-তারপর ?
-তারপর একটা দৈত্য এলো । রাজকন্যা কাঠি নাড়িয়ে দৈত্যকে ধমক দিয়ে বলল - দৈত্য , আমি তোমাকে ভয় পাই না । আমার বাবা মস্ত বড় যোদ্ধা । তিনি একাই একশ । বাবা তরবারি দিয়ে তোমাকে মেরে ফেলবে ।
-দৈত্য কি ভয় পেল ?
-হুম , খুব ভয় পেয়েছে । সবুজ দৈত্য ভয়ে নীল হয়ে গেছে । দৈত্যরা ভয় পেলে নীল হয়ে যায় । দৈত্য তখন রাজকন্যাকে বলল - আমাকে মাফ করে দাও , আমাকে মাফ করে দাও । আমাকে মেরো না । আমি চলে যাবো ।
-তারপর ?
-তারপর দৈত্য ভয়ে রাজ্য থেকে পালিয়ে গেল । আর কোনদিন ফিরে আসেনি ।
ইকবাল শরীফের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে ।ইকবাল শরীফ হাসপাতালের কেবিনের সাদা চাদরে লুকিয়ে চোখ মুছে । তার ছোট্ট মেয়ে দিবা তাকে গল্প বলছে । এইতো সেদিনও ইকবাল শরীফ তার মেয়েকে ঘুম পাড়ানোর সময় ঠিক এইভাবে মেয়ের মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কাটতে কাটতে গল্প বলতো । আট বছরের মেয়েটি আজ হুবহু বাবার মতো ইকবাল শরীফের মাথার কাছে বসে রুপকথার গল্প বলছে । ইকবাল শরীফের লাল টুকটুকে মেয়েটা জানে না এম আর আই রিপোর্টে তার বাবার মাথায় যে দৈত্য ধরা পড়েছে তাকে ভয় দেখানো যায় না । সেই ভয়ঙ্কর দৈত্যের সাথে রাজকন্যার বাবা লড়াই করতে করতে করতে হেরে যাচ্ছে । খুব দ্রুত হেরে যাচ্ছে।
ঘড়িতে ছয়টা বাজতে চলল । দিবা মনে মনে আরেকটি গল্প সাজিয়ে যাচ্ছে । তার বাবা গল্প বলতে ভালোবাসে । দিবাকে বাবা অনেক অনেক গল্প শুনিয়েছে । এখন দিবা বাবাকে গল্প শোনায় ।বাবাকে সে প্রতি বিকেলে গল্প বলে । বাবা গল্প শুনে আর লুকিয়ে কাঁদে । ডাক্তার আংকেলের সাথে মায়ের সব কথা দিবা শুনেছে । দিবা জানে তার গল্প বলা বাবা একটা দুষ্ট দৈত্যের সাথে যুদ্ধ করছে । দিবা এইটাও জানে বাবার মাথার দৈত্য গল্পের দৈত্যের চেয়ে অনেক অনেক শক্তিশালী । তাকে যুদ্ধে হারানো কঠিন । কিন্তু বাবা তো তাকে বলতো - যুদ্ধে সবসময় দৈত্যরা হেরে যায় । তাহলে তার বাবার মাথার দৈত্য কেন হারবে না ? এই শক্তিশালী দৈত্যকেও হারতে হবে । দৈত্যরা সবসময় হেরে যায় । সবসময় ।
শ্যামলী মর্ডান হাসপিটালের দোতলার ১২ নাম্বার কেবিনের জানালা দিয়ে সন্ধ্যার এলিয়ে পড়া আলো স্পর্শ করছে দিবা আর তার বাবাকে ।