আমরা সবাই আধুনিক হতে চাই। কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা যে বলবে আমি সেই আদিম যুগে ফিরে যেতে চাই। আধুনিক যন্ত্রপাতি, বিজ্ঞান এসব ছাড়া আমরা চলতেই পারিনা। আমাদের আধুনিক হতে হয়। আমরা সবাই গর্ব করে বলি আমরা আধুনিক যুগের সন্তান। খুবই ভাল কথা। আমাদের ছোট ছেলে মেয়ে তাদের বাবা,দাদাদের বলে আমরা আধুনিক,তোমাদের চেয়ে আমরা বেশী বুঝি। সত্যিই কি তাই।হতেও পারে। আধুনিকতা গ্রহন করার মাধ্যমই একজন মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ধন্যবাদ জানাই যে সকল বিজ্ঞানী,উদ্যোক্তা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদেরকে আধুনিক সমাজ,যন্ত্রপাতি,গাড়ী,মোবাইলসহ আধুনিক যুগের সকল কিছু উপহার দিয়েছেন। এখন আমরা আসি আধুনিক হতে হলে আসলে ব্যক্তিকে কি কি করা লাগে। আধুনিক হওয়ার জন্য ৬ফুুট লম্বা হওয়ার দরকার নেই। বুকের মাপ চল্লিশের উপরে হওয়ার দরকার নেই। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে যেটুকু শরীর দিয়েছেন তা দিয়েই আপনি আপনার জীবনকে আধুনিক সকল কিছুর সাথে খাপ খাওয়াতে পারবেন। প্রথমে আপনাকে আধুনিক শিক্ষা গ্রহন করতে হবে।এজন্য একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সকল কিছু। আমাদের চারপাশের অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আধুনিকতার নামে ধূমপান করে,যা একেবারে গ্রহনযোগ্য নয়। আবার অনেকে ধূমপানে সাথে সাথে ইয়াবা,মদ,গাজা এমনকি হিরোইন পর্যন্ত গ্রহন করে থাকে। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের অনেক মেধা আছে,কিন্তু পরিবেশের কারনে এ মেধা অনেক ক্ষেত্রে হারিয়ে যায়। আমার এক ছোটভাই সবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। সে আমার থেকে প্রায় ১০বছরের ছোট, গ্রাম থেকে এসেছে ঢাকা শহরে।নতুন শহর, নতুন ক্লাস,নতুন ক্যাম্পাস,নতুন বন্ধুবান্ধব সবকিছু মিলিয়ে এক নতুন জগৎ। তার সবকিছু ভাল্ই চলছে। হঠাৎ তার মধ্যে কেমন অস্থিরতা দেখতে পেলাম। অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমার ছোট ভাইটির। তার পিতা তাকে জমি বিক্রি করে পড়ার জন্য ঢাকা পাঠিয়েছে। সে ভাল ছাত্র। তাকে নিয়ে পিতা-মাতার অনেক স্বপ্ন। একসময় দেখা গেল নিয়মিত খরচের চেয়ে অনেক বেশি টাকা চায়। ঘটনাটা কী। পরে দেখা গেল আমার ছোট ভাইটি বন্ধুদের সাথে মিশে ধূমপান,গাজা,ইয়াবা ধরেছে। এগুলো না নিলে নাকি আধুনিক হওয়া যায়না। দরিদ্র পিতার পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব হচ্ছিলনা। একসময় পিতার জমি সবশেষ। ছোট ভাইটি আর পড়াশুনা শেষ করতে পারলনা। একদিন তা বিশ্ববিদ্যালয়ে খোজ নিলাম বলল সে একটি সেমিষ্টার শেষ করেছে। অথচ এখন তার অনার্স শেষ করার কথা ছিল। অভিভাবক হিসেবে অন্য একজনের নাম্বার দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোন দিলে বলত আমার ছেলে যা বলে তাই শোনেন। ছেলেটির পড়াশুনা শেষ আবার তার পিতার জমি এবং স্বপ্ন সব শেষ। এখানে বলে রাখি খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশে তার সকলকিছু সে শেষ করেছে। এর নাম আধুনিকতা নয়, আধুনিকতার নামে ভুল সংজ্ঞা। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের অবস্থা আরো খারাপ। তারা সঠিক পরিবেশের অভাবে মেধাগুলো ঝরে যাচ্ছে। নোংরা রাজনীতি, ছাত্র/শিক্ষকদের ছোট মানসিকতা প্রকাশ পাচ্ছে। তারা তার মতাদর্শের বাইরে কোন কিছু ভাবতে পারেননা। বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্তচিন্তার যায়গা। সেখানে একটি দল বা মানুষের লেজুড়বৃত্তি থেকে আমরা বের হতে পারিনা। আমাদের দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/ছাত্ররা মনে করেন রাজনীতি না করলে আধুনিক হওয়া যায়না। এটা আধুনিকতা নয় বরং নোংরা মানসিকতার বহিঃপরিচয়। আমাদের দেশের অনেকেই দেশের বাইরে পড়াশুনা করে অসামান্য অবদান রাখছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে মেধার অভাব নেই,অভাব সুষ্ঠু পরিবেশের।
আধুনিকতার আরেক নাম পোশাক। পোশাক ছাড়া মানুষ এক সেকেন্ডও চলতে পারেনা। মানুষ আর পশুর মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে মানুষ পোশাক পরে আর পশুরা পরেনা। পশ্চিমা দেশের আধুনিকতা সাথে আমাদের দেশের আধুনিকতা এক হলে আমাদের নিজস্ব কোন স্বকীয়তা থাকেনা। তাদের পোশাকের ভাল দিকটা আমাদের গ্রহন করা উচিৎ। পশ্চিমা দেশে বেশীর ভাগ সময় প্রচন্ড শীত পড়ে। এজন্য তারা মোটা কাপড় পরবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা যদি তাদের মত মোটা কাপড় পরতে যাই তাহলে আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মেলেনা্। এতে আরও অনেক রোগ বালাই জন্ম নেয়। আবার অনেকে এমন পোশাক পরেন যা জনসম্মুখে দেখলে লজ্জা পেতে হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মানানসই পোশাক পরাই হল আধুনিকতা। কিছু ছাত্র/ছাত্রী এমন টাইট পোশাক পরেন যে এতে তাদের শরীরে অনেক রোগের জন্ম দেয়। যেমন: রক্তনালীতে ব্লক,পাইলস,মাংসপেশী অকেজো ইত্যাদি। এজন্য আধুনিতার নামে শরীরের ক্ষতি করে কোন পোশাক পরা ঠিক নয়। পোশাক হওয়া উচিৎ আরামদায়ক,রুচিশীল।
এবার আমাদের শরীরি আধুনিকতা দিকে আসি। আমরা আধুনিক মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক রকম বিজ্ঞাপন দেখে থাকি। তার মডেলের মত করে নিজেকে ভাবতে এবং সাজতে পছন্দ করি। এটি দোষের কিছু নয়। কিন্তু তাদের মত করে নিজেকে গঠন করতে যেয়ে অনেক সময় সবকিছু হারিয়ে ফেলি। তাদের মত চুল,নখ,দাড়িি,উল্কি ইত্যাদি করে থাকি। মনে রাখা দরকার অতিরিক্ত প্রশাধনী ব্যবহার করে নিজের ত্বক,চুল,নখ না হারিয়ে সাধ্যমত এগুলোর পরিচর্যা করাই হল আধুনিকতা। অনেকে শরীরে বিষাক্ত রং দিয়ে উল্কিে আঁকে। এতে অনেক সময় দেখা যায় শরীরে ক্যানসারের মত রোগ দেখা দিয়েছে। এজন্য আধুনিক সাঁজসজ্জার দিকে খেয়াল রাখা ভাল।
আমাদের সমাজের অনেক মানুষ মনে করে নিচু মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করা আধুনিকতা। যেমন: রিকসাওয়ালা,বাসের হেলপার,ভিক্ষুক,গরীব ইত্যাদি। নিজের টাকা থাকলেই উচু হওয়া যায়না। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা গরীব ছিলেন কিন্তু নিজ প্রচেষ্টায় অনেক দুর পর্যন্ত যেতে পেরেছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম,অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন,বিজ্ঞানী নিউটন, কৃষ্ণাঙ্গ নেতা নেলসন মেন্ডেলা ইত্যাদি মানুষ গুলো গরীব পরিবারে জন্ম নিয়েও পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছেন। এরা কি ধনী হওয়ার পর মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন?
সাংস্কৃতি মানুষকে আনন্দ যোগায়। সাংস্কৃতি ছাড়া মানুষ চলতে পারেনা। আমাদের দেশের সাংস্কৃতি হওয়া চাই আমাদের পরিচয় কেন্দ্রীক। সাংস্কৃতি যখন কোন দেশের সাংস্কৃতিতে নকল করে তখন তার কোন স্বকীয়তা থাকেনা। এদেশের চলচ্চিত্র এক সময় ভাল ব্যবসা করত। যখন নকল শুরু হল তখন ধস নামা শুরু হল। আমরা হলিউড,বলিউড ইত্যাদির আদলে সিনেমা নকল করতে যেয়ে চলচ্চিত্র এখন মার খাচ্ছে। তাছাড়া সাংস্কৃতি আগ্রাসনে আমাদের সবকিছু হারাতে বসেছি। মাইকেল মদুসূদন দত্ত বলেছিলেন ভিক্ষা করে কোনদিন সফল হওয়া যায়না। তাই ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিি ঐতিহ্য নিয়ে চলাই হবে আধুনিকতা। এদেশের মানুষ আধুনিকতা নামে অশ্লীলতা গ্রহন করেনা। আমাদের দেশের সাংস্কৃতি রক্ষা করতে সকলকে সহযোগীতা করা প্রয়োজন।
সবশেষে বলতে চাই আধুনিকতা ছাড়া চলা সম্ভব নয়। আমাদের মুক্ত চিন্তা,সেই সাথে পরিবেশ সকলকিছু সামনে রেখে আসুন সকলে মিলে এদেশ টাকে সামনের দিকে নিয়ে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮