গত রাতে গ্রামে বেড়ানো শেষ করে শহরের অনিমিখে রওনা দিই। সৌদিয়া এক্সপ্রেসে কাজিনরা সবাই ফিরে আসি আমাদের পরবাসী শিবিরে। গাড়ীতেও দারুন কেটেছে আমাদের। মাঝপথে যানবাহনের ফোয়েল ফুরিয়ে গেলে নেমে পড়ি সুনসান নিরব রাস্তায়। অন্ধকারের সাথে উলঙ্গ আলিঙ্গনের নেশায়। যাক মূল কথায় আসা হোক। ঈদের তৃতীয় দিনটা শহরে অবস্থানরত আত্মীয়াদের দেখতে যাবার পালা। এখানে কেমন জানি একটা অদ্ভুদ ইমোশন অনুপ্রবেশ করেছে। আমার কাছে নয়ন জুড়ে জল আসাটায় ইমোশনের প্রতীক।
ভাগনে আমার দুষ্টৃ হয়েছে খুব।
সাহাল সাবিল সিফওয়াত। আমার ছোট্ট এবং একমাত্র ভাগনে। সবাই বলছে নাকি ও দেখতে শুনতে আমারি মতন হবে। তায় বোঝি ওকে আমি একটু বেশীই আদর করি। ৪০ দিন পার হয়েছে সাহাল আমার আপুর কোল আলোকিত করে ধরায় এসেছে। শুরুতে আমরা হাজরো চেষ্টা করেও ওর দৃষ্টি ফেরাতে পারতামনা। এখন দেখি কেউ ওর পাশে বসে কথা বল্লে ও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আর মাঝে মাঝে রহস্যভরা হাসি দেয়। হাত পা নেড়ে আমাদের নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। যেই ওর পাশ থেকে উঠে পড়ি অমনি কান্না জুড়ে দেয়। মধুর সে কান্না। খুব ভাল লাগে শুনতে। ওর বোন ইবরাতো চিমটি চিমটি কেটে কেটে ওর কান্না শুনে। আর ছোট বোন ইফতু! ওর মতো আঙুল চুষা শেখায়। যাক খুব ভালো লাগলো বড় আপু হ্যাপির বাসায়।
খালমনিদের বাসায় : ( সেঝ আর গুন্নিখালামনির )
আপুুর বাসা থেকে সেঝ খালামনির বাসায়। খালামনি আর তার শাশুড়ি বাদে কেউ নেয়? সবাই বেড়াতে বেরিয়েছে। খালামনি বাহারি রকমের নাস্তা দিলো। কিছু খেলাম আর কিছু খাওয়া হলোনা। পেটেরও একটা সহ্যসীমা আছে তো! খালামনির সাথে গল্প করতে করতে একপর্যায়ে খালামনি বললো, পৃথিবীতে যদি শেরা মা এর তালিকা করা হয় তাহলে তোর মা টপ ৫ এ থাকবে। তোর বাবার পরিবারে যখন দুরাবস্থা তখন তোর মার ওখানে শাদি হয়। তোরা খুব গরীব ছিলিস তা নয়। কি একটা মামলায় তোর দাদু ১ধুন সম্পত্তি হারিয়ে বসে আদালতের ঘুষ চাপতে চাপাতে। তোর মা সবসময় তোর নানুর কাছে এসে কাঁদতো দুঃখ-দুর্দশার জন্যে নয়, তোদের জন্য। তোর মা কেঁদে কেঁদে মা বলতো, মা, আমার ছেলেগুলোকে কি মানুষ করতে পারবোনা? তোর মাকে কখনো কষ্ট দিবিনা। বোঝেছিস? আমার চোখের কোণ ঘেসে নেমে আসা অবাধ্য নীর মুছতে মুছতে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
ভালবাসি মা তোমাকে খুব। তোমার অশ্রু মুছে হাসির রেখা আঁকতে জান বাজিতে দিবো মা। বিশ্বাস করো খুব শ্রদ্ধা করি তোমায়।মাঝে মাঝে অবুঝ মনে কিছু কিছু ভুল করে ফেলি। ওসব গোস্তাকি মার্জনা করো মা।
ওখান থেকে গুন্নি খালার বাসায়। ওখানেও একই অবস্থা। খালা বাদে আর কেউ নেই। সবাই বেড়াতে গেছে। খালা আমাকে বসিয়ে বল্লো একটু রেস্ট নে। লান্চ করে যাবি। আমিও অগত্যা বসে আছি। বুক সেল্ফে একটা বই নজরে আসে। নাম হলো- সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি। রিফাত হাসানের লেখা। এক নাগাড়ে পড়ে ফেলি একশর মতো্ পৃষ্টা। খুব ভালো লিখেছেন। বাংলাদেশের বিগত পাঁচ বছরের রাজনীতি আর অরাজনৈতিক ঘটনাপুঞ্জের আয়না বলা যায় এটাকে। সাবলীল ভাষা আর উপমার কথাতে বাহবা বলতেই হয়। যারা পারবেন পড়ে নিবেন। দুয়েন্দা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত।