ঝড়ের রাতগুলো আমার উদাসী মনটাকে আরও উদাস করে তোলে। দক্ষিণের জানালাটা খুলে কালবৈশাখী ঝড়ের মাতামাতি দেখে বুকের ভিতরে হাহাকার করে ওঠে। ঝড়ের বুনো উদ্যামে গাছের ডালপালাগুলো বালিকার খোলা চুলের মত ঝাপটা হাওয়ায় লুটোপুটি খায়। ক্ষণে ক্ষণে আকাশে বেজে উঠিছে বজ্রের ধ্বনি। বিশাল নিকষ কালো আকাশের বুক চিরে একটি আলোর রেখা এক প্রটন্ত হতে অন্য প্রান্তে চলে গেলো। একটু পরেই মেঘের এলোমেলো গর্জন। টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে এক অপূর্ব সংগীতের সৃষ্টি করে। বুকের ভিতরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মনে হয় যেন আকুল হয়ে কাঁদি। হটাতই আমার মন হারিয়ে যায় সূদুর অতীতে। আমার ভালোবাসার সর্বশেষ সুখস্মৃতি এক ঝড়ের রাতে।
আজি হতে সাত বছর পূর্বে এমনি এক ঝড়ের গভীর রাতে একগুচ্ছ কদমফুল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম আমার প্রিয়ার দুয়ারে। চারিদিকে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, বাইরে ঝাপটা হাওয়ায় ভেঙে পড়ছে গাছের ডাল, প্রকৃতি যেনো প্রচন্ড আক্রোশে পৃথিবী চুরমার করে দিতে চাইছে, এমনি এক ক্ষণে আমরা দুজন দুজনকে গভীর ভালোবাসায় আলিঙ্গন করেছিলাম। এত ভালোবাসি কেনো, এত ভালোবাসি কেনো, বলে আমার বুকে মাথা রেখে পাগলের মত কেঁদেছিলো। আমিও আকুল হয়ে কেঁদেছিলাম, প্রশান্তির কান্না। অতপর, আমি গাইলাম,
"আমারও পরাণও যাহা চায়
তুমি তাই তুমি তাই গো....
তুমি ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই,
কিছু নাই গো.....
সেদিন সে সর্বশেষ আমার কাঁধে মাথা রেখে আমার গান শুনেছিলো। তারপর সাত সাতটি বরষা চলে গেছে, তাকে আমি আর পাইনি। সে আমাকে এখন ভালোবাসে কি,না জানিনা, কিন্তু সে আমাকে ভালোবেসেছিল। হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজার করে আমাকে দিয়েছিলো। এতটা ভালোবাসা উপেক্ষা করা যায় না। তাইতো আমি তাকে সেদিনের মত আজও ভালোবাসি। সেদিনের মত আজও ধরণী কাঁপিয়ে কালবোশেখী ঝড় ওঠে। মনের অজান্তে আজও গেয়ে উঠি....
"তুমি সুখ যদি নাহি পাও
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়ও মাঝে
আরও কিছু নাহি চাই গো"...
সে সুখের সন্ধানে চলে গেছে। আমি একা একা গেয়ে চলি। সহসাই চোখের কোণে অশ্রু জমে ওঠে। ইচ্ছে করে আরও জোরে ঝড় উঠুক। ভাসিয়ে নিয়ে যাক সবকিছু।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ১২:৪০