ব্লগে আমার ভীষণ প্রিয় অনেকগুলো আর কাছের কয়েকজন মানুষ আছেন। সারা বছর তাঁরা কে কোথায় কি অবস্থায় ছিলেন, জানি না। কারণ আমি খানিকটা স্বার্থপরের মতো, কিছুটা পশুর মতো জীবন যাপন করি। চারিত্রিক বৈশিষ্টের কারণে, পরিস্থিতির চোখ রাঙানি কিংবা উপায় না থাকায়ও করে থাকতে পারি এমনটা। আশপাশের অনেক কিছু মেনে নিতে না পারাও হয়ত আরেকটি কারণ। তবু আশা করি সবার খুব ভালো আর সফলভাবে শেষ হলো ইংরেজি বছরটা।
আমার আনলাকি থারটিন ‘২০১৩’ শুরু হয়েছিল একটা ‘মন খারাপ’ দিয়ে। কুয়াশাঢাকা ভোরে পুরনো ঢাকার রূপালী ব্যাংকের একটা শাখার ভল্ট গুনতে গিয়েছিলাম। অডিটের একটা অংশ। কয়টা পাঁচশো, একশো টাকার নোট, কত কোটি টাকা জমা। জাহাজের হুইলের মতো ভল্টের চাকা ঘুরিয়ে ওটা খুলে দেয়ার আগেই ব্যাংকের ম্যানেজার আমার মন খারাপ করিয়ে দিলেন। জানালেন, তার একমাত্র ছেলেটি লিউকেমিয়া আক্রান্ত। রক্ত বদলে বদলে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। পিতা হিসেবে তার মানসিক অবস্থার কথা তিনি একেবারে অচেনা আমার সঙ্গে শেয়ার করলেন। তিনি জানলেন না যে কতটা সংবেদনশীল মানুষ আমি। মন খারাপ দিয়ে শুরু বছরটা গেল মন খারাপেই।
অনেকগুলো ভুল, অনেকগুলো ব্যর্থতা আর অনেককিছু হারিয়েও একটা বৃহৎ প্রাপ্তিযোগ হয়েছে। আমি প্রমাণ পেয়েছি একজন একক মানুষ কতটা শক্তি ধারণ করে। কবিতা আর স্ট্যাটাস লিখে লিখে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করে আমি অনুধাবন করেছি, পরমানু বোমায় যে শক্তি থাকে-- একজন মানুষের একাকিত্বতার শক্তি তার থেকে কম নয়। হয়তো এ বোধ আমাকে নতুন কিছু করবার সাহস, শক্তি আর প্রেরণা যোগাবে।
আমার সঙ্গে কতগুলো ‘অতিরিক্ত ভালোমানুষের’ পরিচয় ও দেখা সাক্ষাত হয় নিয়মিত। তারা আমার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনে থেকে আমি তাদের জন্য প্রার্থনা করি, তারা যেন ভালো থাকে। আর যে মানুষগুলোকে আমি ভালোবাসি, দূরে থাকলেও তাদের জন্য শুভ কামনা করি।
নতুন এ বছরে তারা যেন তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও আরাধ্য অন্তত তিনটি অর্জনের দেখা পায়। তারা সুখি হোক, সফল হোক, সুস্থ থাকুক, দীর্ঘায়ু হোক, শান্তি পাক।
বিনয়াবনত
রাসেল মাহমুদ