প্রতিবুদ্ধিজীবি আসিফ মহিউদ্দিন বাংলাদেশ সময় সকাল ৮:৫০ মিনিটে (জর্মান সময় বলিতে পারিতেসি না) একটি স্ট্যাটাশ [ http://goo.gl/UyuInq ] রচনা করিয়াছেন। রচনার শুরুতেই তিনি ইঙ্গিতে নিজের দিকে আঙ্গুল তুলিয়া বোঝাইতে চাহিয়াছেন, তিনি দিফ্রেন্ত; এই অর্থে যে, বাজেটে সামরিক খাতে অত্যাধিক বরাদ্দের বিপক্ষে তিনি সোচ্চার হইয়াছেন। অথচ এই সরকারের আগের মেয়াদে ও প্রায় সকল সরকারের আমলে দেখা গেছে ওই খাতের বরাদ্দটা একটু বেশিই হইয়া থাকে।
যুদ্ধ ব্যবয়ায়ীরা তাহাদের মাল প্রোমোত করিতে দূর্বল রাষ্ট্রকে রীতিমতো ধমকাইয়া মেশিন ও বিচি কিনিতে বাধ্য করিবে, ইহাই স্বাভাবিক। আর বড় ধরণের কেনা-বেচায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যস্থতাকারীর জন্য নির্ধারিত কর্পোরেট কমিশনটি লেনদেনের মূল্যের সমান লোভনীয়।
এসবে আমার আগ্রহ নাই। আমি রচনা লইয়া কিছুই বলিবো না। আসিফের রচনায় আমার বিরক্তি সেই ২০০৭-০৮-এর ব্লগজীবন হইতে। তাহার রচনা পাঠের বিরক্তি সাদরে লইয়া আসিতেসি— কারণ ভবিষ্যতে একজন ব্লগারের ‘হয়ে ওঠা’ ও ‘পরিণতি’ জানার আগ্রহ রহিয়াছে আমার। এরই মধ্যে তাহার রচনার কিছু গুণগত পরিবর্তন আসিয়াছে। এজন্য অভিনন্দন তোকে। কিন্তু যুক্তি উপস্থাপন করিয়ে গিয়া তিনি পান্তাভাতে ঘি ঢালিয়াছেন।
তিনি লিখিয়াছেন—
-------------------------------------------------------------------------
বাজেটের ঠিক আগে আগে মিয়ানমারের সাথে পাল্টাপাল্টির মোজেজা সহজেই অনুমেয়। এই বাজেটে শিক্ষা খাতে, চিকিৎসা খাতে, অন্যান্য সেবামূলক খাতে ভর্তুকি কমিয়ে বিদেশ থেকে দামী দামী অস্ত্র বিমান যুদ্ধজাহাজ ক্ষেপণাস্ত্র কিনে সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোটা তো গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। সবাইকে এ প্লাস ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষা খাতে ভর্তুকি একেবারেই বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। একটা দোকান থাকবে, সেখানে বিনামূল্যে এ প্লাস সার্টিফিকেট কিনতে পারা যাবে। ....... সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে অস্ত্রব্যবসায়ীদের টাকা কামাবার বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। যুদ্ধ লাগলে ঔষধ ব্যবসায়ীদেরও হবে পোয়া বারো। দুই পক্ষেই ঔষধ বিক্রি করা যাবে। যত যুদ্ধ তত অসুস্থ মানুষ, যত রক্তক্ষয় তত পঙ্গু মানুষ, হাসপাতাল ততবেশি পরিপূর্ণ। এদিকে বিলেত ফেরত নয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদের অংরেজি প্রবক্তা এখন জনগণকে কৌশলে এ্যাসল্ট রাইফেল, পিস্তল, গ্রেনেড, রকেট লঞ্চার ও ট্যাঙ্ক চালাবার প্রশিক্ষণ নিতেও পরামর্শ দিচ্ছেন।
-------------------------------------------------------------------------------
সীমান্তে হত্যাকান্ড সারা বছরের ব্যাপার। বাজেটের আগে, সীমান্ত হত্যাকান্ড, উত্তেজনার অযুহাতে সরকার বাহাদূর সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছেন এ যুক্তি হাস্যরস যোগায়।
আমার কথা হইতেসে—
স্বসস্ত্র বিপ্লব যেখানে অসম্ভব সেখানে জ্ঞানবিপ্লবের একটি সম্ভাবনা থেকেই যায়। এদেশে শিক্ষা ও গবেষণার পেছনে বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ নাই। শিক্ষা যে অর্জন করার সে ল্যাম্পপোস্টের নিচে পড়ালেখা করে বিদ্বান হতে পারে। আর রবীন্দ্রনাথরা ইসকুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বিদ্বান হতে পারেন।
শিক্ষা খাতে যতই বরাদ্দ দেয়া হোক, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন না করলে ওই বরাদ্দ জলে যাবে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্জন পদ্ধতি, সিলেবাস ও ঠিক কওমি মাদ্রাসার মতোই। মাদ্রাসার সিলেবাস যেমন তৈরি করে দেয়া হতো পাকিস্তান থেকে। তেমনি আমাদের সিলেবাস তৈরি করেন তারা, আমরা যাদের কামলা হতে পারবো।
অন্যদিকে বাম নেতা, মুক্তিযোদ্ধা যখন বিদ্যালয়ে ভর্তিবাণিজ্য ফাঁদিয়া লাখ টাকা মুনাফা লোটেন, তখন মনে হয় স্থিতাবস্থার পুঁজারি হয়ে আমরা কেউ পিয়াল, কেউ ফারাবি আবার কেউ আসিফ হই। কই না আসেন বাল, স্থিতাবস্থারে ভাগাড়ে পাঠাই। শিক্ষা ব্যবস্থাটা বদলাই। জীবন ব্যবস্থার ফাঁকটা ফাঁস করে দেই।
আসিফের ইচ্ছে পূরণ হোক। তিনি / তারা প্রতিবুদ্ধিজীবি হিসেবে খ্যাত হোন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২৯