মিস জেবা যেমন দেখতে সুন্দরী তেমন তার অমায়িক ব্যবহার ।স্কুলের প্রতিটি বাচ্চার অতি প্রিয় জেবা ম্যাম ।জেবা ম্যাম কখনো কোন ছাত্র বা ছাত্রীকে বকা দেন না, মারেন না ।ক্লাসে একটা লাঠি পর্যন্ত আনেন না ।পড়া না বুঝলে দশ বার হলেও তিনি তাদের বুঝিয়ে দেন এমন শিক্ষক পাওয়া এখন সত্যি দুষ্কর ।কিন্তু কেউ যদি ফাকি দেয় তখন কিন্তু তিনি ভীষণ রেগে যান ।সবাই সেটা ভালো করেই জানে আর জানে বলেই সবাই তার কথা মতোই চলে ।ছাত্রদের মধ্যে সবার ই একটা প্রচেষ্টা থাকে জেবা ম্যামের দৃষ্টি আকর্ষণ করার । জেবা ম্যামের জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ হলো তার সাজপোষাক ও ফ্যাশন।তিনি স্কুলে সাধারণত সুতি শাড়ি পরে আসেন।নানা রঙবেরঙের শাড়ি । আর কমবেশী সবাই খেয়াল করে দেখেছে যে এক শাড়ি তিনি দ্বিতীয় বার পরেন না এবং যা ই পরেন না কেন তাকে অপরুপ লাগে । এত শাড়ি তিনি কোথায় পান সে এক রহস্য ।
মিস জেবার সাথে আদনানের ক্লাস করিডোরে দেখা হয়ে গেল ।আজ তিনি টকটকে লাল আর সবুজ মিশানো সুন্দর একটা শাড়ী পড়েছেন।খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে।
-কি আদনান কি খবর ?
-স্লামালেকুম [আস সালামু আলাই কুম]ম্যাম ।
- ওয়া আলায় কুমুস সালাম ।
-পড়াশোনা কেমন চলছে ?
- ভালো।
-ছোট বোনটার খবর কি ?
-স্কুলে গেছে ম্যাম।
-ভালো ।মনে রাখবে জীবনের যে কোন পরিস্থিতিতে পড়া লেখাটা ধরে রাখবে।ওকে।
-জ্বী ম্যাম।
-সকালে কিছু খাওয়া হয়েছে ।
-হু ।
-আবার মিথ্যা , মিথ্যা বলতে নিষেধ করেছি না । করেছি ?
আদনান মাথা নাড়ালো ।
-টিফিনে আমার সাথে দেখা করো ।
-আচ্ছা
-আচ্ছা বললেই হবে না ,দেখা করবে । আমি কাউকে মার দেয়ার পক্ষপাতি নই কিন্তু তুমি টিফিনে দেখা না করলে পিটাবো । বুঝছো ।
যাও ক্লাসে বসো । আমি আসছি ।
সপ্তম শ্রেণির এই ক্লাসে মোট বিয়াল্লিশ জন ছাত্র । আদনানের রোল বারো। প্রথম ক্লাস ইংরেজী । রোল কল শেষে মিস জেবা আজকে wh question বোঝাচ্ছেন । খুব খটমটে একটা ব্যাপার । কিন্তু কি সুন্দর যে তার বোঝাবার ভঙ্গি, মুগ্ধতা এসে যায় । আদনান পাস্ট টেনসের ডিড এর পর প্রেজেন্ট ফর্ম বসছে কেন সেটা ধরতে পারছে না ।প্রশ্ন করতে যাবে এমন সময় বেশ একটু শোরগোল উঠলো ।এর মধ্যে কে যেনো বলছে জেবা কই রে জেবা । কোন রুমে ?
হুড়মুড় করে কিছু লোক ক্লাসে ঢকে পড়ল ।একজন মাঝবয়সী বেশ মোটাসোটা ভদ্রলোক জেবা ম্যাম এর দিকে এগিয়ে এসে রুক্ষ গলায় বলল - এই তুমি জেবা ?
-হ্যাঁ আমি জেবা । বলুন।আপনাদের কি আমি চিনি?
-অত চেনা চিনির কিছু নাই ।তুই আমার পোলারে কান ধইরা উঠবোস করাইছোস ক্যান।
-কে ?বুঝতে পারলাম না ..ও...জামিলের কথা বলছেন।
-শালী ঠিকই তো চিনস ।আমার নামও শুনছোস নিশ্চয় ।তাইলে এতো সাহস পাইলি কই ।নিজেরে কি ভাবস ।
-প্লিজ আপনার ভাষা ঠিক করুণ । ভদ্র ভাবে কথা বলুন।
-দুই দিনের মাইয়া কয় কি ওর কাছে আমার ভাষা শিখতে হইবো ।ভদ্রতা শিখতে হইবো ।সাথে সাথে জামিলের বাবার সাথে আসা লোকগুলো হে হে করে হাসতে লাগলো।বিশ্রি হাসি।
এই ফাকে আদনান গিয়ে বড় ম্যাডামকে ডেকে নিয়ে এলো ।বেশ গোলমেলে অবস্থা। সেদিন অনেক ঝামেলা হলো ।অনেক......।আদনান অত বোঝে না ।তবে শুনেছে।জেবা ম্যমকে নাকি অফিস রুমে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে।জামিলের বাবাএই এলাকার এম পি র খাস লোক। যাকে বলে ডান হাত।তাকে ঘাটিয়ে এই এলাকায় স্কুল চালানো মুশকিল।সেদিন স্কুলের ক্লাস গুলো ঠিক মতো হলো না ।এই প্রথম জেবা ম্যামকে সে কাঁদতে দেখলো। টিফিনের সময় জেবা ম্যামের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না দেখে তার বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো।কেউ কেউ বলতে লাগলো জেবা ম্যাম নাকি চাকরি ছেড়ে দেবেন।আদনানের বুকটা হঠাৎ খাঁখাঁ করে উঠলো।সে স্কুল থেকে বেরিয়ে এলো ।রোদ বেশ চড়েছে ।আদনান রাস্তার এক ধার ধরে ছোট ছোট পা ফেলে হাটতে লাগলো ।
শরতের আকাশে বিভিন্ন আকৃতির অনেকগুলো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।আদনান আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো ।তার চোখ আদ্র হয়ে উঠেছে। সে অনেক কষ্টে কান্না চাপলো ।