এল আর বি । আইয়ুব বাচ্চু । লিজেন্ড , আমাদের প্রিয় এ বি । যার গান শুনে আমি , আমরা বড় হয়েছি । কতবার কতো ভাবে কতো মুহূর্তে সেই মেয়েটির কথা ভেবেছি আর গুনগুন করে গেয়েছি -- সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলে সেই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম ।
অচেনা মেয়েটিকে আমি দুঃখ দেইনি , সেও আমাকে সচেতন মনে কোনদিন কষ্ট দেয় নি । তারপরও মেয়েটিকে ঘিরে প্রতিনিয়ত জমেছে সুপ্ত অভিমান , বুক ভরা কষ্ট পরিশেষে সুতীব্র কামনা –
চলো বদলে যাই চলো বদলে যাই ।
আমাদের কিশোর বয়সের প্রেম এলআরবি র হাত ধরে পেয়েছে পূর্ণতা ।
সেই হুটহাট প্রেমে পড়া – গেয়ে উঠা --
আমি বারোমাস তোমায় ভালোবাসি তুমি সুযোগ পাইলে বন্ধু বাসিও
রাস্তার মোড়ে স্কুলের পথে তাকে দেখেছি আর মগজে বেজে চলেছে
- মেয়ে তুমি কি দুঃখ চেনো, চেনো না মেয়ে তুমি কি আকাশ চেনো, চেনো না তবে চিনবে কেমন করে এই আমাকে ...
মেয়ে আমাকে চিনেনি । উদাস মনে গেয়ে উঠেছি -
হাসতে দেখো , গাইতে দেখো
কখন যে গেয়ে উঠেছি নিজেও জানি না । গানের শেষে গানের মতোই হয়েছি নীরব । সেই কিশোর বয়সের নীরবতা আসলেই কেউ দেখেনি ।
রাতের আড়ালে ওয়াকমানে শুনেছি --
আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি , তাই তোমার কাছে ছুটে আসি
রাত গভীর হলে তরঙ্গাকারে ভেসে এসেছে --
এখন অনেক রাত , খোলা আকাশের নীচে জীবনের অনেক আয়োজন
আহা কি সূর কি মায়ায় জড়িয়েছিল সেইসব রাত !
কেউ কি বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন বাচ্চু ভাইয়ের
-- স্মৃতির সুখেরই পৃথিবী, সুখেরই অভিনয় যত আড়াল রাখো, আসলে কেউ সুখী নয় ...
শুনে কি নিজেকে একটি বারের জন্যও মনে হয়নি – আসলেই তো আমি কি সুখী ? আসলে কেউ সুখী নয় ।
এই রূপালী গীটার ফেলে , সে তারা ভরা রাতে , মন চাইলে মন পাবে , ফেরারী এই মনটা আমার , হাল আমলের – আমি তো প্রেমে পড়েনি , সাবিত্রী রায় -- কতো অসাধারণ সব কম্পোজিশন ১৯৯০ সালে জন্ম নেয়া লিটল রিভার ব্যান্ড (এল আর বি এর ঝুলিতে । কেবল যেন মুগ্ধ হবার বিষয় ।
আর বাচ্চু ভাই এর গিটার ! জাদু । এ এক জাদু । ভিন্ন কিছু নয় ।
বাংলাদেশের আরেক জনপ্রিয় লিজেন্ডারি ব্যান্ড মাইলস । জন্ম আমার জন্মেরও বহু আগে সেই ১৯৮১ সাল । ৩২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তরুণদের মাঝে তারুণ্যের সঞ্চার যুগিয়ে চলা এই ব্যান্ড কেবল মাত্র দেশে নয় দেশের বাইরেও সমানভাবে জনপ্রিয় ।
[ Miles Concert in Hollywood Los Angeles 2012]
হ্যাপি আখন্দ , ফরিদ রশিদের মতো মিউজিশিয়ানরা এই ব্যান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল দীর্ঘকাল । দুইভাই শাফিন আহমেদ এবং হামিন আহমেদ বাংলাদেশের ব্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির অতি পরিচিত ও বিশ্বস্ত মুখ । মাইলসের সাথে জড়িয়ে আছে আরেক সূর জাদুকর মানাম আহমেদ । এতো এতো উজ্জ্বল নক্ষত্র নিয়ে প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে আমাদের ব্যান্ড মিউজিকের সাথে এক হয়ে পথ চলছে মাইলস ।
কনসার্টে মাইলসের গান মানেই বাধ ভাঙ্গা উল্লাস -। এই দৃশ্য খুব স্বাভাবিক স্টেডিয়ামের আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হাজারে হাজার মানুষ একই সূরে গাইছে --
ফিরিয়ে দাও আমারই প্রেম তুমি ফিরিয়ে দাও
চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি / নও পাহাড়ী ঝর্না / যদি বলি ফুল তবুও হবে ভুল/ তোমার তুলনা হয়না ... ,
ধ্বিকি ধ্বিকি আগুন জ্বলে বুকে নদী বইয়া চলে ও ও ও… কিংবা
নীলা
অথবা হাল আমলের - You are mine, you are only mine/ তাই উৎসর্গ করি তোমায় / জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন
সূর ও কথা শ্রোতাদের করেছে বিমোহিত , মুগ্ধতায় বিভোর ।
এখন পর্যন্ত প্রিয়তমার জন্মদিনে বাংলা ব্যান্ডের অন্যতম সেরা উপহার শ্রোতাদের হাতে মাইলস ই তুলে দিয়েছে তাদের কালজয়ী
আজ জন্মদিন তোমার
আমি নই কোন উচ্চ স্তরের সংগীত বিশেষজ্ঞ , নই Bamba ( Bangladesh Musical Band Association ) র সদস্য । আমি সাধারন বাংলা গানের শ্রোতা । বিশ্বাস করি গান ভালোবাসতে এইসব মেম্বার বাঙ্গীতজ্ঞ হতে হয় না , সদ্য জন্মপ্রাপ্ত শিশুও সংগীতের মূর্ছনায় কান্না ভুলে যায় । কারণ সঙ্গীত হৃদয়ের কথা বলে ।
আমি এবং আমার মতো বাংলা গান পাগল শ্রোতারা কেবল আমাদের কিশোর বয়সের উন্মাতাল করা সেইসব লিজেন্ডদের গান শুনেই পরিতৃপ্ত । আমরা গান শুনতে চাই , আমাদের দেশীয় ব্যান্ড , গায়ক গায়িকাদের গানে মুগ্ধতায় বিভোর হতে চাই । বাংবার । এর বেশি কিছু আমাদের চাওয়া নেই । দাবীও নেই ।
রান্নাঘরে মা যখন রান্না করেন তখন দেখেছি , দুটি পাতিল পাশাপাশি রাখলে টুকটাক ঘষায় শব্দ হয় । শব্দটা অস্বস্তিকর হলেও আমরা কেউ ই কিন্তু শব্দ সৃষ্টিকারী পাতিল বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেই না । দুটি পাতিলের একটিতে মা পোলাও , অন্যটিতে কষিয়ে মাংশ রান্না করেন । পোলাও মাংশের মৌ মৌ সুগন্ধে আমরা কবজি পর্যন্ত ডুবিয়ে গলা পর্যন্ত ভরে খাওয়া দাওয়া করি । তৃপ্তি লাভ করি ।
এলআরবি এবং মাইলস আমার দেশের দুই গর্ব , আমাদের লিজেন্ডারি ব্যান্ড । আমার কি সাধ্য আমি কোন একটি ব্যান্ডের পক্ষ নিয়ে কথা বলবো ? আমার যৌবন মাতিয়েছে তারা উভয়ই । মনে প্রানে ভালোবাসি , শ্রদ্ধা করি তাদের দুজনকেই ।
আমি জানতে চাই না তাদের ভিতরে টুকটাক শব্দ । আমি শুনতে চাই বাংলাদেশী মিউজিক । আমি আমরা প্রান ভরে উপভোগ করতে চাই আমাদের নিজস্ব গান । সকল সমস্যা দূর হয়ে আমাদের ভালো লাগার শিল্পীদের অভিভাবকরা আমাদের বাংলা গান শুনবার সেই সুযোগ তৈরি করে দিবেই – এইটাই একমাত্র প্রত্যাশা ।
সকল বিভেদ ভুলে জয় হোক বাংলাদেশী সংগীতের ।