♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)
(ছবি নেট হতে)
সুপ্রিয় ব্লগারস্,
আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার এক ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আমার মনে হয় সামুর ইতিহাসে আমিই প্রথম, এর আগে আর কেউ এমন টপিকে লিখে নাই। আজ আমি সত্যিকার কপোত-কপোতী নিয়ে লিখলাম। জ্বী। আমি কবুতর বিষয়ে লিখতে যাচ্ছি। যদিও এই বিষয়ে সবার আগ্রহ থাকেনা, আবার যাদের আগ্রহ থাকে তাদের আগ্রহ সীমাহীন।
(ছবি নেট হতে)
আগে একটা সময়ে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কবুতরের জন্যে একটি নির্দিষ্ট কর্ণার থাকতো। এখন রুচি পরিবর্তন আর জায়গা স্বল্পতার কারণে যদিও সেটা চোখে তেমন পরেনা, তবুও আবদ্ধ বা ছাদে তা অল্প হলেও টিকে আছে। আবার অনেকে মুনাফার আশায় খামারও গড়ে তুলেছেন। এতোসবের ভেতরে যদিও কবুতর কোনো দুর্লভ পাখি নয়, তবুও এর বাজার আমাকে ভাবায়।
(ছবি নেট হতে)
এ সম্পর্কে জরিপ চালাতে গিয়ে বুঝলাম, কিছু ব্যবসায়ী ছাড়া সবাই মায়ায় পরেই কবুতর পালে। কবুতরের দিকে তাকালে সত্যিই অদ্ভূত এক মায়া উপলব্ধ হয় যা কবুতরপ্রেমী ছাড়া অন্যকারো চোখে তেমন একটা পরেনা। আর কবুতর ও মনিবের মাঝে যে এক স্বর্গীয় ভালবাসা বিরাজমান, তা শুধু যারা কবুতর পাগল তারাই বুঝে। তারপরও এই জীবটির এমন বেহাল দশা আমাকে ভাবায়। যদিও কবুতর শৌখিন মানুষের পোষা, তবুও শৌখিনতা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে কবুতর সেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
আমার দৃষ্টিকোন হতে যে কারণে কবুতর বৃদ্ধি পাবার কথা-
*কবুতর খুব সহজেই পোষ মানে।
*কবুতরের খাদ্য তুলনামূলক কম লাগে।
*কবুতর স্বল্প জায়গায় পালন করা যায়।
*কবুতরের ঘর স্বল্প খরচে তৈরী করা সম্ভব।
*কবুতরের যত্ন তুলনামূলক কম লাগে।
*কবুতরের রোগ-বালাইও তুলনামূলক কম হয়।
*দূর্মূল্যের গোস্তের বাজারে ২ জোড়া কবুতর পালন অনেকটাই গোস্তের চাহিদা পূরণ করে।
*কবুতরের পেছনে শ্রম ও ব্যয় অনেকাংশেই কম।
*কবুতরের ক্ষতিকারক দিক তেমন নেই বললেই চলে।
*সর্বোপরি প্রেমিকা বা সিগারেটের পিছনে ব্যয়ের চাইতে কবুতরের পিছনে ব্যয় অনেকটা ইতিবাচক বটে।
এতোসবের পরও এই মায়াবী জীবটির পালন মনে হয় আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। শহরের সাথে এখন গ্রামেও তেমন কবুতর পালন চোখে পরেনা বললেই চলে। এর পেছনে কারণ খুঁজতে যেয়ে যা পেলাম-
*প্রথম এবং প্রধাণ কারণ হচ্ছে কবুতরের খাবার তথা শষ্য এবং ফিডের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া।
*আবার বেচতে গিয়ে কবুতরের মূল্য নেই বললেই চলে।
*যেই টাকার কবুতর ক্রয় করা হয়, তার অনেক গুণ বেশি টাকার খাদ্য ক্রয় করতে হয়। আবার বেচতে গেলে কেনা দামের কাছেও দাম পাওয়া যায় না। আর তাই এই জীব পোষা হতে মানুষ দিনদিন সড়ে আসছে।
*আগে বিদেশে কবুতর রপ্তানি হতো, আর এখন নাকি শুধু আমদানি হয়।
*দেশি কবুতরের চাইতে বিদেশি কবুতরে বাজার সয়লাব।
*একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অতি মুনাফার আশায় কিছু মানুষের এই ক্ষেত্রে আগমন। তারা প্রথমে কবুতর বাণিজ্যিকভাবে অনেক লাভজনক জেনে ব্যবসায়ে আসে। সেই সুযোগে আরেকপক্ষ অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিদেশি এবং উন্নত জাতের কবুতর তাদের গছিয়ে দিয়ে বাজার উন্নত আর বিদেশি কবুতর দিয়ে ভরে ফেলে। ফলে বিদেশি আর উন্নত জাতের যোগান বৃদ্ধি পেয়ে সেই জাতের দামও কমে যায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এতোসবের পরও কি আপনি বাজারে গিয়ে স্বল্পমূল্যে কবুতর পাবেন? উত্তর হচ্ছে “না”। কিন্তু আবার যারা পুষছে তারা বাজারে গিয়ে ন্যায্য দাম পাচ্ছে কি? সেটার উত্তরও “না”। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই যে দু'টো উত্তরই নেতিবাচক, তাহলে মাঝের এই যে বড় একটা মার্জিন সেটা খাচ্ছে কে?
উত্তর হচ্ছে “মিডল ম্যানরা”। এদের জন্যে আপনি বাজার হতে কোনো জিনিসই না পারবেন ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে, না পারবেন ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করতে। বিক্রয়ের সময় এই সিন্ডিকেট আপনাকে এমনভাবে ঘিরে ধরবে যে আপনি ন্যায্যমূল্যের চেয়ে অনেক কমমূল্যে বেচতে বাধ্য হবেন। আবার কেনার সময়ও ঠিক একইভাবে আপনি এই দালালদের খপ্পরে পরে ন্যায্যমূল্যের চাইতে অনেক বেশি মূল্যে কিনতে বাধ্য হবেন। এটা শুধু কবুতের ক্ষেত্রেই নয়, সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই দালালচক্র সক্রিয়। বর্তমানে এই দালাল ছাড়া জন্ম তথা হাসপাতাল, আর মৃত্যু তথা গোরস্থানও কঠিন হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু এই দালালতো সমাজের বাহিরের কেউ নয়। আমার বা আপনারই সুপরিচিতজন। পরিবারের কেউ। কিংবা নিজেই। এই দালালদের জন্যে এমন অনেক শৌখিন জিনিস বিনষ্ট হচ্ছে।
এ থেকে কি এই জাতির কোনোদিন মুক্তি হবে????
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১