সংসার আমার সাথে এই ভাবে, এই রকম রসিকতা করবে, এ কোনদিন আমার কল্পনাতেও আসে নি।বেশ ভালই চলছিল। মনের সব বায়নাও আস্তে আস্তে পূর্ণ হচ্ছিল। একটা কমতি ছিলই সবসময়। কিছুতেই বাগে আনতে পারছিলাম না। সকল প্রচেষ্টা দিয়েও, যখন নিজের দিয়ে টানতে ব্যর্থ হলাম। নিজের করে পাওয়ার সব আশার আলোই যখন একটা একটা করে নিভে যাছিল। আমার মনে, তখন একটা চাপা অহংকার সৃষ্টি হল। আরে এর মনে হয় কোন সমস্যা আছে, না হলে এ এমন করবে কেন? আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, বংশীয় একটা ছেলে, বিয়ের বাজারে আমার মুল্য কি একদম নেই? চেষ্টা করলে এর চাইতে সুন্দরী, আরও ভালো কোন পয়সাওয়ালা ফ্যামিলির মেয়েকে বিয়ে করতে পারি। তারপরেও ওর পিছনে পরে আছি। কেন? ওকে আমি ভালোবাসি। ওই আমার সব। আমি ওকেই চাই।
শেষ মেস কি এই হল? এই আমার ভাগ্যে ছিল।
মরে যাওয়া মানুষকে যেমন আর ফিরিয়ে আনা যায় না, তেমনি এই ঢাকা শহরেও ঠিকানা বিহিন কোন মানুষকে খুজে পাওয়া যায় না। পাঁচতলা একটা বিল্ডিং এ বিশ বাইশটা ফ্যামিলি এক সাথে বসবাস করে। কে কয়জনের খবর রাখে? আর ত পুরা ঢাকা সিটি,কোথায় খুজব? ওকে হারাবার ভয়ে ভীতু হয়ে আমার অবচেতন মন এক বিকৃত পন্থার আশ্রয় নিল। খুব দুর্বল যায়গায় আঘাত দিয়ে পেইন দেওয়া, অপনাম করা, এটা ওটা বলে গালমন্দ করা। আমার অন্ধ মনের ভ্রান্ত বিশ্বাস ছিল এভাবে আঘাত দিলে, অপমান করলে, নিজের উপর, নিজের ফ্যামিলির উপর অভিমানে, বিরিক্ত হয়ে আমার কাছে চলে আসবে। পৃথিবীতে একমাত্র আমিই যে তাকে ভালোবাসি এটা সে বুঝতে পারবে। দিন দিন সে যে আমায় কষ্টের আগুনে পোড়াচ্ছে এটা বুঝতে পারবে। অনুতপ্ত হবে। আমায় ভালবাসবে। আমরা সংসার সাজাব। সারা জীবন এক সাথে থাকব।
আমার মন, পৈচাশিক উন্মাদনায় রোজ ওর উপর অমানুষিক ম্যানটাল টর্চার আরম্ভ করল। অদ্ভুত এক কারনে, সে আমার সব নির্যাতন সহ্য করত। আমাকে ফোন দিত, দেখা করতে চাইত। যেন আমাকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না? আমি তার সব। আমি বলতাম, তবে বিয়ে করি না কেন? সংসারের আর সবার মত সেও এই প্রশ্নের উত্তর দিত না? থেমে যেত!
আমি আমার অযোগ্যতা খুজতাম। কমতি কিসের আমার? আমি ইঞ্জিনিয়ার, হাত আছে, পা আছে, দামি কোম্পানিতে চাকুরি করছি। মোটা মাইনে পাচ্ছি। সমস্যা কোথায়?
আমার টর্চারের মাত্রা দিন দিন বাড়ছিল। বাপ-মা তুলে বাজে বাজে কথা বলতাম। অপমান করার, যন্ত্রণা দেবার নতুন নতুন প্রক্রিয়া আবিষ্কারে করতাম । এই আমি আত্মহত্যা করছি, হাত পা কাটছি, বিষ পান করছি, ফ্যানের সাথে ঝুলছি ইত্যাদি ইত্যাদি। একবার ত কত গুল ছবি এডিট করে পাঠিয়ে দিলাম। দেখ আমি তোমার জন্য মরছি।
ওর যে সব বান্ধবিদের আমি জানতাম তাদের কাছেও ওর নামে বাজে বাজে কথা বলতাম। ওর ফ্যামিলে নিয়ে বলাতাম। অন্ধ অহংকারে আমার মন বলত, “তোর কোন পরিচয় নেই রে” তারপরেও আমি তোকে ভালোবাসি দেখ আমি কত মহান। কারন ওর দু’একটা মিথ্যে তখন আমার অন্ধ অহংকারি মন, জানতে পেরেছিল। তাই ওকে জবাহের পশু মনে করে নির্যাতনের ছুরীটা বেশ শক্ত হাতেই চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু যাকে ভালোবাসি,তাকে কতখন আর দূরে রাখা যায়।
প্রিয় মানুষটির চোখের জল কতক্ষন সহ্য করা যায়? আমি ত মানুষ দয়া, মায়া, করুনা, প্রেম আমার ভিতরেও আছে?
আমি ত আর জোর করে তোমাকে, আমার কাছে নিয়ে আসতে পারব না? তোমাকেই আসতে হবে। যদি আমায় ভালোবাসো ত আসবে, এ আমার বিশ্বাস। তুমি আসবেই।
আমার সমস্ত ক্ষোভ, অভিমান, রাগ সেই অদৃশ্য স্রষ্টার উপর ছেড়ে দিয়ে তার কাছ থেকে সরে আসার চেষ্টা করছি। ওকে আর ফোন দিতাম না কিন্তু তার ফোনের অপেক্ষায় থাকতাম। বারবার মোবাইলটা বের করে দেখতাম সে ফোন দিল কিনা। কোন টেকস? সারা খন শুধু তার অপেক্ষায় বসে থাকা।
ফেবুতে আমি সারা দিন অনলাইন থাকতাম। ও কখন আসবে আমায় একটা টেকস করবে। আমি ওকে বোঝাতে চাইতাম যে আমি তার সাথে কথা বলতে চাই না, আসলে সর্বক্ষণ ওই আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াত। মন যখন ওর বিরহ ব্যাথায় কান্না করত, খুব কথা বলতে ইচ্ছে করত যখন ওর ফোন আসত না। ওর রেকর্ড করা ভয়েজ শুনতাম। মন কে সান্তনা দিতাম সে আসবে। অবশ্যই আসবে।
সমাধানে ব্যর্থ হয়ে প্রচণ্ড হতাশায় ডুবে যাওয়া মানুষটি তার সামেন পিছে শুধু সমস্যাই দেখতে পায়। উত্তরণের পথ জানা নেই। তখন নদিতে ভাসতে থাকা কচুরি পানা টিকেও নিজের ত্রান কর্তা মনে হয়।
আমার কাছের কোন বন্ধু নেই, বন্ধুস্থানীয় কোন ভাই নেই যার কাছে আমি আমার এই কাহিনিটি বলব। আমার ব্যর্থতার কারন গুল জানতে পারব। সমাধানের চেষ্টা করব।
আমার সবটা জুড়েই তুমি, আমার চিন্তা, চেতনা, এমন কি আমার কর্ম ক্ষেত্ররেও। এ আমার পৃথিবী এখানে শুধু তুমি।
অল্প অল্প মদ্যপান করতাম। খুব কষ্ট হত। বেঁচে থাকতে ঘৃণা করত। মাঝে মাঝে খুব চরে যেত, রাত দুইটা নেই তিনতে নেই নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে তোমার উপর ঝরতাম। কান্না করতাম নিজেক খুব নিঃস্ব মনে হত। এত বড় পৃথিবীতে আমার দাঁড়াবার যায়গা নেই। দুহাতে বুকে জড়িয়ে বলতে ইচ্ছে করত “আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি” বিশ্বাস কর।
আমি তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত ভালো লাগে না। প্রথম প্রভাতে কেন আমি তোমায় দেখতে পারি না? রোজ অফিস থেকে বাসায় ফিরে কেন তোমায় দেখতে পারি না? আমার ভীষণ কষ্ট হয়। বেঁচে থাকতে ঘৃণা করে।
আমার অন্ধ অহংকারি মনে কখনও এই প্রশ্ন আসে নি যে কাউকে সব সময় এই বলে ধিৎকার দিতে থাকলে, তুমি এই করেছ তুমি ওই করেছ? সে মানুষটির মনে আমার প্রতি কোন ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ অবশিষ্ট থাকে না? আমার অন্ধ অহংকারী মন, তোমার যন্ত্রণা দেখে আনন্দে উল্লাসিত হয়ে বলত, এ আমার, একে আমার যেভাবে খুশি কাটব, ভাঁজব, তার পর আরাম করে খাব।
সবদিক থেকে সবরকম প্রচেষ্টাই যখন ব্যর্থ হয়, এবং সেই ব্যর্থতার তীর যখন আমার বুকেই বৃদ্ধ হয়। তখন অতি দুঃখে নিথর আমার অন্ধ অহংকারী মন কে প্রশ্ন করলাম এখন কি করা যায়? মন আমায় বলল, ওর সাথে কথা বল। ওর সাথে স্বাভাবিক হও। চেষ্টা করলাম আবার আগের মত হতে। আবার আমরা কথা বলি রাত জেগে খুনঠুসি করি।
সে আমাকে বারবার বলত আমরা আর আগের মত হতে পারব না। আমি বলতাম কেন পারব না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। বুঝতে পারি ও আমার কাছে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। সব কথা বলে না। ও হয়ত আগের মত আর আমায় বিশ্বাসও করে না। এর মাঝেই আমাদের বিয়ের একটা ডেট ফিক্সড হয়ে গেল। আমরা নিজেরা নিজেরা বিয়ে করব। আমাদের দুজনেরই পরিচিত এক ভাই ছিল। আমি প্রায়শই তার কাছে ওর নামে নানান কথা বলতাম। কারন এই অপ্রত্যাশিত বিয়ের ব্যাপারটা আমার অন্ধ মন বিশ্বাস করতে পারে নি। আমার মন এটাও বিশ্বাস করে নি যে এই ভাইকে আমি যাই কিছু বলি না কেন সবি ও শুনতে পায়। জানতে পারে ।
আমি আনন্দে এতটাই বোধহীন হয়ে পড়েছিলাম যে একদিন আমাদের বিয়েটা ক্যানসেল হয়ে যায়। আমি রাগে দুঃখে ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করেদি। ও ফোন দিলে রিসিভ করি না। অনেক বার ফোন দিলে রিসিভ করে কথা বলতাম। আমি নিজে থেকে কখন ফোন দিতাম না। ও দেখা করতে চাইলে আমি এটা ওটা বলে কাটিয়ে দিতাম। দেখা করতাম না। সব সময় কামনা করতাম আবার বলে না কেন? আগের মত জেদ করে না কেন? আমি এমনি বলছি। আমি ত আসব।
আমার ভালোবাসা তখন প্রচণ্ড ক্ষোভ হয়ে, মনে মাঝে ভীষণ আকার অঙ্গার হয়ে জ্বলে। আমার ত কাছের কোন বন্ধু নেই, আমার সবটা জুড়েই ত তুমি, আমার চিন্তা, চেতনা, এমন কি আমার কর্ম ক্ষেত্ররেও। এ আমার পৃথিবী এখানে শুধু তুমি।
তুমি জান না, আমি একটা পথে হাঁটব বলেই, বাকি পথ নষ্ট করেদিয়েছি। একটা গান গাইব বলে, আর কোন গান শিক্ষিনি। মনের ক্যানভাসে একজনের ছবিই আমি এঁকেছি তাতে এতদিন শুধু হরেক রকমের সমাহার করেছি, সেই রঙের ছোঁয়ায় একটু একটু ফুটে উঠছিল সে আর কেউ না তুমি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। বিশ্বাস কর।
আজ আমার মনে অহংকার নেই, ঘৃণা নেই, ক্ষোভ নেই, অভিমান নেই, এখন আর আমি আমার নিজের অযোগ্যতা খুজি না এরা সবাই সংসারের প্যাঁচে পরে বিরহের আগুনে পুড়ে আজ প্রচণ্ড ভালোবাসায় রুপ নিয়েছে। আজ আমার চারপাশে শুধু অনুতপ্তের কান্নারা বিরাজ করে। আমাকে ধিৎকার দেয়।
তুমি জান না, তুমি আমায় বাইরে থেকে দেখছ তাই আমার ভিতরটা দেখতে পড়তে পাড়ছ না। আমায় আজ একটা নতুন নাম দেওয়া হয়েছে “লাশ”। কাল আমার বেডে দুটো তোষক ছিল আজ মাতিতে একটা মাত্র মাদুর বিছিয়ে আমার শয্যা করা হয়েছে। আমি সুয়ে আছি। কত মানুষ আসছে। একটু পরেই আমায় রেখে আসবে আলো বিহীন একটা ঘরে। ওরে আমায় একা ফেলে যাসনে, আমার ভয় করে। কেউ ফিরেও তাকায় না। ঠিক যেমন তুমি আমায় দেখ না, বুঝনা আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার সবটা জুড়েই তুমি, আমার চিন্তা, চেতনা, এমন কি আমার কর্ম ক্ষেত্ররেও। এ আমার পৃথিবী এখানে শুধু তুমি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি জানি, আমি অসুস্থ। আমার ভীষণ ভয় করে। ডাক্তারের ভাসায় মনে হয় এই অসুখ কে ডিপ্রেশেন বলে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ রাত ৮:২৯