আমার বড় ভাই একবার হার্টের সমস্যায় ঢাকার একটি নামকরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন হার্টে মারাত্মক সমস্যা হয়েছে। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন তেমন কিছু না। কিছুদিন হাসপাতালে থাকুন, এরপর বাসায় কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বড় ভাই হাসপাতালে আছেন,তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন। একদিন একজন রোগী আসলেন,তারও হার্টে সমস্যা। ডাক্তার রোগী দেখে মনে করলেন তেমন সমস্যা নেই। রোগীকে দেখেও বোঝা যাচ্ছেনা তার খুব বেশী সমস্যা। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা দিলেন আর বলে গেলেন রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে আসলে সমস্যা কি। বড় ভাই-র ঠিক পাশের বেডে ঐ রোগী ছিলেন। হঠাৎ তিনি চিৎকার শুরু করলেন ডাক্তার আমাকে বাঁচান,আমাকে বাঁচান,যত টাকা লাগে আমি দেবো,আমার ধানমন্ডি ৪টা ৬তলা বাড়ী,আমার গুলশানে ৬তলা ২টি বাড়ী, বনানী ৬তলা ২টি বাড়ী,উত্তরায় ৬তলা ২টি বাড়ী,আমার ব্যাংকে ৫কোটি টাকা আছে, শেয়ার বাজারে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে, ডাক্তার টাকা কোন বিষয় নয়, আমাকে বাঁচান। এভাবে চিৎকার করতে করতে চোঁখের সামনে মারা গেলেন। হিসাব করে দেখা গেল ভদ্রলোকের প্রায় দুইশো কোটি টাকার সম্পদ আছে। অথচ সামান্য অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে এসে মৃত্যু বরন করলেন। এতে ডাক্তার বা রোগীর কোন দোষ ছিলনা । তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা গেলেন। এ ঘটনা সবাই মেনে নিলেন।
কিছুদিন আগের ঘটনা। লোকমান ২৫ বছরের যুবক। ঢাবি থেকে ভাল একটি বিষয়ে মাষ্টার শেষ করে ভাল বেতনে চাকরি করছেন। ১০দিন পরেই তার বিয়ে। সবকিছু ঠিক। লোকমান বাড়ীর দিকে রওনা হয়েছেন বিয়ের সকল প্রস্তুতি নিয়ে। ওদিকে বাড়ীতে সকল আত্মীয় স্বজনরা এসেছেন বিয়ের অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেয়ে। লোকমান বাড়ীতে ফোন দিলেন মা আমি বাড়ী আসতেছি। প্রায় একঘন্টা পরে লোকমানের মোাবাইল থেকে আবার ফোন এল আপনি কি লোকমানের মা বলছেন,ওপাশ থেকে জবাব এল হ্যাঁ। বলা হল লোকমান আমাদের কাছে আছে। তাকে জীবিত পেতে হলে ২০লাখ টাকা দিতে হবে। একথা শুনে মা তো হতবাক। আমার ছেলে তো কোন দোষ করেনি,কেউ তার শত্রু নেই। তাহলে এঘটনা কেন? সকল আত্মীয় স্বজন ইতিমধ্যে জেনে গেছে লোকমান অপহরন হয়েছে। থানায় জানানো হল। পুলিশ অনুসন্ধান করা শুরু করল। পরের দিন লোকমানের মায়ের টাকা নিয়ে যাবার কথা। পুলিশসহ লোকমানের আত্মীয় স্বজনরা গেল সেখানে। অপহরনকারীরা বুঝে ফেলল। তারা কৌশলে পালিয়ে গেল। আর লোকমানের লাশ পাওয়া গেল ২দিন পর। লোকমানের জীবনের মূল্য কি ২০লাখ টাকা
আমাদের সমাজে অনেক বড় বড় ঘটনায় গরীব,সাধারণ মানুষ মারা যায়। তখন সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় সহযোগীতা করবে। কিন্তু আসলে করেনা। সব শুধু মানুষ দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা চাই না কোন প্রকার দূর্ঘটনা বা সহিংসতায় মানুষের জীবন অকারে ঝরে যাক। মানুষের জীবন কখন্ও টাকা দিয়ে কেনা যায়না। এজন্য সকল ক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। এজন্য সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে,কিন্তু ক্ষমতার জোরে,টাকার জোরে তারা বেচে যায়। আমরা চাই আর একটি জীবনও যেন কোন মানুষের দ্বারা ঝরে না যায়। কোন টাকা বা ক্ষমতার জোরে যেন কেউ পার পেয়ে না যায় সেই কামনা আমাদের সকলের।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৪ রাত ১১:০৬