আর এক্সট্রা লার্জ ফুটোস্কোপিক রুপকথা মানে, ফুটোটা আকারে বড়, আর রুপকথাটি ছবি, ভিডিও, অডিও এবং ওয়েব লিংক দ্বারা সমৃদ্ধ
হিট লেখক
- এক দেশে ছিল এক হিমু
- কোন দেশে?
- এই দেশে।
- তারপর?
- তার ইচ্ছা সে খুব হিট লেখক হবে। কাতারে কাতারে মানুষ তার বই কিনবে। বই ছাপা হওয়ামাত্র সব কপি শেষ হয়ে যাবে। সকালে একটা এডিশন বের হবে, তো দুপুরে আরেকটা এডিশন প্রেসে চড়বে। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়বে বইটা কিনতে। মেয়েরা তরল গলায় বলবে, ভাইয়া একটা অটোগ্রাফ ...
- তারপর?
- লেখকের তোষকের নীচে তার লেখা কিছু পুরনো গল্প ছিল। তিনি ওগুলো ঘর ঝাড়– দিয়ে কিছুদিন আগেই খুঁজে বের করেছিলেন, পুরনো কাগজ হিসেবে বেচে দিয়ে কটকটি খাবেন বলে। তো সেই আবর্জনাগুলোকে এক করে (মানে সংকলিত করে ) বই বের করে ফেললেন।
- কি বই?
- এই বই ।
-তারপর?
- বই তো বের হলো। এখন তো ঢোল বাজাতে হবে। হিমু সাহেব কিছু ঢুলি জোগাড় করলেন। তারপর সেই বই নিয়ে শুরু হলো লংকা কান্ড। এক বড় ভাইয়ের হাত পা ধরে সেই বইটার খুব জম্পেশ বাক বাকুম মার্কা একটা মোড়গ উন্মোচন করা হল।
- মোড়গ উন্মোচন কী?
- মোরগ হচ্ছে মুরগির হাজবেন্ড। মুরগি ডিম পাড়ে, মোড়ক শুধু কক কক করে। মোড়গ উন্মোচন হচ্ছে কক ককানি উৎসব।
- আচ্ছা। তারপর কী হলো?
- খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে মোড়গ উন্মোচন করা হল। বইমেলা চত্তরে ঢুলীরা সবাই ঢোল বাজালো । নারী এমনকি শিশুরাও ঢোল বাজাতে ছাড়লেন না। সেঁকিঁ হাঁতঁতাঁলিঁ বাঁজঁলোঁ। সেই হাততালির চোটে বাংলাদেশের সমস্ত অতিথি পাখি ভয়ে সাইবেরিয়ায় ফিরে গেল। সবাই বই নিয়ে ভালো ভালো কথা বললেন আর কি। বইটির ভূয়সী প্রশংসা করা হল । সেই বড় ভাইয়ের বদৌলতে একটা ছিটি পুরষ্কারের ব্যবস্থাও হলো । চারিদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। আরও কত কিছু যে করা হল ...
- আর কি কি করা হল?
- ব্লগে গাদা খানেক পোস্ট দেয়া হল , লেখকের অডিও সাক্ষাৎকার নেয়া হল , ওয়েব সাইট খোলা হল , মতামতের জন্য পুল ওপেন করা হল । আরও কত কি ...... সবই লেখকের ঐকান্তিক চেষ্টায়। কিন্তু তা হলে কী হবে? সেই বই আ-আ-আ-র চলে না। এতো বাজনাবাদ্যির পরও মাত্র ৩ কপি বিক্রি হল। একটা কিনলো হাজী মামুন , আরেকটা বই কিনলেন লেখক নিজে , তিনি একটা বিদেশী হুন্ডি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশককে বইয়ের মূল্য পাঠিয়ে দিলেন। প্রকাশক আরেকটা বিদেশী কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক কপি বই পাঠিয়ে দিলেন লেখক হিমু সাহেবকে। ৩য় বইটা যে কে কিনলো, সেটা বেরই করা গেল না। বোধহয় মিথষ্ক্রিয়ায় সুবিধা করতে না পারা কোনও অতিথি লেখক হবেন।
- তারপর?
-তারপর লেখকের মন খুব খারাপ। ভাবলেন হায় হায়, তার বুঝি লেখক হওয়া হলো না। এদিকে দিন পার হয়, বছর পার হয়, কলমের কালি শুকিয়ে যায়, অবিক্রিত বইয়ের কপিতে বর্ষার বৃষ্টিতে ছাতা ধরে , লেখকের চুল বড়ো হতে থাকে ..... তখন তার বন্ধু হাজী মামুন তাকে একটা আইডিয়া দিল, ওস্তাদ আরেকটা বই লেখেন ... যে বই বাবা কিনবে এক কপি, ছেলে লুকিয়ে কিনবে আরেক কপি। লেখক ধমক দিয়ে হাজীকে থামিয়ে দিলেন। বললেন, চটি আমি লিখবো না রে, মান সম্মান যা অবশিষ্ট আছে, কিছুই থাকবে না। তখন হাজী মামুন তাকে বুদ্ধি দিল, এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে হিট ব্যাক্তি হচ্ছে মুসা ইব্রাহীম । আপনে তার জীবনী লেখেন। লেখক হাজী মামুনকে আরেকটা ধমক দিলেন। এবারেরটা বেশ জোরে।
- কেন?
- কেন আবার? মুসার জীবনী লেখার জন্য কত লোক লাইন দিয়ে আছে। হক, রবি, সিমু ....আর তাছাড়া মুসা নিজেই তো লেখক, সে তার কাহিনী অলরেডি লেখা শুরু করে দিছে।
- তারপর কী হল ...
- হঠাৎ তখন লেখকের মাথায় একটা আইডিয়া এলো। যেটাকে বলে অ্যান আইডিয়া ক্যান চেঞ্জ ইয়োর লাইফ। মুসা তো উচুঁতে উঠে রেকর্ড গড়েছেন, লেখক নিচুতে নেমে রেকর্ড করবেন। মুসাকে তিনি এভারেস্ট থেকে টেনে নামাবেনই। তসলিমা নাসরিন যেমন লজ্জা লিখে হিট হয়ে ছিলেন। ওটি দেখে এক মাওলানা ‘তসলিমার লজ্জা’ নামে আরেকটি বই লিখে ছিলেন, সেটিও হিট হয়েছিল। কাজেই মুসাকে নিয়ে কুৎসা লিখলে ওটা তো হিট হবেই। তখন লেখক করলো কি আদার সাথে জল মেশালো, তার সাথে মেশালো একটু বিয়ার। তারপর আদাজলবিয়ার খেয়ে তিনি লিখতে শুরু করলেন। কয়েক ছত্র লিখলেন। কিন্তু এতো অল্প লেখায় কি আর বইয়ের ফর্মা পুরে। এজন্য তিনি হঠাৎ তেনা প্যাচাতে শুরু করলেন। তবুও তো বইয়ের মাল মশলা শেষ হয় না। তখন লেখক করলেন কী...গণহারে সবাইকে ভিওআইপিতে ফোন দেয়া শুরু করলেন। এদিকে বাংলাদেশের টেলিফোন সংস্থা তো রেগে বুম। কোথা থেকে এতো অবৈধ ভিওআইপির কল আসে?তারা গণহারে সবাইকে জরিমানা করে বসলেন । কত কোম্পানির কপাল পুড়লো । আর লেখক ত্যানা প্যাচাতেই থাকলেন।
- তারপর?
- তারপর আবার কী! ঘটনা প্যাঁচ খেয়ে গেল ।
- ভালোই তো চলছিলো, তাহলে ঘটনা প্যাঁচ খেলো কেন?
- কেননা ফিফা প্রমাণ দিতে থাকলেন যে হিমুর যা লিখছে সবই হাড়ে বংশে মিথ্যা।
- তারপর কী হল?
- কী আর হবে? লেখক উল্টা পাল্টা লেখা শুরু করলেন ।
- কী রকম উল্টাপাল্টা?
- রে পামর এই লিংকের ৬২.২.২ নং মন্তব্য দ্যাখ।