somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক দামে কেনা : একটি নির্ভেজাল বাংলা সিনেমা

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রত্যেক ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিরই নিজস্ব একটা ধরন আছে। এই নিজস্বতার কারনেই কোনটা হলিউডি কোনটা বলিউডি দেখলেই আলাদা করা যায়। একই ভাবে ভাষা ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও বম্বে, কলকাতা আর ঢাকার রিমেক সিনেমা গুলোর ধরন দেখেই ধরে ফেলা যায় সিনেমাটি তামিল-তেলেগু সিনেমার নকল।
সবার মতো বাংলা সিনেমারও একটি নিজস্ব ধরন আছে। কয়েক বছর যাবৎ তামিল তেলেগু সিনেমার আহরহ রিমেকের ভীড়ে ঢালিউড থেকে নিজস্ব ধরনের বাংলা সিনেমা যখন হারিয়ে যেতে বসেছিল। ঠিক তখন মুক্তি পেল অনেক দামে কেনা নামে পূর্ণঙ্গ বাংলা সিনেমাটি।
বাংলা সিনেমার ধরন কতোটা যুগপোযোগী। এতে কতটুকু সংস্কার প্রয়োজন এসব বিতর্কে যাচ্ছি না আজ। আজ শুধু ‘অনেক দামে কেনা’ সিনেমাটি নিয়ে আমার অনুভূতি শেয়ার করছি।
____
যদিও সিটি লাইটসের কাহিনী সংক্ষেপ বলা নিস্প্রয়োজন তবুও বর্ণণা করছি গল্পটি ছবিতে ঠিক কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছে সে সম্পর্কে ধারনা দিতে।
রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ানো এক ছেলে হিরো। স্থানীয় ফাইট ক্লাবের তুখোড় ফাইটার সে। সাপ্তাহে একদিন ফাইট করে বাকি ৬ দিন হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর মারামারি করা তার নিত্যদিনের কাজ। একদিন মারামারি করার অপরাধে পুলিশ তাড়া করে হিরোকে। পুলিশ থেকে বাঁচতে ছেলেটি ঢুকে পড়ে একটি গাড়িতে। পুলিশ চলে গেলে গাড়ির উল্টো দিকের দরজা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ে সে। বেরিয়েই এক নারী ফুল বিক্রেতার সাথে ধাক্কা খায়। মেয়েটির হাত থেকে পড়ে যাওয়া গোলাপ ফুল গুলো তুলে হতে দিতে গিয়ে ছেলেটি আবিষ্কার করে মেয়েটি অন্ধ। মেয়েটি ছেলেটিকে ফুল কেনার প্রস্তাব দেয়। হিরো একটি ৫ টাকা দামের গোলাপ কিনে। এবং ১০০ টাকার নোট দেয়। মেয়েটি ভাংতি খুজছিল এমন সময় সামনে থাকা গাড়ি চলে যায়। মেয়েটি বলে উঠে ‘বাকি টাকা না নিয়েই চলে গেল! অনেক বড় লোক মনে হয়’। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি বুঝতে পারে মেয়েটি তাকে খুব ধনী ভাবছে। মেয়েটির ভুল ভাঙতে দেয় না সে।
গাড়িটির মালিক ছিল শিল্পপতী ইমরোজ মির্জা। লোকটির অনেক টাকা আছে ঠিকই তবে মনে এক পয়সার সুখ নেই। তাই সেদিন রাতে মাতাল হয়ে আত্যহত্যা করতে যায় লোকটি। কাকতালীয় ভাবে সেখানেই উপস্থিত ছিল হিরো। ছেলেটি লোকটিকে ছলে বলে কৌশলে আত্যহত্যা থেকে রক্ষা করে। এবং বোঝানোর চেস্টা করে দুনিয়া অনেক সুন্দর, এই সুন্দর দুনিয়া ছাড়তে চাওয়া বোকামীর কাজ। এভাবেই একসময় ভাব জমে তাদের মধ্যে। ছেলেটিকে লোকটি তার বাড়িতে নিয়ে আসে, ক্লাবে নাচ দেখাতে নিয়ে যায়। সেই রাতেই আবার মাতাল অবস্থায় লোকটি তার বাড়ি আর গাড়ির মলিকানা ছেলেটিকে দিয়ে দেওয়ার ওয়াদা করে। কিন্তু পরদিন সকালেই লোকটি ছেলেটিকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। এভাবে প্রতি রাতেই তাদের দেখা হতে থাকে। এবং বিভিন্ন মজার ঘটনা ঘটতে থাকে।
ঐদিকে মেয়েটির সাথেও ছেলেটির বার বার দেখা হতে থাকে। বিভিন্ন কারনে মেয়েটির মনে ছেলেটি খুব ধনী এই ধারনাটি আরও শক্ত হয়।
ছেলেটি প্রথম দেখাতেই মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিল। পুষ্প নামের মেয়েটিও এক সময় ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেলে। এগিয়ে চলে সিনেমার কাহিনী।
__________
অধিকাংশ বাংলা সিনেমাই একটা নিয়ম মেনে চলে। শুরু হয় খুব হাসি খুশির মাধ্যমে। কিন্তু সময় যতো গড়ায় দুঃখ কষ্ট, টানাপোড়ন, জটিলতা বাড়তে থাকে। এই সিনেমাটিও তার ব্যাতিক্রম নয়। যারা নিয়মিত বিদেশী সিনেমা দেখেন তাদের কাছে শুরুর দিককার কমেডি গুলো লেইম মনে হতে পরে। কিন্তু বাংলা সিনেমার যেসব নিয়মিত দর্শক যারা রাজা বাবু, আই ডোন্ট কেয়ারের মতো জঘন্য সিনেমা দেখে তালি দিতে জানেন, তাদের কাছে এই কমেডি অনেকটা বহুদিন পর পলাউ কোরমা খাওয়ার মতো।
_
অনেক সময় দেখা যায় খুব ভালো সিনেমা হচ্ছে। কমেডি হচ্ছে রোমান্স হচ্ছে কিন্তু সিনেমা ভিতরে ঢোকা যাচ্ছে না। ফলে অনেক ভালো সিনেমাও কেমন যেন বোরিং বোরিং লাগে। এর সঠিক কারন কি আমার জানা নেই। তবে আমার ধারনা চরিত্র গুলো পর্দায় ঠিক ভাবে ফুটে না ওঠার কারনে এমন হয়। দর্শক চরিত্র গুলোকে ফিল করতে পারে না। যার দরুন কাহিনীতে তারা ঢুকতে পারে না। এই সিনেমাটা আমার ভালো লাগার একমাত্র কারন হলো আমি সিনেমাটির ভিতরে প্রবেশ করতে পেরেছি। যেটা অনেক চেস্টা করেও আমি আমার দেখা সর্বশেষ তিন সিনেমা সুইটহার্ট, অঙ্গার, গ্যাংস্টার রিটার্নস এ পারিনি। ধন্যবাদ ছবির পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারকে চরিত্র গুলো যথাযথ ভাবে তুলে ধরার জন্য।
________
মাহীর রঙচঙ্গে ড্রেস নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে মাহী মডেল না ফুলওয়ালী? আমি পোষাকটাকে পজিটিভলিই নিচ্ছি। আরে ভাই সিনেমাটিক বলেও তো একটা ব্যাপার থাকতে হয় সিনেমায়। স্বার্থক সিনেমা কখনও শতভাগ বাস্তব হয় না। বাস্তব অবাস্তবের মাঝামাঝিতে থাকে। ড্রেস গুলো সিনেমাটায় এক ধরনের সিনেমাটিক আমেজ এনেছে। পরিচালক সিনেমায় শুধুমাত্র এই একটা দিকেই মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে।
_______
এতোটুকু পর্যন্ত যারা পড়েছেন তাদের অনেকেই সিনেমাটিকে মাস্টার পিস ভাবছেন। সিনেমাটি বাস্তবে তা নয়। তবে হতে পারতো অবশ্যই যদি কিছু দুর্বলতা না থাকতো।
সিনেমায় সবচেয়ে বেশী চোখে পড়ার মতো দূর্বলতা এর সিনেমাটোগ্রাফি ও লোকেশান। এই দুটো জিনিস একদম বাজে একদম যা তা হয়েছে। এতো সম্মানিত, স্বনামধন্য পরিচালকের সিনেমার চিত্রায়নের এই অবস্থা দেখে হতাশ হয়েছি।
তবে আমার কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর লেগেছে সিনেমাটির এ্যাকশন। ঠিক মতো করতে না পারলে তারা এ্যাকশন রাখে কেন সিনেমায়? এ্যাকশন না রাখলে সিনেমাটার মান একটু হলেও বাড়তো।
বাপ্পীর বন্ধুদের চরিত্র গুলোকে দায়সারা ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা সিনেমটির মান আরেকটু কমিয়েছে। আর শুধু চিল্লাইতে জানা বি গ্রেডের ভিলেন গুলাকে বেশীরভাগ বাংলা সিনেমায় দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি।
__________
পুষ্প চরিত্রে মাহী খুব ভালো অভিনয় করেছে। একেবারে জড়তা মুক্ত। ডায়লগ ডেলিভারির ন্যাকামিটাও আগের মতো নেই। আর তার ইনোসেন্ট একেকটা হাসিতে অনেকের কলিজা বের হয়ে আসতে চাইবে। ২০১২ তে যখন এই মেয়ের অভিষেক হয়েছিল তখন কেউ কি কল্পনা করেছিল? এই মেয়ে একদিন এতো ভালো অভিনেত্রী হয়ে ওঠবে…!!!
বাঁদের খাতায় ফেলে দেওয়া নায়ক হয়েও হিরো চরিত্রে বাপ্পীও খুব ভালো অভিনয় করেছে। এর চেয়ে ভালো করার সামর্থ্য মনে হয় না তার আছে।
আর ডিপজলই এই সিনেমায় সবচেয়ে বড় আকর্ষন, সবচেয়ে বড় প্রান।
পুষ্পের দাদীর চরিত্রে নাম না জানা মহিলাটিকে নেওয়াটা পার্ফেক্ট কাস্টিং ছিল।
__________
‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ গানটা অসাধারণ একটা ট্রেক। এতো ভালো একটা গানকে একেবারে সাদামাটা ভাবে চিত্রায়ন করে গানটাকে আপমান করেছে জাজ। ‘সূর্য ডুবে গেলে’ আর ‘এই মন শুধু তোকে চায়’ গান দুটোও শ্রুতিমধুর। গান দুটি যতটা শ্রুতি মধুর চিত্রায়ন তার থেকেও ভালো। বিশেষ করে সূর্য ডুবে গেলে গানটার গ্রাম্য লোকশনটা ভালো লেগেছে। আর স্যাড সংটাও খারাপ হয় নাই। বিপাশার আইটেম গান নিয়ে প্রত্যেক রিভিউতে সমালোচনা করতে করতে হাপিয়ে গেছি। কিছু বলার নেই, পরিচালক আর প্রযোজকদের রুচির উন্নতি কামনা করা ছাড়া।
____________
সব মিলিয়ে রোমান্স, হাসি, কান্না, উত্তেজনায় ঠাসা একটা পরিপক্ক সিনেমা ‘অনেক দামে কেনা’
সিনেমটি যদি ১ জনেরও ভালো লাগে তার ৯০ ভাগ ক্রেডিট পাবে স্ক্রীপ্ট রাইটার জোসেফ শতাব্দী। দেশী বাণিজ্যিক সিনেমার উপযোগী করে উত্তেজনাপূর্ণ ও প্রাণবন্ত ভাবে গল্পটি সাজানোর পাশাপাশি। পুষ্প চরিত্রের সংলাপ গুলোতে নিজের শৈল্পিকতার প্রমানও রেখেছেন তিনি।
তার লেখা থেকে তৈরি আরো সিনেমার অপেক্ষায় আছি।
আর পরিচালকের উচিত ছিল সিনেমাটিকে আরো যত্ন নিয়ে তৈরি করা।
__________
আমি সবসময় চেস্টা করি সৎ রিভিউ দিতে।
কাউকে বিভ্রান্ত করে সিনেমা হলে নিয়ে যাওয়ার মতো লোক আমি নই।
আগেই বলেছি বাংলা সিনেমার নিয়মিত দর্শদের কাছে এটা অনেক বড় ট্রিট। ভালো সিনেমার এই অকালের যুগে এরকম সিনেমা বার বার আসবে না। তাই আর দেরী না করে জলদি দেখে নিন সিনেমাটা।
তবে যারা বাংলা সিনেমার নিয়মিত দর্শক নন তাদেরকে আমি সিনেমাটা সাজেস্ট করতে চাই না। তবে আপনারা যদি বাজে লোকেশন, সিনেমাটোগ্রাফি, এ্যাকশন এর পাশাপাশি পুরানো দিনের বাংলা সিনেমার মতো দারিদ্র্য, দুঃখ-কষ্ট, ভালোবাসার মানুষেকে নিজের সাথে জড়িয়ে তার কষ্ট বাড়াতে চাই না এরকম একঘেয়ে সেন্টিমেন্ট মেনে নেওয়ার মতো সিনেমাখোর হন তবে দেখে নিতে পারেন সিনেমাটা।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×