একটু আগে বেশ একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে । অসময়ের বৃষ্টি । তারা দুই ভাইবোন জানালা দিয়ে বৃষ্টি পরবর্তী রংধনু দেখছে ।
রংধনুর সাতটি রং এর মতো তাদের জীবন অবশ্য রঙিন নয় ।অনেক দুঃখ কষ্টের জীবন তাদের ।ভাইটি বড় বোনটি ছোট ।
বোনটির নাম মিতা ,ভাইটির নাম আদনান। দুভাই বোন একাএকা ই থাকে ।মাঝে মাঝে তাদের বাবা আসে ।খিদে পেলে আসে । সাধারনত বাবারা বাড়ি ফিরলে সন্তানদের মুখ খুশিতে ঝলমল করে। মিতা আর আদনানের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো ।তাদের বাবা বাড়ি ফিরলে তারা দুজনে অজানা আতঙ্কে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে।আজানা শঙ্কায় তাদের বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করে কাঁপে।
কতদিন হয়ে গেল মা নেই । মা মারা গেছে । মারা গেছে বলা ভুল । মাকে মেরে ফেলা হয়েছে । মিতার কিছু মনে নেই ।কিন্তু আদনানের আছে। এখনো তার মনে পড়ে বাবা তার মাকে মারছে , কথায় কথায় মারতো। এই যেমন তরকারীতে লবন কেন কম। ঝোল বেশী বা কম কেন । মার দেওয়া যেন রুটিন ওয়ার্ক। মা মুখ বুজে সব সইতো । এমনকি লাঠি গুলোও সরিয়ে রাখতো না । খুবই সরল ছিল সে ।
মুখ বুজে সব সইতো । যাবার কোথাও জায়গা ছিলো না বলেই হয়তো সব সইতো । সব সইতে সইতে একদিন সে চলেই গেল না ফেরার দেশে।মিতা প্রায়ই মায়ের জন্য কাঁদে । আদনান আর কাঁদে না। এ নিষ্ঠুর পৃথিবীতে চোখের জলের কোন দাম নেই।
- দাদা খুব ক্ষিদে পেয়েছে ।
- মুড়ি খাবি ?
-চিনি আছে দাদা ? চিনি দিয়ে মাখিয়ে খাবো ।
-নারে ?
মিতার মুখটা শুকনো হয়ে গেল । শুধু শুধু মুড়ি খেতে তার ভালো লাগে না । আদনানেরও খুব ক্ষিদে পেয়েছে । ঘরে ওই মুড়ি টুকু ছাড়া আর কিছু নেই । সেদিন বাবার জামা কাচতে গিয়ে পাঁচ টাকার একটা নোট পেয়েছিলো সে ।যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো । আগে হলে টাকাটা ফেরত দিয়ে দিতো ।এখন আর দেয় না। কি দরকার বাবা , মার খেয়ে খেয়ে এখন আর মার খেতে ইচ্ছা করেনা ।শুধু মার নয় চোর অপবাদও নিতে হবে তাকে । এই ছোট বয়সে তার জীবনের অনেক কুৎসিত দিক দেখা হয়ে গেছে ।মানুষের জীবন এত কষ্টের কেন ?
দোকান থেকে পাঁচ টাকার চিনি কিনে দুইভাই বোন মনের সুখে মুড়ি আর চিনি খেতে লাগলো ।সকালের নাস্তাটা আজ খুব টেষ্টি ।এই ছোট্ট পাওয়াতে তাদের ভারী মজা হচ্ছে ।.............।
মানুষের জীবনের কষ্টগুলোর কোন রঙ হয় কিনা আমার জানা নেই । কিন্তু মানুষের জীবনটা অনেক বর্ণিল ।সুখ দুখ হাসি আনন্দ বেদনা নিয়েই মানুষের জীবন। সেই জীবনের ডায়রী হলো আদনানের ডায়েরী ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:০১