কলকাতার অভিনেতা দেব এর জন্য বাংলাদেশের এক মেয়ে সুমি ছাদ থেকে লাফ দিছে , কারণ এতে সুমি নিউজ আট্রাকশন পাবে এবং দেব তার কথা জানবে ।
দেব এই নিউজ পেয়ে তার পেইজে পোস্ট দিছে - Just heard the news about a girl named Sumi from Bangladesh who jumped from a terrace hoping that the news would help draw my attention. It certainly did, but it broke my heart instead.
দেব সাবকে ধন্যবাদ সে সুমির কথা ভেবে আবেগি হয়েছেন , উপদেশ দিয়েছেন । সুমিকে ধন্যবাদ কারণ সুমি চমৎকার ভাবে আমাদের প্রায় ধ্বজভঙ্গ শরীর সবার সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে ।
ভেবে দেখেছেন কি আসলে কি ঘটে চলছে ? কেন সুমি এমন করলো , আর কেন ই বা দেব এতো উতলা হয়ে গেল ? সরল ইকুয়েশন । নীচে সহজ
ভাষায় ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করছি
( দেবের জন্য জান দিতে দিতে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশী সুমি )
সুমি এমন সময় এই কাজটি করলো যখন টালিগঞ্জ তাদের মুভি বাণিজ্য নিয়ে চরমভাবে দিশেহারা । আমরা আর্ট ফিল্ম নিয়ে লাফালেও কলকাতা কিন্তু তাদের মুভি মোটেও পাত্তা দিচ্ছে না । এইটা ট্রু ।পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, গত এক বছরে লগ্নির টাকা তুলতে পেরেছে মাত্র দুটি সিনেমা !!
গতসপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে এসে কলকাতার গায়ক অনুপম রয় স্বীকার করেন -- " এটা আসলেই সত্য কলকাতায় বাংলা চলচ্চিত্র এখন আর কেউ তেমন দেখে না । কারণ আমরা যে ধরনের চলচ্চিত্রে কাজ করি সে চলচ্চিত্রগুলো সবগুলো জেলা শহরে পৌঁছে দেয়া যায় না। আর শাহরুখ, সালমান খানের ছবির কাছে তো আর আমাদের ছবি টিকতে পারে না। ধরুন বছরে যদি দু’শো চলচ্চিত্র রিলিজ হয় তার মধ্যে হাতেগণা কয়েকটি ছবি ব্যবসা করতে পারে। তাও খুব কষ্টে। "
দিন কে দিন টালিউড মুভি বিজনেসে ধস নামছে , হাঁতে গোনা কয়েকটি কলকাতান মুভি কোনমতে মূলধন তুলে আনতে পারছে বাকিরা চরমভাবে লস খেয়ে যাচ্ছে । তার কারণ কলকাতার বাজার দখল করে নিয়েছে তামিল এবং বলিউড । টালিগঞ্জ বাজার হারাচ্ছে সালমান শাহরুখদের কাছে ।
সেখানকার মানুষ দেবের ছবি দেখার চেয়ে পয়সা খরচ করে সালমান খানকে দেখতে আগ্রহী । ফলে দেব , প্রসেঞ্জিত , জিৎ মতো কলকাতান স্টার ভাত পাচ্ছে না ।
শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, সুরিন্দর ফিল্মস, রামুজি ফিল্মস, রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্টসহ বড় বড় প্রযোজক প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি রুপী ইনভেস্টের পর একের পর এক লসের মুখ দেখে কলকাতা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার চিন্তা শুরু করে দিয়েছে ।
‘নোবেল চোর’ নির্মাতা সুমন ঘোষ বলছেন, টালিগঞ্জের আচমকা উত্থানটা অনেকটা বুদবুদের মতই ছিল, “বড্ড বেশি দিন ধরে আমরা কার্পেটের নিচে সরিয়ে রেখেছিলাম এই টালিউড শাইনিংয়ের বাবলটা।”
আর ঠিক তাই কলকাতা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নজর দিয়েছে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় মুভি খাতে । গত কয়েক মাস যাবৎ কলকাতা চেষ্টা করছে বাংলাদেশে তাদের মুভির বাজার সৃষ্টি করতে । এবং আমাদের সরকার এক কাঠি সরেস হয়ে নতমস্তকে কলকাতাকে স্বাগত জানাচ্ছে ।
বিগত কয়েক বছর যাবৎ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় মুভি বাজার ধরতে টালিগঞ্জ আগ্রহ চোখে লাগার মতো । খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন বিগত কয়েক বছরে কলকাতার মুভিস্টাররা বাংলাদেশে আসচ্ছে , গোপনে আলোচনা চালিয়ে ওপাড়ে চলে যাচ্ছে । উদ্দেশ্য বাংলাদেশ দখল ।
ইতিমধ্যে আমাদের টিভি মিডিয়া কাপচার করা কলকাতার প্রায় শেষ । কলকাতা বাংলাদেশে স্যাটেলাইট চ্যানেল দখক করে ফেললেও বাংলাদেশকে কলকাতায় সুযোগ দিচ্ছে না । এইটা সম্পূর্ণ তাদের বিজনেস প্ল্যান । তারা ব্যবসা বুঝে । তারা জানে বাংলাদেশকে কলকাতায় ওপেন করে দিলেই কলকাতা ব্যবসা হারাবে । ফলে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল কলকাতায় বেইল পায় না ।
কিন্তু আমাদের দেশের অ্যান্টি আপুরা জি বাংলা স্টার জলসা বলতে অজ্ঞান । মিরাক্কেল বাংলাদেশ থেকে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে । কেন ? কলকাতায় মানুষ কম পড়ছে ?
জি না । কম পড়ছে কলকাতার ভিউয়ারে । কলকাতা তাদের নিজস্ব চ্যানেল ধুচে না , তারা হিন্দি নিয়ে ব্যাস্ত বলেই বাধ্য হয়েই ওপাড়ের দাদারা এ পাড় বাংলায় নজর দিয়েছেন । আমাদের ভুরু কুঁচকানো জেমস ভাই কলকাতার সা রে গা মা পা তে গিয়ে জাজ হচ্ছেন , হাসি তামাশা করছেন । কলকাতা সেটি বারবার প্রচার করে বাংলাদেশকে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আসচ্ছে।
আমরা বাংলাদেশীরা এক দুইজন রনি মিরাক্কেলে পাঠিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছি বলছি কলকাতা জয় করে ফেলেছি । মূলত ব্যাক্তি রনি মিরাক্কেল মাতালেও , মিরাক্কেল এক রনি দিয়ে বাংলাদেশ দখল করে ফেলেছে । শুধু তাই নয় টিভি মিডিয়ার পাশাপাশি জি বাংলা , স্টার জলসায় নিয়মিত কলকাতান মুভি দেখানোর মাধ্যমে টালিগঞ্জ চেষ্টা করছে ঢালিউডকে নিজের হাঁতে নিয়ে নিতে ।
( মিরাক্কেলে আবু হেনা রনি )
যৌথ পরিচালনার ছবির নাম করে কলকাতা একক ভাবে প্রাধান্য বিস্তার করছে আর আমরা কলকাতান মুভি আমাদের দেশে অবাধে প্রদর্শনের সুযোগ করে দিচ্ছি ।
( আমি শুধু চেয়েছি তোমায় মুভির পোস্টার । নামেই যৌথ , কামে ঠনঠোনা )
ঈদে কলকাতার সঙ্গীত শিল্পীরা গণহারে বাংলা টিভি চ্যানেল মুল্লুক জয় করে বীর দর্পে কলকাতা ফিরে যাচ্ছে অন্যদিকে তাদের পূজ্যতে বাংলাদেশের কয়জন শিল্পী আমন্ত্রণ পেয়েছে বলতে পারেন? এপাড় ওপাড় সঙ্গীত মাধমের আদান প্রদানে সমস্যা নেই কিন্তু সেটি হতে হবে সমতার ভিত্তিতে । তেমন আলামত কি দেখেছেন কখনো? দেখেনি। সমতা নেই ।
বাংলাদেশের মিউজিশিয়ানদের ক্ষমতা কম এই কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না । ৯০ এর দশকে আমাদের ব্যান্ড মিউজিক কলকাতায় দারুণ জনপ্রিয় ছিল । কিন্তু এখন কলকাতা নিজেরাই চেষ্টা করছে নিজেদের গানে তাদের বাজার বাজার তৈরি করতে । তারা বাংলাদেশীদের সুযোগ দিতে রাজি না , তাদের ভিতর ভয় আছে বাংলাদেশের মিউজিক সহজেই কলকাতা মাতিয়ে দিতে সক্ষম ফলে বাংলাদেশকে তারা তেমন আমন্ত্রণ জানায় না । কলকাতা নিজেরাই নিজেদের বাজার সৃষ্টি করে নিয়েছে । অপরদিকে আমরা fm থেকে শুরু করে TV live show সব জায়গায় কলকাতার জয়গান করে চলছি ! নিজেরাই গলাটিপে নষ্ট করছি বাংলাদেশী সঙ্গীতের দক্ষতা।
( ঢাকায় লাইভ শোতে অংশগ্রহণ করতে এসেছিল চন্ত্রবিন্দু )
আমরা আমাদের সম্পদের ব্যাবহার করতে পারছি না বলেই আজ সুমিরা দেবের জন্য ছাদ থেকে লাফ দিচ্ছে । কারণ দেব , মিরাক্কেল বাংলাদেশের বাজার দখল করে আমাদের রুচির পরিবর্তন ঘটিয়ে দিচ্ছে । তারা জানে যত বেশী আমাদের টেস্ট চেঞ্জ হবে তত বেশী শক্তিশালি হবে টালিগঞ্জ আর ধ্বংস হবে ঢালিউড তথা বাংলাদেশী মিডিয়া । বাজার ছাড়া শিল্প বিকাশ হয় না । আমরা আমাদের দেশের মিডিয়া বাজার একবার হারালে নিরুপায় দর্শক বন্দি হবে কলকাতায় । বাংলাদেশের সংস্কৃতি তখন আটকে যাবে দিদি নাম্বার ওয়ানে ।
হে বাংলাদেশ , গান্ডু হওয়া থেকে নিজেকে বাচাও , ভালোবাসো আপন শক্তিকে ।