somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফেরে (২য় পর্ব)

২৬ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১ম পর্ব


(২)
দক্ষিণ মাঠে শেয়ালের পাল ডাকাডাকি করছে।ছোট শিকদার ঘুম ভেঙে ধড়ফড়িয়ে উঠল।
চারদিক শুনশান,তার মানে লোকজন যার যার বাড়ি চলে গেছে এখন একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা আর কি। সকাল হলেই সব ঝাঁক বেধে জুটে যাবে,ফ্রিতে মজা দেখার সুযোগ প্রতিদিন আসে না। রাতুল আর জব্বার অবশ্য যাবে না বলেছিল,ওরা কোথায় কে জানে? এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল ছোট শিকদার।কয়টা বাজে বোঝা যাচ্ছে না,আলো না জ্বালিয়ে অন্ধকারে ভেতর ঘড়ি দেখার চেষ্টা করলো সে।এতক্ষণ ছোট শিকদার জেগেই ছিল।টেনশন নিয়ে কি আর ঘুমানো যায়! শত্রুর বংশ আজ ধ্বংস করেই ছাড়বে,এমন মওকা সব সময় পাওয়া যায় না।পাখি নিজ থেকে ফাঁদে এসে ধরা দিয়েছে। নানা ভাবনা ভাবতে ভাবতে অভ্যাসের বশে খানিক তন্দ্রা মত এসে গিয়েছিল হঠাৎই। রাত জাগার অভ্যাস তার মোটেও নেই।
আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছাড়লো খুবই সন্তপর্ণে। রাকিব অঘোরে ঘুমোচ্ছে,সেদিকে একটু তাকালো। ঘুমাক।রাকিবের মা পাশ ফিরতেই সে ঝটপট গামছা দিয়ে মুখটা আড়াল করলো।মুখটা আড়াল করা জরুরি। এই বিষ ঝাড়টা বহুদিন জ্বালাচ্ছে। হেস্তনেস্ত একটা না করলেই নয়।
ঘর থেকে বেরিয়ে হাতের টর্চ আড়াল করে ধানের গোলা ছাড়িয়ে সে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলল বাড়ির পিছনে গোয়াল ঘরের দিকে। বুকের ভিতরটা মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে।তবে ভয়ে কি অন্য কারণে তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কাজটা হয়েছে কিনা কে জানে? না হলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।শিকার সুযোগমত যথাস্থানে রাখা হয়েছে।শিকারীও প্রস্তুত।মেজাজ মর্জি মত কাজ হলেই হলো। বুদ্ধিটা অবশ্য অনেক পুরানো আমলের। তার বাবা গণি শিকদার এভাবে অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন।
ছোট শিকদার গোয়ালের সামনে পৌঁছাতেই দেখতে পেল কুটু মিয়ার পাহারায় বেশ একটু দুরে দুজন দুদিকে আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে।তিনি একটু মুচকি হাসলেন।চরম বিশ্বস্ত লোক ওরা, ওদেরকে ভয় পাবার কিছু নেই। ওরা দুজন অবশ্য অঘোরে ঘুমাচ্ছে। তবু সাবধানের মার নেই। আস্তে আস্তে সে গোয়ালের পেছনে ভাঙা অংশ দিয়ে নিঃশব্দে গোয়াল ঘরের ভিতর ঢুকলো।তার আগে সে বিড়বিড় করে দোয়া দরুদ পড়ে নিলো খানিক। কাজটা যথেষ্ট ঝুকিপূর্ণ। সে ভালো করে জানে বিষধর সাপগুলো কোথায় রাখা হয়েছে তবে এখন ছাড়া আছে। সেজন্য যত ভয়।তার আব্বাদের আমলে এই সব কাজের জন্য আলাদা লোক ছিল। আজকাল দিনকাল খারাপ আইন আদালতও বেশ কড়া।আর তাই কারও উপর ভরসা করতে পারেনি ছোট শিকদার।
সাধারণত এই জায়গাটা খড়ি ঘর হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এখানে সাপেদের যত আড্ডা বলে কথিত আছে ! কায়দা মত পেলে এক কামড়ে যখন তখন ভবলীলা সাঙ্গ হবে নিমেষে ।গত বছরও একজনের মৃত্যু হয়েছে এখান থেকে! ঠিক তখনই একটা কালো সাদা ছোপ ছোপ তেল চকচকে গোখরা সাপ সড়সড় করে ছোট শিকদারের পায়ের কাছ দিয়ে চলে গেল।যদিও বিশেষ ব্যবস্থা করা আছে তবুও টর্চের মৃদু আলোয় এই দৃশ্য দেখে কাঁপুনি উঠলো শিকদারের।এরকম তেল চকচকে ভয়ংকর সাপ দেখলে চরম সাহসী মানুষের আত্নাও কেঁপে যাওয়ার কথা।কথা জড়িয়ে যাওয়ার কথা নিমেষে।
সাপটা সরে গেলে হঠাৎ তার সম্বিৎ ফিরলো তাই তো সব কাজ ঠিক ঠাক সমাধা হলো তো?
সে দৌড়ে এসে দ্রুত হাতে কুটু মিয়ার দড়ির বাঁধন খুলতে লাগলো। প্রায় অচেতন কুটু মিয়া মাথা তুলবার চেষ্টা করলো।মাথাটা এত ভারি কেন কে জানে ?পায়ে জ্বালা করছে।কিছু কামড়ালো নাকি?
সাপে কেটেছে সে হুস তার নেই ।বাঁধন খুলতে দেখে অবাক হয়ে সে জানতে চাইলো
- কেডা?
- মুখ বন্ধ রাখ।
- কেন মুখ বন্ধ রাখুম ক্যান আমি কি চোর?
-চুপ থাক,কথা কম ক।
- আমারে দয়া দেখাইতে আইছোস? বাইর হ অন তন।
- নিজের ক্ষতি না চাইলে আল্লাহর ওয়াস্তে মুখ বন্ধ রাখ।
বাঁধন খোলা হয়ে গেলে।হঠাৎ চোখে পড়লো ক্ষতস্থানটি। এতো নির্ঘাত সাপে কাটার দাগ।মনটা খুশিতে ভরে উঠলো কাজ প্রায় শেষ। শত্রু খতম।মনের খুশি ভাব গোপন করে ছোট শিকদার শুধালো।
- পায়ে কিসের দাগ? হায় আল্লাহ সাপে কাটছে তো? শিকদার কাছে পড়ে থাকা দড়ি দিয়ে পায়ে বাঁধন দেয়া দেখে কুটু মিয়া হিসহিসিয়ে হেসে উঠলো।
- নাটক করস? মুখ ঢাকছোস আমি মনে লয় তোরে চিনি নাই।
সিকদারও কম যায় না সে চাপা স্বরে বলল
- পিশাচ একটা! তারপর গলাটা আরেকটু খাদে নামিয়ে বলল
- আস্তে আস্তে ওড। বাইর হইয়া যা।তাড়াতাড়ি পালাইয়া যা এই হান তন। আযান পড়লে লোকজন জাইগা যাইবো।
- বহুত বুদ্ধি তোর।
- হের লাইগা তো সবকিছু আমার দখলে।
- খুব অহংকার না?
- দয়া কইরা আর কথা না বাড়াইয়া গঞ্জে চইলা যা।জীবনের মায়া নাই তর? জীবনডারে বাঁচা। গঞ্জের হাসপাতালে সাপে কাটা রুগি চিকিৎসা করে। পাঁচ ছয় মাইল পথ।তাড়াতাড়ি হাইট্যা যা।বাঁইচ্যা গেলেও যাইতে পারোস। সাবধান পায়ের বাঁধন যেন না খোলে। কি সাপ কইলে কইবি জাত গোখরা।
- তুই কি মানুষ!
- বাজে কথা কইয়া সময় নষ্ট না কইরা সোজা হাঁট ।ফালতু লোক একটা।সময় কিন্তু বেশি নাই। আর একখান কথা কান খাড়া কইরা হুইন্যা রাখ।খবরদার! আমি যেন তোরে এইহানে আর না দেহি। শেষ কথাটায় আনমনে মাথা নাড়লো কুটু মিয়া তারপর বেদনাভারাক্রান্ত মন নিয়ে টেনে টেনে পা ফেলে এগিয়ে গেল।
ততক্ষণে পাহারাদার ছোকরা দুজন মতি আর সুজন জেগে উঠেছে। ছোট শিকদার চাপা গলায় হিসহিসিয়ে বলল
- কিছু দেখছোস?
- না।
- কিছু শুনছোস?
- না।
ভালা। কাজ ঠিকঠাক হইলে পুরষ্কার আছে। বুঝছোস? চিন্তা করিস না কেউ কিছু কইলে আমি দেখুমনে।আমি কিন্তু মাইর ও দিতে পারি তোগো। চুপচাপ মাইর খাবি।আবার কই, পুরষ্কার আছে তোগো ল্যাইগ্যা।
- জ্বে
কুটু মিয়ার ততক্ষণে অনেকটা পথ হেঁটে গেছে তাকে পালাতে হবে।এখান থেকে না এই পৃথিবী থেকে সেটা সে বুঝতে পারছে না। তবে পালাতে হবে।কি একটা কাজ মনে হয় বাকি আছে।
পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছে শুধু পায়ে না সারা শরীরে যন্ত্রণা। ঘুম আসতেছে।এত মাইর কেউ কাউরে মারে? কিছুদুর হাঁটতেই হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল সে।
চলবে।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৫৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে আলু সংরক্ষণের উপায়

লিখেছেন অপলক , ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

উত্তরবঙ্গের চাষীরা, ভেঙ্গে পরবেন না। আপনারা আমাদের দেশের নিস্বার্থ নিবেদিত যোদ্ধা। আলু নিয়ে হতাশ হবেন না। জয়পুরাহাট ও ঠাঁকুরগায়ে সরকারীভাবে অল্প কিছু আলু রাখার ঘর তৈরী করে দিয়েছে। ৪ মাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতিতে মেহেদী আরজান ইভান......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭

স্মৃতিতে মেহেদী আরজান ইভান......

২০০৯ সালে ব্লগে 'কান্ডারী অথর্ব' নামে একজন কবির আবির্ভাব হয়। অসম্ভব সুন্দর কবিতা লিখেন। একজন সমাজ সেবক হিসাবেও পরিচিত। সমমনা ব্লগার বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারি- বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ষণের কারণ: ধর্ষিতা একজন নারী

লিখেছেন কৃষ্ণপক্ষের বোষ্টমী, ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

একটি অজ্ঞাত লাশ।
একটি নারীর মৃতদেহ।
দেহটি অর্ধনগ্ন।
দুই পা দুই হাত দুইদিক ছড়ানো।
পায়জামা হাঁটুর নিচে নামানো।
জামা মাঝ বরবার ছিঁড়ে ফেলেছে।
নগ্নতা ঢাকতেই উপরে কিছু কাপড় দিয়ে মৃতার ছবিটি তোলা হয়েছিল।
তার নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশীদের ইমিগ্রেশন প্রব্লেম

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৫৯

১. সেদিন শুনি এক বাংলাদেশী ছেলের সুডেন্ট ভিসা বাতিল হয়েছে কারন সে স্টুডেন্ট ভিসা পেয়েই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানতে চেয়েছিল আমেরিকায় গিয়ে ওকে যেহেতু রেস্টুরেন্টে বা গ্যাস স্টেশনে কাজ করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মূল্যবান উপহার, যা স্মৃতিতে অম্লান= (উপহার-০১)

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৫ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০০

০১।



উপরের ফলগুলো জামরুল

প্রিয় একজন ব্লগার মা. হাসান ভাইয়া। এক সময় ব্লগ জমজমাট ছিল । উনাদের মন্তব্য প্রতিমন্তব্যে ব্লগ উচ্ছল থাকতো সব সময়। সুন্দর সুন্দর ব্লগ পোস্ট। আড্ডা গল্পে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×