজ্ঞানী। এতোক্ষনে মনে পড়লো মহামান্য কিটির, তিনি এই মহা বিপর্যয় প্রসঙ্গে একটি জরূরী সভা আহবান করেছেন। নাহ, অধিক টেনশনে আজকাল আর কিছু মনে থাকছে না।
তিনি হালকা কাশি দিয়ে উপস্থিত বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষন করলেন। "মহামান্য বিজ্ঞানীরা, আপনারা জানেন পৃথিবী আজ কতো বড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন। আমি সে ব্যাপারে আর নতুন করে কিছু বলতে চাচ্ছি না, আমরা বরং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান পিকির কাছ থেকেই ঘটনা আরেকবার শুনে আসি।" থামলেন মহামান্য কিটি।
পিকি হালকা ঢোক গিলে বলা শুরু করলেন।
"আমরা কিছুদিন আগে নিয়মিত মহড়ার অংশ হিসাবে ওয়েব লিংক স্টাডি করছিলাম। তখনই আমাদের সামনে হাজির হলো একটি ভাঙ্গাচোরা সাইট। কি আর বলবো! পুরো সাইট জুড়ে ভুতূড়ে পরিবেশ। এখানে সেখানে ছাগল মরে পড়ে আছে। কোনটির মাথা নেই। কোনটির কোমর নেই। পরে আমরা জেনেছি গদাম নামক একটা ট্যাবলেট খেয়ে নাকি তাদের এই অবস্থা। তাছাড়া সাইটের পরিবেশটাকে আরো ভুতুড়ে করে তুলেছে অনেকগুলো তালগাছ। তালগাছ বগলে নিয়ে মরে পড়ে আছেন অনেকেই। তাদের "ক্লান্ত" চেহারায় "হয়রান" হওয়ার ছাপ। মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসছে ভৌতিক আর্তনাদ- 'আমাকে আনব্যান করুন। আমাকে আনব্যান করুন। হিহিহি' । যায়গায় যায়গায় পাওয়া গেছে কাদার দাগ। ধারণা করা হচ্ছে ঐ সাইটের বাসিন্দারা মরার আগ মুহূর্তেও কাদা ছোঁড়াছুড়িতে ব্যস্ত ছিলেন। দুই পক্ষের কাদার মাঝে পড়েও কেউ কেউ মারা গেছেন বলে আমরা ধারণা করছি। তারা হলেন- জানা, আরিল ও লাভলুদা। সাইটটিতে আসলে ঠিক কি ঘটেছিলো সেটা আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ভালো ধারনা দিতে পারবে।"
এতোটুকু বলে থামলেন মহামান্য পিকি।
মুখ খুললেন বিজ্ঞান একাডেমীর প্রধান।
"দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কথা পরে শোনা যাবে আমরা আপাতত চলে যাচ্ছি জীব বিজ্ঞানী জিলোর কাছে। মহামান্য জিলো, আপনি বলুন। সামহোয়ারইনব্লগ নামক সাইটটি পাওয়ার পর থেকে কিভাবে আপনাদের গবেষনা হুমকির মুখে পড়েছে।"
"কি আর বলবো! জীব বিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের এতোদিনের ধারনা পুরো বদলে যাওয়ার পথে। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে একবিংশ শতকে মানুষ, ছাগল, হাম্বা সবাই সহাবস্থানে ছিলো। রাঝাস প্যাক প্যাক না করে কি চমৎকার ভাবে মানুষের মতো কথা বলতো!"
উপস্থিত সকল বিজ্ঞানীর বিস্ময়ে একবার হা করলেন।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী টিক্রী হাত তুলে বললেন,"শুধু তাই নয়। তালগাছও মানুষের সাথে সহাবস্থানে ছিলো।"
বিজ্ঞানীরা বিস্ময়ে আরেকবার হা করে হালকা গুঞ্জন শুরু করলেন।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী টিক্রী আবারো কিছু বলার জন্য উঠে দাড়ালেন। টিক্রী সুন্দরী মহিলা। তাই সব বিজ্ঞানী তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
টিক্রী বললেন,"ধইন্যাপাতা ক্ষেত ছেড়ে সামহোয়ারইনে কি করছিলো সে প্রশ্নের সুরাহা এখনো করতে পারিনি।" উপস্থিত বিজ্ঞানীদের মুখে সহানূভুতি ধ্বনী শোনা গেলো "চুক চুক চুক"। সম্ভবত এই কৃত্রিম সহানুভুতি ছিলো টিক্রিকে খুশি করার চেষ্টা।
মহামান্য কিটি বললেন,"থামুন, আমরা এবার মহামান্য রিকির মুখে ভাষাবিভাগের অভিজ্ঞতা শুনবো।"
"আমি ভাষাহীন মহামান্য কিটি। আমাদের অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে ভয়াবহ। আমরা প্রাচীন ভাষারীতি সম্পর্কে একটা সিদ্ধান্তে এসেছি অনেকদিন হলো। কিন্তু সামহোয়ার আবিষ্কারের পর আমাদের সব ধারণা ভেঙ্গে গেছে। আপনারে জেনে অবাক হবেন "সামহোয়ারের" নাম ছিলো সামু! ব্লগের এডমিনদের নাম ছিলো মডু। আরো কতো কি!! আমাদের "ওয়ার্ড এনালাইসার ৭.১" কিছু শব্দ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই শব্দগুলোর মধ্যে লুল, ভাদা, সিটিএন অন্যতম। কিছু কিছু লেখকের লেখাও আমাদের ভাষাবিদদের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে হাসান মাহবুব, নৈশচারী, নির্ঝর নৈশব্দ, শিরিষ অন্যতম। আমরা এখনো তাদের লেখা নিয়ে গবেষনা করে যাচ্ছি। তাছাড়া একেকজন লেখককে একেক সময় একেক নামে সম্বোধন করা হতো, যেমন আসিফ-কে আচিপ, নাফিস-কে নাপিষ, নৈশচারীকে ৯০০-৪-ই। ব্লগটা ছিলো লেখার যায়গা। বলার যায়গা না। কিন্তু একজনের নাম দেখলাম 'ভেবে ভেবে বলি'। কি আজব!"
প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান হঠাৎ হাত তুলে বলা শুরু করলেন।
"আমি আপনাদেরকে কিছু এক্সক্লুসিভ তথ্য দিতে চাই।"
উপস্থিত সবাই একটু ঝুঁকে বসলেন।
"আমাদের প্রতিরক্ষা বিভাগের চুল চেরা বিশ্লেষনে কিছু রহস্যময় চরিত্রের সন্ধানও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলেন ফিউশন ফাইভ। যিনি আবার মাঝে মাঝে নিজেকে ফিউশন রহমান নামে পরিচয় দিতেন। লোকজন উনাকে ডাকতো ফিফা। আপনারা জেনে অবাক হবেন, তৎকালীন সময়ে ফুটবল নামক একটা খেলা বিষয়ক সংঘটনের নামও ছিলো ফিফা। এ থেকেই বোঝা যায় ফিউশন ফাইভ কতো রহস্যময়। এ ধরনের আরো রহস্যময় চরিত্রও পাওয়া গেছে, যেমন: আরিফুর রহমান, নাস্তিকের ধর্মকথা, কৌশিক, সবাক প্রমুখ।"
একটু থেমে আবারো বলা শুরু করলেন প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান।
"আমরা সামহোয়ারইন ব্লগ স্টাডি করে তৎকালীন সমাজ ব্যাবস্থা সম্পর্কেও কিছু ধারণা পায়েছি। যা আমাদের আগের ধারনার সাথে সাংঘর্ষিক। যেমন আলিম আল রাজির "মেয়ে পটানোর সহজ উপায়" নামক পোস্ট দেখে বুঝতে পেরেছি তৎকালীন সমাজে মানুষ অল্প বয়সেই পেঁকে যেতো। কিছু অবাক করা নামেরও অস্তিত্ব পেয়েছি আমরা। যেমন: জুতার ভিতর মোজা, তিনকোনা, চারকোনা, জিকসেস, কি নাম দিবো, । "
পদার্থ বিদ্যা বিভাগের প্রধান কিছু বলার জন্য উঠে দাড়ালেন,"আমরা এতোদিন মানুষের দ্বৈত অবস্থান নিয়ে সন্দেহ পোষন করে আসছিলাম। কিন্তু সামহোয়ারইনব্লগে আমরা দেখেছি সেই ২০১০ সালেই মানুষের দুটি অবস্থান নয় ১৫/২০ টি অবস্থানও ছিলো। কি সুন্দর একজন ব্লগার ১৫/২০টা নিক চালিয়েছে সেটা না দেখলে আপনারা বিশ্বাস করবেন না। এক রাতমজুর-এরই এতোগুলো অবস্থান ছিলো যে সেটা আমাদের আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রও ব্যাখ্যা করতে পারছে না।"
বিস্ময়ে উপস্থিত সবার চোয়াল ঝুলে পড়লো।
মহামান্য কিটি আবারো মুখ খুললেন। এখন আমরা শুনবো আধ্যাত্মিকতা বিভাগের প্রধান জেকির কথা।
"জাজাকাল্লাহ খায়রাণ। মহামান্য কিটি! আমাকে কিছু বলতে বলবেন না। আমি বাকরুদ্ধ! আমি কথা বলতে পারছি না। আস্তিক নাস্তিক দ্বন্দে পড়ে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না আমি নিজে আস্তিক নাকি নাস্তিক।"
এই বলেই আধ্যাত্মিকতা বিভাগের প্রধান জেকি হাউ মাউ করে কান্না শুরু করলেন। পুরো কক্ষের পরিবেশ হঠাৎ ভারী হয়ে উঠলো।
মহামান্য কিটি সবার দৃষ্টি আকর্ষন করলেন আবার।
"সামু ব্লগে আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাপার ঘটে গিয়েছিলো। যার প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের কিছু সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এনেছি। এখন আমি সেগুলো হলোগ্রাফিক স্ক্রীনে দেখাবো।"
কিটি একটি সুইচ অন করলেন। পর্দায় ভেসে আসতে লাগলো কিছু লেখা।
**ব্লগার ইয়াজিদ সেই ২০১০ সালেই বৈজ্ঞানীকভাবে জ্বিনের অস্তিত্ব প্রমান করে গেছেন। সুতরাং আমাদের জ্বিন সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলো।
**md jakaria অনেক আগেই কম্পিউটার নিয়ে চিন্তা করতে বলে গেছেন। সুতরাং আমাদের সুপার কম্পিউটার "জিকারা ৭" আসলে পরোক্ষভাবে তারই অবদান।
**টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদের ফটোশপ বিষয়ে গবেষনাই আসলে বর্তমান "ফটোলিট(১)" প্রযুক্তির মুল প্রেরণা।
এই পর্যন্ত দেখানো হলো। ঠিক তখনই কনফারেন্স কক্ষের কোনায় বসে থাকা কম বয়সী মেয়েটি ফিক করে হেসে উঠলো। মহামান্য কিটি রেগে উঠলেন,"এই মেয়ে! তুমি হাসছো কেনো। দেখছো না! আমরা সিরিয়াস বিষয়ে কথা বলছি।"
মেয়েটি বললো,"স্যরি মহামান্য কিটি। আমি আসলে আমার মাইক্রো এইচে(২) সামহোয়ারইন ব্লগের একটি ১৮+ রম্য পোস্ট পড়ছিলাম। তাই হেসে উঠেছি।"
মহামান্য কিটি সহ উপস্থিত বিজ্ঞানীদের চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠলো। কিটি বললেন,"১৮+! কই! দেখি দেখি! তাড়াতাড়ি দেও তো।"
কিটি মেয়েটির কাছ থেকে মাইক্রো এইচ কেড়ে নিয়ে ১৮+ পোস্ট পড়তে বসে গেলেন। কিছুক্ষন পর দেখা গেলো কক্ষের সবাই তাদের নিজ নিজ মাইক্রো এইচের দিকে চেয়ে আছেন আর একটু পর পর হেসে উঠছেন।
নির্ঘন্টঃ
১. ফটোলিট- ফটোশপের চরম আধুনিক ভার্সন।
২. মাইক্রো এইচ- হলোগ্রাফিক স্ক্রীনের মাইক্রো ভার্সন।
লেখাঃ আলিম আল রাজি।
আইডিয়াঃ রাজসোহান
*** দ্বিতীয় পর্বঃ স্বল্পদৈর্ঘ্য ব্লগীয় সাইন্স ফিকশনঃ সামু রিটার্নস, অতঃপর... (২য় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৫