প্রথম পর্ব
আদনানের ডায়েরী ১
বড় একটা ইলিশ মাছ কাটা হচ্ছে । ইলিশমাছ দিয়ে বেগুন রান্না হবে আজ । মাছটা বেশ তাজা। মিতা অবাক হয়ে মাছ কাটা দেখছে। তার চোখেমুখে হাজার বিষ্ময় । এই বয়সে প্রত্যক শিশুর চোখেই থাকে হাজার বিষ্ময়, মনে থাকে লক্ষ কোটি প্রশ্ন । সে মনে অনেক প্রশ্ন নিয়ে বেড়ায় ,সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার লোক , সে খুজে পায় না।
-দাদা ইলিশ মাছ কি খায়?
ছোট বোনের প্রশ্ন শুনে আদনান অবাক হয় । তার সীমিত জ্ঞানে সে জানে না ইলিশ মাছ কি খায়।
-জানিনা ।পোকা মাকড় খায় হয়তো ।
-পানিতে ও পোকা থাকে ?
-হুম ।
আমাদের বাড়ির পাশে যে ডোবা আছে ওখানে আমরা বড় হয়ে ইলিশ মাছ পুষবো।বড় বড় ইলিশ মাছ ।আমায় কিনে দিতেই হবে।দিবি তো দাদা। আদনান কি একটা বলতে যাচ্ছিলো । হঠাৎ ইসলাম সাহেব বাজখাই গলায় হাঁক ছাড়লেন।
আদনান !!
বাবার ডাক শুনলেই সে চমকে ওঠে । এটা নতুন কিছু নয় ।পৃথিবী তে এই লোকটিকে সে জমের মতো ভয় পায় ।
- জ্বী আব্বা।
রেজা সাহেব চোখ মুখ মোটামোটা করে বললেন ,
-শোন আজ বাড়িতে গেষ্ট আসবে । রান্না যেন ভালো হয়। খুব মন দিয়ে রান্না করবি । একটুও যেন চালাকি করবি না । লবন হলুদ তেল সব যেন ঠিক ঠাক হয় । ছয় পিস মাছ আলাদা করে ভাজবি। আর পেয়াজ ভেজে রাখবি ।বুঝেছিস। পোলাও রাধতে পারবি না? মনে আছে তো।গত সপ্তাহে তো রাঁধলি।বেশ স্বাদ লেগেছিল অবশ্য ,ওরকম করে রাধবি।
-ঠিক আছে ।
-বেশ, আর ডিমের কোর্মা করবি । ছয়টা ডিম এনেছি । আলু ভাজবি কুচি কুচি করে । দেখিস পুড়ে না যায় । অল্প জ্বালে ভাজবি। গরুর মাংসটা কষিয়ে নিবি ভালো করে ।ভুনা ভুনা করে রাঁধবি । ঝোল গামাখা গামাখা করে রাখবি । বুঝেছিস ।না বুঝলে বল।
আদনান একটা দীর্ঘস্বাস ছাড়লো । অবশ্যই সাবধানে । নিঃশব্দে ।আস্তে করে বলল ।
-বুঝেছি
- হ্যাঁ ।
-মাছের কি ডিম হয়েছে ?
-না ।
-হবে না , দেখেই কেনা । মাছের ডিম হলে মাছের স্বাদ থাকে না ।যা হোক তুলে খাবি না ।আমরা খেয়ে যা থাকবে তা থেকে দেব ।মাছ কত পিস হয়েছে গুনেছিস ।
- না গুনিনি ।
-এখনি গুনে আমাকে বল ।
-সকালে কি খেয়েছিস ?
-মুড়ি ।
প্রায় মুখে এসে গেছিলো মুড়ি আর চিনি । দ্রুত সামলে নিলো সে ।হঠাৎ আদনানের মনে হলো মাছটা বেড়ালে নিয়ে যেতে পারে । এ পাড়ায় কালো রঙের একটা পাজি বেড়াল আছে ।খুবই সুযোগ সন্ধানী । এক দৌড়ে আদনান মাছের কাছে আসতেই দেখলো ,কালো বেড়ালটি জায়গায় হাজির ।এব্ং তার মুখে ইলিশ মাছের মাথা ।ভয়ে আদনানের শিড়দাড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।আজ কপালে কি কি আছে কে জানে! মিতা কাপড়ের পুতুল গুলো নিয়ে খেলছে। আদনানের এখন আর এখানে থাকতে ইচ্ছা করেনা। কবেই সে কোথায় চলে যেত।ছোট বোনটির জন্য তার খুব ভাবনা হয়।নেহাৎ তাই রয়ে গেছে ........।
জীবনের দুঃখ কষ্টগুলো আসলেই বেশ অদ্ভুদ । জীবনের মজা মনে হয় এখানেই ।
ছবি গুগোল থেকে।