somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের গল্পগুলো

২৭ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
আজ শুক্রবার।সরকারি  ছুটির দিন। আর তাই  আমার বাইরে  বের হওয়ার সবরকম  সুযোগ সুবিধা  বন্ধ ।
সমস্যা সেখানে না সমস্যা হলো আমরা তিনটে প্রাণি  আজ সারাদিন কি খাবো সেজন্য চিন্তিত ছিলাম।গতকাল একটা বিশেষ কাজে আটকে পড়ায় আমাদের দৈনন্দিন খাবার সংগ্রহ করতে দেরি হয়ে যায় ।
আসলে গত তিন চার মাস ধরে আমরা এক অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছি।
ঘটনার শুরু বছরখানেক আগে।কোন এক বিশেষ কারণে  আমাদের বাড়িতে অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত  কারো প্রবেশ সীমিত হয়ে আসে।
মূল ফটকের কলাপসিবল গেটে সবসময় তালা দিয়ে  রাখা হতে লাগলো। আব্বা অফিসে গেলে কলাপসিবল গেটের চাবি তার কাছেই থাকে ।এককথায় আমরা বন্দী।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা  আব্বার সন্দেহ বাতিক মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
এদিকে গত সপ্তাহে  আব্বা আমাদের তিনজনকে এক বস্ত্রে  বাসা থেকে  চলে যাবার নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন।
তিনি আর আমাদের মুখ দেখতে চান না।
এ নিয়ে প্রতিদিন নানা অশান্তি হচ্ছে তবু আমরা বাড়ি ছেড়ে যাবার সাহস পাচ্ছি না ।
আমরা জানি আব্বা যা বলেন তাই করেন। এ বাড়ি থেকে একবার বের হলে সেটাই আমাদের জন্য শেষ যাত্রা।
এদিকে বলা নেই কওয়া নেই   আমরা তিন তিনটে প্রাণি হুট করে কোথায় ই বা যাবো?কে আশ্রয় দেবে আমাদের ? সত্যি বলতে কি আমাদের যাবার তেমন কোন  জায়গাও ছিল না ।
যেহেতু  আজ  আব্বার অফিস ছুটি  তাই লুকিয়ে চুরিয়ে অল্প সল্প হলেও রান্নার আয়োজনও বন্ধ তাছাড়া প্রয়োজনী রসদও ফুরি এসেছে ।  আমরা ভালো করে  জানি  আজ আমাদের তিনজনের জন্য  একটা বাজে অভিজ্ঞতার  দিন অপেক্ষা করছে।
দিন দিন  আব্বার সমস্যাগুলো আরও বাড়ছে।  তিনি আজকাল   হাতে গোনা সামান্য  কয়েকজন মানুষের  সাথে মেলা মেশা করেন।সারাদিন চড়া মেজাজে থাকেন।বাড়িতে থাকলে দিনের বেলায়ও মদ নিয়ে বসেন।
গত ক' মাসে বাড়িতে  আব্বার আস্থাভাজনরাই শুধু  আসা যাওয়ার সুযোগ পান বাকিদের বাসায় প্রবেশ নিষেধ।

এদিকে দিনের পর দিন চলতে থাকা অত্যাচার আমরা আর নিতে পারছিলাম না।সেই সঙ্গে খাবারের অপ্রতুলতায়ও  আমরা ভীষণ চিন্তিত আর উৎকন্ঠিত করছিল।বিশেষ করে আমার বোন ছোট ফারহানা তখন নিতান্ত শিশু।ও আবার খিদে একদমই সহ্য করতে পারে না।
সেই সময়ের পরিস্থিতিতে আমাদের তিনজনের জন্য  বাড়ি থেকে বেরোনো বা কারো সাথে যোগাযোগ করা বেশ কঠিন ছিল এছাড়া  মোহাম্মদপুর এলাকায়  কাছাকাছি আম্মার তেমন কোন আত্নীয় স্বজনও নেই ।
আব্বা অফিসে গেলে বহু কসরত করে কলাপসিবল গেট টপকে  বাইরে থেকে  লুকিয়ে খাবার জোগাড়ের একমাত্র উপায় হিসাবে আমিই ভরসা। এদিকে আম্মার হাতও প্রায় শূন্য হয়ে এসেছে । টাকার জন্য  হয়তো গহনা বেচতে হতে পারে কিন্তু আমি গহনা  কি করে বেঁচতে হয় জানি না।
  গতকাল নানাজানের সাথে যোগাযোগের কাজে ব্যস্ততা ছিল বলে প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করতে দেরি হয়ে যায় ।
আমরা সর্বান্তকরণে  চাচ্ছিলাম নানাজান একটিবার শুধু  আমাদের এখানে আসুক তারপর তিনি যা সিদ্ধান্ত নেন সেটাই হবে আমাদের ভবিতব্য ।
সত্যি বলতে কি  আমরা অলিখিত এক  জেল জীবন কাটাচ্ছিলাম।সম্ভবত আমাদের না খাইয়ে তিলে তিলে মারবার পরিকল্পনা ছিল অথবা অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে আমরা সেচ্ছায় বাসা ছাড়বো এমন কিছু একটা  বিশ্বাস করতেন আমার আব্বা।ঘটনা অবিশ্বাশ্য শোনালেও এটাই বাস্তবতা।
ইদানিং আমরা গভীরভাবে  লক্ষ করছিলাম।আব্বার  মধ্যে দিন দিন  সাইকো মানসিকতা প্রবল হচ্ছিল ( দুঃখিত এই কথাটা লেখার জন্য) 
আমার সাথে সাথে ছোট বোন ফারহানারও স্কুল যাওয়ার   সুযোগও বন্ধ  ছিল ।ফারহানা সবে ইকবাল রোডের মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুলে নার্সারিতে পড়ছিল।
এত সব সমস্যা চলছিল কিন্তু  আমার বাইরের কাউকে তেমনভাবে  জানাতে পারছিলাম না।আম্মা বাসায় বেড়াতে আসা আব্বার আস্থাভাজন  আত্নীয় স্বজন বা বন্ধ বান্ধবকে এসব বিষয়ে জানালে তাদের মুখে একই কথা
- দুলাল ভাই তো এমন ছিলেন না।হঠাৎ এমন করছে কেন?দেখো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।যাহোক  নিজেদের মধ্যে সমস্যা নিজেরাই মেটাতে হয়।তুমি ভাইয়ার সাথে মানিয়ে চলো দেখবে আর খারাপ লাগবে না।বাচ্চাদের কথা ভেবে একটু মানিয়ে চলো আর শোন মেয়েদের বেশি স্বাধীনচেতা হতে নেই। তোমার অত শিল্প সাহিত্য নিয়ে পড়ে থাকার দরকার কি?ভাইয়া  যা বলে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে।ব্যাস, দেখবে সংসারে সুখ ফিরে এসেছে ।পুরুষ মানুষ যা করছে তোমাদের জন্যই তো করছে।
সবাই কি একরকম হয়।ও যে সব মানুষের সাথে ওঠাবসা করতে বলে। যাদের সাথে মিশতে মানা করে। সেসব মেনে চলো।যাদের সাথে মিশতে বলে তাদেরএকটু ম্যানেজ করে চললে বরং  তোমারই ভালো।চারদিকে দেখছো না কতজনে কত কিছু করছে।একটু মানিয়ে নাও দেখবে সব অশান্তি সব ঝামেলা নিমেষেই ভ্যানিশ।
এ সময় আমি আম্মাকে লজ্জায় ঘৃণায় কুকড়ে যেতে দেখে মনে মনে  ক্ষোভে ফুঁসে উঠি কিন্তু আম্মার চোখের  ইশারায় নিজেকে আবার  কোন রকমে সামলাই।
এদিকে আব্বা তার মতে বিরুদ্ধে চলে এমন আত্নীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবার সাথে দূরত্ব বজায় রাখছিল। আসলে আব্বা খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছিল।টাকার নেশা। রাগ আর অত্যাচার করার মানসিকতা বরাবর তার স্বভাবে ছিল কিন্তু  নৃশংস আচরণ এর আগে তার মধ্যে  কখনওই দেখা যায়নি।...
দিন গড়ালে সমস্যা মাত্রা ছাড়ালো।আব্বার  নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আম্মা নিজস্ব  কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।এর আগে আব্বার দূর্বহারের কারণে মামার বাড়ির  কেউ আর  আমাদের এদিকে ভীড়তে চায় না।
অন্য দিকে আমাদের বাসার টেলিফোনটাও কোন কারণে কাজ করছিল না কিম্বা আব্বার কোন কারসাজিতে সেটা ডেড হয়ে ছিল।
গতকাল আব্বা অফিসে বেরিয়ে যাবার পর  আমি আম্মার পরামর্শে    সাহিদা আপাদের বাসার থেকে নানাজানকে যশোরে ফোন করি।নানাজান আড়াইটার সময় বাসায় আসেন সেজন্য আমার যোগাযোগ করে  ফিরে আসতে দেরি হয়ে যায় ।এজন্য আমাকে অবশ্য বেশ মূল্য দিতে হয়।নানা কৈফিয়ত শেষে   অনেকগুলো বেতের বাড়ি হজম করতে হয়। এদিকে এই কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলে খাবারও সংগ্রহ করতে পারিনি।মার খেয়ে আমি ভিতরে ভিতরে ফুঁসলেও আম্মা  নানা চিন্তায় অঝোরে  কাঁদছিলেন।
সবচেয়ে বড়  কারণ আজ কলাপসিবল গেটের ওপর দিকটা বন্ধ করার কাজ শুরু হবার কথা।এরপর আমরা এ বাড়িতে  টিকবো কি করে? এবার হয়তো আমাদের বাসা ছাড়তেই হবে।

চলবে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫০
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×