অনন্যা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, যেমন দুষ্টুমেয়ে তেমনি আদরের। ছোট বেলা থেকে কোন কষ্ট করতে হয়নি তাকে, বলতে গেলে সোনার চামুচ মুখে নিয়েই জন্মেছে।
.
আজ সে আকাশী রঙের একটি শাড়ি পড়েছে, অবশ্য এর পিছনে একটি কারণও আছে? তার ভালোবাসার মানুষটি যে শাড়ি পড়ে আসতে বলছে, একসাথে রিক্সায় ঘুরবে বলে।
কে জানি বলেছিল,
(শাড়িতে নাকি মেয়েদের যতটা
সুন্দর লাগে, তা আর অন্য কোন পোশাকে সম্ভব নয়)
.
অনন্যা সেই কখন থেকে পার্কের বেঞ্চের উপর শাড়ি পরে বসে আছে।
অথচো বাদরটার আসার কোন নামই নেই! ভেবেছিল বাদরটা বুঝি ওর জন্য অপেক্ষা করবে।
তা না এখন অনন্যাকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই যাহ্! বাদরটার নামই তো বলা হয়নি! আকাশ, হুম ঠিক ধরেছেন! বাদর, উপাধি ছেলেটির নামই আকাশ।
.
তাদের প্রেমের শুরুটা হয়েছিল ঠিক এই ভাবে, আকাশ প্রতিদিন অনন্যার কলেজে যাওয়া আসার পথে দাড়িয়ে থাকতো। যাওয়া আসার সময় দু'জনের চোখা চোখি হত,এক পর্যায়ে কথা হল,পরিচয় হল,বন্ধুত্ব হল,আর কীভাবে জানি প্রেম হয়ে গেল। তারপর থেকে এই চলছে তাদের খুনশুটি প্রেম।
.
নাহ্, বসে থাকতে পারছে না অনন্যা! খুব অসহ্য লাগছে একা বসে থাকতে।
যেই না উঠতে যাবে, সেই মুহুর্তে কোথা থেকে দৌড়ে আকাশ এসে বলল।
.
স্যরি,স্যরি, বাবুনী, একটু দেরী হয়ে গেছে।
.
অনন্যা রাগ হয়ে বলল,
এই খবরদার আমাকে বাবুনী ডাকবা না, এতক্ষণ যে মেয়ের কাছে ছিলা তার কাছে যাও, আমার কাছে আসছো কেন?
.
ছিঃ কি বলো এসব, এই কানে ধরছি আর এমনটা হবে না।
.
ঠিক তো?
.
হুম, এই মুহুর্তে আকাশ খেয়াল করলো অনন্যা শাড়ি পরে এসেছে, দেখে মনে হচ্ছে আসমান থেকে নেমে আসা কোন অপ্সরী…কিন্তু
মুখ ফুটে কিছুতেই ও সেটা বলতে পারল না…
.
এদিকে অনন্যাও মনে মনে ভাবছে ‘কি ছেলেরে বাবা’ ওকে
দেখানোর জন্যেই আজ শাড়ি
পড়ে আসলাম! অথচো একটু ভদ্রতা দেখিও প্রশংসা করল না। শেষে নিজেই বলে
উঠল
.
এই আকাশ, আজকে তোমার জন্য শাড়ি পড়ে এসেছি?
.
তাই নাকি?
.
হুম,
.
থ্যাংক ইউ,
.
থ্যাংক ইউ ২?
বলে মনে মনে অনন্যা নিজেই নিজের মাথা চাপড়াতে
লাগল।
.
এই তুমি মুখ গোমরা করে বসে আছো কেন?
.
তাতে তোমার কি?
.
বাবুনীটা মুখ গোমরা রাখলে যে আমার কষ্ট হয়।
.
ওহ, তাই বুঝি!
.
কেন তুমি জানোনা। বাট আজকে তোমায় অনেক সুন্দরী লাগছে?
.
বলছে, থাক আর পাম্প দিতে হবে না, তা না হলে ফেটে যাবো।
.
পাম্প নয় সত্যি বলছি, বাট?
.
বাট কি?
.
তোমাকে আজ একান্ত ভাবে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।
.
ওটা বিয়ের পরে, বিয়ের আগে নয়।
.
তাহলে তুমি আমায় বিশ্বাস করছো না!
.
আজীব, এখানে বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের কথা আসছে কেন আকাশ!
.
সামনের বছরে তো তোমাকে বিয়ে করতেছি! তাহলে সমস্যা কোথায়।
.
এখন অনন্যা কি বলবে তার উত্তর জানা নেই। এক সময় আকাশের পিরাপিরিতে রাজী হয়ে যায়।
.
কয়েক মাস পরে অনন্যা বুঝতে পারে,তার গর্ভে আরেকটি জীবন বিচরন করছে। কোনদিক-কুল না পেয়ে অনন্যা আকাশের কাছে ছুটে যায়, কিন্তু পোড়া কপাল! আকাশ এখন বিয়ে করতে পারবে না বলে ফিরিয়ে দেয়।
.
আকাশ প্রত্তাখান করায়, মানসিক ভাবে পুরোপুরি ভেঙে পরে অনন্যা। না পারছে তার পরিবার কে বলতে না পারছে আত্বীয় স্বজন কে।
.
এক সময় লোক লজ্জার ভয়ে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। শুধু রেখে যায় মা বাবার
বোবা আর্তচিৎকার। আচ্ছা শুধুই কি অনন্যা মারা গেছে? নাকি ওর সাথে মরেছে গর্ভে থাকা অনাগত সন্তান সহ ওর বাবা,মা, যারা জীবিত থেকেও আজ মৃত॥
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:১৭