আদনানের ডায়েরী ১
আদনানের ডায়েরী ২
এখন দুপুর তিনটা বাজে।আদনানের সব রান্না এবং আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষ।অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে সে সব কাজ করতে পারে । এই দক্ষতার সাথে হয়তো ভয়ের একটা ব্যাপার আছে । এর মধ্যে সে এবং ছোট বোনের গোসল সেরে নিয়েছে। তারা ভালো করেই জানে রান্না সেরে তাদের কোথায় ঠাই হবে।এরকম ঘটনা এর আগে বহুবার ঘটেছে।এখন তারা চিলেকোঠার ছোট্ট ঘরটাতে আছে ।
অতিথি আসার আগেই ইসলাম সাহেব তাদের এই ঘরে ঢুকিয়ে তালা মেরে রেখে গেছেন।এই ঘরটাতে খুব মশা।অতিথিদের হৈ হল্লা
শোনা যাচ্ছে। এইসব কষ্টকর সময় তার খুব মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। মা যে কেন তাদের ছেড়ে এভাবে চলে গেল ,এটা তার জীবনের লক্ষ কোটি টাকার প্রশ্ন।কেউ তার এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না ।
এইঘরের একমাত্র জানালা দিয়ে আকাশটাকে অনেক কাছাকাছি আর সুন্দর দেখায়।তাকালেই মন ভালো হয়ে যায় ।আকাশে আজ বেশ মেঘ।মেঘ গুলি মনে হচ্ছে খুব ব্যস্ত ।আচ্ছা মেঘগুলি উড়েউড়ে কোথায় যায়? মেঘের মতো উড়তে পারলে বেশ হয় ।মানুষতো কখনো মেঘের মতো উড়তে পারে না ।এটাই আফসোস ।
-দাদা !মশা!
-চুপ থাকনা বাবা ,শব্দ করিস না।বাবা বকবে। বুঝিস না কেন ।
-দাদা আমরা খাবো কখন ? কি মজার মজার খাবার।আমি কিন্তু ইলিশ মাছ খাব ।
-মিতা তোকে নিয়ে না মহা মুশকিল ।আমাদের ইলিশ মাছ খেতে নেই । বলেছিনা লোভ করবি না।বড় হয়ে তোকে একদিন ঠিক ইলিশ মাছ খাওয়াবো ।দেখিস।
-সত্যি ।
-হ্যাঁ বাবা তিন সত্যি । তোর কি খুব ক্ষিদে পেয়েছে ?
-হ্যাঁ খুব।
-তোর তো শুধুই ক্ষিদে পায়।
- এই ঘরে কি খাবার আছে দাদা ?
-দাড়া দেখি ।
আদনান গুড়ি মেরে খাটের নিচে চলে গেল ।খাটের নিচে যেমন ময়লা তেমন মশা ।সে আস্তে আস্তে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা টিফিন বক্সটা বের করে আনলো ।এতে সে রান্নার ফাঁকে কিছুটা পোলাও , আলু ভাজি ,সবজি,আর দু পিস গরুর মাংস তুলে রেখেছে ।সে ভালো করেই জানে বাড়ির অতিথিরা বিদায় হতে রাত হবে । ততক্ষণ না খেয়ে থাকতে হবে । মাছ,ডিম সব গোনা বাকি খাবার গুলো থেকে সরালে কেউ ধরতে পারবে না।সে জানে তাদের দুই ভাইবোনের কথা কেউ ভাবে না । কেউ তাদের খেতেও ডাকবে না ।
মিতা খেতে খেতে বলল।
-দাদা তোর হাতের রান্না একেবারে মায়ের মতো। মা থাকলে খুব মজা হতো বল ।আচ্ছা মা কি কোনদিনই আসবে না।
আদনান অনেক কষ্টে একটা দীর্ঘশ্বাস লুকালো। ছোট বোনের সামনে তাকে ভেঙে পড়লে চলবেনা কিছুতেই।
-তাড়াতাড়ি খা ।বাবা যদি চলে আসে কি হবে বুঝতে পারছিস ?
তারা দুইভাইবোন মহা তৃপ্তি নিয়ে এই গরমে ঘেমে নেয়ে খেতে লাগলো । মিতার চোখেমুখে হাজার খুশির ঝিলিক ।একে চুরি করা বলে কিনা তারা জানেনা। তবে একুকু জানে এই খাবার গুলো তাদের বেঁচে থাকার জন্য খুব প্রয়োজন।সামনের জীবনের কঠিন সময়ে হয়তো এই খাবার গুলো ও ঠিক মতোজুটবে না।
ভালোবাসাহীন পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আসলেই কষ্ট । তবু মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে ।একদিন ভালোদিন আসবেই