তামিম ইকবাল একবার বলেছিল, ‘আশরাফুল ভাইকে আমি বলি বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম প্রেম। প্রথম প্রেম যেমন কোনো দিন ভোলা যায় না, আশরাফুল ভাইকেও মানুষের চিরদিন মনে থাকবে।’
মোহাম্মদ আশরাফুল, মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেঞ্চুরি করবার রেকর্ডের অধিকারী। এই সেই আশরাফুল যে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে নাকে খত দিতে বাধ্য করেছিল, সেই আশরাফুল যার ব্যাটিং তাণ্ডবে নটিংহামে ইংল্যান্ডসহ ক্রিকেট বিশ্ব কেঁপে গিয়েছিল। ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে চোখে লেগে থাকা সেই সেঞ্চুরির মালিক আশরাফুল আজ ক্রিকেটে ব্রাত্য।
গরীব ঘর থেকে উঠে আসা পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চে ম্যাচ সেরা হয়ে বোকা বোকা হাসি দেয়া আমাদের সুপারহিরো আশরাফুল অর্থের ইশারায় ভুল পথে পা বাড়িয়েছিল। ম্যাচ ফিক্সিং এর কালো থাবায় যার ক্যারিয়ার প্রায় শেষের পথে। পাগলা দর্শক হিসেবে আমরা আজও বুকভরা অভিমান নিয়ে আশা করি হয়তো আশরাফুল ফিরে আসবে!!
আজ হঠাৎ আশরাফুলকে নিয়ে কেন লিখছি? লিখছি এক অজানা ভয়ে। আমি মনে প্রানে আমার বেয়াড়া মনকে বুঝ দিতে চাই আমার ভয় মিথ্যা, অমূলক। তারপরও কথাগুলো বলার প্রয়োজনবোধ করছি। ক্রিকেটের এই উত্তাল মৌসুমে কথাগুলো সহজ ভাবে হয়তো হজম হবে না কিন্তু এখনি এই কথাগুলো বলা দরকার। এইটাই সময়। কালো বর্নের চেয়েও অধিক কালো কথাগুলো কাউকে না কাউকে বলা উচিৎ।
মোস্তাফিজ, আমাদের এখনকার নক্ষত্র। আমাদের গর্বের, আমাদের পারমাণবিক বোমা। এই বোমা মাত্র ২২ গজে হিরোশিমা নাগাসাকির মতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ইসলামাবাদ , দিল্লী'র ব্যাটিং স্তম্ভ। ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময় বালক মোস্তাফিজকে ভয় করছে লন্ডন , জোহান্সবার্গ, কলম্বো , ক্যানবেরা সবাই।
আমার ভয়, কে জানে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত এই বোমা অকেজো করে দিতেও হয়তো ইতিমধ্যে হিসেব কষা শুরু করে দিয়েছে , ক্রিকেটের গডফাদার -- জুয়াড়ি'রা। তারা ভয়ংকর , তারা ছদ্মবেশী বিষ যাদের লক্ষ্য থাকে পানি হয়ে গ্লাসে প্রবেশ করে বিষ হয়ে সহজ সরল একদম তাজা মাটির গন্ধ দেয়া প্রতিভা মেরে ফেলা।এমন উদাহরন ক্রিকেট বিশ্বে অহরহ। এমনকি মোস্তাফিজের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল তার আদর্শ কে ? মোস্তাফিজ উত্তর দিয়েছিল - মোহাম্মদ আমির। সেই আমিরও জুয়াড়ির খপ্পরে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।
তেতুলিয়া গ্রামের কৃষকের ছেলে মোস্তাফিজ। যে প্রায় ৪০ মাইল দূর থেকে সাতক্ষীরা শহরে এসে অনুশীলন করতো , স্বপ্ন দেখত মিরপুর কাঁপানোর , আজ তাকে কাঁধে তুলে নাচছে বাংলাদেশ। এই সম্মান তার প্রাপ্য। এই প্রতিভার সামনে এখন ছুটে আসবে লক্ষ লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপনী চমক , তাকে অফার করা হবে গাড়ি বাড়ি সবকিছু। ছুটে আসবে মডেল কন্যারা , সেলফির চমকে এতো আলোর ঝলকানি মাত্র ১৯ বছরের এই ছেলের কাছে ভিন্ন জগত মনে হবে। এইটাই স্বাভাবিক। সেই স্বাভাবিকতার আড়ালে তার দিকে থাবা বসাতে চাইবে জুয়াড়ির অর্থ। নষ্ট করতে চাইবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র।
প্রিয় মোস্তাফিজ, বুকে যে ভালোবাসা জন্মিয়েছেন যেটা সারাজীবন অবাক মুগ্ধতায় পুষে রাখবো।
তবে ভাই আমার, ভুলেও ভুল করে অর্থের কাছে , সুতীব্র আলোর মোহের কাছে ধরা দিয়েন না। লোভী হইয়েন না ভাই, উইকেট লাভের পর আপনার লাফিয়ে উঠা , আপনার সরল চোখের হাসি , হাততালি দেয়া আমরা সারাটাজীবন প্রাণ ভরে উপভোগ করতে চাই। মাটি কামড়ে আপনার ছুটে চলা দেখতে চাই , বাতাসে নয়।
আপনি সৌভাগ্যবান , আপনার মাথার উপরে মাশরাফি বৃক্ষ আছে। এরছায়া যতদিন আছে ততদিন তাতে আশ্রয় নিবেন। বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে ছুটে যাবেন সেই ছায়ার কাছে। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি - যার মাথায় মাশরাফির হাতের ছোঁয়া আছে সে ভুল ডিসিশন কখনো নিতে পারে না।
পারমাণবিক বোমা মাঠে রেখে আমরা সারাটাজীবন স্বস্তির শ্বাস নিতে চাই।