আসছে ১লা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস। কত আয়োজন করে দিনটি পালন করা হবে। দিনটি পালন করতে কতশত আয়োজন। কত হল রুম ভাড়া,কত রং-এর পোশাক পরে র্যালিতে যাওয়া ইত্যাদি অনেক রকম আয়োজন লক্ষ্য করা যায় ১লা মে উপলক্ষে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য ৩৬৫দিনের মধ্যে এই একটি দিন ছাড়া কি আর কোন দিন দাবি আদায় করার সময় হয়না। আমাদের দেশের প্রায় ৮০ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আসে যে শিল্প থেকে সে শিল্পের শ্রমিকরা সবথেকে বেশী নিরাপত্তাহীন। যে শ্রমিকদের গায়ের রক্ত পানি করা শ্রমে এদেশের অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আসে তাদের মজুরি, বাসস্থান, স্বাস্থ,যাতায়াত ইত্যাদি সকল কিছুতে সমাজের সবচেয়ে নিম্নমান পরিলক্ষিত হয়। মালিক পক্ষ তাদের ব্যবসায় স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে শ্রমিকদের সঠিক মজুরি দেয়না। আমরা লক্ষ করি যে ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের সঠিক মজুরি প্রদান করা হয়ে থাকে তাদের প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক অসন্তোষ কম হয়। তাদের প্রতিষ্ঠানে সব সময় উৎপাদন ঠিক থাকে। মালিক পক্ষ কি এসব বিষয় লক্ষ করেনা?
আমাদের দেশে হাজারো শ্রমিক সংগঠন আছে। তারা সরকার থেকে রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত। অথচ ১লা মে ছাড়া তাদের কোন কার্যক্রম চোঁখে পড়েনা। এই সংগঠনের কথা বলে লাখ লাখ টাকা শ্রমিকদের থেকে চাঁদা তোলা হয়। এই সংগঠনের যারা নেতা তারা কেউই শ্রমিক নন। তারা থাকেন দশতলা বিল্ডিং-এ। শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা দেখার সময় যেন তাদের নেই। শ্রমিক নেতা হওয়া দরকার সত্যিকারের শ্রমিক। যে কিনা শ্রমিকদের সকল সমস্যা বোঝে। শ্রমিক নেতা সেজে শুধু টেলিভিশন টকশো,পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিলেই শ্রমিকদের স্বার্থ আদায় হয়না। তাদের দাবি আদায় করার জন্য পরিকল্পনা মাফিক ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার।
আমাদের দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো হয়ে গেছে রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তিক। যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তার শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারের কোন ভুল ধরিয়ে দেয়না্ বা সরকারের বিপক্ষে যাক এমন কোন কাজ তারা করেনা। এতে শ্রমিকদের বিশাল একটা অংশ দাবি আদায়ে সোচ্চার থাকেনা। আবার যারা আন্দোলন করে তা যদি সরকারের বিপক্ষে যায় তবে সরকারী দলের শ্রমিকরা আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মারধর করে। এতে দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরুতেই মার খায়। যখন শ্রমিকরা আন্দোলন করে তখন সরকার বা প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ নেতাদের নিয়ে বসে। নেতারা তো শ্রকিকই না তারা শ্রমিকদের কথা কিভাবে প্রকাশ করবে। এজন্য কোন দাবি সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়না। এতে দাবি আদায়ও হয়না। তাই শ্রমিক সংগঠন হওয়া দরকার শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য,কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ্ উদ্ধারের জন্য নয়।
শ্রমিকদের নিরাপত্তা যে কত নিম্ন মানের তা লক্ষ্য করা যায় তাজরিন ফ্যাশন ও রানা প্লাজা দূর্ঘটনার চিত্র থেকে। প্রায় প্রতি বছর কোন না কোন গার্মেন্টস দূর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ফলাফল শূন্য। যে শ্রমিকরা নিজ জীবনের নিরাপত্তাই পায়না। সে কিভাবে সঠিক কাজ করতে পারবে। যারা নিরাপত্তার সাথে কাজ করার নিশ্চয়তা পায় সেই কেবল স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে। এজন্য শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করে কাজ করা দরকার।
আমরা অনেক সময় লক্ষ্য করি শ্রকিকদের বিরাট অংশ সিন্ডিকেট করে থাকে। এটা শ্রমিক এবং মালিক উভয়েরই ক্ষতি হয়। শ্রমিকরা চাকরি হারায় আর মালিক পক্ষ ক্রেতার চাহিদা সময়মত পূরন করতে পারেনা। এর ফলে অর্ডার বন্ধ হয়ে যায়। একাজ করে অনেক মালিক পথে বসেছে আবার হাজারো শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। এজন্য শ্রমিকদের সাবধান হওয়া দরকার।মালিকের লক্ষ রাখা উচিৎ যেন শ্রমিকদের মধ্যে মালিকের দূর্বলতার সুযোগে কোন সিন্ডিকেট তৈরী করতে না পারে। মালিকের উচিৎ সঠিক সময়ে শ্রমিকের মজুরি প্রদান করা।
সবশেষে বলতে চাই শ্রমিক ও মালিকের যৌথ প্রচেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শ্রমিকদের সংগঠন শুধু শ্রমিকদের দাবি আদায়ের জন্য হওয়া উচিৎ। কোন স্বার্থান্বেসী মহল যেন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করি। আর আমাদের শ্রমিক শ্রেণী যেন সুখে শান্তিতে থাকে সেই কামনায় শেষ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০৩