এক নজরে..
সময়কাল : ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এখনো
অভিষেক : ২ জুন ১৯৫৩
পূর্বসুরি : ষষ্ঠ জর্জ চার্লস প্রিন্স অব ওয়েলস
দাম্পত্যসঙ্গী: প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অফ এডিনবরা
সন্তান: চার্লস- প্রিন্স অব ওয়েলস, অ্যানি- প্রিন্সেস রয়াল, প্রিন্স অ্যান্ড্রু- ডিউক অব ইয়র্ক, প্রিন্স এডওয়ার্ড
পূর্ণ নাম : এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা মেরি
বাসগৃহ : হাউস অব উইন্ডসর
পিতা : ষষ্ঠ জর্জ
মাতা : এলিজাবেথ বউয়েস লিয়ন
ধর্ম : চার্চ অব ইংল্যান্ড ও চার্চ অব স্কটল্যান্ড
ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের অনেক প্রান্তেই উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল ব্রিটিশরা। তাদের শাসনের পরিধি এত ব্যাপক ছিল যে, প্রবাদই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, 'ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যায় না'। স্বাভাবিকভাবেই এ বিশাল সাম্রাজ্যের প্রজাদের কাছে বড় মর্যাদার আসন পেতেন রাজা বা রানী। উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজা-রানীর আমল শেষ হয়েছে ১৯৪৭ সালেই। তবু এখনো 'রানী' শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে ব্রিটেনের রানীর কথা।
ব্রিটেনের দ্বিতীয় এলিজাবেথ [এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা মেরি, জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬] হচ্ছেন বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র, অর্থাৎ কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোর বর্তমান রানী ও রাষ্ট্রপ্রধান। কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহ হচ্ছে : যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বারবাডোস, বাহামাস, গ্রানাডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, বেলিজ, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা এবং সেন্ট কিট্স ও নেভিস। কমনওয়েলথপ্রধান ছাড়াও তিনি ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমনওয়েলথ অব নেশনসেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের শাসনকর্তা এবং চার্চ অফ ইংল্যান্ডেরও প্রধান। বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্প্রতি ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে আরোহণের ৬০ বছর পূর্ণ করলেন। এর আগে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড রয়েছে রানী ভিক্টোরিয়ার। ১৮৩৭ সাল থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত ৬৪ বছর রাজত্ব করেন ভিক্টোরিয়া। আর ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ অবধি রানীর আসনে আসীন মহামান্য রানী এলিজাবেথ। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬। পিতা ষষ্ঠ জর্জ ও মাতা এলিজাবেথ বউয়েস। ১৯৩৭ সালে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজার আসনে বসেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের শেষ রাজা। তার আমলেই মূলত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবস্থা অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। ষষ্ঠ জর্জের কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করেন বড় কন্যা দ্বিতীয় এলিজাবেথকে। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি দিনে জীবনটা বদলে যায় সেই রাজকন্যার। সুদূর কেনিয়ায় বসে সেদিন শোনেন পিতা ব্রিটিশরাজ ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যু সংবাদ। সেই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সেদিনই তিনি জেনেছিলেন রানী হওয়ার সংবাদ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তার মাথায় ওঠে রাজমুকুট। রানী হলেন এলিজাবেথ, সে থেকেই ব্রিটেনের জনগণের হৃদয়ে ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় রানী হয়েই কাটিয়ে দিলেন ৬০টি বছর।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে তিনি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি দীর্ঘতম সময় সিংহাসনে আসীন। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অদ্যাবধি রাজসিংহাসনে আসীন মহামান্য রানী এলিজাবেথ। তার আমলে ব্রিটেনে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রে ১২ জন প্রেসিডেন্ট ও ছয়জন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সফর করেছেন পৃথিবীর ১১৬টি দেশ। এলিজাবেথের দাম্পত্যসঙ্গী হলেন প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অফ এডিনবরা। তাদের চার সন্তান রয়েছে : চার্লস, অ্যানি, অ্যান্ড্রু এবং এডওয়ার্ড। ১৯৪০ সালে এলিজাবেথ প্রথম রেডিও বিবিসিতে শিশুদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৪৩ সালে ১৬ বছর বয়সে এলিজাবেথ প্রথম জনসম্মুখে আসেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। দীর্ঘ ৬ দশকের পথচলা তার জন্য খুব মসৃণ ছিল না। টেমসের জলধারার সঙ্গে সঙ্গে অনেক চড়াই-উৎরাই ছিল। বিশেষ করে ডায়ানার বিচ্ছেদ, মৃত্যু ইত্যাদি কারণে ব্রিটিশ রাজপরিবারের জনপ্রিয়তা বেশ কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু ডায়ানাপুত্র উইলিয়ামের বিয়ের পর থেকে সেই জনপ্রিয়তা আবারও বাড়তে শুরু করেছে। সব কিছুর পরও রানী হচ্ছেন ব্রিটিশ জাতির ঐক্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক।
যাকে নিয়ে এতো আগ্রহ সেই রানীর জীবনটা কেমন ছিল? কেমন ছিল ব্রিটিশ রাজসিংহাসন অলংকৃত করার অভিজ্ঞতা? মাথায় বিশাল মুকুট পরে হাঁটা! সে কি মুখের কথা। আগেভাগে সেটা অভ্যাস না করলে চলে? সিংহাসনে বসার আগে তিনিও তাই করতেন। এমনকি বাথরুম থেকেও মুকুট পরে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে তাকে। মজার এই দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন তার বড ছেলে। তিনি ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা মুহূর্ত প্রকাশ পেয়েছে একটি তথ্যচিত্রে। রানীর সিংহাসনে আরোহণের ৬০ বছর উদযাপন উপলক্ষে ব্রিটেনে তথ্যচিত্র দেখানো হয়। তার রাজত্বে ১২ জন প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছেন রানী। তিনি সিংহাসনে অভিষিক্ত হওয়ার সময় সেই প্রধানমন্ত্রীদের দু'জনের জন্মও হয়নি। নিজে হাতে রানী পার্লামেন্টের সূচনা করেছেন ৫৯ বার। পরিবারের দায়িত্বের সঙ্গে যিনি দেশের দায়িত্বও পালন করেছেন নিপুণভাবে, সেই মায়ের 'স্বাভাবিক সৌন্দর্য' আর 'আভিজাত্যপূর্ণ ভঙ্গিমা' দেখে ষাট বছর পরেও মুগ্ধ যুবরাজ চার্লস, "সবসময় মনে হতো, টায়রায় মাকে কী অসাধারণ দেখতে লাগে।" চার্লসের মনে আছে, "আমাদের স্নান করানো হচ্ছিল তখন। হঠাৎ দেখি মা এসে উপস্থিত। মাথায় সেই বিশাল মুকুট।
তখনো প্র্যাকটিস চলছে!" সিংহাসনে আরোহণের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রদত্ত এক বানীতে রানী এলিজাবেথ এই দীর্ঘ সময় তার প্রতি অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদের সেবায় নতুন করে আত্মনিয়োগের অঙ্গীকার করেছেন। 'দ্য টেলিগ্রাফ'-এ সাইমন হেফার লিখেছেন, ৬০ বছর ধরে রাজনীতিকরা তাকে যতই খাটো করার চেষ্টা করুন, আজও ব্রিটেনের সবচেয়ে দামি সম্পদ রানী! শুধু বাকিংহাম নয়, লন্ডন নয়, সারা ব্রিটেন অপেক্ষার প্রহর গুনছে সে মাহেন্দ্রক্ষণের। উৎসব-আনন্দে এ কঠিন সময়েও আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠবে ইংল্যান্ড। ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ বাংলাদেশেও এসেছিলেন। দুই বার ঢাকায় এসেছেন তিনি। প্রথমবার এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আমলে। ১৯৬১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রানীর বিমান নেমেছিল পুরনো বিমানবন্দরে। রমনা পার্কের সামনে একটি পুরনো বাড়ি সাজানো হয়েছিল রানীর জন্য। সে বাড়িটিই এখন বঙ্গভবন। ১৩ ফেব্রুয়ারি রানী বের হয়েছিলেন স্টিমারে বুড়িগঙ্গা ভ্রমণে। ভ্রমণ শেষে রানী যান আদমজী জুট মিলে। বিশ্বের মানুষের কাছে পরম শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার রানী দীর্ঘায়ু হোন!