আমরা এজেন্সী কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে খামারে সময় কাটাতে থাকি। এরই মধ্যে সন্ধ্যা নামে। পাহাড়ের কোল ঘেষে আরব রাজ্যের রক্তিম সূর্য ধীরে ধীরে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাতের মক্কাও যেন পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে বিশ্রামের প্রস্তুতি নিতে থাকে। খামারের ছোট্ট মসজিদে আমরা মাগরিবের নামায আদায় করে কিছুটা টেনশনের সাথে অপেক্ষা করছি। নগরী থেকে বেশ দূরে কোলাহলমুক্ত পাহাড়ে ঘেরা কিছুটা অন্ধকারের একেবারেই আনকোরা জায়গাটিতে আমরা একপ্রকার আবদ্ধ এটা ভাবতে কিছুটা ভয়ও পাচ্ছিলাম। অন্ধকারের মাত্রা ক্রমেই ঘুটঘুটে পর্যায়ে যাচ্ছে বলে মনে হলো। আমাদের দেশে শিশুদের ঘুম পাড়ানোর সময় মায়েরা আবহমান কাল থেকে গল্প কথায় ভয় জাগানো যে অন্ধকারের পরিবেশ রচনা করেন- আমরা ঠিক সেই অন্ধকারের সান্নিধ্য পেতে যাচ্ছি তাতে আর কোন সন্দেহ রইল না। অরব্য রজনীর গল্পকথায় মরুদস্যুর কথা পড়েছি তাও মনে পড়তে লাগল। তবে এখানে এসে যা জানতে পারলাম তাহলো বাস্তবে আরব মুলূকে যত্র-তত্র চোর ডাকাতের কোন ভয়ের কারণ নেই এই যা সান্তনা!
এরই মধ্যে লক্ষ্য করলাম অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের আড়ালে একটি শেয়াল হুককা-হু বলে ডেকে উঠল। তার মানে ? হ্যাঁ- শেয়ালের ডাকই তো। আমার হাজী সঙ্গীরা কথা বলছিলেন, তাদেরবে থামিয়ে দিলাম। আবার শোনা গেল। সাথে সাথে তার চেয়ে আরেকটু দূরে আরো কয়েকটি শেয়ালের অভিন্ন ডাক শুনতে পেলাম। ছোটকাল থেকেই আবহমান বাংলায় শেয়ালের এ ডাক ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিতি গড়ে উঠেছে। তারা কেউ ডাকলে সাথে সাথে অদূরের অন্য শেয়ালও হাঁক ছাড়ে। এবং আশ্চর্য- আরব শেয়ালের মুখেও হুবহু বাংলা প্রান্তরের শেয়ালের অনুরূপ ডাকই শুনলাম। একের ডাক শুনে অন্যদের সমর্থনকারী বার্তা ঘোষণা তথা কণ্ঠ সাদার অনুশীলনের মধ্যেও কোন ভিন্নতা নেই।
ভৌগোলিক অবস্থানগত দূরত্ব ও ভিন্নতার কারণে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও চেহারায় কত ভিন্নতা ! অথচ আরব শেয়ালের মধ্যে এর কোন ভিন্নতাই ঠাহর করতে পারলাম না। মনে হলো বিশ্বব্যাপী তাদের ভাষা ও একের ডাকে সহসা সাড়া দিয়ে অন্যদের ঐক্যের অবকাঠামো সুরক্ষার ব্যাপারে তারা খুবই তৎপর। শেয়ালের মতো প্রাণী এত দূর রাজ্যের ব্যবধানে যদি অভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি লালন করতে পারে তবে আমরা পারি না কেন ? অথচ বিশ্বব্যাপী এই মানবজাতির এক থাকার দরকার ছিল বেশি!
-------
ঢাকা
২৯/১০/২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৬