somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসলেই কি অমরত্ব পাবে মানুষ??

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি বরাবরই খুব ভীতু। আমার এই গুণটির(?) কথা বন্ধুমহলের সবাই কমবেশী জানে। অনেকে এ নিয়ে হাসি ঠাট্টাও করে প্রচুর। আমি জানি আমার ভীতু হবার পিছনে একটা বড় কারণ রয়েছে। আমি যখন থেকে পড়তে শিখেছি, তখন থেকেই প্রচুর গল্পের বই পড়তাম। আর ভুতের গল্প হলে তো কথাই নেই। রাতে পড়ার টেবিলে হারিকেনের আলোয় পাঠ্যবইয়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে ফেলতাম। ফলশ্রুতিতে গল্পের চরিত্রগুলো গভীর রাতে মনে হলে প্রচন্ড ভয় পেতাম। এখানেই মনে হয় এই বইগুলোর মজা, ভয় লাগে তবুও পড়ার নেশা কখনও কমেনি। সেই ছোটবেলা থেকেই বোধহয় ভয়ের একটা বীজ আমার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলো। একা একা নির্জন বাড়িতে ঘুমাতে পর্যন্ত ভয় পাই।

২০১১ সাল। কুষ্টিয়াতে এসে নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছি। মেকানিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং মত রসকষহীন বিষয়ে ডিপ্লোমা করতে এসেছি। কদমতলা মোড়ের পাশেই একটা বিল্ডিংয়ের দ্বীতিয় তলায় আমার থাকার ব্যাবস্থা হয়েছে। দোতালায় উঠার পরপরই নোটিশ করলাম দোতালায় শুধুমাত্র আমিই থাকি। দ্বীতিয় আর কোনো প্রাণী নেই। রাতে ভয়ে ভয়ে ঘুমাতে গেলাম রুমের লাইট অন করেই। সরারাত চোখে ঘুম এলোনা। মধ্যরাতের দিকে মনে হলো বারান্দায় কে যেনো পা টিপে টিপে হাঁটছে। ঘুমানোর চিন্তা বাদ দিলাম। কোথায় যেনো পড়েছিলাম, ভয় কাটানোর একমাত্র উপায় আরো বেশী করে ভয় পাওয়া। একটা নির্দিষ্ট সীমার পরে আর মানুষ ভয় পায় না। সেটার প্রয়োগ ঘটাতেই পিটার ব্লেটির হরর বই the excorcist পড়তে শুরু করলাম।
মিনিট দশেক পড়লাম। ভয় কমল না বরং প্রচন্ড ভয়ে হাতপা পেটের ভিতর ঢুকে যাবার মত অবস্থা হলো। বাথরুমে মনে হলো কে যেনো পানির কল চালু করেছে। কল থেকে পানি পড়ছে। চমকে উঠে প্রশ্ন করলাম, কে?
প্রশ্ন করে আরো বেশী ভয় পেলাম। এখন যদি উত্তর দিয়ে ফেলে" I am the ghost of Dorothy dinglay. আমি বহুদিন এই ঘড়ে নিঃসঙ্গ বসবাস করছি। অনুগ্রহপূর্বক লাইটটা কি অফ করবে? তোমার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করতাম"।
তাহলে হার্ট এ্যাটাক করে আমার মরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবেনা। কোনোমত রাতটা পার করলাম পরদিন সকাল হবার সাথে সাথেই রুমের চাবিটা রুমের মালিকের হাতে তুলে দিয়ে আমি ঘড়ের ছেলে ঘড়ে ফিরে এলাম।

আচ্ছা ভীতু হওয়াটা কি দোষের? আমরা কিজন্যে ভীত হই। আমি ভীতু কারণ আমি মরতে ভয় পাই। মহাপুরুষেরা নাকি মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করতেন। আমি মহাপুরুষ নই, আমি এক অতি অভাজন সাধারণ মানুষ। মৃত্যুচিন্তা মাথায় এলেই প্রবল আতঙ্কে আতঙ্কিত হই। পৃথিবীতে প্রতিটি মহুর্ত বেঁচে থাকাটাই আনন্দের। মৃত্যু মানেই জীবনের সমাপ্তি। আমি মরতে চাইনা। কিন্তু আমি জানি, প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে আমাকে মরতেই হবে। এই নিয়ম ভাঙার ক্ষমতা করো নেই।

আসলেই কি তাই? কিছুদিন আগে নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশ করেছে "২০৪৫ সালের মধ্যেই অমরত্ব পাবে মানুষ"।(সূত্রঃ ফেব্রুয়ারী ২১,২০১১)।

আচ্ছা মানুষ মারা যায় কেনো? একসময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন মৃত্যু মানবদেহের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন অন্য কথা, একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর আমাদের DNA এর কোষগুলো ভাঙতে থাকে, আর আমরা জরাগ্রস্থ হতে থাকি। আমরা ক্রমশ ধাবিত হই মৃত্যুর দিকে। একসময় সবগুলো কোষের মৃত্যু ঘটে, আমরা মারা যাই।

বায়োলজিষ্টরা জরাগ্রস্থ ইঁদুর নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। ইঁদুরগুলোকে দেওয়া হয়েছে (telomerase) এনজাইম। দেখা গিয়েছে, তাদের যে শুধু জরা বন্ধ হয়েছে তা নয়, তারা ফিরতে শুরু করেছে যৌবনের দিকে।
অমরত্বের চেষ্টা মানুষের বহুদিনের। এই পরীক্ষা এখন মানুষের উপর করার সময় এসে গেছে। যে কোনো দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মানুষ অমরত্বের সুসংবাদ পাবে।

এসব তথ্যগুলো বিশ্বাস করতে দ্বিধাবোধ হয়। তবুও বিশ্বাস করতে ভালো লাগে। এই পৃথিবী থাকবে, আষাঢ় মাসে আকাশ অন্ধকার করে ঝুম বৃষ্টি নামবে, বৈশাখী পূর্ণিমা রাতে ফিনিক ফোটা জোছনা উঠবে। শুধু সেগুলো দেখার জন্যে আমি থাকবনা। ভাবতেই বুকের ভিতরটা হুহু করে ওঠে।

পৃথিবীর মানুষেরা অমর হোক। আমি হাজার বছর বাঁচতে চাই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×