ইতিহাস বহমান নদীর মত। তাকে তার মত চলতে দেওয়াই শ্রেয়। সে নদীতে কেউ পূর্ণার্থে
স্নান কিংবা সে পানি পান করবে না ,সেটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার । যে বই,ইতিহাস উগ্রবাদ,জঙ্গিবাদ কিংবা কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় না , সেগুলোর নিষিদ্ধ কিংবা অবরুদ্ধ করে রাখার পক্ষপাতি নয়। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি বাঙালির আগ্রহ বেশি। সরেজমিনে দেখলাম এসব নিষিদ্ধ বই,পত্রিকার খবর মুড়ি মুড়কির মত বিক্রি হচ্ছে। পাঠকরা গ্রোগ্রাসে পড়ছে এবং প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। স্বাধীনতা
সংগ্রামে শেখ মুজিবের অবদান অতুলীয়।মুদ্রার উল্টো পিঠে তার শাসন আমল নানান কর্মকান্ডে বির্তকীত। সে আলোচনা অনেকেই জানেন, আজকের এই লেখায় জানতে পারবেন,ধারণা করতে পারবেন কেমন ছিল তৎকালীন সার্বিক পরিস্থিতি। তবে শুধু ১৯৭২ সালের পরিস্থিতি দেখে মুজিবকে মূল্যায়ন করলে ভূল হবে । সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের এমন পরিস্থিতি অনেকে মেনে নিলেও , ব্যর্থতার খাতায়ও অনেকে রাখেন। ১৯৭২ সালে সবচেয়ে বড় ভুল এবং আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল রক্ষি বাহিনী গঠন। এছাড়া বাকি পরিস্থিতির জন্য তিনি হয়তো প্রজন্মের কাছে ছাড় পাবেন।বি.দ্র- বাকশাল গঠন করেন ১৯৭৪ সালে( মুজিব ও কাদেরিয়া বাহিনী মিলে) । সেনাবাহিনীকে পাশ কাটিয়ে ,রক্ষি বাহিনীকে অধিক গুরুত্বরোপ করেন মুজিব। শুরু সেনা অসন্তোষ এবং বিদ্রোহ,ফলাফল ১৫ আগস্ট।
বি.দ্র-লেখাটি চাইলেই আরও দীর্ঘ করা যেত,শুধু মাত্র ধারণা দেওয়ার জন্যই পোস্ট,যারা বই পড়েন না কিংবা দীর্ঘ লেখা পড়তে আলসেমি ।
দেখে নেওয়া যাক পত্র-পত্রিকার শিরোনামগুলো ।
জানুয়ারী-১৯৭২
বাগেরহাটে লুটতরাজ অগ্নিসংযোগ হত্যাকাণ্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাইয়া চলিতেছে-ইত্তেফাক জানুয়ারি
মানুষ ঘর-বাড়ী ছাড়িয়া মাঠে জঙ্গলে অথবা নদীবক্ষে নৌকায় রাত্রিযাপন করিতেছে, যশোরে বিস্তীর্ণ এলাকায় বিভীষিকা ও ত্রাসের রাজত্ব।
ইত্তেফাক জানুয়ারী ,১৮
একনজরে গত এক বছরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি:ব্যাংক ডাকাতি-৩১টি:গুপ্ত হত্যা-১৪৬৭টি,ডাকাতি-২০৩৯টি:ছিনতাই-১৭৩৪১টি।
গণকণ্ঠ জানুয়ারী, ২৯
মার্চ-১৯৭২
দুটি মৃত্যু কয়েকটি জিজ্ঞাসা
আবার দুইজন আদম সন্তানকে রাজধানীর রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর মূহুর্তে
থেকে এ ধরনের ঘটনা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলের প্রতিটি জনপদে সংঘটিত হয়ে আসছে।
-সোনার বাংলা মার্চ--৪১৯৭২
এপ্রিল-১৯৭২
বানরিপাড়ায় এক রাতে সাত বাড়িতে ডাকাতি। - ইত্তেফাক এপ্রিল,১
জয়দেবপুরে ব্যাংক ডাকাতি,সাড়ে আটাত্তর হাজার টাকা ছিনতাই।ইত্তেফাক এপ্রিল,৪
সাধারণ মানুষ নিজ হাতে আইন তুলিয়া লইছেন। ইত্তেফাক-এপ্রিল , ৭
রক্ষিবাহীনি নিষ্ক্রিয় কেন? গ্রাম বাংলায় পুনরায় গুপ্তহত্যা , ডাকাতি ও সমাজবিরুধী তৎপরতা। ইত্তেফাক-এপ্রিল-২৯
মে-১৯৭২
ডাকাতি: খুন: রাহাজানি
দেশ স্বাধীন হবার পর সকলেই আশা করেছিল এবার বুঝি নিরুদ্বেগ এক শান্তিময় পরিবেশে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলা যাবে। কিন্তু তা আর হলো না । প্রতিদিন আমাদের কাছে এমন অসংখ্য খবর আসে,যার বিষয়বস্তু হচ্ছে বোমা বিষ্পোরণ,গুলি করে হত্যা বা ডাকাতে পুলিশে গুলি বিনিময়,সশস্ত্র ডাকাতি ইত্যাদি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এসব হত্যা-রাহাজানির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের খবর আসে না । -সোনার বাংলা মে ,২৮
দিনাজপুর,যশোর,মানিকগঞ্জে জীবনের নিরাপত্তা নেই । ইত্তেফাক, মে ৭-১৪ মে
তিনজনকে এক সারিতে বাঁধিয়া গুলি করিয়াছে।-ইত্তেফাক , মে,১৮
জামালপুরে আড়াই মাসে ৪৮টি হত্যাকাণ্ড: ২৭৩টি ডাকাতি:বে-আইনী অস্ত্রসহ রক্ষিবাহিনী যাহাদের গ্রেফতার করে তাহারা কিভাবে ছাড়া পায়?- ইত্তেফাক মে,২৭
জুন-১৯৭২
আইনশৃঙ্খলা আদৌ আছে কি ? ইত্তেফাক , জুন-৭
এবার কারফিউ দিয়ে লুট(কুমিল্লা-চৌদ্দগ্রাম)- সোনার বাংলা জুন ,২৫
এ পর্যন্ত ২০টি ব্যাংক ডাকাতি,১৬ লক্ষাধিক টাকা লুট। ইত্তেফাক ২০ জুন
জুলাই-১৯৭২
দেড় বছরে ২০৩৫ টি গুপ্ত হত্যা। ইত্তেফাক -জুলাই-৭
আগষ্ট-১৯৭২
পুলিশ ফাঁড়ি ও বাজার লুট , লঞ্চ ও ট্রেনে ডাকাতি আগস্ট , ৩
আজকের গ্রাম বাংলা : খুন,ডাকাতি ,যখম ছিনতাই।গণকণ্ঠ, আগস্ট,৩০
সেপ্টাম্বর-১৯৭২
শহরে আরেকটি ব্যাংক ডাকাতি । ইত্তেফাক,সেপ্টাম্বর,১৭
অক্টোবর-১৯৭২
সমগ্র দেশের হিসাব লইয়া দেখা গিয়াছে,চলতি মাসে গড়ে প্রতি ৮ ঘণ্টায় অন্তর অন্তর তিনটি করিয়া ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়াছে।ইত্তেফাক
দেশে অপরাধ প্রবণতাবৃদ্ধি: সেই সঙ্গে সুপারিশও : পুলিশ নিরুপায়। ইত্তেফাক , অক্টোবর-১৭
৯ মাসে রংপুরে ৩০২টি খুন:২২৬টি ডাকাতি-ইত্তেফাক অক্টোবর,১৬
অক্টোবর,২৯
রক্ষিবাহিনীর সহিত গুলি বিনিময় , ৮ জন নিহত। ইত্তেফাক অক্টোবর, ৫
সমাজবিরোধী তৎপরতা বৃদ্ধিতে ভাসানীর উদ্বেগ,আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি দেশের সর্বনাশ ডাকিয়া আনিবে-। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী- ইত্তেফাক অক্টোবর , ৬
মহিলাদের পরনের কাপড়ও ছিনতাই -ইত্তেফাক , ৮
নভেম্বর-১৯৭২
২০ মাসে জামালপুরে ১৬১৮ ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ড-ইত্তেফাক ,নভেম্বর , ১৭
১৫ সহস্রাধিক মামলার মধ্যে ২৬৮টি নিষ্পতি
ডিসেম্বর-১৯৭২
দশ মাসে চার সহস্রাধিক ডাকাতি।
পুলিশসূত্রে জানা গিয়াছে যে , এই সময়ের মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ৬৮৬টি এবং নোয়াখালী জেলায় সর্বনিম্ন ৩৬টি ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে।-ইত্তেফাক ডিসেম্বর - ৩
১০ মাসে ১৪ হাজার চুরি-ইত্তেফাক ডিসেম্বর-৪
গুলি বর্ষণ: পোলিং অফিসার অপহরণ : সন্ত্রাস : পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পণ্ড : অগ্নি: সংযোগ ,জালভোট ,অস্ত্রের মুখে ২০টি কেন্দ্রর নির্বাচন পণ্ড ।-গণকণ্ঠ,২১
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের হালচাল ,গুলিবর্ষণ,মারামারি,ছিনতাই ,বুলেটের অবাধ ব্যবহার: গণকণ্ঠ,২৫
জানুয়ারী-১৯৭৪
আততায়ীর গুলিতে ভোলার সংসদ সদস্য মোতাহার উদ্দীন আহমদ নিহত। ইত্তেফাক জানুয়ারী ,১১
সিলেটে ২টি থালায় ৩টি বাজার লুট।ইত্তেফাক জানুয়ারী ,২
ফ্রেব্রুয়ারি-১৯৭৪
বাংলা একাডেমি হতে ২২ হাজার টাকা ছিনতাই। ফ্রেব্রুয়ারি,২
সংসদে প্রশ্নোত্তর , ১০২৮০টি ডাকাতি হয়েছে,বাজার লুট হয়েছে ১৩টি,থানা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লুট,দুষ্কৃতিকারীর হামলায় ১৮০৯ জন নিহত।
গণকণ্ঠ, ফ্রেব্রুয়ারি,২
প্রকাশ্যে দিবালকে রিলিফের কাপড় লুটের রহস্য কোথায়
ইত্তেফাক,ফ্রেব্রুয়ারি,১৩
ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রত্যাহার দাবি’
মার্চ-১৯৭৪
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনের সম্মুখে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলিবর্ষণ । ৬ জন নিহত,১৮ জন গ্রেফতার। মার্চ,১৮
এপ্রিল-১৯৭৪
গ্রেনেড বিষ্পোরণ,ছাত্রী আহত,তিনজন গ্রেফতার। এপ্রিল,৯
গুলি চালনার দায়ে বিভোক্ষুদ্ধ জনতা দুই ছাত্রের চুক্ষু উৎপাঠিত। ইত্তেফাক এপ্রিল,২২
সরিষার ভূত তাড়াতে হবে সর্বার্গে-শেখ মুজিবের সেনাবাহিনীকে তলব। সোনার বাংলা ,এপ্রিল,২৮
মে-১৯৭৪
ঝিনাইদহে ১৬ মাসে ৫৬০ জনের আত্মহত্যা। ইত্তেফাক,২৭
জুন-১৯৭৪
যৌথ বাহিনীর কম্বিং অপারেশনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ
,জনমনে অশান্তি -গণকণ্ঠ ,৭
জুন-১৯৭৪
দীর্ঘ ৬৩ দিনের রাজনৈতিক তৎপরতায় , শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার বিরুদ্ধে জনতার বিক্ষোভ ফেটে পড়েছে,১৪৪ ধারা বঙ্গ,শহরে বহু খন্ড মিছিল ।গণকণ্ঠ.২৯
সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তথ্য, এ পর্যন্ত ৯৫৬০টি নরহত্যা,১২২৪ টি ডাকাতি,২৭১টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে
বি.দ্র : ২রা ডিসেম্বর,২০২৪ আজ পর্যন্ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি একাত্তরের পরে কখনও এমন হয়নি। সবাইকে শান্ত ও ঐক্যবন্ধ থাকা জুরুরি ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৩৭