অসহায় আপনি ঠিক কাকে বলবেন?
মৃত্যু যন্ত্রণা বেমালুম ভুলে গিয়ে, দুচোখে বেচে থাকার তীব্র স্পৃহা নিয়ে হসপিটালের বেডে জীবন ও মৃত্যুর মাঝে ধুকতে থাকা মানুষটিকে। স্রষ্টা আমি আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। কত কাজ পরে আছে, ছোট বোনটাকে এখনও বিয়ে দিতে পারি নি। পারিনি মা বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে। অল্প দিন হল বিয়ে করেছি বউটাকে এখন ভাল করে দেখা হয় নি। এই আজ এতদিন আমি এই হসপিটালে পরে রয়েছি, জলের মত টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে, সঞ্চয় ত খুব বেশিছিল না। ভিটে মাটি সব বাঁধা পড়েছে, আমার মা বাবা, আমার পরিবার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? কেন বারবার আমায় প্রেমের ফাঁদে আটকে দিতে আজরাইলকে সুন্দরী তন্বী রুপে আমার কাছে পাঠানোর জন্য এত বস্ত হয়ে পড়েছ। কি আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সমস্যা কি আবার রেনু করে নিব। আমাদের দেশে ত এই সিস্টেম আছে তোমার এখানে নেই?
ডাক্তার সাহেব, দেখুন আমরা ত চেষ্টার ত্রুটি করিনি, এখন আমাদের হাতে আর কিছু নেই, এবার আল্লাহ, আল্লাহ করুন।
--তিনি কি আমাদের কথা শুনবেন?
***********
সলিম সাহেব বিরাট বিজনেস ম্যান। পাঁচ সাত খানা গাড়ি। রাজধানীতে তিন তিনখানা বাড়ি। সুন্দরী বৌ। স্রষ্টার কৃপায় সুখ যেন চাঁদের আলোর মত সলিম সাহেব কে আাষ্টে পিষ্টে আগলে রেখেছে।
সলিম সাহেব তার বন্ধুদের নিয়ে নতুন এক বিজনেস স্টার্ট করেছেন। জোরে সরে কাজ চলছে, জলের মত টাকা বেড়িয়ে যাচ্ছে।
একদিন কি হল, সলিম সাহেবের বিজনেসের সিংহভাগ সরকারি দপ্তরের লাল ফিতাতে বাঁধা পরে গেল। সেই বাঁধন আজ খুলে ত কাল খুলে। দেখতে দেখতে ছয় মাস পেড়িয়ে গেল। লাল ফিতার বাঁধন খুল্লনা। দেনার দায় সামাল দিতে দিতে সলিম সাহেবের বাড়ি, গাড়ি, বাকি বিজনেসের অংশ চোখের নিমেষেই উবে গেল। সুন্দরী বৌ, যাকে নিয়ে সলিম সাহেবের অনেক গর্ব ছিল। হৃদয়ের রানি সেই বৌ ও একদিন তাকে ছেরে চলে যায়।
বেশ কিছুদিন বাদে একদিন সলিম সাহেব, তার বৌ কে ফোন করেন।
--হ্যালো
ভাল আছ?
--হ্যা এই চলছে।
আমায় ৫০০০ টাকা দিতে পার।
--ও এই জন্য ফোন করেছ?
না তা ঠিক না। তুমি ফিরে এস।
কত টাকা আমার কাছে নেই।
ও আচ্ছা ঠিক আছে। ভাল থেক। আর তারাতারি ফিরে এস।
যে সলিম সাহেব রাজার হালে জীবন যাপন করতেন আজ তিনি এক নোংরা মেসে আশ্রয় নিয়েছেন। চাকুরি খুজছেন আবার ঘুরে দারাতে চান। কথায় বলে প্রয়োজনের সময় কাজের জিনিসটি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। মার্কেটে সলিম সাহেবের উপযুক্ত চাকুরি নাই। সলিম সাহেব আত্মীয়, বন্ধুরদের কাছে একশ-পাচশ টাকার জন্য ধর্না দেন। বেঁচে থাকতে হবে। নচেৎ লোকে কাপুরুষ বলে গাল মন্দ করবে।
সবাই স্রষ্টার কথা বলে তিনি মহান, দয়ালু, সর্বশক্তিমান, আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে…………
--তিনি কি শুনবেন আমাদের আর্তচিৎকার? ফিরিয়ে দেবেন কি আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন?
************
তুই, তুই একটা খবিশ। কাপুরুষ! তোর হাত আছে, পা আছে অথচ একটা মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারলি না। তোর মত কাপুরুষের বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তুই তুই মর, মরিস নে কেন!
আকাশ শুনছ, আজ আমার বিয়ে।
তুমি কথায় আছ বল? আমি চলে আসব। আমি তোমাকে ছাড়া বাচব না। প্লিজ বল? শুনছ। এই আকাশ?
দেখ আমি রেডি হয়ে আছি। বাহিরে সবাই বিয়ের আয়োজন নিয়ে বাস্ত। প্লিজ বল তুমি কোথায় আছ? আমি চলে আসছি। প্লিজ বল?
***
প্রায় তিন মাস আকাশ ঢাকাতে এসেছে। একটা চাকুরি চাই। স্বপ্ন গুল সাজাতে চাই, বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই। শায়লাকে নিয়ে সুখ সংসার রচনা করতে চাই। কলেজের সেই সপ্নময় দিন গুল আবার ফিরিয়ে আনতে চাই।
ঢাকাতে আকাশ তার এক আত্মীয়র বাসায় উঠে সব ভালই চলছিল। রোজ দুএক যায়গায় ভাইবা দেওয়া। একটা চাকুরি আমায় পেতেই হবে। একদিন আকাশের উপর কাল বৈশাখী ঝর নেমে এল, আকাশ কে জানিয়ে দেওয়া হল, তাদের একজন গেস্ট আসছে, আকাশ কে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে হবে। ঝরঝর করে অশ্রু বন্যা বইছিল আকাশের চোখে এত বড় এই শহরে কোথায় যাব? বাসার দারোয়ান আকাশ কে একটা মেসে উঠিয়ে দেয়।
রাত গভির হচ্ছে সেই সাথে পাল্লা ঝরেছে চোখের জল। আমি কিছুই করতে পারলাম না? পারলে আমায় ক্ষমা কর, শায়লা। একসময় দীর্ঘ রাতের ক্লান্তি ভাঙ্গে। কাকের কা কা শব্দে জানান দেয় আর একটা দিন আসছে।
দরোজায় পাশে একটা খাম পরে থাকতে দেখে আকাশ হাতে তুলে নেয়। ভাবে, রাজীবের প্রায়ই তার কুরিয়ার আসে। খামের উপর নিজের নাম দেখে চমকে উঠে আকাশ, তড়িঘড়ি খুলে দেখে এটা একটা এ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার। বড় একটা মাল্টিন্যাসনাল কোম্পানিতে আকাশের চাকুরি হয়েছে। রাগে, দুঃখে, অভিমানে আকাশ নিজের মুখ খামছে ধরে। হায়! আল্লাহ!
সবাই স্রষ্টার কথা বলে তিনি মহান, দয়ালু, সর্বশক্তিমান, আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে…………
--তিনি কি শুনবেন আমাদের আর্তচিৎকার? ফিরিয়ে দেবেন কি আমাদের স্বপ্ন?
*************
সারাদেশে তুমুল হৈচৈ অধীর আগ্রহ ভরে মানুষ অপেক্ষা করছে, সেই শিমুল তলির জোরা খুনের মামলার আজ রায় বেরুবে। এ মামালার প্রধান আসামী শাহানুর। ভরা আদালত প্রাঙ্গন। এত এত মানুষের ভীরের এক পাশে শাহানুরের মা দারিয়ে। শাহানুর তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলছে, মা, সবাই আমায় দোষী বলুক, খুনি বলুক, তুমি জেনে রেখ আমি নির্দোষ। ভাঙ্গা ভেন্টিলেটরের ভিতর দিয়ে এক ফালি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে, হে আমার স্রষ্টা তুমি ত জান, আমি নির্দোষ। তার পরেও তোমার এই বিচার?
এ মামলার ঘটনায় পুলিশ মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। চার জন কে স্পট থেকে আর এই শাহানুর কে পুলিশ একমাস পরে তুলে আনে। সব সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে আদালত শাহানুর কে দোষী সাবস্ত করে এবং মৃত্যু দণ্ড দেয়।
হে আমার স্রষ্টা তুমি ত জান, আমি নির্দোষ। তার পরেও তোমার এই বিচার?
******************
রাতুলের সাথে আসমার পরিচয়টা একটা কাঁকতলিয় ব্যাপার। একদিন রাতুলের একবন্ধু আসমার ফোন নাম্বারটা দিয়েছিল। সেই থেকেই আলাপ শুরু। গল্পে গল্পে যেমন রাত কেটে যায়, তেমনি কথায় কথায় কথা বারে। দেখতে দেখতে দিন, মাস, বছর পেড়িয়ে যায়। রাতুল আর আসমা একে ওপরের আরও কাছা কাছি আসে। বিয়ের কথা হয়। তার পর একদিন হটাৎ আসমার ফোন নাম্বারটা বন্ধ হয়ে যায়। রাতুল পাগলের মত হয়ে যায় কি করবে কি না করবে? পরিচিত সবার কাছে যায় রাতুল। আসমার কথা বলে কিন্তু আশ্চর্য সবাই কেমন মুখ ফিরিয়ে নেয়। কেউ আসমার কোন খোঁজ দিতে চায় না। অসহায় রাতুল এ দারে ও দারে ঘুরতে থাকে।
এভাবেই একদিন রাতুল, আসমাদের গ্রামের বাড়ি যায়। অনেক খুজে পেতে আসমার এক দূর সম্পর্কের খালার সন্ধান পায়। তার কাছে গিয়ে রাতুল আসমাদের সব কথায় জানতে পারে। অনেক করে বলার পরেও সেই খালা আসমার কোন সন্ধান দিতে রাজি হয় না। প্রতিক্ষায় দিন গুনে রাতুল আসমা ফিরে আসবে। রাতুলের জীবন আবার মধুময় হয়ে উঠবে।
সবাই স্রষ্টার কথা বলে তিনি মহান, দয়ালু, সর্বশক্তিমান, আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে…………
--তিনি কি শুনবেন আমাদের আর্তচিৎকার? ফিরিয়ে দেবেন কি আমাদের ভালোবাসা?
****************
পরিশিষ্ট…
মানুষ হিসাবে আমাদের সবচে বড় দুর্বল দিক হচ্ছে কারও উপর নির্ভর হয়ে পরা। আমি বা আপনি, বা আমরা সবাই কারও না কারও উপর নির্ভরশীল। সে যেমন চালায় আমরা ঠিক তেমনি চলতে অভ্যস্ত হয়ে পরেছি। কেন আমি কি? আমার নিজের চালক হতে পারি না? হতে পার আপনি সরকারী কোন বড় অফিসার, তাতে কি আমি আপনার থেকে কম কিসে? বা কোন আমলা? ইচ্ছা করলে আমিও পারি। আমার নিজের খেয়াল খুশিতে আমি চলব। বিশ্বাস আমি শুধু আমাকেই করব। কেননা খুব কাছে মানুষটি যদি আমার সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করে তবে স্রষ্টা যাকে কখনোও দেখি নাই?? তাই নিজেই, নিজের স্রষ্টা মনে করে আশীর্বাদ করে দেই না, সদা সুখী থাক হে বৎস।
স্রষ্টা আমাদের একটা যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিক্ষেপ করেছেন। তাই বলছি বি প্রটেক্ট ইয়োর সেলফ। যুদ্ধ কর নিজের সাথে যেন কারও উপর নির্ভর হয়ে পরতে না হয়। লক্ষ্য যদি দশ মাইল থাকে টার্গেট রাখুম ১২ মাইল।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩০