ট্রাক থেকে ফুলকপি নামানো হচ্ছে। রাত ১১টায় কারওয়ান বাজারে নামানো এই ফুলকপি সকালে ঢাকার সমস্ত কাঁচা বাজার এবং মানুষের রান্নাঘরে পৌঁছে যাবে। চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা ফুলকপি দিয়ে সকালে নাস্তা করবে রাজধানীর মানুষেরা। তাঁরা জানবে না এক একটি ফুলকপির আত্মকাহিনি। চাষীর স্নেহ লেগে থাকা এই ফুল কোনো প্রেমিক তাঁর প্রেমিকাকে উপহার দেয় না। অথচ এই ফুলের শরীরে প্রেমের কমতি নেই কোনো। সেই প্রেমের প্রকৃত দাম কৃষকেরা পায় না কখনো। প্রেমের প্রকৃত দাম অবশ্য কখনোই পায় না কেউ।
সবজির ট্রাকের কাছে গিয়ে দাম জানতে চাই। সবজিশ্রমিকেরা বলেন, ‘ছোট সাইজেরগুলো পঁচিশ, বড়গুলো ত্রিশ’। অথচ কৃষকের কাছ থেকে এগুলো কিনে আনা হয় পাঁচ ও দশ টাকায়। সঙ্গে যুক্ত হয় শ্রমিকের মজুরি, পথ এবং পরিবহনের খরচ ও ঘাটে ঘাটে চাঁদা।
শ্রমিকেরা জেগে জেগে ফুলকপি ‘আনলোড’ করলেও কৃষকেরা এতক্ষণে ঘুমিয়ে গেছেন। আমি মুগ্ধ হয়ে ফুলকপি ডাউনলোড করা দেখছিলাম। শহরে ট্রাক ভরে সবজি আসছে; আমি দেখছি, ট্রাক থেকে কুয়াশা নামানো হচ্ছে। ট্রাকে ফুলকপির স্তুপের ওপর থেকে একজন শ্রমিক বাতাসে ছুঁড়ে দিচ্ছেন ফুল, নিচে দাঁড়ানো একজন সেটি লুফে নিয়ে দিচ্ছেন পাশের জনের হাতে। যেন দেবদূতেরা ফুল নিয়ে খেলছেন।
কাছে গিয়ে একজন দেবদূতকে জিজ্ঞেস করি, ‘তোমার বউ অপেক্ষা করছে না ঘরে?’
সে হেঁসে হেঁসে বলে, ‘বিয়া করিনাই। আপনার বউ অপেক্ষা করতেসে না?’
আমি তাঁর সমান তৃপ্তির হাঁসি হেঁসে বলি, ‘আমিও বিয়া করি নাই’।
এই সময় মা ফোন করে; বাসায় ফিরেছি কি না জানতে চায়।
বলি, ‘ফিরিনি মা। ফুলকপি নামানো দেখছি। শহরে সবুজ নেই। সব সবুজ বাজারে। শহরে ট্রাক ভরে শীত এসেছে।’
মা বলেন, ‘রাত হইসে, বাসায় যা। ঠান্ডা লাগবে।’
আমি প্রচণ্ড মাথাব্যাথা নিয়ে একটা রিকশায় চাপি। বয়স্ক রিকশাচালক কচ্ছপের গতিতে রিকশা টেনে এগোতে থাকে। তাঁকে বলা হয় না, দ্রুত টানেন, বাসার গেট বন্ধ হয়ে যাবে। বাসার দারোয়ানও বয়স্ক। এতক্ষণে সেও ঘুমিয়ে পড়েছে। তাঁকে ঘুম থেকে জাগাতে হবে, এ এক বিরাট অমানবিকতা। চারপাশের সমস্ত মানুষকে বিড়ম্বনায় ফেলে, ঘুম ভাঙিয়ে আমি জেগে থাকবো? আমি তো দেবদূত নই যে, রাত জেগে জেগে ফুল নিয়ে খেলবো?
* (লেখাটি গত রাতে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। প্রিয় ব্লগে অনেক দিন লেখা হয় না বলে সেটাই এখানে রিপোস্ট দিলাম।)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৯