(১)
মার! মার!! মার হালারে!!! হালায় পাগল সাইজ্যা লুইচ্চামি করতে আইছে আমাগো গ্রামে, এত বড় সাহস! হালার পো হালা।
বসির আলী লাথি মারার জন্য ডান পা উঁচু করতেই অন্যপাশ থেকে দমাদম আরো কিছু কিল ঘুষি নেমে এলো কুটু মিয়ার ঘাড়, পিঠ বরাবর। এত রাতেও সারা উঠোন জুড়ে লোক গিজগিজ করছে।প্রথমে সবাই ভেবেছিল চোর তারপর বুঝলো নারীঘটিত ব্যাপার। খবর চাউর হতে দেরি হয় না। লোক জমা হতে শুরু করে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে।নানারকম টিকা টিপ্পনী চলছে সাথে চড় চাপড়। কেউ কেউ টর্চ জ্বেলে অপরাধীর মুখ দেখে চেনার চেষ্টা করছে ,কিন্তু চেনা কেউ বলে মনে হচ্ছে না তাদের কাছে। কোথা থেকে এলো এই অচেনা আগন্তক? রহিমুদ্দীন মেম্বার চোখ কুঁচকে ভুরু নাচিয়ে জানতে চাইলো,
-কি মিয়া বাড়ি কই?
কুটু মিয়া চোখ মেলে তাকাবার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই সে চোখ খুলে রাখতে পারছে না।মার খেয়ে তার অবস্থা কাহিল।রাজ্যের ক্লান্তি আর ঘুম নেমে আসছে তার দু‘চোখ জুড়ে। এতদিনের রাগ,ক্ষোভ দুঃখের জায়গায় প্রচন্ড অভিমান জমা হচ্ছে মনের গহীনে। ধারাবাহিক কিল ঘুষি লাথি তাকে স্পর্শ করছে বলে মনে হচ্ছে না।
উঠোনের মাঝখানে কুটুমিয়া সটান পড়ে আছে। তার সাজ পোশাক এমনিতেই আগের থেকে অবিন্যস্ত ছিল এখন মার খেয়ে তাকে আরও এলোমেলো দেখাচ্ছে। তার ঠোঁট কেটে গেছে মুখ দিয়ে রক্ত আর লালা ঝরছে। চুলগুলো পাটের ফেসোর মত ফুরফুর করে উড়ছে।
হাশেমআলী বলল,
ওরে আর মারিস না।মইরা গেলে তহন আবার আরেক সমস্যা। পুলিশে দে পুলিশে দে।
সোহেল অতি উৎসাহে বলল
-ওরে কি বাইন্ধ্যা রাখুম? যদি পালায়?
-রাখ বাইন্দা রাখ। পালাইয়া যাইবো হালার পো হালায়। চেয়ারম্যান কইছে বিচার বইবো কাল সকালে । এতো রাইতে কিছু করন যাইতো না।
-পানি! পানি খামু । একটু পানি দেন.. কুটু মিয়া বিড়বিড় করে ঠিক তখন আধ পাগলা নুরুজ্জামান কুটু মিয়ার মুখে প্রস্রাব করে দেয়। কুটু মিয়া বিরক্ত হয়ে কাতর স্বরে বলে
-মুখে মুইত্যা দিলেন জনাব? আমি কইলাম মিয়া বংশের পোলা। সম্মিলিত হাসির রোল উঠলো।কুটু মিয় থু থু করে থুতু ফেলতে লাগলো্।লাইটের পর লাইট পড়ে কুটু মিয়ার মুখে । দবির আলীর কাছে কুটু মিয়ার কন্ঠটা চেনা মনে হয় কিন্তু কিছুতেই সে মনে করতে পারে না এটা কার কন্ঠ।
চলবে
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক